শিরোনাম দেখে যারা পোস্টটা দেখতে এসেছেন তারা কী ভাবছেন যে এটা কীভাবে সম্ভব? কেউ কেউ হয়ত জানেন ব্যাপারটা, তারাও হয়ত অনেক আগ্রহ নিয়ে দেখতে এসেছেন। সবাইকে অগ্রিম ধন্যবাদ। আজ আপনাদের উইন্ডোজ, লিনাক্স বা ম্যাক কম্পিউটারের মাঝেই অন্য যেকোন ভার্সনের উইন্ডোজ, লিনাক্স, অ্যান্ড্রয়েড, ম্যাক বা আইবিএম অপারেটিং সিস্টেম ব্যাবহার করার উপায় দেখাব। এটাকে বলা হয় Virtualization Technology. এই সিস্টেমের মাধ্যমে আপনি আপনার চলতি অপারেটিং সিস্টেমের মাঝেই "Virtually" অন্য কোন অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করতে পারেন, বানাতে পারেন নিজের আলাদা একটা Workspace, সেখানে আপনি ইচ্ছামত হার্ডওয়্যার যোগ করতে পারবেন, নেটওয়ার্কিং করতে পারবেন। এই পদ্ধতির সুবিধাটা কী জানেন? ধরুন আপনি কোন সফটওয়্যার উইন্ডোজ সেভেন থেকে চালাতে পারছেন না, আপনি কী বোকার মত উইন্ডোজ এক্সপি ইন্সটল করবেন? অথবা কোন প্রোগ্রাম লিখেছেন, সেটা আপনার সিস্টেমে চালালে সিস্টেম ক্র্যাশ করতে পারে। বা কার্নেলের ক্ষতি হতে পারে। সেটা ওই ভার্চুয়াল সিস্টেম এ চালিয়ে দেখুন, আপনার সিস্টেম অক্ষত থাকবে। তারপর সেই ভার্চুয়াল সিস্টেম এ আপনার পিসি এর ইন্টারনেট কানেকশান শেয়ার করা যায়, ফলে ওখান থেকেই আপনি নানারকম টেস্ট করতে পারবেন। তারপর ধরুন এর ওর কাছে উবুন্টু লিনাক্স মিন্টের নাম শুনে খুবই ইচ্ছা করছে জিনিষটা কী দেখতে। কোনো সমস্যা নাই। ভার্চুয়াল সিস্টেমে আপনি শুধু লিনাক্স না, অ্যান্ড্রয়েড বা ম্যাক ও চালিয়ে দেখতে পারবেন। যাই হোক, অনেক বকবক করলাম। এবার কাজের কথায় আসি।
প্রথমেই আপনার যা লাগবে তা হল Virtulization Technology সাপোর্ট করে এরকম পিসি। আজকাল সব মাদারবোর্ড আর ল্যাপটপে এটা থাকে। তাই চিন্তার কোনো কারণ নেই। তারপর লাগবে VirtualBox নামের একটা সফটওয়্যার। নিচের লিঙ্কটিতে যান।।
ডাউনলোড করলেন? এবার ঝটপট ইন্সটল করে নিন। লিনাক্স এ যেহেতু ডেবিয়ান প্যাকেজ আকারে দেওয়া থাকে তাই সমস্যা হওয়ার কথা না। শর্টকাট থেকে চালু করুন VirtualBox. উইন্ডোজ সেভেন বা ভিস্তায় চালু না হলে আগে এই ফাইলটায় (C:\Program Files\Oracle\VirtualBox\VBoxSVC.exe) ডাবল ক্লিক করে তারপর VirtualBox চালু করুন। নিচের মত ইন্টারফেস আসবে।
কাজ শুরু করে দিন। নতুন সিস্টেম বানাতে New বাটনে ক্লিক করুন।
নতুন যে উইন্ডো আসবে, তাতে আপনার সিস্টেমের নাম দিন (1). নিচে সেটা কোন টাইপ OS তা সিলেক্ট করুন (2) আর তার নিচে কোন ভার্সন তা ঠিক করে দিন (3).
পরের উইন্ডোতে নতুন সিস্টেমের জন্য মেমোরি বা র্যাম কত হবে তা ঠিক করে দিন। আপনার পিসির র্যাম যদি ২জিবি হয় আর আপনার দৈনন্দিন কাজ করতে ১জিবির বেশি না লাগে, তাহলে ভার্চুয়াল মেশিনের জন্য বাকি ১জিবি র্যাম বরাদ্দ দিতে পারেন। যাদের ৩/৪জিবি বা তার বেশি তাদের তো চিন্তার কোনো কারণ নাই। 😀
এবার ভার্চুয়াল হার্ডডিস্ক বানানোর পালা। এখানে ২টা অপশন আছে। যদি আপনি নতুন ইউজার হন, তাহলে Create new hard disk দিন (4). আর যারা আগে থেকে VDI (Virtual Disk Image) বানিয়ে রেখেছেন বা জানেন, তারা Use existing hard disk অপশনে যেয়ে সেই ফাইলটার লোকেশান দেখিয়ে দিন (5).
যারা Create new hard disk অপশন টি সিলেক্ট করেছিলেন, তারা এরকম উইন্ডো দেখতে পাবেন। অর্থাৎ ভার্চুয়াল ডিস্ক দুইভাবে বানান যাবে। একধরণের আছে যেটা আপনার দরকার মত বৃদ্ধি পাবে বা জায়গা নিবে। তারা Dynamically expanding storage (7)
সিলেক্ট করুন। আর অন্য ধরণের আছে যেটা ফিক্সড সাইজের হয়, যেমন ২০জিবি বা ৩০জিবি। এই ডিস্ক এর ফাইল আপনার হার্ডডিস্কে সেভ থাকবে। এরকম চাইলে Fixed-size storage (8) সিলেক্ট করুন।
এবার ডিস্কটা কথায় সেভ করবেন তা দেখানোর পালা। ছবিতে দেখুন, Location বক্সে ক্লিক করে ঠিক করে দিন ডিস্ক ফাইল টা কথায় সেভ হবে (9). আর নিচের স্কেল থেকে ডিস্ক সাইজ মেপে দিন (10). মনে রাখবেন আপনি যত জিবি সাইজ ঠিক করছেন, যেই ড্রাইভে সেভ করবেন তাতে যেন তত জিবি ফাকা জায়গা থাকে।
ডিস্ক সেটিং দেওয়া হয়ে ফেলে Finish দিন। ডিস্ক ফাইল তৈরী হতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগবে। কাজ হয়ে গেলে VirtualBox এর বামে দেখবেন আপনার সদ্য বানানো সিস্টেম দেখাচ্ছে। এবার কিছু এক্সট্রা সেটিংস বাকী আছে যেগুলা আপনাদের দেখাব।
গোল চাকার ছবিটায় ক্লিক করেন। সেটিংস উইন্ডো আসবে। ওখানে দেখবেন বামে অনেক ক্যাটাগরির লিস্ট আছে। প্রথমটার নাম General. এটা নিউ মেশিন বানানোর সময় যা যা তথ্য দিতে হয় তা দেখায়, চাইলে কিছু ঠিক করে দিতে পারেন।
তার নিচেরটার নাম System. এটা বেশ গুরুত্তপূর্ণ। এখানে ৩টা ট্যাব আছে। Motherboard ট্যাবে মেমোরি চেঞ্জ করতে পারবেন। তার নিচে আছে বুটেবল ডিভাইস এর লিস্ট। এখানথেকে তাদের ক্রম চেঞ্জ করতে পারবেন (11) তবে একেবারেই নতুন মেশিন বানাতে গেলে CD/DVD-ROM আগে দেওয়াই ভালো। নাহলে আপনাকে স্টার্ট হউয়ার সময় F12 চেপে বুট ডিভাইস হিসেবে সিডি বা ডিভিডি রম সিলেক্ট করে সেটআপ দিতে হবে। তার নিচে Chipset আছে। এখানে ইচ্ছামত চিপ মডেল সিলেক্ট করে নিন (12) তার নিচে আছে ৪টা অপশন। Enable IO APIC বিশেষ প্রসেসর ও ডিভাইস এর ক্ষেত্রে লাগে। EFI অ্যাক্টিভ করতে হয় বিশেষ OS যেমন Mac ইন্সটল করতে। Hardware clock in UTC time সেট করলে ভার্চুয়াল মেশিনের ক্লক আপনার কম্পিউটারের সাথে মিলিয়ে নিবে। আর absolute pointing device এনাবল করলে আপনাকে ভার্চুয়াল মেশিন আর মেইন উইন্ডোজে ফিরে আসতে কোন কী চাপতে হবেনা। মাউস দিয়ে উইন্ডো অ্যাক্টিভেট করলেই হবে।
পাশেই আছে Processor ট্যাব। এখানে ভার্চুয়াল মেশিনের জন্য প্রসেসর বরাদ্দ দেন। যারা Core 2 Duo/Dual Core ব্যাবহার করেন তারা সর্বোচ্চ ২টা, Core 2 Quad/Core i3/i5 ব্যাবহারকারীরা ৪টা ও Core i7-ওয়ালারা ৬/৮ টা সিলেক্ট করে দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে PAE/NX এনাবল করতে হবে।
পাশেই আছে Acceleration ট্যাব। ওখানে VT-x/AMD-v অপশন টি ভার্চুয়াল মেশিনে আপনার প্রসেসরকে এক্সিলারেট কবে। Nested Paging দিলে আপনার হার্ডডিস্কের পেজফাইল ওই ভার্চুয়াল মেশিন ব্যাবহার করতে পারবে।
এবার বামে নিচের ট্যাব দেখুন, Display লেখা। এখানে ভার্চুয়াল মেশিনে কতটুকু ভিডিও মেমোরি দিবেন তা ঠিক করে দিন (13) আপনার এক্সটার্নাল ভিডিও কার্ড থাকলে ভালো হয়, সেক্ষেত্রে বেশি মেমোরি শেয়ার করতে পারবেন। আর উইন্ডোজ মেশিনের জন্য 2D ও 3D এক্সিলারেশান অন করে দিতে পারেন (14). ভার্চুয়ালবক্সের একটা সমস্যা হল এটা দিয়ে আপনি গেম খেলা বা বড় কোনো ভিডিও প্রসেসিংয়ের কাজ করতে পারবেন না, কারণ হোস্ট থেকে ভার্চুয়াল মেশিনে অতটা ভিডিও মেমোরি শেয়ার করা সম্ভব হয়না।
এবার আসি Storage এ। এখানে ভালোমতো খেয়াল করুন। SSCI, SATA, IDE Controller তো সবাই কম-বেশি বোঝেন। এখানে ইচ্ছামত কন্ট্রোলারে ডিস্ক, সিডি বা ডিভিডি ড্রাইভ অ্যাড করা যায় (15). ডিস্ক হিসেবে আগে বানানো VDI ফাইল, সিডি বা ডিভিডি ড্রাইভ এ কোনো ISO ইমেজ মাউন্ট করে দিতে পারেন। ডানে কন্ট্রোলার টাইপ চেঞ্জ করতে পারেন (16). AHCI ই ভালো কাজ করবে। আর নিচে দেখেন প্লাস মাইনাস কিছু আইকন আছে (17). ওখান থেকে আপনি নতুন SSCI, SATA বা IDE কন্ট্রোলার অ্যাড বা রিমোভ করতে পারবেন।
এরপর আসি Audio তে। এখানে কী অডিও ডিভাইস লাগাবেন আর তার কন্ট্রোলার সেট করে দিন।
নিচে আছে Network. এটাও বেশ গুরুত্তপূর্ণ। এটার মাধ্যমে আপনি হোস্ট সিস্টেম থেকে নেটওয়ার্ক বানাতে পারবেন, ইন্টারনেট কানেকশান শেয়ার করতে পারবেন। Attached to তে কানেকশান টাইপ ঠিক করেন। NAT, নাকি Bridge ইত্যাদি অপশন আছে (18). তার নিচে আছে বিভিন্ন নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার। ইচ্ছামত বেছে নিন, আর চাইলে ম্যাক অ্যাড্রেস চেঞ্জ করে নিন (19). আপনার নেটওয়ার্ক সাপোর্ট না লাগলে VirtualBox ইন্সটল করার সময়ই নেটওয়ার্ক অফ করে ইন্সটল করবেন। আর এখানে নেটওয়ার্ক নিয়ে কাজ করলে আপনার উইন্ডোজ নেটওয়ার্ক ডিভাইসে VirtualBox Host-Only Network নামে একটা ডিভাইস অ্যাড হবে যেটা ভার্চুয়াল মেশিন আর আপনার মেইন উইন্ডোজ (হোস্ট) এর মাঝে নেটওয়ার্ক সাপোর্ট দিয়ে থাকে।
Network এর নিচে আছে Serial Ports ট্যাব। এখানে যদি কোনো সিরিয়াল পোর্ট অ্যাড করতে চান তাহলে সেটিংস দিন।
এরপর USB ট্যাব। আপনি ভার্চুয়াল মেশিনে আপনার ইউএসবি ডিভাইস যেমন ফ্ল্যাশ স্টোরেজ বা ইউএসবি মাউস কানেক্ট করতে পারবেন। এর জন্য Enable USB Controller অ্যাক্টিভেট করে ছবিতে দেখানো স্থান থেকে ডিভাইস অ্যাড করতে পারেন (20).
সেটিংস চেঞ্জ করা হয়েগেলে ওকে চেপে চলে যান VirtualBox এর মেইন ইন্টারফেসে। এবার নতুন বানানো মেশিন সিলেক্ট করে Start এ ক্লিক করুন। VirtualBox এ আপনার বানানো সিস্টেম চালু হবে। প্রথমবার সিডি বা ডিভিডি ড্রাইভ এ ডিস্ক রেখে বা কোনো OS এর ISO থাকলে তা থেকে বুট করে সেটআপ দিন। তারপর উপভোগ করুন নিজের বানানো আরেকটা Virtual অপারেটিং সিস্টেম যেটায় আপনি যা খুশি তাই করুন, ক্র্যাশ করলেও সমস্যা নাই। নতুন কোনো OS এর ডিস্ক এনে এটার মাধ্যমে চেক করে নিতে পারেন। আরও ফিচার আছে, ব্যাবহার করলেই বুঝবেন।
VirtualBox নিয়ে আরো কিছু কথা। ভার্চুয়াল মেশিন আর হোস্ট অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে "switch" করতে একটা "Host" কী ব্যাবহার করা হয়। ডিফল্ট হিসেবে এটা হল "Right Control" বাটন। অর্থাৎ উইন্ডোজ এ থেকে Right Ctrl চাপলে ভার্চুয়ালবক্স উইন্ডো এনাবল হবে। এটা চেঞ্জ করা যায় অবশ্য। এই বাটনকে ব্যাবহার করে আরো কাজ করা যায়, যেমন Host+F চাপলে ফুল স্ক্রীনে মেশিন দেখতে পারবেন। এরকম আরও শর্টকাট আছে, যা Machine এ ক্লিক করেই দেখতে পাবেন। এখান থেকে মেশিন পজ, বা রিসেট করারও উপায় আছে।
যারা সবকিছু ঠিকভাবে করলেন, তাদের জন্য নিচের ছবিটা সহায়ক হতে পারে। ভার্চুয়াল সিস্টেম আসলে এভাবে আলাদা উইন্ডোতে কাজ করে। ছবিটা অনেক বড় বলে এখানে দিলাম না। দেখতে হলে এই লিঙ্ক এ ক্লিক করুন।
সব তো শেষ। যারা মনোযোগ দিয়ে পড়লেন, তাদের অনেক ধন্যবাদ। আর কোনো ভুল-ভ্রান্তি থাকলে তা ধরিয়ে দিবেন। কোনো সমস্যা হলে মন্তব্যের ঘরে জানাবেন। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আর বেশি বেশি টেকটিউনসে ভিজিট করবেন।
আমার পূর্ববর্তী পোস্ট: My Computer থেকে Nokia Phone Browser মুছে দিন
আমার পরবর্তী পোস্ট: আসুন জেনে নিই বিভিন্ন সফটওয়্যারের চোরাই কপি ব্যাবহার করে আমরা বছরে কত টাকা বাচাচ্ছি
আমি মো মিনহাজুল হক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 22 টি টিউন ও 2958 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
খু-উ-ব ভালো টিউন। এবার বোধহয় লিনাক্স-টা শেখার সময় এসে গেল!
অনেক ধন্যবাদ শাওন ভাই।