কিছুদিন আগে এন্ড্রয়েড কেনার ইচ্ছে জাগে। খুব বেশি দাম দিয়ে কিনতে পারবনা দেখে শুরু হয় গবেষনা কোন মোবাইলটা দিয়ে মোটামুটি ভাল সব ফিচার পাওয়া যাবে, ভবিষ্যতে এন্ড্রয়েড ৪ আইসক্রিম আইসক্রিম স্যান্ডউইচে আপগ্রেড করা যাবে, কিন্তু দাম হবে হাতের নাগালে। অনেক ভেবে চিনতে কিনলাম সনি-এরিকসনের(বর্তমানের শুধু সনি) লাইভ উইথ ওয়াকম্যান (WT19i) মডেলের মোবাইলটা।
কিনেই বুঝলাম সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি। আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড রনি ভাই আমাকে অনেক হেল্প করেছেন এ ক্ষেত্রে। কেনার পর থেকেই আমার ফোনের বিল্ট-ইন (প্রি-লোডেড) কিছু এপ্লিকেশন ভাল্লাগছিল না। যেমনঃ Games by POPcap, Play now, Deezer সহ আজে বাজে আরো ৫টি অ্যাপ যেগুলো মোবাইল সেবাদাতা কোম্পানি ইন্সটল করে রেখেছিল এবং এমন ভাবে সিস্টেম সফটওয়্যার হিসেবে করেছিল যে স্বাভাবিক উপায়ে আনইন্সটল করা যেত না। ফলাফল - ক'দিন উশখুশ করে শেষমেশ ফোন নষ্ট হবার বিশাল ভয় কাটিয়ে মোবাইলটাকে রুট করলাম। করে ২মাস চালানোর পর এখন এন্ড্রয়েড ৪ আইসক্রিম স্যান্ডউইচে যাবার জন্য মন উশখুশ করছিল। সনি ওদিকে ওদের পিসি কম্প্যানিয়নে দেখাচ্ছে আমার ফোনের আইসক্রিম স্যান্ডউইচ এখনো ডাউনলোডের জন্য আসে নি। কি আর করা, ক'দিন এখানে ওখানে খোঁজা খুঁজি করে xda'র একটি থ্রেডে পেয়ে গেলাম কিভাবে অফলাইনেই ফ্ল্যাশ-টুল দিয়ে আইসক্রিম স্যান্ডউইচে আপগ্রেড ও সেই সাথে রুট করা যায়।
কাল রাতে আইসক্রিম স্যান্ডউইচে আপগ্রেড করলাম এবং রুট করলাম। ভেবেছিলাম ওয়াকম্যানের ৫১২মেগাবাইট র্যাম আইসক্রিম স্যান্ডউইচকে স্লো করে দিবে। কিন্তু সনি যে আসলেই ভাল সফটওয়্যারও উপহার দিতে পারে, তা বোঝা গেল আইসক্রিম স্যান্ডউইচ ইন্সটলের পর। আসলে রুট না করলে এন্ড্রয়েড ব্যবহার করার কোন মানে আমার কাছে নেই। আইসক্রিম স্যান্ডউইচে আপগ্রেডের পর আমার ১০টি অসাধারন ফিচার মন কেড়ে নিয়েছে। আশা করি আপনাদেরও ভাল লাগবে।
আইসক্রিম স্যান্ডউইচ ইন্সটলের পরে আপনার মন কেড়ে নেবে এর লক স্ক্রিন। জিঞ্জারব্রেডের সাথে এর পার্থক্য হল এতে আগের মত সাউন্ড অফ করে ভাইব্রেশন দেবার অপশনটি সরিয়ে সত্যিকারের কাজের জিনিস এক ক্লিকে ক্যামেরা অন করার অপশন যোগ করা হয়েছে। আগের মত আপনার মোবাইল অপারেটরের নাম উপরে না দেখিয়ে নিচে দেখাবে। সবচাইতে মজার যে জিনিসটি সেটি হল আপনার যদি মিউজিক প্লেয়ার অন করা থাকে, তাহলে আপনার মিউজিক প্লেয়ার বাটনগুলো উপরে দেখাবে!!! এছাড়াও আছে ফেইস আনলক ফিচার। যেখানে স্ক্রিন শুধু আনলক হবে আপনার চেহারা দেখলেই!!!
স্ক্রিন আনলক করার পর যেটি দেখবেন আপনি তা হল এর অসাধারন থিম। অসাধারন কোয়ালিটির কিছু থিম যোগ করা হয়েছে আইসক্রিম স্যান্ডউইচে। ইচ্ছে করলে থিমস এ গিয়ে সেটি আপনি চেঞ্জ করে নিতে পারেন। অল নিউ ইন্টারফেস আপনাকে দিবে অসাধারন কিছু নতুন ইফেক্ট। সবকিছুই যেন অনেক বেশি ফাস্ট অনেক বেশি স্মার্ট। যেকোন অ্যাপ এখন অনেক জলদি লোড হয়, সব এনিমেশন খুবই স্মুথ। কালচে ইন্টারফেস আপনার মন কেড়ে নিবে এক মুহূর্তেই।
এতদিন সাদা রঙের গুগল সার্চ দেখে দেখা যারা বিরক্ত তাদের জন্য সুখবর। গুগল সার্চ আইকন এখন এসেছে কাল রঙে। অনেক সুন্দর দেখতে এই গুগল সার্চ উইজেট আগের মতই আপনার মোবাইল ফোনের যেকোন অ্যাপ, মেসেজ, ভিডিও, অডিও এমনকি ফোন নাম্বারও সার্চ করতে পারে। বলে রাখা ভাল - I just love it
কনটাক্ট মেনুতে এক নামের পর অন্য নামের মাঝের স্পেস কমানো হয়েছে। ফলে একই পাতায় এখন আগের থেকে বেশি ফোন নাম্বার দেখা যাবে। ডায়াল প্যাড আর রিসেন্ট কল মেনু একত্র করা হয়েছে। নতুন সংযোজন হিসেবে এসেছে গ্রুপ। এখানে আপনি ফ্যামিলি, বন্ধু, আত্মীয়দের জন্য আলাদা গ্রুপ তৈরি করে রাখতে পারবেন।
যারা নিও/রে ব্যবহার করেছেন তাদের কাছে এই কি-প্যাড নতুন না হলেও যারা আগে ব্যবহার করেনি তাদের জন্য ভয়েস দিয়ে লেখার সুবিধাযুক্ত এই কি প্যাড এক আশীর্বাদ। আমার যখন লিখতে ইচ্ছে করে না আমি তখন মাইক্রোফোন আইকনে চেপে কথা বলতে থাকি।
জিঞ্জাব্রেডের উপর গুগল আইসক্রিম স্যান্ডউইচে যে আপগ্রেডটা আনায় হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছি তা হল ভয়েস ইনপুটে Write as you say অপশন। এই নাম গুগলের না, আমার দেয়া! 😛 Write as you say সেটি কি? যেকোন টেক্সট ইনপুট বক্সে গিয়ে মাইক্রোফোন অন করুন। এবার দেখুন নতুন একটি ইন্টারফেস এসেছে। এখন আপনি ইংলিশে কিছু বলতে থাকুন, দেখুন আপনি বলার সাথে সাথেই লেখা হয়ে যাচ্ছে! Done না চাপা পর্যন্ত এই উইন্ডো বন্ধ হবে না। জিঞ্জাব্রেডে যে অসুবিধেটা ছিল সেটি হচ্ছে সেখানে পুরো কথাটা বলার পর সে নেটে গিয়ে আউটপুট বের করার চেষ্টা করত ও ৯০% ক্ষেত্রে ভুল আউটপুট দিত। আর যদি আপনার কথাটা হয় দীর্ঘ, তাহলে তো আর কথাই নেই। মিনিট লাগিয়ে দিবে লোড করে আনতে আর এক মিনিট পর দেখাবে কোন রেজাল্ট পাওয়া যায় নি।
ক্যামেরা ইন্টারফেসে পরিবর্তন এসেছে অনের। আগের মত এখন বাঁ পাশে অপশন আর ডান পাশে একগাদা গ্যালারি ছবি দেয়া নেই। বরং অপশনে গেলে এখন সারা স্ক্রিন জুড়ে থাম্বনেল আকারে দেখায় সব অপশন। ক্যামেরা থেকে ভিডিও ক্যামেরায় খুব তাড়াতাড়ি সুইচ করার সুবিধার জন্য সুইচ বাটন বড় করা হয়েছে। স্লাইড করেই আপনি চলে যেতে পারেন ভিডিও ক্যাম অপশনে। সাথে ক্যামেরা অন-স্ক্রিন ক্যাপচার কি যোগ করা হয়েছে।
নটিফিকেশন প্যানেল এখন অনেক ফাস্ট। প্রতিটি নটিফিকেশন আলাদা করে মোছা যায়। নটিফিকেশন মুছতে হলে ডান বা বাম পাশে নটিফিকেশনটিকে স্লাইড করে দিলেই তা মুছে যায়। সবগুলো একসাথে মুছতে হলে উপরের ডান কোনায় 'X' চিহ্নে টাচ করলেই হয়।
স্যামসাং ব্যবহারকারিরা আগে হোম বাটন চেপে ধরে টাস্ক ম্যানেজারে গিয়ে Running background app বন্ধ করে দিতে পারলেও সনিতে পারা যেতনা, শুধু সুইচ করা যেত। আইসক্রিম স্যান্ডউইচে তাই সব ইউনিভার্সাল করা হয়েছে। 'Home' বাটন চেপে ধরে রাখলে থাম্বনেইল প্রিভিউ সহ রিসেন্টলি ওপেন করা কিংবা ব্যাকগ্রাউন্ডে চলতে থাকা সব অ্যাপ দেখাবে। এখন কি করে বন্ধ করবেন? জাস্ট নির্দিষ্ট অ্যাপের প্রিভিউটিতে স্লাইড করে ডানে বা বামে সরিয়ে দিন, কাজ শেষ!!
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে আইসক্রিম স্যান্ডউইচ আমার ফোনে জিঞ্জারব্রেডের মতই কম ফোন মেমরি ব্যবহার করছে। লাইভ উইথ ওয়াকম্যানে (ফোন মেমরি ৫১২মেগাবাইট) যেখানে জিঞ্জারব্রেডে ৭/৮ টা বড় (গড়ে ৫ সাইজ) অ্যাপ ইন্সটল করলেই ফোন মেমরি ২০০ মেগাবাইটের নিচে চলে আসে। সেখানে আইসক্রিম স্যান্ডউইচ ইন্সটলের পরে আমার ফোনে ফ্রি স্পেস ছিল ৩০০ মেগাবাইটের কাছাকাছি! সনি আইসক্রিম স্যান্ডউইচ থেকে হয়ত অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ্লিকেশানগুলো বাদ দিয়েছে, কিছু যা বাদ দিয়েছে সবই অদরকারি অ্যাপ, কেননা আমি এখনো কোন প্রয়োজনীয় অ্যাপ মিসিং পাই নি। দেখুন ৫টি অ্যাপ ইন্সটলের পরেও আমার ফোনে ২৭৭ মেগাবাইট স্পেস খালি রয়েছে! আমার মনে হয় লো-ফোন মেমরি মোবাইলগুলোর জন্য আইসক্রিম স্যান্ডউইচ একটি আশীর্বাদস্বরুপ এসেছে।
সবাইকে ধন্যবাদ আমার লেখা পড়ার জন্য
ভাল থাকুন।
আগে করা পোস্ট পড়তে পারেন আমার ব্লগে এই লিঙ্কে।
আমি দিহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 66 টি টিউন ও 2201 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
পড়াশোনা করছি MBBS ৩য় বর্ষ। স্বপ্ন টেকনলজি জগতেই ডুবে থাকব।
লাইভ উইথ ওয়াকম্যান (WT19i) এর দাম কত পরছে ?