এই টিউনটি শুধুমাত্র একটি ব্যক্তিগত মতামত। এখানে কোন তুলনা করা হয়নি। টিউনটিকে হালকাভাবে নিন, বিতর্ক সৃষ্টি করবেন না।
ফ্রী এবং ওপেন সোর্স সফটওয়্যারগুলি সবসময়ই কার্যকরী এবং উপযোগী হয়ে থাকে।
ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেমও এর ব্যতিক্রম নয়। জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে যদিও 'ওপেন সোর্স অপারেটিং' সিস্টেমগুলি 'কমার্সিয়াল অপারেটিং সিস্টেমে'র ধারেকাছেও নয় কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে কোন দিক দিয়েই কমার্সিয়াল অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেম কম নয়। বরঞ্চ বলতে গেলে ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেমগুলি অনেক ক্ষেত্রেই কমার্সিয়াল অপারেটিং সিস্টেমের থেকে বেশি কার্যকরী।
কিন্তু অবাক করা বিষয় যে, পার্সোনাল কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের মাঝে বেশিরভাগই ওপেন সোর্স অপারেটিং সিস্টেমগুলোর সম্পর্কে জানে না। আর যারা জানে তাদেরও বেশিরভাগ পেইড বা কমার্সিয়াল অপারেটিং সিস্টেমই ব্যবহার করে থাকে। আমরা এখন আছি বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ বাংলা প্রযুক্তি প্লাটফর্মে, এই প্লাটফর্মের যে কোনরকম ব্যবহারকারী কতজন ব্যক্তি লিনাক্স ব্যবহার করে? যদি কেউ করেও থাকে তাহলে সেটা হাতে গনা যাবে।
আমি লিনাক্স ব্যবহারকারী। ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন প্রোগ্রামিং এর ছাত্র (প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা নয়, স্বশিক্ষা😉😉) এবং শিখছি হ্যাকিং; যে কারণে আমাকে একসময় লিনাক্স ব্যবহার করতে বলতে গেলে বাধ্য হতে হয়েছিল। এখন আমি পুরোদমে একজন লিনাক্স ব্যবহারকারী। এবং বলতে গেলে এখন আমি একজন 'লিনাক্স লাভার'।
অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের সাথে তুলনায় এবং ওপেন সোর্স বিবেচনায় উইন্ডোস এবং ম্যাকের চেয়ে লিনাক্স ব্যবহার করা খুবই সহজ এবং কম্ফোর্টেবল। তিনবছর ধরে এই লিনাক্স ব্যবহার এবং লিনাক্সকে সেরা মনে করার পেছনের কিছু কারণ সম্পর্কে আলোচনা করার জন্যই আজকের টিউন(আমার ডিভাইস দুইটি। একটি উইন্ডোস ওএস আর আরেকটা এই লিনাক্সের)। তো চলুন শুরু করা যাক।
আমার লিনাক্স ব্যবহার করার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হল আমি লিনাক্সে সব করতে পারি। কম্পিউটিং এর যা যা আছে তার প্রায় সবকিছুই লিনাক্স দিয়ে করতে পারি স্বচ্ছন্দে। একটা সময় মনে করা হত লিনাক্স শুধুমাত্রই টার্মিনাল ল্যাঙ্গুয়েজে(Terminal Language) দক্ষ প্রোগ্রামারদের জন্য তৈরী যেখানে তারা তাদের রেসপেকটিভ কাজগুলো করে, কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। লিনাক্স একটি পূর্ণাঙ্গ অপারেটিং সিস্টেম।
আমি নিজেও টার্মিনাল ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে খুব বেশি জানি না, কয়েকটি কমান্ড হয়ত আমি পারি কিন্তু না পারলেও খুব একটা ক্ষতি নেই। টার্মিনাল ল্যাঙ্গুয়েজ সম্পর্কে না জেনেও লিনাক্স ব্যবহার করা কঠিন কিছু নয়। আপনি ইচ্ছা করলে ইংরেজি ভাষাতেই টার্মিনাল ল্যাঙ্গুয়েজ কমান্ড দিতে পারবেন, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই টিউনটি দেখে নিন। আর যদি আপনি লিনাক্সের গ্রাফিক্যাল ভার্সন ব্যবহার করেন তাহলে তো কোন ঝামেলাই নেই।
আপনার মনে হতে পারে, লিনাক্সে সব করতে পারি বলতে আমি আশাকরি, ভিডিও দেখি, গান শুনি, লেখালেখি করি, ক্যামেরা বা মোবাইল থেকে ছবি ইমপোর্ট করতে পারি। এক কথায় বলতে গেলে একটা কমার্সিয়াল অপারেটিং সিস্টেমে যা যা করা সম্ভব তার প্রায় সবই লিনাক্সেও করা সম্ভব। হ্যাঁ, মাঝে মাঝে কিছু বাগ দেখা দেয় বা পাওয়া যায় কিন্তু সব অপারেটিং সিস্টেমেই কোন না কোন বাগ থাকেই, তাই না? আমার যা যা করা প্রয়োজন তার সবই লিনাক্স আমাকে করতে দেয় আর তাই লিনাক্স চেঞ্জ করার কারণ আমি খুব বেশি দেখি না।
আমরা এমন একটা সময়ে বসবাস করছি যেখানে স্কুলে যাওয়ারও আগে একজন বাচ্চার জন্য কম্পিউটার সম্পর্কে জানাটা অপরিহার্য। আর এই সময়টার সুযোগ নিয়েই বড় বড় সব প্রতিষ্ঠান গুছিয়ে নিচ্ছে তাদের আখের। হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে তারা বিক্রি করছে কম্পিউটার সফটওয়্যারগুলি। 'হাজার টাকার বিনিময়ে সফটওয়্যার' কোন খারাপ বিষয় সেটা বলছি না। কিন্তু সবসময় তো আর হাজার টাকা দিয়ে সফটওয়্যার কেনা সম্ভব হয় না।
আবার অনেকে সেই ব্যয়টা বহনও করতে পারে না। আর আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে লেজিট সফটওয়্যার এমনকি সরকারি দফতরগুলোতেও ব্যবহার হয় না। হ্যাঁ, ক্র্যাকের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সফটওয়্যারের পাইরেটেড ভার্সন ব্যবহার করে থাকি কিন্তু সেটা একদিকে নৈতিকতার পরিপন্থী এবং অন্যদিকে অনেক ঝুকিপূর্ণও। অনেক সময় আমাদের তথ্যসমূহ ক্র্যাকড সফটওয়্যার ব্যবহারের কারণে মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। এইসব ঝামেলার চেয়ে ওপেন সোর্স সফটওয়্যার ব্যবহার করা হাজারগুণ বেশি ভালো।
বর্তমান সময়ে গুগল(Google) এবং ক্রোমবুকস(Chromebooks) এর কিছু সফটওয়্যার এবং অপারেটিং সিস্টেম ফ্রিতে পাওয়া যাচ্ছে কিংবা খুবই কম মূল্যে কিছু ভাল সফটওয়্যার বা এপ পাওয়া যাচ্ছে। এর কারণ হল গুগল মূলত আয় করে থাকে এডভার্টাইজিং থেকে। আর তাই সফটওয়্যার বিক্রি থেকে আয় না করলেও তাদের চলে। বরং তারা সফটওয়্যারের ভেতরে কিছু এড দিয়ে ভাল আয় করতে পারে। কিন্তু আপনি জানেন কি গুগল আমাদের ট্র্যাক করে এবং আমাদের ইনফরমেশন গুলো মনিটর করে। যেটা বেশিরভাগ সময়েই কাম্য নয় (গুগলের কাছে যদিও সব কিছু সুরক্ষিত)।
প্রাইভেসি নিয়ে যারা সেনসেটিভ তারা ব্যাপারটা কখনোই পছন্দ করেন না এবং আপনি যেমন মানুষই হোন না কেন যত নিরাপত্তাই দেয়া হোক না কেন আপনার উপর নজরদারি করা হচ্ছে কিংবা আপনাকে ট্র্যাক করা হচ্ছে এটা আপনার কাছে ভালো লাগার কথা নয় (আবারও বলছি গুগলের কাছে আপনার সমস্ত ডাটা সুরক্ষিত)। এদিক থেকেই লিনাক্স কম্পিউটিংকে সহজ করে দিয়েছে। লিনাক্স যে একজন ব্যবহারকারীকে সম্পূর্ণ আড়ালে রাখে এটা সবাই জানে এবং লিনাক্স ও এর সম্পর্কিত সমস্ত সেবা সম্পূর্ণ ফ্রী।
সাধারণত কমার্সিয়াল সফটওয়্যারগুলি প্রোডাক্টের মত বিবেচিত হয়। আপনি টাকা দিয়ে কোন সফটওয়্যার কিনলেও আপনাকে এর স্বত্ব দেয়া হয় না। কপিরাইটের মাধ্যমে আপনাকে অনেকগুলি সীমাবধ্যতার মাঝে বেঁধে ফেলা হয়। ফলে আপনি টাকা দিয়ে যে প্রোডাক্টটি কিনলেন সেটির মালিক আপনি হলেও আপনি আসলে পরিপূর্ণ মালিকানা বা সম্পূর্ণ মালিকানা পেলেন না। আর বলতে গেলে একটি সফটওয়্যার যদিও একটি প্রোডাক্টের মত কিন্তু আসলে কোন প্রোডাক্ট নয়।
একটি সফটওয়্যার হল লাখ লাখ লাইনের প্রোগ্রাম কোড। আপনি সফটওয়্যার কিনলেন মানে আপনি এই কোডগুলিই কিনলেন। এরপর আপনি সেগুলোকে কাস্টমাইজ করার ক্ষমতা পাবারই কথা কিন্তু কমার্সিয়াল সফটওয়্যার এর ৯৫% ই আপনাকে সেই স্বাধীনতা দেবে না। আপনি কোন সফটওয়্যার কাস্টমাইজ করতে পারবেন না।
লিনাক্স থেকে শুরু করে লিনাক্সের জন্য তৈরী সব প্রোগ্রামই ওপেন সোর্স এর অধীনে পড়ে। আর ওপেন সোর্স সব সফটওয়্যার আপনাকে সম্পূর্ণ এবং প্রকৃত মালিকানা দেয়। আপনি কোন টাকা দিয়ে কেনা ছাড়াই যে কোন কিছু নিজের মত করে গুছিয়ে নিতে পারবেন, কাস্টমাইজ করতে পারবেন। পাবেন বিশাল এক স্বাধীন ক্ষেত্র। আর প্রকৃত মালিকানার বিষয়টি আপনার মনে একটু আনন্দ দিতে, একটু মালিকানার সম্মান অনুভব করাতে যথেষ্ট। লিনাক্স ব্যবহারকারী হিসেবে, একজন প্রকৃত মালিক হিসেবে আমি তাই প্রাউড ফিল করি।
'তারা আপনার পিসি বা ডিভাইসের সমস্ত কিছুই ট্র্যাক করছে। আপনার উপর নজর রাখছে। আপনি ওয়েবে কোথায় কি করছেন, পিসিতে কখন কোথায় কি করছেন, কি গান শুনছেন, কি ভিডিও দেখছেন সব নজরদারি করছে। এমনকি আপনার ওয়েব ক্যামের মাধ্যমে আপনার উপরেও নজর রাখছে। ' অসম্ভব নয়। হতেই পারে আপনার উপর নজরদারি। সফটওয়্যার কোম্পানিটি না করলেও কোন গোয়েন্দা সংস্থা হয়ত করছে বা করছে অন্য কেউ।
আপনার সমস্ত তথ্য তাদের কাছে চলে যাওয়াটা কোন ব্যাপারই না। হ্যাক হতে পারে সমস্ত তথ্য। তারপর হয়ত আপনার সব তথ্য বিক্রি হয়ে যাবে অন্য কোথাও, আপনার অজান্তেই। হতেই পারে, মূল কোম্পানিটি না করলেও কোন হ্যাকার সেই কোম্পানির সার্ভার হ্যাক করে কোম্পানিটির সমস্ত ব্যবহারকারীর তথ্যও হ্যাক করতেই পারে। সারাবিশ্বের গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদ দেখলে বোঝা যায় কতশত নামিদামী কোম্পানি গোপনে তাদের ব্যবহারকারীদের উপর নজরদারী করছে।
মাইক্রোসফটের মত একটি কোম্পানি উইন্ডোস টেন এর জন্য একজন ব্যবহারকারীর যেসব তথ্য নিয়েছে সেটা কি আশাকরি সম্পূর্ণই।
পরিষ্কারভাবে বললে, আমি এটা বোঝাই নি যে সমস্ত পিসিতেই লিনাক্স চালানো যাবে। নতুন একটি উইন্ডোস ভিত্তিক ডিভাইসে লিনাক্স দেয়া সম্ভব না আর যদিও সম্ভব হয় তাহলে অনেক ড্রাইভার সহ অনেক কিছুই ক্র্যাশ করবে, ঠিকমত চলবে না। একই রকম ব্যাপার ঘটবে অনেক পুরনো কোন ডিভাইস বা পিসিতেও।
আসল কথা হল লিনাক্স একটি ফ্লেক্সিবল অপারেটিং সিস্টেম। গুগলের ডেভেলাপ করা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম এখনকার ৯৫% স্মার্টফোন চলে। এই অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম হল লিনাক্স বেসড। অর্থাৎ লিনাক্সের একটি সংস্করণ হল অ্যান্ড্রয়েড। একই রকমভাবে লিনাক্স চলতে পারে টিভি কিংবা ঘড়ির মত ডিভাইসেও। ইতিমধ্যেই অ্যান্ড্রয়েড টিভি এবং ঘড়ি পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রায় সবকিছুতেই লিনাক্স ব্যবহার করা সম্ভব।
লিনাক্স কোন প্রোডাক্ট নয়। লিনাক্সের কোন মালিক নেই। সবাই এর মালিক। যে যার মত একে কাস্টমাইজ করে ব্যবহার করতে পারে। আর এটাই লিনাক্সের সবচেয়ে বড় সক্ষমতা।
আমি একজন লিনাক্স লাভার এবং ব্যবহারকারী। কিন্তু আপনি কি? আপনি কি লিনাক্সে কনভার্ট হবেন? নাকি কোন কমার্সিয়ালেই থাকবেন?
নির্ভর করে আপনার প্রয়োজনের উপর। আপনি যদি একজন গেমার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার লিনাক্স ব্যবহার করার কোন মানে নেই(আমি একজন হার্ডকোর গেমার। এইজন্যেই পিসি দুইটা 😊😊। একটা সম্পূর্ণ গেমিং এর জন্য উইন্ডোসে আরেকটা এই লিনাক্সে)। লিনাক্স প্লাটফর্মের উপর গেম বলতে গেলে প্রায় নেই। আর এটা অবশ্যই সত্য লিনাক্স কখনোই সেরা অপারেটিং সিস্টেম নয়।
আপনার যেটা সবচেয়ে ভালো লাগবে সেই অপারেটিং সিস্টেমই আপনার জন্য সেরা। কম্পিউটিং এর বেসিক জিনিসগুলির সাথে যদি হালকা প্রোগ্রামিং কিংবা হ্যাকিং শেখার ইচ্ছা থাকে কিংবা লিনাক্স শেখার ইচ্ছা থাকে তাহলে আপনার জন্যই লিনাক্স। কিন্তু যদি থাকে অন্য পরিকল্পনা তাহলে লিনাক্সে না আসাই ভাল হবে। টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
ফেসবুকে আমি
আমি হাসিবুর ইসলাম নাসিফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 43 টি টিউন ও 76 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
বিষাদময় পৃথিবীতে আমি আনন্দ খুঁজে নিই সবকিছু থেকে। আর স্বপ্ন দেখি মহাকাশ ভেদ করে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেবার। স্বপ্নচারী আমার স্বপ্নগুলোই বাঁচিয়ে রেখেছে আমাকে। হাত ধরে চলো স্বপ্ন দেখি একসাথে।
একমাত্র লিনাক্সেই আসল স্বাধীনতা রয়েছে। ২ বছর যাবত লিনাক্স ব্যবহার করছি প্রাইমারী অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে, শুধু ভিডিও এডিট করার জন্য উইন্ডোজ ব্যবহার করি, যদিও উইন্ডোজ এম্যুলেটর ব্যবহার করে উইন্ডোজ ভিডিও এডিটর ইন্সটল করা যায় লিনাক্সে, কিন্তু উইন্ডোজ আর লিনাক্স এক করতে চাইনা বলে এমনটা করি না। লিনাক্সের মত এতো কাস্টমাইজেশন অপশন এবং ফাস্ট স্পীড উইন্ডোজ কখনই দিতে পারবে না।
টিউনের জন্য ধন্যবাদ!