এন্টিবায়োটিক কি? অপব্যবহার রোধে করনীয় জেনে নিন বিস্তারিত!

বাংলাদেশ হচ্ছে এমন একটা দেশ যেই দেশে ওষুধের সঠিক ব্যবহারের চেয়ে অপব্যবহারই বেশী হয়। সাধারণ জ্বরেও আমরা বিশেষজ্ঞ খুঁজি, আবার অনেক কড়া Antibiotic ঔষধও নিজে নিজেই কিনে খেয়ে নেই। এর ফলে কিন্তু আমরা না বুঝেই নিজেরা নিজেদের বিরাট ক্ষতি করে ফেলছি, এছাড়া আমাদের দেশে ৬ মাস রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করলে বা ৬ মাস ফার্মেসিতে বসলেই নিজেকে ডাক্তার বলে জাহির করারও একটা আজব প্রবনতা আছে! এসবই আমাদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, অন্তত আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করেও আমাদের ঔষধ সম্পর্কে আরও সচেতনতা বাড়ানো উচিৎ। এন্টিবায়োটিক কি? অপব্যবহার রোধে করনীয় সম্পর্কে জানাতে চেস্টা করবো।

এন্টিবায়োটিক

এন্টিবায়োটিক কি-

কয়েকধরনের জৈব রসায়নিক ঔষধ, যা অনুজীবদের (ব্যাক্টেরিয়া) নস্ট করে বা বংশ বিস্তার রোধ করে। সাধারনত একেক এন্টিবায়োটিক একেক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন অনুজীবদের বিরোদ্ধে কাজ করে।
এন্টিবায়োটিক সাধারনত ব্যাক্টিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। এটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর নয়। কিন্তু এন্টিবায়োটিক এমন এক জীবানু নাশক শ্রেনীর সদস্য, যার মধ্যে ভাইরাস নাশক ও ছত্রাক নাশক ও রয়েছে। সাধারনত এন্টিবায়োটিক শব্দটি ক্ষুদ্র জৈব রসায়নিক পদার্থ বুজায়।

আবিস্কার

এন্টিবায়োটিক আবিস্কারের পুর্বে মানুষ প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে, রোগ নিরাময় করত। ১৯২৭ সালে স্যার অ্যালেকজেন্ডার ফ্লেমিং প্রথম এন্টিবায়োটিক ” পেনেসিলিন ” আবিস্কার করেন। তারপর থেকে একে একে বহু এন্টিবায়োটিকের আবিস্কার শুরু হয়। এখনও তা বিদ্যমান
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বৃটেন ও আমেরিকান সম্মিলিত প্রচেস্টায় বহু লোকের প্রান বাঁচানো সম্ভব হয়। ১৯৫৪ সালে স্যার অ্যালেকজেন্ডার ফ্লেমিং, ফ্লোরে, ও আর্নেস্ট চেইন চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাদের অবদানের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

এন্টিবায়োটিকের কার্যপদ্ধতি

বিভিন্ন এন্টিবায়োটিক অনুজীবগুলির বিরোদ্ধে বিভিন্নভাবে কাজ করে। সংক্ষেপে প্রধান প্রধান উপায়গুলি তুলে ধরার চেস্টা করছি।
💊 কোষপ্রাচীরের সংশ্লেষন বন্ধ করার মাধ্যমে।
💊 কোষপর্দায় ছিদ্র করে।
💊 রাইবোজেন প্রোটিন সংশ্লেষনে বাধা সৃষ্টি করে।
💊 নিউক্লিক এসিড সংশ্লেষনে বাধা দিয়ে।

এন্টিবায়োটিকের ধরন

(১) বেটা ল্যাক্টাম জাতীয়-
(ক) পেনিসিলিন

(২) সেফালোস্ফেরিন জাতীয়-
1st থেকে 5th জেনারেশন পর্যন্ত সেফালোস্ফেরিন জাতীয় এন্টিবায়োটিক বাংলাদেশে আছে।

(৩) কার্বাপেনেম জাতীয়-
(ক) ইমিপেনেম
(খ) মেরোপেনেম ইত্যাদি।

(৪) মেনোব্যাক্টাম জাতীয়-
(ক) অ্যাজট্রিওনাম
(খ) সালফোনামাইড

(৫) ক্লোরাম্ফেনিকল জাতীয়-
(ক) ক্লোরোফেনিকল
(খ) থিয়াম্ফেনিকল
(গ) অ্যাজিডাম্ফেনিকল ইত্যাদি।

(৬) কুইনোলন জাতীয়-
(ক) ন্যালিডিক্সিক এসিড

(৭) ফ্লুরো-কুইনোলন জাতীয়-
(ক) নরফ্লক্সাসিন
(খ) সিপ্রোফ্লক্সাসিন

(৮) ম্যাক্রোলাইড জাতীয়-
(ক) অ্যারিথ্রোমাইসিন
(খ) অ্যাজিথ্রোমাইসিন
(গ) রক্সিথ্রোমাইসিন
(ঘ) ক্লারিথ্রোমাইসিন ইত্যাদি।

(৯) অ্যামিনোগ্লাইকোসাইড জাতীয়-
(ক) স্টেপটোমাইসিন
(খ) জেন্টামাইসিন
(গ) সিসোমাইসিন
(ঘ) টোব্রামাইসিন ইত্যাদি।

(১০) টেট্রাসাইক্লিন জাতীয়-
(ক) টেট্রাসাইক্লিন
(খ) ডক্সিসাইক্লিন
(গ) মিনোসাইক্লিন ইত্যাদি।

(১১) পলি-পেপটাইড জাতীয়-
(ক) পলিনিক্সিন বি
(খ) পলিনিক্সিন ই
(গ) ব্যাসিট্রাসিন
(ঘ) ক্যাপ্রিওমাইসিন
(ঙ) ভ্যাঙ্কোমাইসিন ইত্যাদি।

(১২) পলিওয়ন জাতীয়-
(ক) অ্যাম্ফোটেরিসিন বি
(খ) নাইস্ট্যাটিন

(১৩) ইমাইডাজল জাতীয়-
(ক) ফ্লুকোনাজল
(খ) ইট্রাকোনাজল ইত্যাদি।

(১৪) বেঞ্জোফুরান জাতীয়-
(ক) গ্রাইসিউফুলভিন

(১৫) অ্যান্সামাইসিন জাতীয়-
(ক) রিফামাইসিন

(১৬) লিনোসামাইড কাতীয়-
(ক) ক্লিন্ডামাইসিন
(খ) লিঙ্কোমাইসিন ইত্যাদি।

আরও অনেক আলোচনা আছে, যা সম্পুর্ন তুলে ধরা হয়নি।

সঠিক ব্যবহার

এন্টিবায়োটিক সাধারনত আমাদের শরীরে ক্ষতিকর অনুজীবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এদের বিনাশ করতেই ব্যবহার করা হয়।
বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলিতে এন্টিবায়োটিকের ভয়াবহ অপব্যবহার ঘটে।

এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। গ্রামাঞ্চলে দক্ষ ডাক্তারের অভাবে, প্রায় সর্বত্রই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক সেবন করতে দেখা যায়। যা নির্ধারিত মাত্রা বা এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে অনেকেরই জানা নাই। সামান্য জ্বর, পেট ব্যাথা, ডায়রিয়া বা আমাশয়ে এন্টিবায়োটিক ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। যা কখনই উচিত নয়। এর ফলে যখন প্রকৃত পক্ষে ঐ এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন হয়, এবং বিষেশজ্ঞ ডাক্তার ঐ এন্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দেন, তখন আর কাজ করেনা। কারন এটা আগেই রেজিস্ট্যান্স বা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গেছে।

অনেকেই কোনটা এন্টিবায়োটিক আর কোন এন্টিবায়োটিক নয়, তাও ঠিকমত বলতে পারেননা। তাই স্বাভাবিকভাবেই অনেক সময় একসাথে একের অধিক এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার হয়ে যায়। যা অপ্রয়োজনীয় এবং দেহের জন্য ক্ষতিকর।
এন্টিবায়োটিক কি? অপব্যবহার রোধে করনীয় সম্পর্কে জানতে হলে, সঠিক প্রশিক্ষনের ব্যাবস্থা করা অত্যান্ত জরুরী। সরকারের উচিত স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অর্থায়নে এমন একটি প্রশিক্ষনের ব্যাবস্থা করা উচিত, যা থেকে গ্রাম ডাক্তারগন নিরাপদ চিকিৎসা দেয়ার ক্ষেত্রে যেন কোন প্রকার ভুল না হয়। এতে গ্রামের সাধারন গরীব রোগীরা কিছুটা হলেও সুচিকিৎসা পেতে পারে। যাদের শহরে বড় ডাক্তার দেখানোর সামর্থ থাকেনা।

স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোন বিষয় জানতে চোখ রাখুন রোগবালাই.কম এ এখানে স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।

Level 2

আমি ইলিয়াস আহমেদ রুমেল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 24 টি টিউন ও 20 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস