আমার ধারণা, মোস্তফা গেম নিয়ে আমার মত গবেষণা খুব কম লোকেই করেছে।
টিউনের শুরতে এই গেম নিয়ে কিছু স্মৃতিচারণ করে নেব। সময়টা 2000 সালের দিকে তখন স্কুলে পড়ি। টিফিন খেতে যে দুটাকা পেতাম বাসা থেকে সেটা বাচিয়ে দুপুরে গেমটা খেলতে যেতাম দোকানে। কয়েনের দাম ছিল দুটাকা। এক কয়েনে বেশীদূর যেতে পারতাম না কারণ আমি নবীন, প্রথম বসের কাছেই ধরাশয়ী। দাড়িয়ে খেলা দেখতাম সবার, আর অপেক্ষা করতাম পরেরদিনের দুটাকার জন্য। এভাবে খেলা দেখেছি প্রচুর, নিজে ভালভাবে খেলিতে পারিনি কখনো।
আমার বাবা প্রতিবছর আমাকে শর্ত দিতেন ক্লাসের প্লেজ ধরে রাখলে যা চাইব দেবেন। সেজন্যই বোধহয় নিয়মিত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হতাম। যাহোক, প্লেজ করার সুবাদে একখানা টিভি গেম দাবী করে বসলাম। SEGA এর একটি গেম পেয়েও গেলাম। সে কি উৎসাহ আর উত্তেজনা!! সারাদিনরাত খেলি সুপার মারিও, ট্যাংক দিয়ে গোলাগুলি আর কন্ট্রা নামের একটা গেম। তবে মোস্তফার নেশা তো মিটে না এসবে! ছমাস যেতেই টিভি গেম হয়ে গেল পানসে, চাই মোস্তফা!
টিভিগেমগুলোতে ক্যাসেট ঢুকিয়ে খেলতে হোত। শ’খানেক টাকা জমিয়ে সাইকেলে চেপে একদিন বাজারে গেলাম মোস্তফার ক্যাসেট কিনতে। কিন্তু হায়, সারা দিন খুজেও পুরো শহরের কোথাও মোস্তফার ক্যাসেট পেলাম না। বড় এক দোকানে নাম লিখে নিল, ওরা জানাল ঢাকা থেকে মাল আনার সময় মোস্তফার খোঁজ করবে। সময় লাগবে একমাস। অপেক্ষায় কাটালাম ১ মাস! রেগুলার ফোন দেই দোকানে। ১ মাসে নাই, দেড় মাস গেল। একদিন ওরা জানাল নতুন ক্যাসেট এসেছে, আমি যেন গিয়ে দেখি মোস্তফা আছে কি না। গিয়ে দেখি নাই। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। ওরা জানাল পরের মাসে আবার আসবে। আরো একমাস কাটালাম, পরের মাসেও নাই। শেষে ওরা জানাল এই গেমটার ক্যাসেটের নামই শোনেনি কেউ।
দোকানের গেমগুলোর বেশীরভাগ মেশিন ছিল ডলফিনের। মেশিনের গায়ে ওদের ফোন নম্বর দেয়া ছিল, অফিসটা রাজশাহীতে। একদিন ওই নম্বরে টেলিফোন করলাম। জিজ্ঞেস করলাম ক্যাসেটের দাম কত? ওরা বলে মোস্তফার ক্যাসেটের দাম দশ হাজার টাকা!! আমি বলি টিভি ”গেমের ক্যাসেট??” শুনে ওরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল ”টিভি গেমের ক্যাসেট আমাদের কাছে থাকব ক্যান? মেশিনের ক্যাসেট!” টিভি গেমের ক্যাসেট পাওয়া যায় কিনা জিজ্ঞেস করলে ”জানেনা” বলে ফোনে রেখে দেয়।
হুটকরে একদিন কার কাছে যেন শুনি, ঢাকার এক ভাইয়ের কাছে মোস্তফার ক্যাসেট আছে!! অনেক কষ্টে তার ফোন নম্বর যোগার করে ফোনদিই। সে জানায় তার কাছে ছিল তবে সে বিক্রি করে দিয়েছে। কোথা থেকে কিনেছেন জিজ্ঞেস করলে জানায়, স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে অনেক আগে কিনেছেন।
( অনেক পরে বুঝেছিলাম মোস্তফা গেম আসলে টিভি গেমে খেলা সম্ভব ছিলনা। কারণ, আমার কাছে যেই গেম মেশিন ছিল ওটা নিনটেনডু আর মোস্তফা চলে আর্কেড ইমুলেটরে। সারাজীবন চেষ্ঠা করলেও চলত না।)
যাই হোক শৈশবে বহুশ্রমদিয়েও মোস্তফা না পাইলেও ইন্টারের পরে পিসি কিনার সুবাধে হাতে ধরা দেয় সেই সোনার হরিণ।দু-চারদিন খেলে কেমন যেন পানসে লাগল। আর মজা পাইনা। এর প্রধান কারণ হল শৈববে যেই গেমটা খেলতাম সেটা 20 গান, ওটার চেয়ে পিসিরটা একটু আলাদা। একে ওকে জিজ্ঞেস করি, দোকানে খোজ নেই, সবার এক কথা 20 গানটা কারো কাছে নেই। এটা নেটে পাওয়া যায়না।
মেডিকেলে ভর্তির অনেকদিন পর একবার সখ করে বন্ধুরা সবাই গেমের দোকানে ঢুকে ১ কয়েন গেম খেলেছিলাম। ওখানে 20 গান খেলে চিন্তা করি বাসায় গিয়ে যেমনে পারি খুজেবার করব 20 গানের ভার্সন। নেট চালাতাম জিপির। অলরেডি ১ গিগা ডাটা শেষ হল 15 দিনে। 20-25 টা ইমুলেটর আর প্রচুর রোমে ভরিয়ে ফেললাম পিসি, কিন্তু বাত্তি লাগাইয়াও 20 গান পাইনা। আরো ১ গিগা শেষ হল। রোম ফোরামগুলোর একে ওকে জিজ্ঞেস করি, কেউই জবাব দিতে পারেনা। ওরা কিছু হ্যাক সেটের নাম শুনেছে কিন্তু 20 গান কেউ শোনেনাই। গেমের নির্মাতা CAPCOM কে মেইল দেই, কোন জবাব নাই। আর ওদের জবাব দেওয়ার ঠেকাও বা কি!! পরে বুঝতে পেরেছিলাম 20 গান গেমটি আসলে একটা হ্যাক সেট বা বুটলেগ যেটা তৈরী করে চায়না। আর চীন ও বাংলাদেশ ছাড়া অন্যদেশে এই বুটলেগ তেমন না চলায় কেউই জানত না এটার ব্যাপারে। প্রতিদিন সময় করে ফোরাম পড়ি এটা নামাই ওটা নামাই কাজ হয়না। চাইনিজ ফোরামগুলোকে ট্রান্সলেট করে পড়ি। মাঝে মাঝে রোম কাস্টমাইজ করি। কিছুই হয়না। হুট করে একটা ফোরামে একদিন চোখে পড়ল dinohb রোমের কথা, এটা নাকি ফাইনাল বুটলেগ (Hack Set 3)। এই রোম আগে থেকেই আমার কাছে ছিল। বের করে খেললাম কিন্তু কই 20 গান তো নাই!
মামি ইমুলেটরের (Mame) একটি ভার্সন Ekmame এর রিভিউ পড়তে গিয়ে দেখি এই ইমুলেটরে মোস্তফার কিছু বাগ ফিক্স করা হয়েছে। দ্রুত ইমুলেটরটা নামিয়ে গেম লোড দিতেই কেল্লা ফতে!পেয়ে গেলাম 20 গান!পরে বুঝেছি dinohb চালানোর ইমুলেটরের অভাবেই এই ভার্সনটা কখনো খেলতে পারেনি কেউ।
এরপর আমি টেকটিউনসে এটা সর্বপ্রথম উন্মুক্ত করেছিলাম প্রায় বছর দেড়েক আগে। এবং সাড়ে পাচ হাজারবার ডাউনলোড এবং অনেকের শেয়ারের জন্য আজ হয়ত 20 গানের ভার্সনটা চলে গেছে সবার হাতে হাতে।
এনড্রয়েডে মোস্তফা খেলতে যা যা লাগবেঃ
1. MAME4droid (0.37b5) ইমুলেটর। মার্কেট ডাউনলোড লিংক এখানে
2. dino রোম, যেটি পিসিতে খেলেন। রোমের ডাউনলোড লিংক এখানে
1. MAME4droid (0.37b5) ইমুলেটরটি মোবাইলে ইন্সটল করুন।
2. ফাইল ম্যানেজার থেকে SD Card মানে মেমরী কার্ডে ঢুকুন। দেখুন এখানে Roms নামের নতুন ফোল্ডার তৈরী হয়ে গেছে
3. ফোল্ডারের Mame4All ফোল্ডারে এইলিংক থেকে ডাউনলোডকৃত dino.zip ফাইলটি পেস্ট করুন। (মনে রাখবেন ফাইলের নাম dino.zip ই হবে। রিনেম করলে কাজ করবে না)
3. এবার মোবাইলের মেনুতে যান। Mame4droid এ ক্লিক করুন।
তীর চিহ্ন দেয়া B বাটনটি চাপতে থাকুন। গেম চালু হযে যাবে।
১ নং চিহ্নিত জায়গায় চেপে কয়েন নিন। 2 চেপে খেলা শুরু করুন।
ব্যাস খেলতে থাকুন! 😀 😀
এই ইমুলেটর দিয়ে মোস্তফা ছাড়াও King Of Fighter সহ বহু গেম খেলতে পারবেন। পুরো গেমের লিস্ট এখানে
ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।
-- নেট মাস্টার।
Developer: Zils Drug Database
আমি নেট মাস্টার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 64 টি টিউন ও 1834 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 9 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
পুরনো কথা মনে করে দিলেন কত মাইর খাইছি মোস্তফা গেম এর জন্য