টেলিটক আগমনের সময় অনেকেই সারারাত জেগে, লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে, রোদে পুড়ে, না খেয়ে, পুলিশের লাঠির বাড়ি খেয়েও অবশেষে সিম কার্ড (দিল্লি কা লাড্ডু) কিনতে না পেরে ক্লান্ত, শ্রান্ত শরীর নিয়ে মন খারাপ করে বাড়ি ফিরেছিলেন। অবশ্য টেলিটকের অব্যবস্থাপনার কারণে এখন এসব লাড্ডুর (সিমের) বেশিরভাগই শোভা পাচ্ছে মানিব্যাগ বা টেবিলের ড্রয়ারের কোন এক চিপায়। যাক গে, এসব কথা বলে আপনাদের মন খারাপ করতে চাই না।
তবে মাঝে মাঝে আমাদের জোর করে ‘দিল্লি কা লাড্ডু’ খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়। যেমন- সরকারি বিভিন্ন পরীক্ষায় বাধ্যতামূলকভাবে টেলিটক দিয়ে টাকা জমা দেয়া; এবং অবশেষে আমাদের ভোগান্তি..... যা বলে শেষ করা যাবে না। টেলিটক দিয়ে টাকা পাঠানোর আমি বিরোধিতা করছি না, বরং টেলিটক কিছু টাকা কামালে আমাদের খুশিই লাগার কথা; কারণ এটি আমাদেরই ফোন। কিন্তু কোম্পানি ১০ টাকা কামাই করতে গিয়ে জনগণের ৩০ টাকা ক্ষতি করার কোন মানে হয় না। চুনোপুটি খেয়ে সাধারণ জনগণকে ভোগান্তি করার চেয়ে স্থায়ীভাবে কোম্পানির আয় বাড়ানোর জন্য মোবাইল ব্যবহারকারীদের প্রতি মনোযোগ দিলেই তো হয়। অবশ্য এসমস্ত সুবুদ্ধি দিয়ে লাভ নেই; কারণ আপনারা অনেকেই এ সম্পর্কে লিখেছিলেন।
সামান্য ব্লগিং করে তো আর অতবড় পরিবর্তন আনতে পারবো না! আমরা জনগণরা সারাজীবন ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চা হয়েই থাকা লাগবে আরকি !
যাককে, কাজের কথায় আসি। আমাদের অনেক প্রতীক্ষার ফসল থ্রিজি আসছে। এতে পুরাতন টেলিটক গ্রাহকগণ [যাদের মানিব্যাগের চিপায় বা ড্রয়ারে সিম আছে অথবা এবং যারা শত বাধা পেরিয়ে দেশ প্রেমকে সামনে রেখে এতীমের মতো (গ্রাহক সেবা ব্যতীত) সিমটি ইউজ করে যাচ্ছেন] অগ্রাধিকার ভিত্তিতে থ্রিজি সিম পাবেন। আর নতুনদের জন্য রয়েছে Gravity অফার: যা কিনা একটানা তিনমাস ১৫০০ টাকা ইউজ করে ও তাদের শর্তগুলো পূরণ করলে পাওয়া যেতে পারে।
Gravity অফারটি বিস্তারিত দেখুন:
========================================================
বোনাস অফার:
* এই বান্ড অফারের মেয়াদ শেষে প্রত্যেক সফল Gravity ক্লাব সদস্য পাবেন বিনামূল্যে কাঙ্ক্ষিত থ্রিজি (3G) সংযোগ
* Gravity ক্লাব রেজিস্টার্ড সর্বোচ্চ রিচার্জকারীদের ২ মাস পর থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে 3G সংযোগ প্রদান করা হবে
* এছাড়াও প্রত্যেক সফল গ্রাহকই পাবেন ১ জিবি ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ, যা ৩০ দিন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রদান:
যে সকল গ্রাহক এই বান্ডল অফার একটানা ৩ মাস ব্যবহার করবেন, সেক্ষেত্রে এই অফার শেষে লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত নির্দিষ্ট সংখ্যক ভাগ্যবান গ্রাহক পাবেন বিনামূল্যে 3G সংযোগসহ স্মাট ফোন, ১ মাসের ফ্রি ভিডিও কল এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা
Gravity ক্লাবে যোগদানের নিয়মাবলি ও শর্তাবলি:
* টেলিটকের সকল প্রিপেইড প্যাকেজের ক্ষেত্রে অফারটি প্রযোজ্য হবে। * আগ্রহী গ্রাহকের মোবাইলে ন্যূনতম ৫০০ টাকা ব্যারেন্স থাকলে তাঁকে মেসেজ অপশনে গিয়ে Gravity টাইপ করে 666 নম্বরে পাঠাতে হবে। এরপর গ্রাহকের মোবাইল থেকে ১ মাসের জন্য ৫০০ টাকা কেটে নিয়ে তাঁকে Gravity ক্লাকে রেজিস্টার করা হবে। * রেজিস্ট্রেশন করার পর ৩০ দিন পূর্ণ হওয়ার পূর্বে গ্রাহককে আবার পরবর্তী মাসের জন্য ৫০০ টাকা ব্যালেন্স নিশ্চিত করার জন্য জানানো হবে এবঙ ৩০ দিনের মধ্যে ব্যালেন্স নিশ্চিত করতে হবে। পরবর্তী ২ মাসের জন্যও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। * ৩০ দিন শেষ হবার ৩ দিনের মধ্যে মোবাইলে ৫০০ টাকা ব্যালেন্স নিশ্চিত না করলে রেজিস্ট্রেশন বাতিল বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে গ্রাহক ৫০০ টাকা ব্যালেন্স নিশ্চিত করে নতুনভাবে পূর্বে বর্ণিত নিয়মানুযায়ী রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন, তবে গ্রাহককে অবশ্যই পরবর্তী ২ মাস নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রতিমাসে তাঁর মোবাইলে ৫০০ টাকা ব্যালেন্স নিশ্চিত করতে হবে। * প্রাথমিকভাবে এ সুযোগ শুধু ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকা (টঙ্গী, গাজীপুর, সাভার), নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজার শহরের জন্য প্রযোজ্য হবে।
সূত্র: টেলিটক
========================================================
আমার কাছে এই Gravity অফারটি অনেক হিজিবিজি এবং পলিসিটা একটুও ভালো লাগেনি, বরং মনে হয়েছে অনেকটা অন্যান্য অপারেটরদের চাপাবাজির মতো। চাপাবাজি শুনে শুনে আমরা এখন বিরক্ত হয়ে গেছি, “এখন চাই সাদাসিদা অফার”।
তবে অফারটি আপনাদের কেমন লেগেছে অবশ্যই তা জানাবেন।
আর শেষ কথা হচ্ছে টেলিটক আমাদের দেশের সম্পদ। কোম্পানির প্রতিনিধিগণ যেন এই বিষয়টি মাথায় রাখেন যে, "জোর করে ঘাড়ে চাপিয়ে বেশিক্ষণ রাখা যাবে না, ঘাড় ব্যথা হয়ে গেলে গ্রাহকগণ এমনিতেই ফেলে দিবে"। সুতরাং আমরা চাই "ভালো ভালো অফার এবং উন্নত গ্রাহক সেবা" ; যেন বাংলাদেশের সকল মোবাইল ব্যবহারকারীই স্বাচ্ছন্দে টেলিটক ব্যবহার করতে রাজি হয়।
আর আশা করব, নিম্নের কোম্পানীগুলোর নামের টাইটেলের মতো যেন টেলিটকের কোন টাইটেল (টাইটেলগুলো সব নেট থেকে নেয়া) যোগ না হয়।
---------------------------
গ্রামীণফোণ (হারামী ফোন)
রবি (তিনধাপ পিছিয়ে)
বাংলালিংক (ভাঙ্গালিংক)
এয়ারটেল (জোঁকের তেল)
সিটিসেল (চিটিংসেল)
---------------------------
(টাইটেলগুলো পড়ে খুবই হেসেছিলাম তাই এখানে দিলাম; যদিও আশা করি সবাই টাইটেলগুলো সম্পর্কে একটু-আধটু আগেই জানেন। তবে কোম্পানির কেউ থাকলে মাইন্ড করবেন না; শুধুমাত্র মজার করার জন্যই টাইটেলগুলো দিলাম)
টিউনটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আর মন্তব্য করতে কিন্তু অলসতা করবেন না।
আমি আনসার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 62 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
দেশের একমাত্র সরকারী মালিকানাধীন মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক নিয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তের রম্য ম্যাগাজিন ‘থেরাপি’র এক সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল একটি মজার কার্টুন। টেলিটক সিম কেনার জন্য মানুষের দীর্ঘ লাইন সেই ভোর থেকে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে চলল। তবুও লাইনে দাড়িয়ে অনেক সাধের (!) কাঙ্খিত ‘সরকারী মোবাইল ফোনের সিম’ হাতে না পেয়ে একদল মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়লো। তাদের ঠান্ডা করার দায়িত্বে এগিয়ে এল সরকারের আরেক লাইসেন্সধারী গুন্ডা বাহিনী , জনগনের বন্ধু (!) খ্যাত ‘পুলিশ’। পুলিশ নিজ দায়িত্বে সযতনে রাখা লাঠিখানার ব্যবহারে যথেষ্ট আন্তরিকতার পরিচয় দিতে লাগলো লাইনে দাড়ানো মানুষগুলোর প্রতি। আর হুংকার দিয়ে লাইনে দাড়ানো মানুষ গুলোকে জিজ্ঞাস করছিলো, ‘সরকারী মোবাইলে আর কথা কইবি? দাড়া তোগো শখ মিটাইতেছি’।
এ কার্টুনটির প্রেক্ষাপট ছিল পুরোপুরি বাস্তব ঘটনা থেকে নেয়া। ইতোমধ্যেই বেশ কয়েকটি বছর পার হয়েছে কিন্তু টেলিটক কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার অবসান হয়নি আজও। এর প্রমান মিলেছে সাম্প্রতিক তাদের কর্মকান্ডে।পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে টেলিটক কর্তৃপক্ষ তাদের মোবাইল ট্যারিফ কমানোর নামে ট্যারিফ বাড়িয়ে সিমের মেয়াদ কমানোর খেলায় মেতে ওঠে। স্বাধীনতা নামের প্যাকেজে ‘অটো’ মাইগ্রেশনের নামে গ্রাহকদের বাড়তি ভোগান্তিতে ফেলে কী সুযোগ নিতে চাইছে টেলিটক, তা অনেকটাই ধুম্রজালের মত অস্বচ্ছ এর গ্রাহকদের কাছে। মোবাইল সিমের দীর্ঘ মেয়াদী জীবন দেয়ার ক্ষেত্রে টেলিটক ছিল ‘পাইওনিয়ার’।
টেলিটক গ্রাহকদের কারও কারও সিমের মেয়াদ ২০১৬/১৭ পর্যন্ত ছিল। কিন্তু পহেলা বৈশাখে ঘুম থেকে উঠে ‘ব্যালান্স’ চেক করতে গিয়ে কারও কারও চোখ কপালে উঠেছে এবার। সিমের মেয়াদ ২০১৬/১৭ থেকে নামিয়ে ২০০৮ এ এনেছে টেলিটক। শুধু তাই নয়, যদি এই সিম ১০০ দিনের মধ্যে অব্যবহৃত থাকে তবে স্থায়ীভাবে এই সিমকে ‘কবর’ দিতে হবে তার গ্রাহককে! এছাড়াও মোবাইল বিল বিকাল ৫টার পর অন্যান্য অপারেটর থেকে সবচেয়ে বেশি (১.৪৫ টাকা, ভ্যাট ছাড়া) ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে কলরেট বাড়ানোর ব্যাপারে কোন ব্যাখ্যা দেয়া হয়নি। আর নেটওয়ার্কের দুর্বলতা অনেকটা স্থায়ী ব্যাধির মত বাসা বেঁধেছে টেলিটক নেটওয়ার্কে।দিন দিন যেখানে অন্যান্য অপারেটররা তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়াচ্ছে, সেখানে সরকারী কোম্পানি হিসাবে টেলিটকের উচিৎ তাদের সার্ভিস বাড়ানোর আর ট্যারিফ রেট কমানোর। কিন্তু উল্টো রথে চলতেই যেন তারা ভালবাসে! গ্রাহকদের কেউ কেউ অবশ্য মন্তব্য করেছেন আসলে টেলিটকের জন্ম তো সেই টিএন্ডটি’র কর্মকর্তা আর কর্মচারীদের ভেতর থেকেই। তাই ভোগান্তিমূলক সেবা(!) দেয়ার জন্য যা যা করনীয় তার কোনটিই বাকি রাখতে চায় না টেলিটক কর্তৃপক্ষ।
গ্রাহকদের প্রত্যাশা পুরণে ব্যর্থ এক মোবাইল অপারেটর হিসাবেই রয়ে গেল সমালোচিত টেলিটক কর্তৃপক্ষ। ভুক্তভোগি গ্রাহকদের জিজ্ঞাসা এখন একটিই, এসব ভোগান্তি থেকে কী কোন মুক্তি নেই তাদের? এমন কেউ কী নেই তাদের এসব ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেয়ার?
-দুরন্ত ।