ই-লাইব্রেরির কম্পিউটারগুলো নিয়ে বন্ধুদের একরাশ অভিযোগ। আরে কিছু করা যায় নাকি এগুলো দিয়ে! এর চেয়ে বরং এপলের ল্যাপটপ(ম্যাকবুক)-ই ভাল(!)। অভিযোগের পেছনে কারণ থাকলেও সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ কেউই করে না। কেউ কেউ একটু মুচকি হেসে জানায়, আরে এগুলোতো লিনাক্স, হ্যাকারদের জন্যে, লিনাক্স এরকমই হয়। যে ধারণাও ভুল। ইচ্ছে ছিলো লিনাক্স নিয়ে একটি বিশাল লেখা লেখবো, এ বিষয়ে আমার সীমাবদ্ধ জ্ঞান, এবং বন্ধুতালিকায় এ বিষয়ে আসলেই খুব বেশী গভীর জ্ঞান রাখা কিছু সহপাঠী, বড়ভাই থাকার কারণে এতদিন আর সাহস হয়নি যে এটা নিয়ে লেখবো। কিন্তু এ বিষয়ে আসলে মানুষের যে পরিষ্কার অন্তত আমার মত ন্যূনতম একটা ধারণা থাকা দরকার সে প্রয়োজন থেকেই এ পোস্টটি লেখা।
(টেকনোলিক্যাল বিষয় এড়াতে চায়লে পরের প্যারা এড়িয়ে তৃতীয় প্যারায় যান)
লিনাক্স নিয়ে মানুষ সবচেয়ে যে ভুলটি বেশি করে এবং অনেক সময় শিক্ষকরাও যেটা নিয়ে ভুল ধারনায় থাকে সেটি হলো, লিনাক্স বোধকরি একটি অপারেটিং সিস্টেম। খুব সাধারণ কথায়, অপারেটিং সিস্টেম হলো তাই যা কোন এপ্লিকেশন রান করার জন্যে একটি প্ল্যাটফরম দেয়। যেমন, মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম, নকিয়া ই৭ এ থাকা অপারেটিং সিস্টেম মিগো, বর্তমানে অধিকাংশ মোবাইল ডিভাইসে থাকা অ্যান্ড্রয়েড, এপলের আইওএস। তেমনি আবার কিছু ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেমও রয়েছে, যেমন, মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ, এপলের ম্যাকওএস। কিন্তু এ সফটওয়্যারগুলো ক্লোজড-সোর্স, তার মানে আপনি এগুলোর সোর্স কোড না দেখতে পারবেন, না নিজের প্রয়োজনে অপারেটিং সিস্টেমে কোন পরিবর্তন আনতে পারবেন। তারা কি করছে, না করছে, আপনার ডিভাইস হওয়া সত্ত্বেও এবং আপনার কেনা সফটওয়্যার হওয়া সত্ত্বেও আপনি কিছু জানতে পারবেন না। কিন্তু সব ডেস্কটপ অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে এ কথা সত্য নয়। ইলাইব্রেরির কম্পিউটারগুলো যে অপারেটিং সিস্টেমে চলে—উবুন্টু, তারপর লিনাক্স মিন্ট, ফেডোরা, এলিমেন্টারি ওএস, জোরিন ওএস, লিনাক্স লাইট এ অপারেটিং সিস্টেমগুলোকে আপনি টাকা দিয়ে কেনা লাগবে না, বাকী ৮৫% মানুষের মত ক্র্যাক করে চালাতেও হবে না, লাগবে না বিশেষ কোন ডিভাইস, আপনি চাইলেই দেখতে পারবেন এর সোর্স কোড, চায়লেই পারবেন নিজের প্রয়োজন মত তাতে পরিবর্তন আনতে এবং সবচেয়ে বড় কথা আপনি চায়লে তা শেয়ারও করতে পারবেন, ঠিক এগুলোই ফ্রি এবং ওপেন সোর্স সফটওয়্যার এবং এগুলো সবগুলো লিনাক্স পরিবারের সদস্য অর্থাৎ লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করে বানানো, যেগুলোকে লিনাক্স ডিস্ট্রো বলা হয়। লিনাক্স আসলে নির্দিষ্ট কোন অপারেটিং সিস্টেম না, বরং একটি কার্নেল। ডেভেলপাররা লিনাক্স কার্নেলের জন্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে। তাই আপনি যদি আপনার কম্পিউটারে লিনাক্স রান করাতে চান তবে এই কার্নেলের উপর লেখা অ্যাপ্লিকেশন বা প্যাকেজ আপনাকে ব্যবহার করতে হবে। এ কার্নেলের উপরই বানানো হয়েছে মাঞ্জেরো, আর্চ-লিনাক্স, প্যারোট ওএস বা উবুন্টুর মত জনপ্রিয় কিছু ফ্রি ও ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম।
এখন কথা হচ্ছে, এত সুন্দর গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টারফেস থাকতে উইন্ডোজ ছেড়ে আপনি লিনাক্স কেন ব্যবহার করবেন। আপনারা এর আগে দুএকবার লিনাক্সের কথা সিনেমাতে বা এক ফাইলেই যথেষ্ঠ তত্ত্বে বিশ্বাসী হ্যাকিং টিউটোরিয়াল দেখলে শুনে থাকবেন আর দেখেও থাকবেন। কম্পিউটার স্ক্রিনে ছয় সাতটা উইন্ডো একসাথে খুলে যে কোডের বৃষ্টি দেখেন, বা লিনাক্স ডিস্ট্রো মানেই টার্মিনাল বলে যে ধারণা, বা ইন্সটলেশন নিয়ে যে দুঃস্বপ্ন তা লিনাক্সের অতীত এবং বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা সত্য নয়। উবুন্টু, ফেডোরা, লিনাক্স লাইট বা লিনাক্স মিন্টের মত অনেক ইউজার ফ্রেন্ডলি, এলিমেন্টারি ওএস, এক্সটার্ন ওএসের মত অনেক দৃষ্টিনন্দন ডিস্ট্রোও এখন রয়েছে। অন্যদিকে উইন্ডোজে ল্যাগ আর ক্রাশ দেখতে দেখতে যখন আপনার জীবন তেজপাতা হয়ে গেছে, ম্যাকবুক বা আইম্যাক কেনার মত ভাগ্য নিয়ে জন্মাননি, আপনি ১০ বছর আগের ল্যাপটপেও তখন অনেক লিনাক্স ডিস্ট্রো আরামসে চলবে। ভাইরাস নিয়ে দুশ্চিন্তায় আপনার রাতের ঘুম হারাম হতেই পারে ক্র্যাকড উইন্ডোজ ব্যবহার করে, লিনাক্স পরিবার সেখানে আপনাকে দিবে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সুবিধা। উইন্ডোজের একই ইউজার ইন্টারফেস দেখে যখন আপনি ত্যাক্ত বিরক্ত তখন আপনি লিনাক্সপ্রেমী হলে একের পর এক ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্ট পরিবর্তন করা কোন ব্যাপারই না। তার উপর জিনোমের মত কিছু ডেস্কটপ এনভায়রনমেন্টে রয়েছে হাইলি কাস্টমাইজেশন আর থিমিং এর সুবিধা।
মোদ্দাকথা, লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের ভবিষ্যৎ। ফ্রি ও ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের যে বিপ্লব আসছে তার সম্পর্কে আপনি কিছুই জানবেন না তা কি করে হয়!
আমি কবির নাঈম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
প্রযুক্তি ভালবাসি, বিশ্বাস করি মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনে।