বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশা করছি আপনারা সকলেই আল্লাহর রহমতে অনেক ভাল আছেন। আমাদের একটু অসুখ হলে ছুটে যাই ডাক্তারের কাছে এবং ডাক্তার আমাদেরকে বড় একটি প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দেয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শের বাইরে আমরা নিজেরা নিজেদের চিকিৎসা করার কথা বাদ দেই না। আমাদের কোন একটু সমস্যা হলেই বাজার থেকে একটি অ্যান্টিবায়োটিক কিনে নিয়ে সেবন করি।
কিন্তু আপনি কখনো কি ভেবে দেখেছেন যে, এন্টিবায়োটিক যদি কাজ করা বন্ধ করে দেয় তবে কি হবে? আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা তখন কি অকার্যকর হয়ে পড়বে, নাকি মানুষ ব্যাকটেরিয়ার ভয়ে বাড়ি থেকে বাইরে বেরই হবে না? এমন সব প্রশ্ন হয়তোবা অযৌক্তিক নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বলছে, আপনার প্রেসক্রিপশনে থাকা তিনটি এন্টিবায়োটিক এর মধ্যে একটির কোন কাজই নেই। ফলে এই অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক শরীরে এমন বাধা তৈরি করে যা ভবিষ্যতে সেই অ্যান্টিবায়োটিক এর কাজ করতেই বাধা দেয় এবং ফলে ভবিষ্যতে রোগের জীবাণু কে ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ে।
পৃথিবীতে অনেক কিছুই আবিষ্কার হয়েছে দুর্ঘটনাবশত। কিন্তু সেটি পরবর্তীতে কাজে লেগেছে অনেক মানুষের। তবে আপনি কি জানেন, আমাদের জীবন বাঁচানো যে প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক সেটিও তৈরি হয়েছে কোন অপ্রত্যাশিত এক দুর্ঘটনার মাধ্যমে? ১৯২৮ সালের এক বিকেলে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং অবকাশ যাপন শেষে যখন তার ল্যাবরেটরীতে চলে আসলেন তখন এক আশ্চর্যজনক ব্যাপার লক্ষ্য করেন। তারপরীক্ষাগারে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া 'স্টেফাইলোকক্কাস' একপ্রকার ছত্রাকের আবির্ভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।
প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারক আলেকজান্ডার ফ্লেমিং বলেন, "পেনিসিলিন আমি উদ্ভাবন করে নি এবং প্রকৃতি তা তৈরি করেছে। এটা আমার দুর্ঘটনা প্রসূত আবিষ্কার মাত্র। "পৃথিবীর প্রথম এন্টিবায়োটিক আবিষ্কারক বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এর সরল স্বীকারোক্তি। কেন এই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয়ে উঠেছে? প্রিয় বন্ধুরা, মুল টিউনে চলে যাবার আগে আপনাদের একে বলে নেই, আপনি যদি আমার এই টিউনে নতুন হয়ে থাকেন তবে আমাকে ফলো করে রাখুন।
জীবনে হয়তো বা এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করেনি এমন মানুষকে হয়তো বা খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন, আসলেই আপনার জন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার জরুরী কিনা। বিংশ শতকেও মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪৭ বছর। তবে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিন আবিষ্কারের পর গড় আয়ু বেড়ে যায় আরো ২০ বছর। অন্যভাবে বলতে গেলে, এন্টিবায়োটিক মানুষের গড় আয়ু দুই দশক পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়।
তবে এই সুসংবাদটি মানুষের জন্য বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কারণ পেনিসিলিন আবিষ্কার করার মাত্র ৭০ বছর পরে এটির ব্যবহার নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন এটি মানবসভ্যতাকে ১০০ বছর পিছিয়ে দিতে পারে।
আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এই ছত্রাকের নাম দেন পেনিসিলিন। আর এভাবেই কালের বিবর্তনে আমাদের হাতে এসে পৌঁছায় জীবনরক্ষাকারী এই ঔষধ। বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এই আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার ও পান। ১৯৪৫ নোবেল পুরস্কার হাতে নিয়ে বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং বিশ্বকে সতর্ক করে দিয়ে এটা বলেছিল, এন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার প্রকৃতিতে এন্টিবায়োটিক সহনীয় অধিক অনুজীবের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। যা হতে পারে অনেক ভয়াবহ।
শুরুতে এই বিষয়টিকে কেউ খুব আমলে না নিলেও ফ্লেমিং এর এই সতর্কবার্তা বর্তমান এন্টিবায়োটিক পরিস্থিতিতে ধ্রুব সত্যে পরিণত হয়েছে। তাই আমরা অনেকেই দেখি কোন রোগের অপর এন্টিবায়োটিক কোন প্রভাব ফেলতে পারে না। এন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে প্রকৃতিতে প্রতিনিয়তঃ অ্যান্টিবায়োটিক সহনীয় অনুজীবের সংখ্যা তৈরি হতে চলেছে। কখনো কখনো শরীরের প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে ধ্বংস হয়ে যায়; যার কারণে মানুষের মৃত্যুও ঘটতে পারে।
বিজ্ঞান বলছে, অন্য সব প্রাণী কোষের মতোই ব্যাকটেরিয়া ও বিভাজিত হয়। আর এই বিভাজিত হওয়ার সময় এক ধরনের প্রতিরোধী জিন তৈরি করে ব্যাকটেরিয়া; যা বিভাজিত নতুন ব্যাকটেরিয়ায় প্রতিস্থাপিত হয়। আর এভাবেই তৈরি হয় সম্পূর্ণ নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়া। নতুন উৎপন্ন ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের বাহকের মাধ্যমে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সেই ব্যাকটেরিয়াগুলো মানুষ থেকে শুরু করে জীবজন্তু, বাতাস, পানি এবং মাটি সর্বত্রই পাওয়া যায় এই ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পুরনো ব্যাকটেরিয়ার জন্য এন্টিবায়োটিক থাকলেও নতুন ব্যাকটেরিয়ার জন্য কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক থাকেনা। কারণ বিজ্ঞানীরা গত ৩০ বছর ধরে পুরানো অ্যান্টিবায়োটিক এর পরিবর্তে নতুন এন্টিবায়োটিক তৈরি করলেও তেমন পরিবর্তন আসেনি এর কার্যক্ষমতায়। ফলে নতুন ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ায় থামছে না এর সংক্রমণ।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় আড়াই লাখ মার্কিনি এমন সব ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে মারা যায় যেসব ব্যাকটেরিয়ার প্রতিষেধক পূর্বে কার্যকর ছিল। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব না হওয়ার কারণে ত্বকের মত সাধারন সংক্রমণে আক্রান্ত প্রতি নয় জনের মধ্যে একজন মারা যায়। অনেকেই হয়তো বা বলতে পারে এটি কি তবে ক্যান্সারের থেকেও ভয়াবহ? তবে এমন দাবির এর আগে আর একবার ভাবতে হবে। কারণ কেমোথেরাপি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়, যা প্রতিরোধে দেওয়া হয় অ্যান্টিবায়োটিক। কিন্তু এই অ্যান্টিবায়োটিক ই যদি কাজ না করে তবে কি হবে।
এমন পরিস্থিতির ভয়াবহতা এরই মধ্যে প্রকাশিত হওয়া শুরু করেছে। বিশ্বের প্রায় ১০০ টি দেশে নতুন ধরনের যক্ষা রোগের অস্তিত্ব মিলেছে এবং যার আরোগ্য বেশ কঠিন। অর্থাৎ, মানুষ আবার সেই এন্টিবায়োটিক হীন যুগেই প্রবেশ করছে। তবে প্রশ্ন হতে পারে, ব্যাকটেরিয়ার কাছে কি হেরে যাবে আধুনিক বিজ্ঞান? তা অবশ্য নয়, ব্যাকটেরিয়ার কোষ গুলোকে একে একে ধ্বংস করতে ন্যানো চিপ তৈরি করেছে বিজ্ঞানীরা।
এন্টিবায়োটিক আধুনিক ঔষধ হিসেবে অনেকাংশেই সক্ষম। বিভিন্ন জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে মানব সভ্যতাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এটি বিরাট বড় ভূমিকা রাখছে। আমরা এন্টিবায়োটিক শুধুমাত্র সংক্রামক রোগ নির্মল করার জন্যই ব্যবহার করিনা। বরং, অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে কেমোথেরাপি, অঙ্গ প্রতিস্থাপন এবং সবকিছু নিরাপদ এবং সহজতর করতে সহায়তা করে এন্টিবায়োটিক। কিন্তু বর্তমানে প্রাণী এবং মানুষের শরীরে এন্টিবায়োটিক যথেষ্ট পরিমাণে ব্যবহার হচ্ছে।
বর্তমানে এন্টিবায়োটিকে কাজ হচ্ছে না এমন ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ প্রতিবছর ১০ মিলিয়ন মানুষ মারা যাবে এন্টিবায়োটিকের কাজ না করার কারণে বা অ্যান্টিবায়োটিকে ও কাজ করে না এমন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমনের কারণে। দুর্ভাগ্যক্রমে এমন কিছু ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা বর্তমানে সহজলভ্য কোন এন্টিবায়োটিক দাঁড়াই ধ্বংস করা সম্ভব নয়। আর এজন্য দরকার আপগ্রেডেড অ্যান্টিবায়োটিক। ঠিক যেমন আমরা আমাদের মোবাইলকে নিয়মিত আপডেট করে থাকি বর্তমানের ঝুঁকি থেকে রক্ষার জন্য কিংবা নতুন কোনো কিছু যুক্ত করার জন্য।
ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের শরীরের জীবাণুর জন্যও দরকার পড়ে নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক তো ভালোই কাজ করছিল। যেখানে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে মানুষের রোগ ভালো হচ্ছিলো। তবে কেন এই পরিস্থিতি তৈরি হলো এবং কেনই বা এই সংকট? যেখানে মানুষের শরীরে আর সেই অ্যান্টিবায়োটিক কাজই করছে না।
যখন কোন রোগ সনাক্ত করার পরও সেটি কোন ঔষধের ভালো হয় না, তখন ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ রক্ত, পুঁজ বা ইউরিন কে ল্যাবরেটরীতে। কেন অতি সাধারণ একটি রোগ ঔষধে ভাল হচ্ছেনা, এটি জানার জন্য এই ব্যবস্থা নেয়া হয়। এরপর মাইক্রোবায়োলজিস্ট সেই ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ রক্ত, পুঁজ ল্যাবরেটরীতে কয়েকদিন ধরে চাষ করে এবং সেই ব্যাকটেরিয়াগুলো ওপর বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়। সেই অ্যান্টিবায়োটিক গুলো ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সক্ষম কিন তা যাচাই করা হয়। ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলার সক্ষমতা থাকলে সেই অ্যান্টিবায়োটিক এর পেছনে লাগা হয় S বা Sensitive; অর্থাৎ, অ্যান্টিবায়োটিক টি ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সক্ষম। ব্যাকটেরিয়াকে মারার ক্ষমতা না থাকলে লেখা হয় R বা Resistance; অর্থাৎ সেই অ্যান্টিবায়োটিক টি ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলতে সক্ষম নয়।
পূর্বের সেই অ্যান্টিবায়োটিক সেই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করলেও বর্তমান ব্যাকটেরিয়াটি তার রূপ পাল্টে ফেলেছে। এতে কি দাঁড়ায়? অতি সাধারণ রোগ ও আর অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে সারবে না। সেই ব্যাকটেরিয়াটি এখনো ইচ্ছা মত বংশবিস্তার করতে পারবেন। মানুষের শরীরের রোগ তৈরি করে তারা বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকবে।
যেখানে চিকিৎসক এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান দর্শকের ভূমিকায় সেটি দেখে যাবে। এভাবে করে একদিন সেই ছোট অসুখটি নিয়ে মানুষ টি মারা যাবে। তবে আমরা কি ধরে নেব যে, পূর্বে যে উপাদানটি এন্টিবায়োটিক তৈরি করা হতো সেই উপাদানটি আর নেই? অথবা বর্তমানে যে ব্যাকটেরিয়া তে রয়েছে সেটি পূর্বের ব্যাকটেরিয়া থেকে আলাদা?
বরং, এসবের কোনটি না। বরং, তখনকার অ্যান্টিবায়োটিক একই রকমের আছে কিন্তু বর্তমানের ব্যাকটেরিয়াগুলো তাদের রূপ পাল্টে ফেলেছে। তবে এবার প্রশ্ন হচ্ছে এগুলো কাজ করবে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানা থাকে আমাদেরকে জানতে হবে একইভাবে আমাদের শরীরে নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়া বংশবিস্তার করল। যেখানে অনেক লোক হয়তো বা জীবনে কোনদিন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে নি, কিন্তু তাদের শরীরে কিভাবে রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া তৈরি হলো?
এতসব আলোচনা শুনে হয়তো বা আমাদের মনে হতে পারে আমরা তো জীবনে কোনদিন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করি নি, তবে আমাদের শরীরে ও কি রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া থাকবে? এই প্রশ্নের উত্তর হবে হ্যাঁ। কোন ব্যক্তি অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করেও তার শরীরে নতুন ধরনের রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া থাকার কারণে বর্তমান পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ এবং এই বিষয় নিয়ে এত আলোচনা। তবে স্বাভাবিকভাবে আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, কিভাবে করে আমাদের শরীরে এই নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়া চলে আসলো? এর উত্তরটি হয়তোবা আপনার কাছে রয়েছে।
আপনাকে যদি বর্তমানের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে বলা হয়, এই ভাইরাসটি কিভাবে ছড়ায়? তবে আপনি হয়তোবা এ প্রশ্নের উত্তরে বলবেনঃ হাঁচি-কাশি এবং ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে ওঠাবসা করলে ইত্যাদি। ঠিক একইভাবে কোন রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া ও আপনার শরীরে একইভাবে প্রবেশ করে। ইতিমধ্যেই কোন একজন ব্যক্তি রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়ার বাহক হলে তার সঙ্গে চলাফেরা করলে যে কোন মাধ্যমে আপনার শরীরে সেই নতুন ব্যাকটেরিয়া তে প্রবেশ করলে আপনার শরীরের সেই ব্যাকটেরিয়াটি বংশবিস্তার করতে থাকে। এক্ষেত্রে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি বেশি হয়, তবে নতুন ধরনের এই ব্যাকটেরিয়াকে আপনার শরীর ধ্বংস করে দেবে।
আর যদি আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয় তবে সেই ব্যাকটেরিয়া টি আপনার শরীরে ও সেই ব্যক্তির মত নতুন করে বংশবিস্তার করতে থাকবে। এভাবে করে পরবর্তী সময়ে আপনি হয়ে উঠবেন সেই ব্যাকটেরিয়ার বাহক। পরবর্তী সময়ে আপনি যখন আবার কোন সুস্থ লোকের সঙ্গে চলাফেরা করবেন সেই ব্যক্তি ও সেই রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া তে আক্রান্ত হবে। এক্ষেত্রে প্রথম যেই ব্যক্তি এই রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়ার বাহক হয়েছে, হয়তোবা তার পূর্ব থেকেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিল। আর এই জন্যই তাকে প্রথমে সেই নতুন ব্যাকটেরিয়া টি আক্রান্ত করেছিল এবং সে অ্যান্টিবায়টিক সঠিকভাবে ব্যবহার না করার কারণে তার শরীরে সেই ব্যক্তিটি রেজিস্ট্যান্স হয়েছে।
আর এভাবে ঘুরে একজন থেকে আরেকজনে এই রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে যায়। যেখানে পূর্বের ব্যাকটেরিয়ার চাইতে নতুন সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া টি আরো বেশি শক্তিশালী এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে সক্ষম।
আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি যে, সর্বপ্রথম ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এন্টিবায়োটিক এর নাম পেনিসিলিন। ১৯২৮ সালে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এটি আবিষ্কারের পর সবাইকে সাবধান করেছিলেন যে, ব্যাকটেরিয়া তার প্রতিরোধী ক্ষমতা দিয়ে এন্টিবায়োটিকের বিস্ময়কর ক্ষমতা কে নষ্ট করে দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেখানে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এর ধারনা ঠিক ছিল এবং ১৯৪০ সালে এবং ১৯৫০ সালে এন্টিবায়োটিক এর প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রতীয়মান হচ্ছিলো। তখন থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান গুলোর নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করে ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। যেখানে প্রথমে ছিল এটি অনেক সফল এবং লাভজনক একটি ব্যবসা।
তবে সময়ের সাথে সাথে কিছু বিষয় পরিবর্তন হয়ে যায়। কোন একটি ব্যাকটেরিয়া এন্টিবায়োটিক এর বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান নেওয়ার কারণে কোনো এক সময়ে গিয়ে আর এন্টিবায়োটিক কাজ করে না। আর এটিকে বলে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বা সহিষ্ণুতা। এর ফলে নতুন আবিষ্কৃত এন্টিবায়োটিক গুলো কার্যকর হত শুধুমাত্র ছোটখাটো সংক্রমণের ক্ষেত্রে। যদিও প্রথমদিকে একই এন্টিবায়োটিক ছিল অনেক বেশি কার্যকরী।
এখন মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে, যদি পুর্বের অ্যান্টিবায়োটিক এতটাই কার্যকরী ছিল তবে এখন কেন একই অ্যান্টিবায়োটিক গুলো জীবানু ধ্বংস করতে অক্ষম হয়ে পরলো? যার উত্তর হয়তোবা আপনার হাতের মুঠোয় রয়েছে। বিনা প্রেসক্রিপশনে ঘনঘন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন, কোন অসুখে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পর মাঝপথে গিয়ে অসুখ ভালো হলে বাকি ঔষধ না খেলে পরবর্তীতে আর এন্টিবায়োটিক কাজ করে না। যেখানে বর্তমানে আমাদের সবার কাছে এন্টিবায়োটিক একটি সহজলভ্য ঔষধ এ পরিণত হয়েছে।
একটু অসুস্থ হলেই, কাউকে কিছু না বলে খেয়ে ফেলছেন অ্যান্টিবায়োটিক। এখানে কাউকে কিছু না বলার অর্থ হচ্ছে, চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা। এছাড়া এন্টিবায়োটিক খাওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া বা ভাইরাসজনিত কোনো অসুখ, অর্থাৎ যেসব ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় পর এই সেই অসুখটি এমনিতেই সেরে যায়; বিশেষ করে শিশুদের এন্টিবায়োটিক দিলে একটা সময়ে গিয়ে এন্টিবায়োটিক তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এন্টিবায়োটিক দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি কোন ব্যক্তির সাতদিনের ডোজ দেবার প্রয়োজন পড়ে এবং গ্রামের হাতুড়া ডাক্তারের যদি তিনদিনের ঔষধ দিয়েই রোগটি ভালো করে, তবে সেটি হবে পরবর্তীতে সেই ব্যাকটেরিয়াকে এ রেজিস্ট্যান্ট করাতে সহায়ক। কেননা এই সময়ের মধ্যে সেই ব্যাকটেরিয়া টি তার গঠনে পরিবর্তন এনে রেজিস্ট্যান্ট হয়েছে, অর্থাৎ সেই এন্টিবায়োটিক এর প্রতিরোধী হয়ে গিয়েছে।
মানুষের সঙ্গে সঙ্গে প্রাণীর ওপর ও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয়। যেখানে প্রাণীর শরীর থেকে ও অ্যান্টিবায়োটিক পুরোপুরি বিলীন হয় না। এর ফলে আমরা যাই খাই না কেন, সবজি, ফলমূল বা মাংস-মাংস; এদের মাঝে থাকা এন্টিবায়োটিক এর কারণে আমাদের শরীর এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে থাকে। আপনি যদি খেয়াল করেন তবে দেখবেন, একটি কিংবা দুইটি এন্টিবায়োটিক ঔষধ খেলে আপনার রোগটি ভালো হয়ে যাচ্ছে। ফলে পরবর্তীতে আপনি আর ঔষধ কিনছেন না।
আপনি যে পরবর্তীতে আর ঔষধ কিনছেন না এক্ষেত্রে আপনার রোগ ভাল হলেও কয়েকটি জীবাণু ততক্ষণ পর্যন্ত হয়তোবা রয়ে গেছে আপনার দেহে এবং আপনার দেহে তৈরি হচ্ছে রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া। আপনি যখন কোন এন্টিবায়োটিক ঔষধ খাবেন, তখন আপনার শরিরে থাকা জীবাণু গুলো আস্তে আস্তে ধ্বংস হতে থাকবে। তবে কয়েকদিনের মধ্যে আপনার শরীর থেকে সেই জীবাণুগুলো অধিকাংশই মারা গেলেও কিছু জীবাণু সে সময় পর্যন্ত থেকেই যায়; যেগুলো অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং সেই এন্টিবায়োটিক এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এ সময় আপনি যদি এন্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করে দেন তবে আপনার শরীরে থাকা সেই ব্যাকটেরিয়াগুলো আবার নতুন উদ্যমে আপনার শরীরে বংশবিস্তার করতে থাকবে।
পরবর্তীতে আপনার শরীরে সেই ব্যাকটেরিয়াগুলো যখন বংশ বিস্তার করবে তখন সে আর সেই রকম থাকবে না। বরং, নতুনভাবে ব্যাকটেরিয়াগুলো আবার বিভাজিত হবার সময় নতুন জিন তৈরি করবে। আর তখন সেই নতুন ব্যাকটেরিয়া কে ঠেকানোর জন্য দরকার পড়বে আবার নতুন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক। এবার ছোট্ট একটি শিশু; যার শরীরে সমস্ত ব্যাকটেরিয়া গুলো রেজিস্ট্যান্স হয়ে গিয়েছে। তার সামান্য একটি রোগ; যার জন্য ঔষধ দেয়া হয়েছে, কিন্তু রোগ সারছে না।
চিকিৎসক এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান তাকে আর বাঁচাতে পারবে না। এভাবে করে শিশুটি নিশ্চিত মারা যাবে। শত শত অ্যান্টিবায়োটিক থাকা সত্বেও ব্যাকটেরিয়াগুলোকে মেরে ফেলা সম্ভব না। কারণ ব্যাকটেরিয়াগুলো নিজের ডিএনএ নিজেই পরিবর্তন করে ফেলেছে। ফলে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাছে সামান্য এই ব্যাকটেরিয়া টিকে মেরে ফেলার মত ক্ষমতা নেই।
এভাবে করে বাবা-মা চেয়েচেয়ে দেখছে শিশুটির অকাল মৃত্যু। পৃথিবীর আলো-বাতাস এ আদর নিয়ে বেঁচে থাকা কি মাত্র চার বছরের জন্য? এই শিশুটি তার মৃত্যুর জন্য দায়ী নয়। কেনই বা মরতে হচ্ছে এই শিশুটিকে; এতক্ষণে আপনারা কি তা বুঝতে পেরেছেন? যেসব প্রশ্নের উত্তর হয়তো বা আপনি ইতিমধ্যেই উপরে পেয়ে গেছেন।
সামান্য জ্বরে ই আমরা বাজার থেকে দুটো জিম্যাক্স কিনে খেয়ে ফেলি। এভাবে ধরুন, ১০০ ব্যাকটেরিয়া কে মারার জন্য সাতদিনের ডোজ লাগে। অথচ দুইদিন পরে গিয়ে আমাদের জ্বর ভালো হয়ে গেলে সেই ডোজ পূর্ণ করিনা। আমাদের শরীরে থাকা ৭০ টি ব্যাকটেরিয়া দুইটি এন্টিবায়োটিক খাওয়ার পর মারা গেলেও বাকি ৩০ টি ব্যাকটেরিয়া জিম্যাক্স কে চিনে ফেলেন। ফলে তারা তাদের গঠন দ্রুত বদলে নেয়।
তখন পরের বার আমরা আর জিম্যাক্স দিয়ে রোগ সারাতে পারি না। কারণ জিম্যাক্স এর বিরুদ্ধে সবরকম ব্যবস্থা ব্যাকটেরিয়া টি নিয়ে ফেলেছে। এবার এই ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ মানুষ যদি আমাদের সামনে আসে, বসে, তার নিশ্বাস, হাঁচি এর মাধ্যমে আমাদের শরীরে জিম্যাক্স রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া টি চলে আসবে। এভাবে করে জিম্যাক্স রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়ার লাখ লাখ মানুষের দেহে সঞ্চারিত হবে। একটি নবজাতক, যে কিনা গতকাল জন্মালো; সেও আপনার ভুলের কারণে একটি রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া নিজের শরীরে ধারণ করলো।
আপনি যে বাড়িতে থাকেন সেই বাড়ির বাসিন্দা, যে নদীতে পা চুবাবেন সেই নদীর অনুকুলের বাসিন্দারা ও হয়ে গেল জিম্যাক্স রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়ার অভায়রণ্য সম্পন্ন মানুষ। শুধু জিম্যাক্স কেন, আমাদের মধ্যে আরও অন্য কেউ অন্য একটি অ্যান্টিবায়োটিক খাবে এবং রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া তৈরি করবে; এবং সেটি ভাগাভাগি করবে সারাদেশের মানুষের সঙ্গে। সে যেখানেই যাবে, যেখানেই স্পর্শ করবে, যেখানেই হাঁচি দেবে, যেখানেই বসবে, যেখানে খাবে, সেখানেই ছড়িয়ে দিবে রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া। এভাবে করে আরো একটি ব্যাকটেরিয়া এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স শিখে ফেলবে। ফলে সকলের কাছ থেকে ধার করে ব্যাকটেরিয়াগুলো হয়ে উঠবে সকল অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স।
তাকে এখন যে ঔষধি দেন না কেন, কাজ করবেনা। ফলে আপনি ঔষধের দোকানে কোটি কোটি ঔষধ রেখেও বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন। সে যত বড় ধনী হোক, দুনিয়ারে যে দেশ চিকিৎসা করাক, সে মৃত্যুর সম্মুখীন হবে; আর ফিরবে না। তার মৃত্যু অনিবার্য। তাহলে এখানে ভয়ের কথাটি কোথায়? আপনার শরীর থেকে রক্ত নিয়ে কালচারে পাঠান। দেখুন, আপনি বর্তমানে এখনও অর্ধেক রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া নিয়ে বেঁচে আছেন।
আরো ভয়ের কথা কোথায় জানেন? আপনার পরিবারের বাবা-মা, সন্তান, বন্ধুবান্ধব হয়তোবা ইতিমধ্যেই রেজিস্ট্যান্স হয়ে আছে। কেউ অতি উৎসাহী হয়ে যখন কালচারের জন্য রক্ত হাসপাতালে পাঠাবেন, সেদিনই তারা ধরে ফেলবেন, নিজের অজান্তে এইডস এর চাইতেও ভয়াবহ ব্যাপার নিয়ে সে বেঁচে ছিল। আজ থেকে তার মৃত্যুর কাউন্টডাউন শুরু। আমাদের শরীরের ব্যাকটেরিয়া যে হারে রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে, সেই হারে অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি হচ্ছে না।
চার বছরের নিষ্পাপ বাচ্চা ছেলেটি আপনাদের দোষের পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছে। কেননা তাঁর শরীরে কোন এন্টিবায়োটিক কাজ করছে না। সে কি আমাদের ছেড়ে দেবে? তার শরীর থেকে রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়াটি ইতিমধ্যেই হয়তোবা তার বাবা-মা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে। আমাদের কি তবে দায়মুক্তি হবে? মানুষ সভ্যতা বিলুপ্ত হবার পর আমাদেরকে দায় মুক্তি ঘটবে।
লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ব্যাকটেরিয়া আমাদের দেহে নিরীহ একটি প্রাণী ছিল। আমরাই তাদের কে শিখিয়েছি কিভাবে আমাদের দেহে বসে আমাদের কে হত্যা করা যায়। নিজেকে প্রশ্ন করুন, আমাদের চাইতে কে বেশি বুদ্ধিমান। ব্যাকটেরিয়া মাইক্রোস্কোপিক হওয়ে হাত-পা না থাকা সত্বেও শিখে ফেলো কিভাবে মানুষকে হত্যা করতে হয়। এবার ভাবুন কে বেশি বুদ্ধিমান?
চিকিৎসক রোগীর অবস্থা বুঝে পাঁচ থেকে সাত দিনের একটি ডোজ দিয়ে থাকেন। কিন্তু কেউ যদি সেই সময়ের আগেই, অর্থাৎ দুই দিন খেয়েই আর খেল না; তবে সেই অ্যান্টিবায়োটিক রোগীর শরীরে অকার্যকর হয়ে পড়ে। তখন ঐ রোগীর জন্য আগের চাইতে আরও শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক এর দরকার পড়ে। ১৯৮০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে নতুন করে অ্যান্টিবায়োটিকের কোন রাসায়নিক প্রকরণ আবিষ্কার হয়নি। কিন্তু সেই সময় তো আর জীবাণু থেমে থাকেনি।
সে সময় ব্যাকটেরিয়াগুলো তাদের মতো করে শক্তিশালী হতে থাকে। বর্তমানে ও এরকম কিছু ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায় যেগুলো বর্তমান বাজারের এন্টিবায়োটিক দ্বারাও নির্মূল করা অসম্ভব। ধারণা করা হয় যে, এন্টিবায়োটিকের কারণে মানুষের গড় আয়ু ১০-২০ বছর বেড়েছে। বিগত বছরগুলোতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে অ্যান্টিবায়োটিক গুলোর অকার্যকর হয়ে যাবার খবর শোনা যাচ্ছে। বর্তমানে এই প্রোকোট এতটাই যে, বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে কার্যত অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ শূন্য হয়ে যাবে, যদি না নতুন কোন অ্যান্টিবায়োটিকের ডিজাইন করা হয়।
যদি এভাবে করে চলতে থাকে তবে কয়েক দশক পরে হয়তোবা বর্তমানে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার আমাদের শরীরের কাজই করবে না। কেননা এই সময়ের মধ্যে এসব এন্টিবায়োটিক গুলো মানুষের শরীরে কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে, অর্থাৎ এসব ব্যাকটেরিয়াগুলো আমাদের শরীরের জন্য রেজিস্ট্যান্স বা সহনীয় হয়ে গিয়েছে। যেখানে আমাদের শরীরে পূর্বের ব্যাকটেরিয়াগুলো আরো শক্তিশালী হয়েছে এবং যার কারণে সেসব অ্যান্টিবায়োটিক গুলো আমাদের শরীরের কোন ক্রিয়া ই করতে পারছে না। তবে আমরা যদি একটু সচেতন হই তবে হয়তোবা ভবিষ্যতে আর আমাদেরকে এমন দিন দেখতে হবে না। তবে এ জন্য আমাদের কি কি করতে হবে?
আমরা যদি সেই দিন দেখতে না চাই, যখন এন্টিবায়োটিক কোন কাজ করবে না; এজন্য এখন থেকে আমাদের কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হবে। আর তাহলে হয়তোবা ভবিষ্যতে মানব সভ্যতা কে বাঁচানো যাবে ছোট্ট একটি মরণঘাতী ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার নিষিদ্ধ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গৃহপালিত পশু-পাখিদের দ্রুত বৃদ্ধিতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কৃষকদের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আর সর্বশেষ বলা হচ্ছে, ব্যাকটেরিয়ার ঠেকাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোন বিকল্প নেই। আপনি আজ এখনই প্রতিজ্ঞা করুন, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না এবং এন্টিবায়োটিক খাবার সময় ডোজ পূর্ণ করে খাবেন। আপনার অনাগত দিনে নিজেকে নিরাপদ রাখতে এটিই একমাত্র উপায়।
আমরা শুধু একটু সচেতন হতে পারি তবে হয়তোবা এন্টিবায়োটিকের ক্ষতিকর দিকগুলো থেকে এখনই বাঁচতে পারব। তবে আশার কথা হলো, বিভিন্ন দেশের সরকার এই উদ্ধুত পরিস্থিতি কে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। ব্রিটেন এবং আমেরিকার মত কিছু কিছু দেশ এটির সফলতা ও দেখতে পাচ্ছে, যেটি আমাদের জন্য কিছুটা স্বস্তির বার্তা বয়ে নিয়ে আসে। আশা করা যায়, খুব দ্রুতই এই সমস্যার একটি সমাধান হবে এবং মানবদেহের অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যবস্থার অবসান হবে। তবে শেষ পর্যন্ত বলা যায়, সব কিছু আল্লাহ ভরসা।
এই প্রত্যাশায় আজ এই পর্যন্তই। আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)