বাজারে স্যামস্য কোম্পানির নতুন ডিভাইস Galaxy Note FE (Fan Edition) চলে এসেছে কিছুদিন আগেই। আর গত বছরের গ্যালাক্সি নোট ৭ স্ক্যান্ডালের খবর কমবেশি সবাই শুনে থাকবেন! গত বছর গ্যালাক্সি নোট ৭ মডেলের ব্যাটারি বিস্ফোরণের কাহিনীর জন্য স্যামসং ২০১৬ সালের গ্যালাক্সি নোট ৭ ফ্ল্যাগশিপ বানানো বন্ধ করে দেয়।
এর কিছুদিন পর শোনা যায় যে কিছু নির্দিষ্ট মার্কেটের জন্য একটি এক্সক্লূসিভ গ্যালাক্সি নোট ফ্যান এডিশন ছাড়া হবে। তবে মাথায় রাখতে হবে যে এই ফোনটি নোট ৭ এর মালামাল থেকেই Refurbish করা হতে পারে! এবার সিদ্ধান্ত নিন, গ্যালাক্সি নোট এফ ই কিনবেন নাকি? যদি না কিনেন তাহলে এটির বিকল্প কিছু ফোনের সংক্ষিপ্ত রিভিউ নিয়ে আমি আজকের টিউনটি সাজিয়েছি।
গ্যালাক্সি নোট ৭ এর কনফিগারেশন এর হুবহু কপি করে স্যামসং তাদের পরবর্তী নোট ডিভাইস গ্যালাক্সি নোট এফ ই তৈরি করেছে। শুধু পার্থক্য হলো গ্যালাক্সি নোট ৭ য়ে 3500mAh ইউনিটের ব্যাটারি ছিলো এবং এটায় 3200mAh ইউনিটের ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়েছে। গতবছরের নোট ৭ এর ব্যাটারি বিস্ফোরণের জন্য এবার স্যামসং তাদের ব্যাটারির দিকে বিশেষ খেয়াল রেখেছে এবং প্রায় ৮ ধরণের ব্যাটারি সেফটি টেস্ট এর মাধ্যমে এই ডিভাইসের ব্যাটারিকে পরীক্ষা করা হয়েছে।
এ বছরের গ্যালাক্সি এস৮ এবং এস৮ প্লাস ডিভাইসগুলোতেও একই ধরণের সেফটি টেস্ট করানো হয়েছে। এই জাতীয় সেফটি টেস্টে পাশ করে যাবার পর স্যামসং আশা করছে তাদের এই নতুন ডিভাইসগুলো গত বছরের নোট ৭ এর মতো ব্যাটারি বিস্ফোরণ করবে না।
ছোট সাইজের ব্যাটারি ছাড়াও এই ডিভাইসে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে সামনের ইয়ারপিসের নিচে স্যামসংয়ের লোগোটি মুছে দেওয়া হয়েছে। মনে হয় ডিভাইসের সামনের দিকে স্যামসং তাদের ব্র্যান্ডিং করা ছেড়ে দিয়েছে! কনফিগারেশনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে গ্যালাক্সি নোট ফ্যান এডিশনে ৫.৭ ইঞ্চির কোয়াড এইচডি ডিসপ্লে রয়েছে, রয়েছে অক্টা কোর Exynos 8890 চিপসেট, ৪ গিগাবাইটের র্যাম এবং ৬৪ গিগাবাইট স্টোরেজ ক্যাপাসিটি রয়েছে। ১২ মেগাপিক্সেলের f/1.7 পেছনের ক্যামেরা আর ৫ মেগাপিক্সেলের ফ্রন্ট ক্যামেরার সুবিধা সহ দ্রুত ওয়ারলেস চাজিংয়ের ফিচারও রয়েছে ডিভাইসটিতে।
ডিভাইসটিতে প্রথমে সাউথ কোরিয়াতে মুক্তি দেওয়া হয়। ডিভাইসটি শীঘ্রই অনান্য দেশগুলোতে মুক্তি দেওয়া হবে। সাউথ কোরিয়াতে ডিভাইসটি ৬১০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। যেটা গত বছরের নোট ৭ এর থেকে প্রায় ২৪০ ডলার কম।
আপনি যদি বর্তমানে স্টাইলাস সহ কোনো ফোন কিনতে চান তাহলে Samsung Galaxy Note Fan Edition আপনার জন্য বেস্ট! কারণ আপকামিং গ্যালাক্সি নোট ৮ এর দাম কমপক্ষে ৮৫০ ডলার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মানে হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার টাকার বেশি খরচ করতে হবে আপনার যদি গ্যালাক্সি নোট ৮ কেনার পরিকল্পনা থাকে।
আর এদিকে ৫০ হাজার টাকায় আপনি স্টাইলাস ব্যবহার উপযোগী দারুণ Galaxy Note FE পেয়ে যাচ্ছেন! Galaxy Note FE এর স্টাইলাস প্রায় ৪০৯৬ ধরণের প্রেসার সেন্সিটিভিটি সার্পোট করে যেটার মাধ্যমে আপনি একটি রিয়েলাস্টিক রাইটিংয়ের মজা পাবেন!
এছাড়াও এই দামে নোট এফ ই হচ্ছে এমন একটি ফোন যেখানে HDR Display রয়েছে যেটায় HDR কনটেন্টগুলোতে সুপার ফাইন ভিডিও কোয়ালিটি প্রদান করবে। আর ওয়াটার প্রুফ এবং ওয়ারলেস চার্জিং ফিচারটিও খারাপ না। অন্যদিকে এই ডিভাইসের ক্যামেরা কোয়ালিটি গ্যালাক্সি এস৭ এবং এস৭ Edge এর হুবহু কোয়ালিটির থাকায় এই বাজেটে ক্যামেরা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আর ৬৪ গিগাবাইটের স্টোরেজ প্রায় অধিকাংশ ব্যবহারকারীদের জন্য যথেষ্ট হবে বলে আমি আশা করছি।
সবশেষে একটি কথাই বলতে চাই, ৬০০ ডলারে বা ৫০ হাজার টাকায় স্টাইলাস সহ ব্যবহারের জন্য গ্যালাক্সি নোট ফ্যান এডিশন হচ্ছে একটি অন্যতম বেস্ট অপশন। তবে আপনার যদি স্টাইলাস ব্যবহারের তেমন প্রয়োজন না পড়ে তাহলে এই বাজেটে একই জাতীয় অন্যান্য কিছু ডিভাইস দেখতে পারেন। ওহ! আরেকটি কথা, Galaxy Note FE তে কিন্তু একটি সিম (Nano Sim) ব্যবহার করা যাবে! নিচে আমি কয়েকটি অল্টারনেটিভ ডিভাইস নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করছি:
সাউথ কোরিয়ান কোম্পানি এলজি তাদের জি৬ ডিভাইসে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছে কাস্টমারদের মন জয় করার জন্য। কিন্তু দুঃখবশত ডিভাইসটি কাস্টমারদের কাছে তেমন জনপ্রিয়তা লাভ করতে পারেনি। আর তাই এখন এই ডিভাইসটি ৫০০ ডলারের নিচেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এলজি জি৬ ডিভাইসে স্যামসংয়ের মতো মেটাল সাইডস সহ গ্লাস বডি রয়েছে।
নোট এফ ই এর মতো ৫.৭ ইঞ্চির ডিসপ্লে রয়েছে কিন্তু এলজি জি৬ এর বডির সাইজ একটু ছোট, এর জন্য এক হাতে ব্যবহারের জন্য এলজি জি৬ বেশ উপযোগী হবে। এলজি জি৬ এর ডিসপ্লেটি HDR10 এবং Dolby Vision ফিচার করে। তবে এর প্রসেসর কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮২১ হওয়ায় অনেকেই এটি নিতে চাইবেন না কারণ বাজারে এখন স্ন্যাপড্রাগন ৮৩৫ পাওয়া যাচ্ছে। তবে সাধারণত এটি তেমন পার্থক্য সৃস্টি করবে না এভারেজ ইউজারদের জন্য।
Galaxy Note FE এর মতোই এলজি জি৬ ওয়ারটার এবং ডাস্ট প্রুফ, তবে এই ডিভাইসটিতে বেশ কয়েকটি MIL-810G টেস্ট চালানো হয়েছে। মানে হচ্ছে হাত থেকে পড়ে গিয়ে, একসিডেন্টাল ড্রপ কিংবা হার্ডকোর ব্যবহারের জন্য ফোনটি Note FE এর থেকে বেশ ব্যবহার উপযোগী।
আর এলজি জি৬ এর পেছনেরর ক্যামেরায় ২টি লেন্স লাগনো হয়েছে। সেকেন্ডারি লেন্সটি দিয়ে ওয়াইড এঙ্গেলের ছবি তুলার কাজ আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
টাকা বাঁচাতে চাইলে আপনি এই OnePlus 5 ফোনটি কিনতে পারেন এই বাজেটে। ৪৫ হাজার টাকায় আপনি কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৮৩৫ চিপসেট, ৬ গিগাবাইট অথবা ৮ গিগাবাইটের বিশাল র্যাম, ১৯২০x১০৮০ রেজুলেশনের DCI-P3 Wide Color Gamut ফিচারসমৃদ্ধ ডিসপ্লে পাচ্ছেন এই ডিভাইসটিতে।
এছাড়াও আইফোন ৭ প্লাস এর অনুকরণে এই ডিভাইসের পিছনে দুটি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ফটোর ব্যাকগ্রাউন্ডে 2x Zooming Blur ইফেক্ট এর মজা আপনি নিতে পারবেন। এছাড়াও এই ডিভাইসে রয়েছে ড্যাস চাজিং ফিচার, যেখানে অনান্য স্মার্টফোনের তুলনায় অতি দ্রুত চাজিং হয়। ডুয়েল সিম ফিচার ছাড়াও ডিভাইসে রয়েছে এন্ড্রয়েড মডিফাইড অক্সিজেন অপারেটিং সিস্টেম। তবে নতুন ব্র্যান্ড এবং ওয়াটার ও ডাস্ট রেজিস্টেন্স না থাকায় এই দামে এই ডিভাইসটি কিনবেন কিনা সেটা আপনার একান্তই নিজস্ব ব্যাপার!
মটো জি২ প্লে হচ্ছে মটো জি প্লে এর আপডেটেড সংস্করণ। তবে এই ডিভাইসের মটো জি প্লে এর মতো বিশাল ব্যাটারি লাইফ ফিচারটি দেওয়া হয় নি। তবে মাত্র ৩০০০ mAh ব্যাটারি নিয়েও CNET এর রিভিউমতে এই ডিভাইসটি এলজি জি৬ এবং গ্যালাক্সি এস৮ এর ব্যাটারি লাইফকেও হারিয়ে দিতে পারছে। কারণ মটো জি২ প্লে ডিভাইসের মিড রেঞ্জ হার্ডওয়ার দেওয়া হয়েছে বিধায় কম ক্ষমতার ব্যাটারি নিয়েও বেশিক্ষণ চার্জ ধরে রাখতে সক্ষম হচ্ছে।
মটো জি২ প্লে ডিভাইসটিতে রয়েছে স্ন্যাপড্রাগন ৬২৬ চিপসেট এবং নরমাল 1080P এমোলেড ডিসপ্লে। তবে মটোরোলা কোম্পানির ডিভাইস হওয়ায়, এটাতে কিছু ইউনিক ফিচার রয়েছে। যেমন ডাবল চপ ফ্ল্যাশলাইট অন, ডাবল টুয়িস্ট ক্যামেরা অন সহ মটো ডিসপ্লে আর মটো ভয়েস ইত্যাদি ফিচার।
তবে মটো জি২ প্লে এর সবথেকে মজাদার আর ইউনিক বিষয়টি হচ্ছে এটাতে বিভিন্ন মটো মডস ব্যবহার করা যায়। মটো মডস এর মধ্যে রয়েছে পাওয়ার প্যাক, স্পিকার, প্রজেক্টর, ৩৬০ ডিগ্রি ক্যামেরা সহ বিভিন্ন এক্সট্রা মিনি ডিভাইস যেগুলো মটো জি২ প্লে এর পেছনের ম্যাগনেট এর সাহায্যে লাগিয়ে ব্যবহার করা যায়। ফোনটি বর্তমানে ৪৯৯ ডলারে (৪১হাজার টাকায়) বিক্রি হচ্ছে।
আজকের টিউনের শেষে যে ডিভাইসটি নিয়ে কথা বলতে চাই সেটি হলো আমার পারসোনাল পছন্দের ব্রান্ড হুয়াওয়ের মেইট ৯ ডিভাইসটি। হুয়াওয়ে হচ্ছে একটি চীন দেশীয় বৃহৎ নেটওয়ার্কিং এবং টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি। হুয়াওয়ে মেইট ৯ ডিভাইসে রয়েছে 4000mAh ব্যাটারি, বিশাল এই ব্যাটারি সাথে হুয়াওয়ের নিজস্ব পাওয়ার সেভিং সফটওয়্যার দিয়ে আপনি বিশাল ব্যাটারি লাইফের মজা উপভোগ করতে পারবেন। ডিভাইসটির ক্যামেরায় রয়েছে Leica কোম্পানির ছোঁয়া! পেছনে ২০ মেগা এবং ১২ মেগাপিক্সেলের দুটি ক্যামেরা রয়েছে। রয়েছে হুয়াওয়ের নিজস্ব ফাস্ট চার্জিং ফিচার।
৫.৯ ইঞ্চির IPS LCD ডিসপ্লে, কোরটেক্স অক্টাকোর চিপসেট, ৪ গিগাবাইট র্যাম এবং ৬৪ গিগাবাইটের স্টোরেজ সুবিধা সম্পন্ন এই ডিভাইসটি আপনার নিত্যদিনের প্রায় সব কাজের জন্যেই পারফেক্ট! তবে Note FE এর মতো এই ডিভাইসে স্টাইলাস নেই! আর হুয়াওয়ে ডিভাইসগুলো তাড়াতাড়ি গরম (Heat) হয়ে যায় বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন! বাংলাদেশে অফিসিয়ালি এখনো হুয়াওয়ের এই ডিভাইসটি লঞ্চ হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ৬০ হাজারের বাজেটের ভিতর ডিভাইসটি শীঘ্রই আপনি পেয়ে যাবেন।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!