মোবাইল ফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপনঃ থেকে আমরা কী শিখছি বা কী শেখাচ্ছে?

অনেক দিন ধরে দেখা যাছে যে,দেশের ভিজ্যুয়াল আর প্রিন্ট মিডিয়ায় গ্রামীণ ফোনের একটি নতুন বিজ্ঞাপন প্রচার করে যাচ্ছে। বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে ‘বন্ধু, আড্ডা ও গান এখানেই, হারিয়ে যাও’, কখনওবা প্রিন্ট মিডিয়ার বিজ্ঞাপনে বলা হচ্ছে ‘মাত্র ৫ পয়সায় ১০ সেঃ এ হারিয়ে যাও’। গ্রামীণ ফোন তাদের বিজ্ঞাপনে বৈচিত্র আনতে গিয়ে নানাভাবে নতুন নতুন মেসেজ দিয়েছে। সেগুলোর সবগুলোই যে খুব সফল ছিল তা নয়। এর আগেও তাদের বিভিন্ন বিজ্ঞাপণ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তবে এবারের ‘ডিজুস’ এর এ বিজ্ঞাপণটি সরাসরি দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রজন্ম ‘তরুণ' দেরকে সঠিক দিক নির্দেশনার পরিবর্তে ভ্রান্তিমূলক পথে পরিচালিত করছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দেশের বিশিষ্ট জনেরা প্রশ্ন রেখেছেন এভাবে কোন বিজ্ঞাপণের মাধ্যমে আমাদের মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো তরুণ প্রজন্মকে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ঠেলে দিতে পারে কি না? যেকোন দেশের জন্য তার তরুণ প্রজন্ম অসম্ভব এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তরুণরাই যে দেশের ভবিষ্যত এ ব্যাপারে আজ পর্যন্ত কেউই দ্বিমত পোষণ করেনি। আমরা জানি, আজ যে তরুণ তাকেই তৈরি হতে হবে ভবিষ্যতে হাল ধরার জন্য। নতুবা পুরোনোদের দায়িত্ব শেষ হবার পর তৈরি হবে ভয়াবহ এক শুন্যতার। আর সে শুন্যতা পুরণে প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য তরুণদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কাজ শিখতে হবে। আর এ জন্য তরুণদের বেশিরভাগ সময়ই ব্যয় করতে হবে শিক্ষা মূলক ও প্রশিক্ষণের কাজে। অথচ আমাদের তরুণদের বোঝানো হচ্ছে যে, বন্ধু,আড্ডা আর গানের মাঝেই তোমাদের মুক্তি। আর সে কারণেই হারিয়ে যাও এসবের মাঝেই। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বোঝানো হচ্ছে আড্ডা, গান আর বন্ধুর মাঝেই সকল আনন্দ। জীবন একটিই আর তাই যেভাবেই হোক উপভোগ করে নাও তোমার এই জীবন! বাস্তবতার নিরিখে, বিশ্বায়নের এ সময়ে, প্রতিটি মুহূর্ত তরণদের জন্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। পৃথিবী প্রতি নিয়ত এগিয়ে চলেছে। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের নাগরিক হিসাবে আমাদের টিকে থাকার লড়াইটা অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই। আর সেকারণেই আমাদের তরুণদের প্রস্তুতিটা হওয়া দরকার আরো মজবুতভাবে। প্রযুক্তিগত কারণে প্রতিনিয়ত ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ বেড়ে চলেছে। প্রযুক্তি বিশ্বে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর তালিকায় অন্তত প্রথম দশটির ভেতরেই বাংলাদেশের নাম খুঁজে পাওয়া যায়। অথচ প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের মুক্তির ভিন্ন কোন পথ আছে কি না এখন পর্যন্ত কেউ জানাতে পারেনি। এসব বিষয় মাথায় রেখেই আমাদের তরুণদের হতে হবে আরো প্রযুক্তিমুখী। অথচ সেখানে আমাদের তরুণদেরকে শেখানো হচ্ছে তোমার জন্য ভোগের দরজা খোলা হয়েছে। এখনই ঝাঁপিয়ে পড় ভোগের সমুদ্রে। কারণ তুমি তো জানো না আর কত দিনই বা তুমি বাঁচবে। দেশের বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, শিক্ষক এবং প্রথিতযশা কথা সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবালও সহ আর অনেক এ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এ বিষয়ে। সম্প্রতি একটি কয়েকতি জাতীয় দৈনিকের কলামে লিখেছেন তার উদ্বেগের কথা। মুহম্মদ জাফর ইকবালের মতে তরুণ প্রজন্মকে বোঝানো হচ্ছে ভোগেই প্রকৃত সুখ। আর সেই ভোগেই জীবনকে ভাসিয়ে দাও এখনই। কিন্তু তার মতে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শিক্ষাই একমাত্র উপযুক্ত হাতিয়ার। সত্যিকারের শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি কোন দিন উন্নতি করতে পারেনি। উপযুক্ত শিক্ষার পাশাপাশি হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নেয়াটাও জরুরী। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো মিডিয়া দখলের প্রতিযোগিতায় প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে বাহারকারিদের বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গ্রাহক আকৃষ্ট করাই যেন এসব ফোন কোম্পানিগুলোর প্রধান কাজ হয়ে দাড়িয়েছে। আপনাদের হয়তো মনে আছে এক সময় দেশের আরেক শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোন অপারেটর ‘বাংলালিংক’ এক সময় বিজ্ঞাপনে বলতো ‘রাত ভোর হয়ে যায় কথায় কথায়’। অর্থাৎ তরুণ প্রজন্মকে ইঙ্গিত করা হয়েছিল সারারাত জেগে জেগে কথা বলে সময় পার করার জন্য। সবারই হয়তো মনে আছে তখন দেশের প্রতিটি মোবাইল ফোন কোম্পানিই রাতে কথা বলার জন্য বাহারী বিজ্ঞাপণ দিয়ে তরুণদের আহবান করতো। আর তরুণরাও রাতে নির্ঘুম থেকে মোবাইলে কথা বলে সারাদিন ঝিমুতো। দিনের বেলা মোবাইল বিল বেশি রাখা হত। আর এভাবেই রাতে কথা বলার জন্য এক প্রকার বাধ্য করতো আমাদের এই সব মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো। সময় এসেছে মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর এসব ভ্রান্তিমূলক বিষয়গুলো জাতির কাছে তুলে ধরার। মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো তাদের প্রকৃত সার্ভিসের পাশাপাশি কর্মসংস্থানসহ দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে একথা অনস্বীকার্য। কিন্তু তাই বলে এসব মোবাইল কোম্পানিগুলোর বল্গাহীন আহবান এবং বিভ্রান্তিমূলক দিক নিদের্শনা নিশ্চয় নিরবে মেনে নেয়া নিশ্চয় কোন শুভবুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়। একটি প্রজন্ম কে নিঃশেষিত করার অধিকার বোধহয় আমাদের কারোরই নেই! এ নির্মম সত্যটি আমাদের আরো একবার মনে রাখা দরকার!

যদি পুরবে কাউ এ বাপারে বলে থাকে তাহলে তার জন্য আমার কিছু করার নাই। ভুল হলে ক্ষমা করবেন।

Level 0

আমি Johir Patowary। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 12 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 15 টি টিউন ও 14 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level 0

vai valo akta jinis alochona koresen er jonno ……thanks
amader moto ”bachaler” deshe mobile er adv. mattra(sima) sarabe ata to savabik
prithibi aar kono deshe mone hoy mobile er ato adv.
jader ata control korar kotha tara ”okka”[mara gese] paise

Level New

Thanks a lot for a nice topic.

Level 0

যে দেশের সরকারের উচ্চ মহলে দিন দিন মূর্খতায় পরিপূর্ণ হতে গেল সেখানে ভাল নীতিমালা আশা করা যায় কিভাবে? বিবেকবান সাধারণ সবার উচিত হবে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেওয়া যাতে কর্তা ব্যাক্তিগণ সঠিক নীতিমালার অধীনে সকল মোবাইল কোম্পানিকে পরিচালিত করতে বাধ্য করে; আসুন আমরা ভবিষ্যত জাতীর জন্য নিজেকে সম্পৃক্ত করি…

ধন্যবাদ আপনাকে এই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি শেয়ার করার জন্য।আসলে মোবাইল কোম্পানীগুলিকে দোষ দিয়ে কোন লাভ নাই। তারা তাদের লাভের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছে। এখন আমরা যদি আমাদের নিজের লাভটা না বুঝি তাহলে কোম্পানীকে দোষ দিয়ে কোন লাভ নাই। যেমন সিগারেট এর প্যাকেটি “ধুমপান স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর” লিখা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। তাই বলে কি ধুমপায়ীর সংখ্যা কমে গেছে বা নতুন ধুমপায়ীর কী তৈরী হওয়া বন্ধ হয়ে গেছে? হবেনা এভাবে। সব কিছু প্রথমে নিজে থেকে শুরু করে পরিবারের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাই আগে বদলাতে হবে নিজেকে।

ধন্যবাদ সুন্দর টিউন এর জন্য –

আমার যতদূর ধারনা আপনি যুবক নন ।
এই অ্যাড এ খারাপ কিছু আমি দেখি না । এর চাইতেও বহুত খারাপ অ্যাড আছে অন্য কম্পানির । তাছাড়া ওরা জা বলবে, একদম তাই যে আমরা করি, এই কথা আপনি বলতে পারেন না । অন্য দিকে ৯০ এর দশকের যুবকদের চাইতে এখনকার যুবকেরা ১০০০ % বেশি বিজি থাকে । পড়াশুনা ইত্যাদি ইত্যাদি ।

আমার ক্ষুদ্র মস্তিস্কের মতে আমি এই বুঝি । ভুল হলে ক্ষমার চোখে দেকবেন আশা রাখি ।

vai sigareter paketer niche jemon likha thake: dhumpan sasther jonno khotikor. Temni esob add er niche likha deua ucit: Bondhu, adda, gan egulo sastho, desh somaj sobar jonno khotikor. Lolz

মোবাইলে তেজস্ক্রিয়তার সমস্যা আছে। তাই, মোবাইল আসলে বেশি কথা বলার জন্য নয়। মোবাইলে খুব প্রয়োজনীয় কথা বলুন এবং সুস্থ থাকুন। বেশি কথা বলার দরকার হলে ল্যান্ডফোন ব্যবহার করুন। তাই বিজ্ঞাপন নির্মাণে ও প্রচারেও সতর্ক থাকা দরকার।

জহির ভাই।আপনাকে সালাম সময় উপযোগী।সুন্দর লেখার জন্য। গ্রামীনফোন সহ অন্যান্য মোবাইল কম্পানিগুলুর উদ্দেশ্য হল এ দেশের তরুন সমাজকে মেধাশূন্য করা।এর কারন হল ,জদি তরুন সমাজ মেধাবি হয়,তাহলে তারা দেশের আমলা মন্তীদেরকে ঘুষ দিয়ে টেলিটকের মত দেশীয় কম্পানী গুলুর সর্বনাশ করতে পারবেনা…লেখাটা মোবাইলে লেখা।ভূল হলে..…।?