মাইক্রোসফট (এম এস) ওয়ার্ড সফটওয়্যারের সাথে পরিচিত নয় এমন কম্পিউটার ব্যবহারকারী পাওয়া আসলে এযুগে বেশ দুষ্কর। কারণ, ব্যাপক ডিজিটালাইজেশনের কারণে এখন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কম্পিউটার খুব সহজলভ্য হয়ে গেছে। এর প্রভাবে গ্রাম গঞ্জের মানুষও কিন্তু শহুরে মানুষের মত এখন আর কোন অংশেই পিছিয়ে নেই। কম্পিউটার অপারেশনের শুরুতেই বেশিরভাগ মানুষ যেই সফটওয়্যার দিয়ে সফটওয়্যারের এই বিশাল জগতে প্রবেশ করে তা হল এম-এস-ওয়ার্ড। তাই, সহজেই এটি বলা যায় যে, এম-এস-ওয়ার্ড সফটওয়্যারটি হচ্ছে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের সফটওয়্যার শিক্ষার মূল ভিত্তি। সফটওয়্যারের এই সুবিশাল জগতে সবচেয়ে সহজ অপারেশনের একটি সফটওয়্যারের নাম বলতে বললে বেশির ভাগ মানুষ নির্দ্বিধায় স্বীকার করবেন ওয়ার্ডের নাম।
তবে, সহজ অপারেশনের সফটওয়্যার হওয়া সত্বেও ওয়ার্ডের ব্যবহার কিন্তু ব্যাপক বিস্তৃত। এই সফটওয়্যারের কিছু এডভান্সড কমান্ড যেমনঃ মেইল মার্জ বা এই ধরনের বিভিন্ন কমান্ডের সাহায্যে খুব সহজেই অনেক জটিল ও পুণরাবৃত্তিধর্মী কাজ খুব সহজেই করে ফেলা যায়। একটি অবস্থা কল্পনা করুনঃ আপনি আপনার কোম্পানীর সবার জন্য প্রত্যেক মাসে মিটিং আয়োজন করেন আর এজন্য আপনি তাদের সবাইকে ইনভাইটেশন লেটার পাঠাবেন। প্রত্যেক মাসেই যেহেতু একই স্থানে, একই ব্যক্তিকে আপনার লেটার পাঠাতে হয়, তাই এই লেটারে কিন্তু শুধু তারিখ পরিবর্তন করেই আপনি প্রত্যেক মাসে আপনার সব কর্মচারীকে চিঠি পাঠাতে পারেন। এজন্য, আপনি যদি ম্যানুয়ালি আপনার ২০০ কর্মচারীর জন্য তারিখ পরিবর্তন করে তাদেরকে ইমেইল করতে যান তবে তা হবে সময়ের অপচয়। আপনার এই কাজ সহজ করে দেয় ওয়ার্ডের মেইল মার্জ এর ফিল ইন অপশনটি। এর মাধ্যমে আপনি সহজেই তারিখ একবার পরিবর্তন করেই সব লেটারে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেন। তাহলে দেখুন, যেই কাজটি আপনি বারবার অনেক সময় নিয়ে করতেন সেই কাজটিই অনেক সহজ ও দ্রুততর সময়ে করে ফেলতে পারবেন ওয়ার্ডের এই অসাধারণ ফিচারটির মাধ্যমে।
শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন থেকেই কিন্তু শুরু হয়ে যায় মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের সাথে এই সখ্যতা। এই সফটওয়্যার ছাড়া কোন এসাইনমেন্ট, রিপোর্ট কিছুই তৈরি করা সম্ভব নয়। তাই শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই এই সফটওয়্যারে পারদর্শিতা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীরা ব্যাকুল থাকেন। ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীরা তাদের বিভিন্ন ল্যাবরেটরি রিপোর্ট তৈরি করতে যেমন ওয়ার্ডের স্বরণাপন্ন হন; ঠিক তেমনি ব্যবসায় শিক্ষার শিক্ষার্থীরাও তাদের যেকোন বিজনেস রিপোর্ট জমা দেন এই ওয়ার্ড ফরম্যাটেই। তাই, এটি নির্দিধায় বলা যায় যে, আপনি যেই অনুষদেরই শিক্ষার্থী হন না কেন; এম এস ওয়ার্ডে কাজের পারদর্শিতা আপনাকে অবশ্যই পড়াশুনার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে রাখবে।
চাকুরি জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এই সফটওয়্যার। আপনি যদি আপনার সিভিতে সফটওয়্যার স্কিলে ওয়ার্ডের উল্লেখ না করেন, তবে আপনার সেই চাকুরির জন্য কল পাওয়ার সম্ভাবনাই অনেক অংশে কমে যায়। কারণ, আপনাকে এই বেসিক সফটওয়্যারে ট্রেইনিং দেয়ার চেয়ে কোম্পানী এই বিদ্যায় পারদর্শী আরেক চাকুরি প্রার্থীকে ডাকাই সমীচীন মনে করবে। আসলে কোম্পানীর মালিকদেরও এছাড়া কোন উপায় নেই। কোম্পানীর উপর থেকে নিচের দিকে সব প্রার্থীরই এই সফটওয়্যারে পারদর্শিতা ছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই সফল্ভাবে কাজের পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব নয়। বিভিন্ন ধরনের রিপোর্ট থেকে শুরু করে ভাউচার, নোটপ্যাড সব কিছুই এই সফটওয়্যারের সাথে জড়িত। তাই, আপনি কোম্পানীর যেই বিভাগেরই প্রার্থী হন না কেন, ওয়ার্ড সফটওয়্যারে কাজের পারদর্শিতা আপনাকে নিয়ে যাবে এক অনন্য উচ্চতায়।
আপনি যদি কোন পাবলিকেশনের সাথে জড়িত থাকেন, তবে আপনার জীবনের অনেকটা অংশের সাথেই ওয়ার্ড ওতোপ্রতোভাবে জড়িত হয়ে পড়বে। বই প্রকাশনার সাথে তো এই ওয়ার্ডের সম্পর্ক সেই বহুকাল ধরেই। লেখকরা তাদের খসড়া পান্ডুলিপি আগে তৈরি করতেন হাতে লিখে বা টাইপ রাইটারে খট খট শব্দ করে। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে এখন লেখকরাও তাদের এই লেখালেখির বিষয়টি নিয়ে এসেছেন পিসি বা ল্যাপটপে। এখন তারা ওয়ার্ডে খুব সহজেই তাদের খসড়া পান্ডুলিপি তৈরি করেন এবং প্রকাশকের সাথে পরামর্শ করে পরে এডিটও করেন। তাই, একথা সহজেই বলা যায় যে, লেখক প্রকাশকের জীবনের এক অপরিহার্য অংশ হল এই সফটওয়্যার। আর পূর্বে প্রকাশনা শিল্পে প্রুফ রিডিং এর কঠিন বিষয়টিকেও সহজ করে তুলেছে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের স্পেল এন্ড গ্রামার চেক এর অপশনটি। ওয়ার্ডে কোন স্পেলিং মিসটেক থাকলে তা লাল কালি দিয়ে আনডারলাইন করা হয় আর কোন গ্রামার বা ব্যাকরণগত ভুল থাকলে তা নীল কালি দিয়ে আন্ডারলাইন করা হয়। এমনকি সাজেশন ম্যানুতে এর কারেকশন ও পরামর্শ হিসেবে দেয়া হয়। সেখান থেকে খুব সহজেই এই ভুলগুলো শুধরে নেয়া যায়। এই সহজ উপায়ে এম এস ওয়ার্ডের মাধ্যমে খুব সহজেই নিখুঁতভাবে প্রকাশনার কাজ করা যায়। এই ফিচারগুলোর জন্য এম এস ওয়ার্ডের বিকল্প ও সহজ কোন সফটওয়্যার এখন পর্যন্ত বাজারে নেই।
তাই, নিশ্চিতভাবেই একথা বলা যায় যে, মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের দক্ষতা আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই। শিক্ষাজীবনে বা কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি ধাপেই আপনি এই সফটওয়্যারের সাথে আপনার পথচলা মসৃণভাবেই চালিয়ে যাবেন-এটাই আমাদের কামনা।
লেখাটি পূর্বে প্রযুক্তি টিমে প্রকাশিত হয়েছে যার লিংকঃ
আমি ইঞ্জিনিয়ার আলী কায়সার। টিম মেম্বার, প্রযুক্তি টিম, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 5 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 54 টি টিউন ও 3 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 2 টিউনারকে ফলো করি।