আসসালামু আলাইকুম।
প্রথমেই বলে রাখি, এই টিউনে লিনাক্স বলতে অনেক ক্ষেত্রে লিনাক্স ভিত্তিক ওএস কে বোঝানো হয়েছে। লিনাক্স কার্ণেলকে বোঝানো হয়নি।
প্রথমেই একটা প্রশ্ন করি, উপরের চিত্রের পেঙ্গুইনটাকে কি খুব ভয়াবহ লাগছে? মনে হয় না। এটাই লিনাক্সের লোগো। এই লোগোর ধারণাটা কিন্তু লিনাক্সের প্রতিষ্ঠাতা লিনুস টরভাল্ডসের মাথায়ই এসেছিল। সে-ও এক মজার ঘটনা। একবার কোথাও বেড়াতে গিয়ে তিনি এক মোটাসোটা, হাশিখুশি, ছোটখাট পেঙ্গুইনকে আদর করছিলেন।
আর তখনই বেরসিক পেঙ্গুইন দিল তাকে কামড়ে! ব্যাস! লিনাক্সের লোগো হয়ে গেল পেঙ্গুইন। এই পেঙ্গুইনের আরো দিক আছে, এটার ভাবভঙ্গি খাওয়াদাওয়া শেষ করে শান্তিতে বসে থাকা এক পেঙ্গুইনের। আচ্ছা, যার মাথায় এত সুন্দর একটা লোগো আসে, তার আবিষ্কার ভয়াবহ হয় কি করে, বলুন তো এবার?
লিনাক্সে আসার আগ পর্যন্ত আসলেই বোঝা কঠিন, লিনাক্স কি দুর্দান্ত অপারেটিং সিস্টেম। লিনাক্সের নাম শুনলেই আমাদের অনেকের মাথায়ই নিচের চিত্রগুলো ফুটে ওঠে-
অথচ নিচের চিত্রগুলোর মতই ডেস্কটপ ইউজারদের জন্য তৈরি লিনাক্স ডিস্ট্রোগুলো সুন্দর আর সহজ!
নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, ২ নাম্বার ছবিটা কিন্তু অ্যান্ড্রয়েডের! হ্যাঁ, অ্যান্ড্রয়েডও কিন্তু একটা লিনাক্স বেজড অপারেটিং সিস্টেম। কি মনে হয়? অ্যান্ড্রয়েড খুব ভয়াবহ কঠিন জিনিস?
একদমই না! তেমনি লিনাক্সকে নিয়েও ভয়ের কিছু নেই। লিনাক্সে একবার আসলেই বলে উঠবেন, আগে কেন পাইনি তোমায়!এরপর শেষের ছবি দুটো দেখুন। কি মনে হচ্ছে? ম্যাক আর উইন্ডোজ ওএস? আরে নাহ! এটা উবুন্টুর থিম মাত্র! কি? এখনও লিনাক্সের ভয় কাটেনি?
অবশ্য কাটবেই বা কেন? লিনাক্সে কিছু আছে নাকি? আমি মাইক্রোসফট অফিসে কাজ করি, ফটোশপে জরিনা আপাকে অ্যাঞ্জেল জেরিন বানাই, এসব লিনাক্সে করা যায় নাকি?
আসলে ব্যাপারটা হল, ব্যাপার তা নয়, ব্যাপারটা হচ্ছে, লিনাক্সে এ দুটোই চলে! অবশ্য সরাসরি না! প্লে অন লিনাক্স বা ওয়াইন প্রভৃতির মাধ্যমে। কিন্তু ফটোশপ হল প্রায় ৬০০০০ (৬০০০ নয়, ৬০০০০) টাকা দামের একটা প্রোগাম। অন্যদিকে মাইক্রোসফট অফিসের দাম ৫০০০!
লিনাক্সে এসে এসব পণ্য পাইরেসি করে (আই মিন ৫০ টাকা দিয়ে কিনে ক্র্যাক করে) ব্যবহার করবেন কেন? এখানে আপনি GIMP আর WPS Office এর মত অসাধারণ দুটি প্রোগ্রাম পাবেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে! আবার ওয়েব ব্রাউজিংয়ের জন্য ক্রোমিয়াম, ফায়ারফক্সসহ বিভিন্ন বিনামূল্যের ব্রাউজার এখানে রয়েছে। এত যে কিসের ভয়? গান শোনার জন্য আছে রিদমবক্স, বনশী সহ অসাধারণ সব অ্যাপ। আর ভিএলসি মিডিয়া প্লেয়ার থাকতে ভিডিও দেখা নিয়ে চিন্তা কি?
এরপর বলতে পারেন, লিনাক্সে বাংলা লেখা ঝামেলা। কে বলল? আপনি যদি অভ্র ব্যবহারকারী হোন, তবে ইউনিজয় লেআউট আছে, অভ্র (ফোনেটিক) আছে, প্রভাত আছে। এগুলো দিয়ে অভ্রের এনকোডিংয়ে লিখতে পারবেন। নতুন করে শেখাও লাগবে না।
কারণ পরিচিত সব লেআউটই লিনাক্সে পাবেন। আবার, আপনি বিজয় ব্যবহার করলেও চিন্তা নেই! বিজয় একুশে পাবেন এখানে। এই যে, এই বিশাল টিউনটা লিখছি লিনাক্সে ইউনিজয় লেআউটে, কোন সমস্যাই হচ্ছে না! ইনশাআল্লাহ, বাংলা কিবোর্ড ইন্সটল নিয়ে বিস্তারিত লিখব।
উইন্ডোজের সবকিছুরই বিকল্প লিনাক্সে আছে, যেগুলো বেশিরভাগ সময়েই ফ্রি এবং প্রায়ই উইন্ডোজের প্রোগ্রামের চেয়ে আরো বেশি শক্তিশালী। লিনাক্সে কোন ভারাস নেই এই কথা ঠিক নয়। তবে উইন্ডোজের মত আপনাকে প্রতিটা সফটওয়্যার ইন্সটল করতে ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে না। এমনকি বছর বছর ক্যাসপারস্কি ইন্টারনেট সিক্যুরিটি কিনতে হবে না হাজার হাজার টাকা দিয়ে। লিনাক্স অভ্যন্তরীণভাবেই অনেক শক্তিশালী। খুব কম লিনাক্স ব্যবহারকারীই ভাইরাসের শিকার হয়। এখানে দুই দিন পর পর ওএস পড়ে যাওয়ার ভয় নেই।
আরো বড় কথা হল, আপনি উইন্ডোজ ইউজার হলে, মাইক্রোসফট এখন অফিসিয়ালি সম্ভবত শুধু উইন্ডোজ ১০-ই সাপোর্ট করে। বড়জোড় উইন্ডোজ XP, 7 বা 8 আপনি চালাতে পারেন। সেগুলোও ব্যাকডেটেড।
আর সেখানে লিনাক্সে শত শত অসাধারণ সব ওএস আছে, যেগুলো নিয়মিত আপডেট হচ্ছে। এলিমেন্টরী, ডিপিন, উবুন্টু, মিন্ট, মাঞ্জারো, আর্ক, রিমিক্সসহ অসংখ্য ওএস পাবেন লিনাক্সের জগতে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক ওএস খুঁজে নিতে পারবেন লিনাক্সে! যে স্বাধীনতা উইন্ডোজ আপনাকে দিবে না।
বেশিরভাগ ওএসেই বিভিন্ন ইন্টারফেস ব্যবহার করতে পারবেন। আর প্রতিটা ইন্টারফেস একে অপরের থেকে সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন। এটা উইন্ডোজের থিম কিংবা স্কিন প্যাকের মত নয়! ইন্টারফেসের সাথে চেহারা, প্রি ইন্সটলড অ্যাপ, আইকন, কন্ট্রোলঅ্যাবিলিটি, কাস্টোমাইজেবিলিটি প্রভৃতি এ টু জেড বদলে যাবে। যেমন, উবুন্টুর ছয়টি অফিসিয়াল ইন্টারফেস আছে।
Ubuntu (Unity ইন্টারফেস), Xubuntu (XFCE), Lubuntu (LXDE), Kubuntu (KDE). Ubuntu Mate (Mate), Ubuntu Gnome (Gnome)। আনঅফিসিয়াল আরো অনেক ইন্টারফেস ব্যবহার করা যাবে। তারপর পাবেন প্রতিটা ইন্টারফেসের বিভিন্ন থিম।
Ubuntu (উবুন্টু)
Kubuntu (কুবুন্টু)
Xubuntu (জুবুন্টু)
Lubuntu (লুবুন্টু)
Ubuntu Gnome (উবুন্টু গ্নোম)
Ubuntu Mate (উবুন্টু মাতে)
আশা করি, চিত্রগুলো থেকে পার্থক্যটা বোঝা কঠিন না, এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এত বিভিন্নতা কি উইন্ডোজ আপনাকে দিবে? উত্তর হল, না! অতএব, উবুন্টু ভয়ের কিছু নয়। বরং, উইন্ডোজ থেকে অনেক মজার একটা জিনিস!
অনেকের এই একবিংশ শতাব্দিতে এসেও ধারণা লিনাক্সে খালি কোডের পর কোড লিখতে হয়। হ্যাঁ, লিনাক্সে রয়েছে টার্মিনালের মত দুর্ধর্ষ এক অস্ত্র। যেখানে কোড লিখে অতি সহজে সব কিছু করা যায়। যেটাকে লিনাক্সে আসার আগে অনেকেই ভয় পায়। কিন্তু এই কথা কে বলল, লিনাক্স ব্যবহার করতে কোডিং করাই লাগে? পুরো ভূয়া কথা, অ্যান্ড্রয়েডে কি কোড লিখে কাজ করেন? লিনাক্সে টার্মিনালে করা যায় এমন প্রায় সবই গ্রাফিকালি করা যায়।
কিন্তু টার্মিনাল কাজকে করে সহজ। যেমন ধরুন, আপনি ভিএলসি মিডিয়া প্লেয়ার ডাউনলোড করবেন। আপনার একাধিক উপায় আছে। আপনি ভিএলসির ওয়েবসাইট থেকে ইন্সটল করতে পারেন অথবা সফটওয়ার সেন্টার থেকে। কিন্তু সবচেয়ে সহজ উপায় হল সেই টার্মিনাল, শুধু লিখুন sudo apt-get install vlc, ব্যাস! কাজ শেষ!
টার্মিনালকে ভয় লাগলে প্রাথমিকভাবে ব্যবহার না করলেও কোন সমস্যাই হবে না। কিন্ত টার্মিনাল কাজকে করবে সহ আর দ্রুত! অতএব, ভয় কিসের?
এখনও ভয় কাটছে না? তাহলে বরং একবার চালিয়েই দেখুন। ভয় দুর হবেই! লিনাক্স চালাতে গিয়ে কিছু না বুঝলে বা যে কোন সমস্যায় কোন চিন্তা নেই! অসংখ্য ফোরাম, গ্রুপ আপনাকে সাহায্য করার অপেক্ষায় আছে। বাংলাদেশে লিনাক্স বাংলাদেশ ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে। যেখানে বিভিন্ন সাহায্য ও তথ্য পাবেন। তাই দুশ্চিন্তা নেই একদমই!
আমার ব্লগে ঘুরে আসার দাওয়াত রইলো: গ্রিন রেঞ্জারস+
আল্লাহ হাফেজ।
আমি তাহমিদ হাসান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 288 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
ভাই টেক্টিউন্স এ অনেক দিন যাবত লিনাক্স ক্যাটাগরি খুজছি বাট পাচ্চি না?
আমিও লিনাক্ষে জেতে চাই !
লিনাক্সে Adobe PS – AI,Camtasia,এই গুলা কিভাবে ইউজ করতে হয় তার টিউটোরিয়াল খুজছি ?
বাট পাচ্ছি না,টিটির আগের থিমে জাওয়ার কোন ওয়ে আছে ?
ধন্যবাদ