স্মার্টফোন জিনিসটা আজকাল আর সাথে না থাকলেই নয়, বিশেষ করে তরুন প্রজন্মের দৈনন্দিন জীবনযাপনের সাথে এটি এখন জড়িয়ে গেছে ওতপ্রোতভাবে। হাজার পাঁচেক টাকা থেকে শুরু করে লাখখানেক টাকার স্মার্টফোন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এদের দাম মূলত নির্ভর করে কনফিগারেশন আর স্ক্রীন কোয়ালিটির উপর। একেক ফোনে ব্যাবহার করা হয় একেক প্রযুক্তির ডিসপ্লে স্ক্রীন। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো লাখ লাখ ডলার খরচ করে চলেছে উন্নত প্রযুক্তির ডিসপ্লে উদ্ভাবনের জন্য। তবে বর্তমানে বাজারে উন্নত প্রযুক্তির স্ক্রীন সম্বলিত স্মার্টফোন নেহায়েত কম নয়। গুণে,মানে আর সুবিধার দিক দিয়ে এদের মধ্যেও রয়েছে ভিন্নতা। চলুন জেনে নিই বর্তমানের সেরা দশ প্রযুক্তির স্ক্রীন সম্পর্কেঃ
১.এলসিডি
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনের জন্য বহুল প্রচলিত ফ্ল্যাট প্যানেল প্রযুক্তির ডিসপ্লে হল এলসিডি বা, লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে। এটি লিকুইড ক্রিস্টালের স্তর ও ব্যাকলাইটের সমন্বয়ে ছবি প্রদর্শনে ব্যাবহার করা হয়। এই প্রযুক্তিতে ছবির রঙ হয় খুব উন্নতমানের তবে কন্ট্রাস্ট রেশিওর দিক দিয়ে এটি এর প্রতিদ্বন্দ্বী অন্যান্য প্রযুক্তির চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। এছাড়াও, সুপার এমোলিড স্ক্রীনের মতো ডার্কনেস লেভেল কন্ট্রোল করা যায়না, এমনকি সূর্যের আলোতেও এর ব্যাবহারে অসুবিধা রয়েছে।
২. টিএফটি
থিন ফিল্ম ট্রানজিসটর বা টিএফটি স্ক্রীনে রয়েছে এলসিডি ডিসপ্লের তুলনায় সুবিধাজনক উপায়ে পড়ার সুবিধা। এতে প্রতি পিক্সেলে ইলেক্ট্রোডের সংখ্যাও অনেক কম। মূলত কালার স্ক্রীনের কম দামি সেটে এটি ব্যাবহার করা হয়। এর ছবি প্রদর্শনের মান এলসিডি ডিসপ্লের তুলনায় উন্নত।
৩. আইপিএস
ইন প্যানেল সুইচিং বা আইপিএস মূলত এলসিডির উন্নত ভার্সন। উন্নত রঙ ও দর্শন কোণের ক্ষেত্রে সুবিধার জন্য হিটাচি ও এলজির যৌথ উদ্যোগে এটি তৈরি করা হয় । ফলে কোনরকমের কোয়ালিটি লস ছাড়াই যেকোনো এঙ্গেল থেকেই এতে ভালো মানের ছবি দেখা সম্ভব।
৪. রেটিনা
অ্যাপল কর্তৃক উদ্ভাবিত রেটিনা ডিসপ্লেতে মূলত পিক্সেলের আকারের উপর কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে। এতে পিক্সেলের আকার এত ছোট যে মানুষের চোখ এই আকার ধরতে পারেনা। এই পিক্সেল ঘনত্বের কারনে মানুষের চোখ আলাদাভাবে প্রতিটি পিক্সেলের মাঝে ফাঁকা জায়গা বুঝতে পারেনা, ফলে আরও উপভোগ্য উপায়ে ছবি দেখার সুবিধা পাওয়া যায়। এই প্রযুক্তির ডিসপ্লে আইফোন ফোরএস/ফাইভসি/ফাইভএস, আইপ্যাড এয়ার, দ্বিতীয় প্রজন্মের আইপ্যাড মিনি, পঞ্চম প্রজন্মের আইপ্যাড টাচ এবং ১৩" ও ১৫" ম্যাকবুক প্রোতে ব্যাবহার করা হয়েছে।
৫. ওএলইডি
অরগানিক লাইট এমিটিং ডায়োড বা ওএলইডিতে মূলত ব্যাকলাইটের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে নিজ থেকে আলো বিচ্ছুরণের প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয়েছে। ফলে ব্যাটারির উপর চাপ কমে এবং গাঢ় রঙ প্রদর্শনের ক্ষেত্রে মান আরও বাড়ে। এটি অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল ও উন্নত কন্ট্রাস্টের ছবি দিতে পারে খুব কম শক্তি ব্যাবহার করেই। তাছাড়া, এটি এলসিডির তুলনায় পাতলা ও উজ্জ্বলও বটে।
৬. এমোলিড
এমোলিড স্ক্রীন হল ওএলইডির উন্নত ভার্সন যাতে পিক্সেলগুলো ট্রানজিসটর ও ক্যাপাসিটরের সাথে সংযুক্ত থাকে, ফলে পিক্সেল স্টেট সবসময় একই থাকে। এই প্রযুক্তির স্ক্রীন উৎপাদনের খরচ ও শক্তির অপচয় দুটোই ওএলইডির তুলনায় কম।
৭. সুপার এমোলিড
এই প্রযুক্তিটি মূলত এমোলিড এরই মতই। স্যামসাং একে বাজারী নাম দেয়ার জন্যই সুপার এমোলিড নাম দিয়েছে। তবে এতে টাচ-ডিটেকটিং স্তরকে স্ক্রিনের উপরে আলাদা করে বসানোর বদলে স্ক্রীনের সাথে একীভূত করে বানানো হয়,ফলে এতে সূর্যালোক প্রতিফলনের পরিমাণ পাঁচ গুণ পর্যন্ত কমে।
৮.এসএলসিডি
সুপার এলসিডি বা, এসএলসিডি স্যামসাং এর প্যাটেন্ট করা প্রযুক্তি যার অংশবিশেষ এতদিন সনির মালিকানায় ছিল। এমোলিড স্ক্রীনের মতই এর রয়েছে উন্নত কোয়ালিটি ও কন্ট্রাস্ট সুবিধা,তবে দাম কম।
৯. ক্লিয়ারব্ল্যাক
নকিয়ার ক্লিয়ারব্ল্যাক প্রযুক্তির ডিসপ্লে মূলত বাইরে থেকে আশা আলোকে বাধা দেয়ার উপর ভিত্তি করে উদ্ভাবিত হয়েছে। ফলে এতে প্রতিফলনের পরিমাণ অনেক কম এবং সূর্যের আলোতেও উজ্জ্বল ছবি দেখা যায়। অনুজ্জ্বল রঙকে গাঢ়ভাবে দেখানো ও উন্নত দর্শন কোণের জন্য এটি অন্যান্য ডিসপ্লের চাইতে এগিয়ে রয়েছে। নকিয়ার লুমিয়া সিরিজের মোবাইলে এটি ব্যাবহার করা হয়েছে।
১০. ই-ইঙ্ক
এই প্রযুক্তি মূলত কিনডল ও কবো এর মতো ই-রিডারে ব্যাবহার করা হয়, যদিও এটি নিয়ে আগে মটোরলা ও স্যামসাং কাজ করেছে। তবে রাশিয়ান কোম্পানির তৈরি ইওটাফোনের পিছন দিকে এই ই-ইঙ্ক প্রযুক্তির ডিসপ্লে ব্যাবহার করা হয়েছে। এই প্রযুক্তিতে কোন রঙ দেখা যায়না এবং অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকার পরেও চোখের কোন ক্ষতি হয়না,তাই একে ই-রিডারে ব্যাবহার করা হয়। এছাড়া এটি খুব কম শক্তি খরচ করে এবং একবার চার্জে দিনের পর দিন চালানো যায়।
আমি হ্যারি পটার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 20 টি টিউন ও 46 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
সুন্দর, তথ্যবহুল এবং মান সম্মত টিউন