অ্যাপল ও এন্ড্রয়েড দুই প্রান্তের দুই কিংবদন্তী… যদিও বর্তমান বাজারে এন্ড্রয়েড ডিভাইস এর সেল অ্যাপল এর চেয়ে হাজার গুন বেশি। তবে আজ সেলস না দুইতি অপারেটিং সিস্টেম এর কিছু কম্পেরিজন দেখবো আমরা। সম্প্রতি এন্ড্রয়েড তাদের নতুন ভার্সন জেলিবিন 4.2 আপডেট দিয়েছে। আমরা অনেকেই এই আপডেট পেয়েছি অথবা কাস্টম করে ইন্সটল করেছি। এর সাথে সাথে অ্যাপল ও তাদের iOS 7 আপডেট দিয়েছে। যেহেতু আমি দুইটা অপারেটিং সিস্টেম ইউজ করি তাই iOS 7 এর নতুন আপডেট টা পেয়ে একটু অবাক হয়েছি। আর কেন হয়েছি তা তুলে ধরবো এবার এই পোস্ট এ। অনেকে বলেন অ্যাপল ইউনিক। এই পোস্ট পরার পর আপনি বলতে পারবেন না যে অ্যাপল ইউনিক। কারন অ্যাপল ও এবার ফলো করেছে এন্ড্রয়েড ওএস কে।
লক স্ক্রিন থেকেই শুরু করি। কারন দুইটা মোবাইলই আমার আনলক। তাই আনলক করার আগে থেকেই শুরু করলাম।
অ্যাপল এর বয়সে এই প্রথম এরকম লক ক্রিন দিলো অ্যাপল। দান পাশে অ্যাপল ও বাম পাশে এন্ড্রয়েড এর স্ক্রিনশট দেয়া হয়েছে। হতাথ করে দেখলে মনে হবে দুইটাই এন্ড্রয়েড ডিভাইস এর লকস্ক্রিন। এমনকি আপনাকে যদি বলে দেয়া না হয় তাহলে বুঝতেই পারবেন না যে ওটা অ্যাপল এর ছিল। এবার অ্যাপল ইউজাররা এই পয়েন্ট টা নোট করুন।
ধরুন ডিভাইস দুইটি আনলক করলাম। সুতরাং যেটা পাবো এখন তা হল হোমস্ক্রিন।
প্রথমে এন্ড্রয়েড সম্পর্কে বলি…
এন্ড্রয়েড এর দিক যদি দেখি তাহলে আমি পাচ্ছি একটি ইন্টারএকটিভ ও ডায়নামিক হোম স্ক্রিন যেখানে আমি রাখতে পারছি widgets, app shortcuts ও folders। আর ইন্টারএকটিভ ডিপেন্ড করে আমি কোন থিম ব্যাবহার করছি। এবার যদি নিচের ডক এর দিকে তাকাই তাহলে আমি দেখতে পাচ্ছি সেখানেও আমি shortcuts কিংবা যেকোনো folders রাখতে পারছি। এন্ড্রয়েড এর একটি হোমস্ক্রিন ও আলদা App Drawers রয়েছে।
এবার আসি অ্যাপল iOS 7 সম্পর্কে…
যদিও অ্যাপল আগের ভার্সন এর তুলনায় ব্যাকগ্রাউন্ড পিক ও অ্যাপ আইকন এর শেইপ পরিবর্তন করেছে কিন্তু এর মাঝে নতুন কোন ফিচার এড করেনি। মানে আপনি এন্ড্রয়েড এর মতো কোন প্রকার widgets রাখতে পারবেন না। সেইম কথা নিচের ডক এ । আপনি জাস্ট অ্যাপ রাখতে পারবেন কিন্তু কোন ফোল্ডার রাখতে পারবেন না। আর iOS 7 এর শুধু মাত্র একটিই হোমস্ক্রিন যেটি App Drawers ও বলা চলে।
তার মানে উপরের কম্পেরিজন থেকে দেখতে পাই হোমস্ক্রিন এর দিক থেকে Android 4.2 একধাপ এগিয়ে।
আসুন এবার দেখি কন্ট্রোল সেন্টার এ কে কি আপডেট দিয়েছে। অ্যাপল এ এই প্রথম এরকম স্টাইল এর কন্ট্রোল সেন্টার অফিশিয়ালি দেয়া হয়েছে। এর আগের ভার্সন পর্যন্ত আমরা এরকম ফিচার এর কন্ট্রোল সেন্টার পেতে Jailbreak করতে হতো। Jailbreak টা অনেকটা এন্ড্রয়েড এর ভাষার রুট এর মতোই। আমি এই সেটিং টা যদি এন্ড্রয়েড এর সাথে তুলনা করি তাহলে আমাকে বলতেই হবে এখানেও অ্যাপল এন্ড্রয়েড কে ফলো করেছে। কারন এন্ড্রয়েড ডিভাইস এ এই ফিচার গুলো অফিশিয়ালি দেয়া হয়েছে। আর Android 4.2 আপডেট টি অ্যাপল iOS 7 আপডেট এর অনেক আগেই এসেছে।
এবার আসুন কুইক সেটিং অপশন এ। আমি যদি উপরের ছবিতে ক্যাপশন না দিতাম তাহলে বুঝা দায় ছিল যে আসলে কোনটা অ্যাপল ও কোনটা এন্ড্রয়েড। কারন এখানেও অ্যাপল এন্ড্রয়েড কে কপি করেছে। কপি করার পর ও অ্যাপল এ কিছু ফিচার মিসিং রয়েছে যেমন GPS অপশন,সাউন্ড,ব্রাইটনেস কন্ট্রোল। সুতরাং সহজেই বলা যায় Android 4.2 এর কুইক সেটিং টি iOS 7 এর চেয়েও সমৃদ্ধ।
নোটিফিকেশন স্ক্রিন এ যদি তাকাই তাহলে আমরা একটু পার্থক্য লক্ষ করবো। অ্যাপল এর নোটিফিকেশন গুলো তিনটি ধাপে ভাগ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও আরও ভিবিন্য ধাপ কিংবা গ্রুপ করে অ্যাপল এর নোটিফিকেশন স্ক্রিন হয়। এবং এটি একটু কালারফুল ও ট্রান্সপারেন্ট। কিন্তু এন্ড্রয়েড এর নোটিফিকেশন স্ক্রিন টি অ্যাপল এর মতো এতটা গ্রুপ করে দেয়া হয় না এবং এটি ডার্ক। যদিও আপনি মডিফাই করতে পারবেন। তবে আমরা এখানে শুধু মাত্র অফিশিয়াল আপডেট নিয়ে আলোচনা করতেছি।
2009 সালে Palm নামক webOS আমাদের কে মাল্টিটাস্কিং এ পরিচয় করায়। আমরা যখন এর আগে সিম্বিয়ান ইউজ করতাম তখন দেখতাম যে একটি অ্যাপ মিনিমাইজ করে আরেকটিতে যেতে পারছি। হাঁ… ঠিক এই কনসেপ্ট অ্যাপল ও এন্ড্রয়েড ইউজ করছে।
iOS 7 এ আমরা দেখতে পাচ্ছি মাল্টিটাস্কিং এ ওপেন অ্যাপ এর আইকন ও অ্যাপ এর একটি প্রিভিউ উপরে দেখাচ্ছে। যেমন প্রথমে দেখুন ম্যাসেজ এর আইকন ও উপরে ম্যাসেজ এর একটি প্রিভিউ দেখতে পারছি। তারপর ওয়েদার আপডেট এর আইকন ও প্রিভিউ। হাঁ… ভার্সন ৬ পর্যন্ত অ্যাপল শুধু আইকন দেখাতো মাল্টিটাস্কিং এ। iOS 7 এ তারা অ্যাপ এর স্ক্রিন প্রিভিউ এড করেছে।
এখন এন্ড্রয়েড এ আসি। এন্ড্রয়েড এর মাল্টিটাস্কিং নিয়ে যদি বলতে চাই তাহলে Android 4.2 লাগবে না কারন 4.0 ভার্সন এ এন্ড্রয়েড অ্যাপ প্রিভিউ গুলো একটি কার্ড আকারে দেখাচ্ছে মাল্টিটাস্কিং এ যা অ্যাপল এ নতুন এড করে হয়েছে।
সুতরাং এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি অ্যাপল এন্ড্রয়েড কে অনেকটা ফলো করেছে এবং iOS 7 এর এই নতুন ফিচার টি আমরা এন্ড্রয়েড এ আরও এক বছর আগেই পেয়েছি।
উপরে আমরা কিছু ফিচার সম্পর্কে আলোচনা করেছি দুইটি অপারেটিং সিস্টেম এর। এছাড়াও আরও অনেক ফিচার আছে আলোচনা করার মতো যা ডিভাইস ভেদে এক এক রকম হয় ও হতে পারে। এখন যদি আমরা এর ইতি টানতে চাই তাহলে আমি বলবো যে একজন মানুষ যদি দুইটি অপারেটিং সিস্টেম এর ডিভাইস ইউজ করেন তাহলে তার কষ্ট হবে বুঝতে যে কোনটি অ্যাপল ও কোনটি এন্ড্রয়েড। কারন অ্যাপল সবসময় বলে আসছে তারা সবার থেকে আলাদা ও ইউনিক। কিন্তু এই পোস্ট পরার পর আপনি মাস্ট বলতে হবে যে অ্যাপল এন্ড্রয়েড এর ইন্তারফেস ও পপুলার কিছু ফিচার কে কপি করেছে। এছাড়াও তারা Windows Mobile and Palm webOS এর সরনাপন্ন হয়েছে। এখন অনেকে তর্ক করবেন এন্ড্রয়েড ও অনেকের কাছ থেকে কপি করে। অ্যাপল করলে প্রবলেম কি? আমি এখানে বলবো এই দুনিয়ার সবাই সবার কাছ থেকে কিছু না কিছু আইডিয়া অথবা ফিচার কপি করে নিয়ে সেটাকে মডিফাই করে নিজের মতো রুপ দেয়। কিন্তু এবার অ্যাপল সেটা করেছে এন্ড্রয়েড থেকে। আর আমরা এন্ড্রয়েড এ ঠিক সেইম ফিচার গুলো অনেক আগেই পেয়ছে। এমনকি কিছু কিছু ফিচার এন্ড্রয়েড এর পূর্ববর্তী আপডেট এ আমরা অনেক আগেই পেয়ছে। তাই আমি ও আমরা পরিশেষে বলতে পারি iOS 7 এর তুলনায় Android 4.2 একধাপ না কয়েকধাপ এগিয়ে। আর Android 4.2 ই বর্তমান বাজারের সেরা মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম।
পোস্ট টি পূর্বে প্রকাশিত হয়েছে বিডি ড্রয়েড এ
আমি শিশির বিন্দু। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 18 টি টিউন ও 4 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
awsome lekha …chalie jan