السلام عليكم আসসালামু আলাইকুম।
সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি সাইটের সবাইকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আজকের টিউন। গত কালকের টিউনে মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারের বিষয় নিয়ে একটি টিউন করেছিলাম এখানে। সেখানে মোবাইল ডিভাইস কি, মোবাইলের ইতিহাস, সংজ্ঞা, শ্রেণীসহ তথ্যাদি আলোকপাত করেছিলাম। তথাপি তার সাথে যোগ হয়েছিল মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহারের উপকারিতা প্রসঙ্গে। যাইহোক মোবাইল ব্যবহারের উপকারিতা সম্পর্কে অনেক কিছুই জানলাম। এবার আলোকপাত করব মোবাইল ডিভাইসের অপব্যবহার সম্পর্কে। অপব্যবহার সম্পর্কে কম-বেশী অনেকেরই ধারনা আছে কিন্তু অপব্যবহারের মধ্য এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা বর্তমানে শিউরে উঠার মত। নিচের আলোচনা অংশ পাঠ করলেই বুঝতে পারবেন কি ধরনের লাভ-ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি মোবাইল ডিভাইস ব্যবহারের জন্য!!
এত দীর্ঘ আলোচনার প্রেক্ষিতে জানতে পারলাম মোবাইল ফোনের নানাবিধ ব্যবহার তথা উপকারের দিকটা নিয়ে। উপকারের প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করে বোধ হয় অনেকের মনটা চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ! কিন্তু এতসব বাদ দিয়ে এবার মোবাইল ব্যবহারের অপকারিতার বিষয়টি আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছি। এবার হয়ত আমার প্রতি অনেকেই ক্ষেপে উঠবেন, এবং বলবেন যে এই মিয়া অপকারিতা কোন বিষয় হল নাকি!! অপকারিতা যা হচ্ছে তা মুলত আমাদের মত ব্যবহারকারীর দ্বায়বদ্ধতার কারনেই হচ্ছে। হ্যা ভাই ঠিক কথা বলেছেন বিজ্ঞানের আর্শীবাদ স্বরুপ যে বিষয়ের এত উপকারিতা নিয়ে ঢাকঢোল তথাপি তার উপর আবার কাটার ঘাঁ! উদাহরন হিসাবে বলা যায় কমি্ুটার ব্যবহারের মত মোবাইল ব্যবহারেরও কিছু অপকারিতা তথা কুফল দিক রয়েছে। তাহলে বিষয়গুলো রিভিউ করি কেমন?
১) বিজ্ঞানীদের মতে, একটি পরমানবিক চুল্লির যে বিপদ তার থেকে মোটেও কম নয় এই ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড এর ক্ষতি। যাদের করোটি যত পাতলা, তাদের মোবাইল এফেক্ট তত বেশি। ব্রেন টিউমার থেকে শুরু করে নার্ভাস সিস্টেম ব্রেকডাউন, হার্ট অ্যাটাক সব কিছুরই সম্ভবনা বেড়ে চলেছে।
২) মোবাইল ফোন ব্যবহার এর ফলে আমাদের মস্তিস্কের একটা অংশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। তার ফলে মস্তিষ্কের টিস্যু গুলি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। মগজেও থাকে তার প্রতিক্রিয়া।
৩) ঝড়ের সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে সমূহ বিপদ দেখা যেতে পারে।
৪) বুক পকেটে মোবাইল রাখলে হার্টের সমস্যা হবার সম্ভবনা বেশি থাকে।
৫) ইয়ার ফোন ব্যবহার না করে, কানের গোড়ায় রেখে মোবাইল এ বেশি কথা বললে কানে কম শোনা এমনকি বধিরতার আশঙ্কা পর্যন্ত থাকতে পারে।
৬) বন্ধ্যাত্ব বাড়ছে। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করলে মুখে ক্যানসার বা মেলিগনানট টিউমার এর ঝুঁকি বাড়ে।
৭) শিশুদের মস্তিস্কের কোষ নরম বলে তাদের মারত্মক ক্ষতি হচ্ছে। বিজ্ঞানী হাইল্যান্ড দেখিয়েছেন, তড়িৎ চুম্বকীয় দূষণের কারনেই শিশুরা এপিলেপসি ও অ্যাজমায় ভুগছে।
৮) লেফ সেলফড তথ্য-প্রমানের ভিত্তিতে সুদৃঢ় হয়ে যথেষ্ট জোরের সঙ্গে বলেছেন, সেলফোন এর প্রতিটা কল আমাদের মস্তিস্কের ক্ষতি করে। এমন কি প্যাসিভ স্মকারদের মত যে লোকটা মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে না কিন্তু মোবাইল ব্যবহারকারির কাছে রয়েছে সেও ক্ষতি গ্রস্থ হচ্ছে। ফ্রান্সে সান্তিনি আর সুইডেন এ সানডস্তরম আর মাইলড এর সমীক্ষার ফলাফল লেফ সেলফড এর বক্তব্য কে আরও সুদৃঢ় করে তোলে। এঁদের সমীক্ষা অনুযায়ী, সেলফোন ব্যবহারকারি, ২৫% পর্যন্ত বিভিন্ন স্নায়বিক সমস্যায় ভুগছেন।। যেমন, মাথাঘোরা, ক্লান্তি, স্মৃতি শক্তি হ্রাস, মাথা ঝিম ঝিম করা, ক্লান্তি প্রভৃতি।
বড়দের তুলনায় বাচ্চাদের বেশি ক্ষতি হয়। তাই বাচ্চাদের মোবাইল থেকে দুরে রাখুন। কথা বলতে বলতে এক সময় ব্রেইন ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে বলে এদের ক্ষতির পরিমান বেশি থাকে।
মোবাইল ফোন যেমন বিভিন্ন দিক দিয়ে আমাদের উপকার করছে, একইভাবে স্বাস্থ্যগতভাবে আমাদের নানাদিক দিয়ে ঝুঁকির মুখোমুখি করছে। চলুন জেনে নেয়া যাক অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে স্রিষ্ট ১০ স্বাস্থ্যঝুঁকি।
ক। মানসিক চাপ
আমরা ফোন ব্যবহার করি যাতে সব সময় অন্যদের সাথে যোগাযোগ রাখা যায়। কিন্তু এটি একইসাথে আমাদের মানসিক প্রশান্তিও কেড়ে নেয়। কিভাবে? আমরা সব সময় আশা করতে থাকি এই বুঝি ফোনটি বেজে উঠবে কিংবা কেউ হয়তো মেসেজ দিবে।
সচেতনভাবে না হলেও আমাদের অবচেতন মন আমাদের সব মনোযোগ এই ক্ষুদ্র ফোনটির কাছে কেন্দ্রীভূত করে। এধরণের চিন্তার কারণে এক ধরণের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন এক ঘন্টার জন্য ফোনটি সুইচ অফ করে রাখুন। এটি আপনাকে মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দিবে।
খ। অমনোযোগিতা
গবেষকরা দেখেছেন, বেশিরভাগ মানুষই প্রয়োজন না থাকলেও তাদের মোবাইলের মেনু স্ক্রিন, ই-মেইল বা এপ্লিকেশন চেক করার জন্য বার বার ফোন চেক করে। যদিও নতুন কোন ইমেইল, এস এম এস কিংবা নোটিফিকেশন আসার সম্ভাবনা হয়তো থাকে না বললেই চলে।
এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যারা সারাক্ষণ তাদের ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তারা যে কোন জরুরী পরিস্থিতিতে অন্যদের তুলনায় ২৩% দেরিতে সক্রিয় হন। যে কারণে বিশ্বের বহু দেশে গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলা আইনত নিষিদ্ধ। বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, মোবাইল ফোন আমাদের কোন কাজের প্রতি একাগ্রতা নষ্ট করে দেয়। এর ফলে যে কোন কাজ করতে আমাদের স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে।
গ। মস্তিষ্কের ক্যান্সার
মোবাইল ফোন থেকে সৃষ্ট তেজষ্ক্রিয় রশ্মি আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ধীরে ধীরে মেরে ফেলতে পারে। মোবাইল ফোন থেকে সৃষ্ট বেতার তরঙ্গ আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলোকে উত্তপ্ত করে তোলে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই তরঙ্গকে কারসিনোজেনিক বা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী বলে ঘোষণা দিয়েছে। অর্থাৎ মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার মস্তিষ্কের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
ঘ। হার্টের সমস্যা
গবেষণায় জানা গিয়েছে, মোবাইল ফোন থেকে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয়তা মানুষের হার্টের স্বাভাবিক কর্মকান্ডকে ব্যহত করে। এর ফলে রক্তের লোহিত রক্তকণিকাতে থাকা হিমোগ্লোবিন আলাদা হয়ে যেতে থাকে।
এছাড়া হিমোগ্লোবিন রক্তের লোহিত কণিকার মাঝে তৈরি না হয়ে দেহের অন্যত্র তৈরি হতে থাকে, যেটি বিভিন্ন ধরণের শারীরিক সমস্যা তৈরি করে। যে কারণে বুক পকেটে ফোন রাখা একদমই অনুচিত। এছাড়া যারা হার্টে পেসমেকার বসিয়েছেন তাদের ক্ষেত্রেও মোবাইল ফোন ব্যবহারে যথেষ্ঠ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
ঙ।সাধারণ অসুস্থতা
আপনার মোবাইল ফোনের কারণেও কিন্তু আপনি অসুস্থ হতে পারেন! কিভাবে? আপনি সারাক্ষণই আপনার প্রিয় ফোনটি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এতে ধূলোবালি তো জমা হয়ই, সাথে থাকে অনেক রোগ-জীবাণুও। খাবার সময় হলে আপনি হয়তো খুব ভালভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আসলেন। খাবার খাওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে আপনার ফোন বেজে উঠলো কিংবা একটা মেসেজ এলো, আপনি সেটার রিপ্লাই দিয়ে এসে খেতে বসে গেলেন।
আর এরই সাথে মোবাইল ফোন থেকে প্রায় ২০ থেকে ৩০ ভাগ ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাস খাবারের সাথে আপনার দেহে প্রবেশ করলো। আপনি হয়ত সাথে সাথে অসুস্থ হবেন না, কিন্তু পরবর্তীতে যেকোন অসুস্থতার জন্য এই বিষয়গুলোই দায়ী থাকবে।
চ। স্নায়বিক সমস্যা
মোবাইল ফোন থেকে নিঃসরিত তেজস্ক্রিয় রশ্মি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে আমাদের ডি এন এ-কে। কোন কারণে মস্তিষ্কের কোষের ডি এন এ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা স্নায়ু সংক্রান্ত বিভিন্ন শারীরিক কাজের ক্ষতিসাধন করে।
মোবাইল ফোনের তেজস্ক্রিয়তা মস্তিষ্কে মেলাটনিনের পরিমাণ হ্রাস করে, যার ফলে বিভিন্ন স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া এটি এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত যে, মোবাইল ফোন থেকে নিঃসরিত তড়িত-চৌম্বকীয় তরঙ্গের কারণে অনিদ্রা, আলঝেইমার ও পারকিনসন’স ডিজিজের মত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
ছ। শুক্রাণুর গুনগত মান ও পরিমাণ হ্রাস
এখনকার সময়ে ছেলেদের প্রায় সবাই নিজেদের প্যান্টের পকেটে মোবাইল ফোন রাখে। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যেসব পুরুষ বা ছেলে খুব বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন তাদের শুক্রাণু খুব দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া শুক্রাণুর ঘনত্ব হ্রাস পেতে থাকে। আমরা যখন ফোনে কথা বলার পর ফোন পকেটে রেখে দিই, তখন এটি কিছুটা উত্তপ্ত অবস্থায় থাকে। এর ফলে অন্ডকোষের চারপাশে তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
অথচ শুক্রাণু দেহের ভেতরে মাত্র ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সক্রিয় থাকে। তাই অতিরিক্ত তাপমাত্রা শুক্রাণুর জন্য ক্ষতিকর। আবার আমাদের শরীর থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে উপকারী তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরংগ বের হয়, কিন্তু মোবাইল ফোনের উচ্চ মাত্রার তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ আমাদের দেহের তড়িৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গের নিঃসরণকে বাধাগ্রস্ত করে। যার ফলে অস্বাভাবিক আকৃতির শুক্রাণু তৈরি হয়।
জ। শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া
যারা দীর্ঘক্ষণ মোবাইল ফোনে কথা বলেন তাদের কানের বিভিন্ন সমস্যা যেমন-কানে কম শোনার ঝুঁকি অনেক বেশি। বর্তমানে যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ বছর, তাদের মাঝে শ্রবণশক্তি হ্রাসের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। চিকিৎসকদের মতে, মোবাইল ফোন ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির ব্যপক ব্যবহার এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। যারা দৈনিক ২-৩ ঘন্টার চেয়ে বেশি ফোনে ব্যস্ত থাকেন তারা ৩ থেকে ৫ বছরের মাথায় আংশিকভাবে বধির হয়ে যান। তাই এটি রোধ করতে আপনার ফোনের রিং-টোন যতটুকু সম্ভব কমিয়ে রাখুন ও ফোনে খুব বেশি গান শোনা থেকে বিরত থাকুন।
ঝ। চোখের সমস্যা
যারা চোখের খুব কাছাকাছি দূরত্বে রেখে ফোন ব্যবহার করেন তারা ধীরে ধীরে মাথাব্যথা, চোখ ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা-এরকম নানা রকম সমস্যায় আক্রান্ত হন। এজন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হলো ফোনের বিভিন্ন লেখার ফন্ট সাইজ বাড়িয়ে দেয়া, চোখ থেকে ন্যুনতম ১৬ ইঞ্চি দূরত্বে ফোন ব্যবহার করা। আর যদি বেশ দীর্ঘ কোন লেখা ফোনে পড়তে হয়, তবে কিছুক্ষণ পর পর ২০ সেকেন্ডের জন্য চোখকে বিশ্রাম দিন।
ঞ। গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যেসব নারীরা তাদের গর্ভাবস্থায় খুব বেশি মাত্রায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন, তাদের গর্ভস্থ ভ্রূণের মস্তিষ্কের বিকাশ ব্যহত হয়। এছাড়া পরবর্তীতে এই শিশুদের মাঝে আচরণগত অনেক সমস্যাও দেখা দেয়। তাই গর্ভাবস্থায় মায়েদের উচিত মোবাইল ফোন যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলা।বর্তমান সময়ে মোবাইল ফোনকে একেবারে জীবন থেকে সরিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু একটু সচেতন হলেই আমরা মোবাইল ফোন ব্যবহারের ফলে তৈরি হওয়া স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে নিজেদের বাঁচাতে পারি।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গ্রাহকদের নানান সুযোগ-সুবিধা দিয়ে প্রচুর মুনাফা লুটছে বহুজাতিক অপারেটর কোম্পানিগুলো। ব্যবসায়িক স্বার্থে তাদের দেওয়া নানা প্যাকেজ সুবিধা নিতে গিয়ে এর অপব্যবহারের দিকটাও বৃদ্ধি পাচ্ছে গ্রাহকদের মধ্যে। কয়েকটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি তরুণ প্রজন্মকে টার্গেট করে বিশেষ ধরনের সিম কার্ড বাজারে ছাড়ে। পূর্বের অভিজ্ঞাতে দেখা গিয়েছে তাদের বিশেষ প্যাকেজে রাতভর স্বল্প মূল্যে কথা বলার সুযোগ নতুন প্রজন্মের জন্য বিশেষ হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল যা পড়ালেখা ও ঘুম বাদ দিয়ে অনেক তরুণ-তরুণী রাতভর কথা বলতেন। আমি যখন বেশ ছোট ছিলাম প্রায় ১০-১২ বছর পূর্বে তখন একটেল নামে একটি অপারেটর ছিল (বর্তমান মালিকানা পরিবর্তন করে রবি) তারা ৬০০/- টাকাতে জয় নামে ডাবল সীমের প্যাকেজ চালু করেছিল যেখানে একজন আরেকজনের সাথে সারারাত কথা বললেও ৫ টাকার বেশী খরচ হত না। তথাপি ফূর্তি নামে একটি প্যাকেজ ছিল যেখানে উল্লেখ ছিল “কল করলেও বোনাস, কল ধরলেও বোনাস” ফলে দেখা যেত কারনে-অকারনে ফোন কল এসেই যেত। তরুণে-তরুণীদের টার্গেট করে গ্রামীণ ফোনের একটি প্যাকেজ উঠেছিল ডিজুস নাম করে। সেই সময়ই শুনে ছিলাম ডিজুস এর প্যাকেজ কিনতে নাকি ১৮০০৳ ব্যয় হচ্ছে। ঐ ডিজুসের সুবিধা ছিল একই সারারাত প্রেমালাপ আর তার সাথে তো ছিল ২০০০ এসএমএস।
যাইহোক ঐ সময় পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে, বুড়া-বুড়ীড়াই নাকি গ্রামীনের অন্য সব প্যাকেজ বাদ দিয়ে ডিজুজের প্রতি মায়ার টান ধরেছিল। আসলে বোধ হয় সেই সময় এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে, মোবাইলে কথা বলার জন্য বাংলাদেশী হিসাবে গিনেস বুকে নাম উঠাটাই বাকি ছিল। পরবর্তীতে সচেতন নাগরিক মহল, সংবাদ পত্র ও মিডিয়ার পৃষ্ঠকতায় সরকার সহ উদ্ধতন মহলে টনক নড়ে ফলে এক সময় ঐ অফরসমূহ মোবাইল অপারেটর গুলো বন্ধ করতে বাধ্য হয়।
আমার এই টিউন পড়ে কিংবা কোন ভূক্ত ভোগীর টিউমেন্টর প্রতিত্তরে হয়ত তারা বলবেন, ভাইরে শুধু কি অামাদের একার দোষ দিলে হবে? আমরা তো ব্যবসা করতে এসেছি এবং সরকারের সব চেয়ে বেশী ভ্যাট/ট্যাক্স প্রদান করি। সুতরাং ব্যবসা করতে গিয়ে এমন করাটাও তো স্বাভাবিক! তোমরাও যদি আমাদের মত কোম্পানী দিতে তাহলে বুঝতে ঠ্যালা!! ক্যান! আমরা কি কাউকে জোর-দবস্তি করছি যে, তোমাদের এই অফারটা কিনতেই হবে?? আরে ভাই সাবান কোম্পানীই তো অফার দিচ্ছে এটা কিনলে ওটা ফ্রি!! কিন্তু কেউ খবর রাখবেনা মাল-মিডিসিনের কোন ব্যাপার আঝে কিনা!! যাও অভিযোগ করতে হলে সরকারি মহলে গিয়ে করো ক্যামন!!
২। ছাত্রছাত্রীরা আজকাল মেমরিকার্ড সমৃদ্ধ মোবাইল ফোনে বইয়ের স্টিল পিকচার নিয়ে আসছে পরীক্ষার হলে। সময় দেখার নাম করে মোবাইল ফোনের ইমেজ ভিউয়ার জুম করে দেখে নিচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বা চিত্রগুলো। এক কথায় নকল করার আধুনিক মাধ্যম হিসেবে তারা বেছে নিয়েছে মোবাইল ফোনকে। কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে টয়লেটে যাওয়ার নাম করে পরীক্ষার হল থেকে বের হয়ে ফেসবুকের ওয়ালে সার্কুলেশন করছে। ছোট স্পিকার কানে লাগিয়ে ওয়্যারলেস কানেকশনে উত্তর জেনে নিচ্ছে বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে। নকল করার অপরাধ থেকে বাঙালি যখন পরিত্রাণের উপায় খুঁজছে, ঠিক তখন মোবাইল ফোনের ওপর ভর করে নকল প্রবণতার বিকাশ ঘটছে মহামারী আকারে।
সময়ের পরিক্রমায় মোবাইল ফোন প্রয়োজনীয় বস্তুতে পরিণত হয়ে পড়েছে।দ্রুত যোগাযোগের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন এখন অপরিহার্য। নানান সুবিধা রয়েছে মোবাইল ফোনে। চাইলেই পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি। প্রযুক্তির এই ব্যাপক উৎকর্ষ একদিকে যেমন সুফল বয়ে এনেছে, তেমনি কিছু অপব্যবহারও হচ্ছে। তবে এর দায়ভার সম্পূর্ণ এর ব্যবহারকারীর। তথাপি নিজেদেরও সচেনতার প্রয়োজন রয়েছে অপরদিকে মোবাইলের মাধ্যমে যে অনাকাংখিত ঘটনা গুলো ঘটছে যেমন ছোট-বড় ক্রাইম গুলোকে সরকারি নজরদারি ও কঠোর আইন-শাসনের বাস্তবায়ন দরকার। তথাপি দেশে যারা কিশোর পর্যায়ে আছি, অনেকেই মোবাইল ব্যবহার করে থাকি। এখন প্রশ্ন হল- কিশোরেরা কোথায়/কোন সময় মোবাইল ব্যবহার করবেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ব্যবহার করা যাবে কিনা, কিশোরদের মোবাইল ক্রয় করতে অভিভাবক প্রত্যয়ন পত্রের/অনুমতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়সহ সরকারিভাবে একটি গ্যাজেট প্রকাশ করলে বোধ হয় অনেকেই উপকৃত হব।
পরিশেষে আলোচনা করতে করতে একদম টিউনের শেষ পর্যায়ে। আশা করি সম্মানীত ভিজিটরগণ এই টিউন পাঠ করে মোবাইল সম্পর্কে নেতিবাচক ও ইতিবাচক বেশ কিছু ধারনা পেয়েছেন। তথাপি যারা দীর্ঘক্ষণ ধৈয্যের সাথে টিউনটি দেখলেন তাদের সবাইকে অসংখ্যক ধন্যবাদ। টিউন সম্পর্কে কোন অভিমত, পরামর্শ থাকলে তা সাদরে গ্রহন করা হবে। অপরদিকে প্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি সাইটের সবাইকে জানাচ্ছি ঈদুল আযহার অগ্রীম সালাম ও শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক! আপনাদের অনেকের মতই আমাকে ঈদে ব্যস্ত সময় পার করতে হবে, পরিবার-পরিজন, বন্ধুদের সাথে সময় দিতে হবে। তথাপি গ্রামের বাড়ীতে আবার নেটের সমস্যা সুতরাং টিউন করার ইচ্ছা থাকলেও করা হবে না, বেশ কয়টা দিন টিটি হইতে অনুপস্থিত থাকতে হবে। আপনারা আমার জন্য দোয়া রাখবেন, আপনাদের জন্যও কুশল প্রার্থনা করি। সবার এই ঈদ আনন্দ যেন সুস্থ ও সুন্দর হয়। সবাইকে আবারো ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ এখানেই শেষ করছি। -আল্লাহ্ হাফেজ-
আমি এএমডি আব্দুল্লাহ্। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 157 টি টিউন ও 1046 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
সম্মানীয় ভিজিটর বন্ধুগন! সবাইকে আন্তরিক সালাম ও ভালবাসা। আশা করি ভাল আছেন। পর সংবাদ যে, আমরা একটি ব্লগ সাইট তৈরি করেছি। সাইটটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম শিক্ষা ও প্রযুক্তি নির্ভর। প্রযুক্তি, শিক্ষা, কম্পিউটার বিষয়ক যেমনঃ অনলাইন ইনকাম, ফ্রিল্যান্স, টিউটোরিয়াল, মুভি, গেমস, সফটওয়্যার, ভ্রমন, ইতিহাস, ভূগোল, কার্টুন, ধর্ম, টেক সংবাদ, এবং সংবাদপত্র ফিউচার...
অসাধারণ হয়েছে! আমি কি আপনার পোস্টটি আমার ব্লগে শেয়ার করতে পারি? আপনার নাম এবং ব্লগ লিংক সহ শেয়ার করবো। আমার ব্লগঃ zubytech.com