যত্ম নিন আপনার স্মার্ট ফোনের

প্রতিদিন অনেক আকার এবং স্পেসিফিকেশনের স্মার্টফোন বাজারে আসছে। প্রযুক্তির দৌড় এখন বলা চলে এতটাই দ্রুত যে ক্রেতারা কোনটা রেখে কোনটা কেনা উচিৎ সিদ্ধান্ত নিতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছেন। প্রায় কাছাকাছি মূল্যের একাধিক ডিভাইস পছন্দের তালিকায় থেকে এই সিদ্ধান্তের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন। আর ক্রমাগত নতুন নতুন ডিভাইস বাজারে আসার ফলে অনেকেই আবার একটি ডিভাইস কেনার পর আফসোস করেন কেননা সেই দামেই হয়তো এক সপ্তাহ পর আরও ভালো কনফিগারেশনের ডিভাইস বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে, যাই হোক  একটা সময় কিন্তু একজন স্পেসিফিক ক্রেতার হাতে একটি স্মার্টফোন চলেই আসে। ভালো বা মন্দ, নতুন বা পুরাতন যেরকমই হোক, আমরা তো প্রায় সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকি, তাই নয় কি? আর আমাদের প্রত্যেকের ডিভাইসই কিন্তু আমাদের কাছে খুব প্রিয় হয়ে থাকে। তাই, এই প্রিয় এবং অবশ্যই প্রয়োজনীয় ডিভাইসটির যতœ নেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই, আজকের ব্লগটি আমি সাজিয়েছি এই বিষয়টিকে পুঁজি করেই। আমি আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো এমন কিছু সহজ উপায় নিয়ে যেগুলো অনুসরণ করলে আপনার স্মার্টফোনটি ভালো থাকবে, থাকবে কিছুটা হলেও বেশি নিরাপদ। যদিও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস যখন তখনই প্রায় কোন কারণ ছাড়াই নষ্ট হয়ে যেতে পারে, তবে সেটা হচ্ছে ডিভাইসটির ইন্টার্নাল ব্যাপার। কিন্তু আমরা তো অন্তত বাইরের নিরাপত্তা বা যত টুকু নিশ্চিত করতে পারি, তাই না? তাহলে চলুন, কথা না বাড়িয়ে জেনে নেয়া যাক এমন কিছু উপায় যা আপনার স্মার্টফোনটিকে ভালো রাখবে। বর্তমানে স্মার্টফোনের ব্যাটারির দিকে অনেকেই নজর দিচ্ছেন। ক্যামেরা, র‌্যাম, ডিসপ্লে, প্রসেসরের পাশাপাশি ব্যাটারির ক্ষমতাকেও অনেক ব্যবহারকারি প্রাধান্য দিচ্ছেন। নতুন স্মার্টফোন কেনার পর অনেক বিক্রেতার কাছে নিশ্চয়ই আপনি শুনেছেন সেই ডিভাইসটিকে বাসায় নিয়ে ৮ ঘন্টা (ক্ষেত্রে বিশেষে ৬ ঘন্টা) চার্জ দিয়ে নিতে হবে, এরপর সেই নতুন ডিভাইসটি ব্যবহার করা উত্তম। এখনকার স্মার্টফোনগুলো কিন্তু চার্জ নেয়ার সময় এর ব্যাটারির পারসেন্টেজ প্রদর্শন করে তা বন্ধ বা চালু অবস্থায় থাকুক না কেন। তাই, আপনি নতুন ডিভাইসটি কেনার পর ঠিক ততক্ষণই ডিভাইসটি চার্জে রাখবেন যতক্ষণ তা শতভাগ পূর্ণ না হয়, এবং শতভাগ পূর্ণ হলে আপনি ব্যবহার শুরু করতে পারেন। কেননা, আমি অনেক টেক ব্লগ, ফোরাম খুঁজেও এই ৮ বা ৬ ঘন্টার কাহিনী পাইনি বরং এই তথ্য জানতে পেরেছি যে অতিরিক্ত সময় ধরে ডিভাইস চার্জে রাখলে তা আরও ব্যাটারির আয়ুষ্কাল কমিয়ে দেয়। তেমনি ভাবে, আপনি যদি আপনার ডিভাইসটি প্রয়োজনীয় চার্জ না দিয়েই চার্জিং ক্যাবল খুলে ব্যবহার করতে থাকেন সেক্ষেত্রেও তা ব্যাটারির আয়ুষ্কাল কমিয়ে দেয়। তাই সব সময় ২০ শতাংশ চার্জ থাকা কালীন অবস্থায় চার্জে দেয়া ভালো এবং শতভাগ চার্জ হলে প্লাগ থেকে ডিভাইসটি খুলে নেয়া উত্তম। ব্যাটারি লাইফ ভালো রাখতে চাইলে আপনি মাঝে মাঝে আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি পুরাটা ড্রেইন করে (০% বা ১%) শতভাগ চার্জে দিতে পারেন, তাহলে ব্যাটারি ভালো থাকে। স্মার্টফোনের সবচাইতে বড় সৌন্দর্য হচ্ছে এর ডিসপ্লে। চকচকে পরিষ্কার একটা ডিসপ্লে স্মার্টফোনকে অনেক বেশি স্মার্ট করে দেয়। তাই, এই ডিসপ্লের যতœ নেয়াটা এক প্রকারের অবশ্য করণীয় বিষয়ের মধ্যেই পরে। এখনকার প্রায় মিড রেঞ্জের সব ডিভাইসেই নানা ধরণের গ্লাস প্রোটেকটর ব্যবহার করা হয়। যেহেতু পরিষ্কার স্ক্র্যচলেস একটি ডিসপ্লে আপনার স্মার্টফোনটির লুক ধরে রাখে অনেকটাই তাই কেনার সময় সম্ভব হলে ভালো মানের গ্লাস প্রোটেকশন সম্বলিত স্মার্টফোন কিনবেন, আর যদি না পারেন তবুও সমস্যার কিছু নাই। কিছুটা এক্সট্রা সতর্ক থাকতে হবে শুধু মাত্র। তবে যাদের স্মার্টফোনে গ্লাস প্রোটেকশন রয়েছে যেমন ধরুন, কর্নিং গরিলা গ্লাস তাদের ডিসপ্লে স্ক্র্যাচপ্রুফ দেখে নিশ্চিন্তে বসে থাকলে কিন্তু ভুল করবেন। যদি আপনার স্মার্টফোনের ডিসপ্লে আপনি স্ক্র্যাচলেস রাখতে চান তবে অবশ্যই ভালো মানের একটি স্ক্রিন প্রোটেক্টর লাগিয়ে নিবেন। ইউটিউবের কল্যাণে অনেক ব্যাপারই এখন বোঝা অনেক সহজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কর্নিং গরিলা গ্লাসে (বিভিন্ন রকমের বিজ্ঞাপনে যেমন দেখানো হয়) ছুড়ি, চাবি, কাঁচি ইত্যাদি স্ক্র্যাচ ফেলতে পারেনা! এমনকি অনেক ভিডিওতে দেখেছি হ্যামার টেস্টেও গরিলা গ্লাসের কিছু হয়না এটা ভুল। বিভিন্ন রকম পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে এই সামান্য বালির কনাই গরিলা গ্লাসে স্ক্র্যাচ ফেলতে সক্ষম। আর অন্যদিকে যাদের কোন প্রকার গ্লাস প্রোটেকশন নেই তারা বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায় টেম্পার্ড গ্লাস প্রোটেকশন নামে একটি প্রোডাক্ট যা ব্যবহার করতে পারেন। এটি মূলত আপনার স্ক্রিনের উপরে একটি অতিরিক্ত গ্লাসের লেয়ার যোগ করে আপনার স্ক্রিনকে সুরক্ষিত রাখে। তবে সমস্যা হচ্ছে, সব ডিভাইসের জন্য এটি পাওয়া কিছুটা কষ্টসাধ্য এবং মাঝে মাঝে পাওয়াই যায়না। সময়ের সাথে স্মার্টফোন কিছুটা ধীর গতির হয়ে যাওয়া একটি অতি স্বাভাবিক বিষয়। কেননা, নতুন অবস্থায় আপনার ডিভাইসটি থাকে একদম ফ্রেশ, এতে কোন অতিরিক্ত অ্যাপ্লিকেশন, অ্যাপ্লিকেশনের ডেটা বা ক্যাশ কোন কিছুই জমা থাকেনা। এজন্য স্মার্টফোনটি থাকে অনেক ফাস্ট। তবে ডে-টু-ডে ব্যবহারের ফলে প্রয়োজনেই অনেক অ্যাপ্লিকেশন আমাদের ইনস্টল করতে হয় এবং সেই অ্যাপ্লিকেশন গুলো ব্যবহারের ফলে আমাদের স্মার্টফোন হয়ে যায় ধীর গতির। তবে আপনি যদি চান যে এই ব্যাপার থেকে মুক্তি পাবেন তবে সংক্ষেপে কিছু টিপস রইল আপনাদের জন্য, ব্লটওয়্যার আন-ইনস্টল করুন। শুধু মাত্র প্রয়োজনীয় অ্যাপলিকেশন সমূহ ইনস্টল করুন। ইন্টারনাল স্পেস যতটুকু ফাঁকা রাখা সম্ভব ততই ভালো। মাঝে মাঝে ক্যাশ পরিষ্কার করুন, তবে সাবধান! এই প্রসেস করতে গিয়ে অনেকেই ভুলে প্রয়োজনীয় তথ্য হারিয়ে ফেলে। সবসময় হালকা লঞ্চার ব্যবহার করবেন। হালকা বলতে আমি সিম্পল বোঝাতে চাইছি, যেমন অ্যাপেক্স বা নোভা। ব্যাটারি সেভার, র্যাম ক্লিনার, ক্যাশ ক্লিনার – ইত্যাদি টাইপের অ্যাপ এবং উইজেট আন-ইন্সটল করুন। মাঝে মাঝে প্রয়োজনীয় ডাটা ব্যাক-আপ রেখে ফ্যাক্টরি রিসেট করুন। উপরের টিপসগুলো খুব সহজেই করা সম্ভব এবং এগুলো চমৎকার কাজে দেয়। শুধু বাইরে ফিটফাট রাখলেইতো হবেনা ভাই, ভেতরটাও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, তাহলেই না হবে পরিপুর্ন স্মার্টফোন! ব্যবহার করতে পারেন ফ্লিপ-কভার বা বিভিন্ন ধরনের কভার। এতে করে আপনার ডিসপ্লে তো বটেই বরং ফোনটিরও একটা আলাদা সুরক্ষা লেয়ার সৃষ্টি হবে। হঠাৎ হাত থেকে ডিভাইসটি পরে গেলে শক থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করবে। এখনতো বলা নেই কওয়া নেই হুটহাট বৃষ্টি নামে! এজন্যে পলিথিন রাখতে পারেন সাথে, যেন হঠাৎ বৃষ্টিতে যদি আপনি বাইরে থাকেন তখন ডিভাইসটি রেখে দিতে পারেন তার মধ্যে, এক্ষেত্রে জিপ ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। খুবই কম, দেখতেও ভালো এবং বার বার ব্যবহারও করা যাবে। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে মানিব্যাগের মধ্যেই ঝামেলা ছাড়া এঁটে যায়। ধুলো বালি শুধু ডিসপ্লেতেই নয় বরং যেতে পারে ডিভাইসের চার্জারের বা অডিও জ্যাকের মধ্যে দিয়েও। এজন্য যদি পারেন তবে আগের মত পুরো ঢেকে রাখে এরকম কভার ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও অডিও জ্যাকের জন্য একটি প্রোডাক্ট পাওয়া যায় যার নাম অডিও জ্যাক প্রোটেক্টর কিনে ব্যবহার করতে পারেন। দেখতেও ভালো লাগে, ধুলো বালি থেকে রক্ষাও করবে। ছোট্ট ছোট্ট সহজ সহজ কিছু টিপস অনেকেই হয়তো আপনাদের মধ্যে ইতিমধ্যেই বিষয়গুলো জেনে থাকবেন তবে নতুন ব্যবহারকারির সংখ্যা যখন বাড়ছে তখন আশা করি অল্প কজনের হলেও টপিকটি আপনাদের কাজে আসবে ।

Level 0

আমি আবদুল্লাহ শ্রাবণ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 14 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস