একই দামের একটি গেমিং ল্যাপটপ ও ডেস্কটপ কম্পিউটারের কর্মক্ষমতা কখনোই সমান হবেনা। ডেস্কটপ কম্পিউটার সব সময় গেমিং ল্যাপটপের থেকে দ্রুত কাজ করবে যার ফলে আপনার গেম খেলার অভিজ্ঞতাও ভাল হবে। তার মানে এই নয় যে আপনি যেকোনো নতুন গেম আপনার ল্যাপটপে খেলতে পারবেন না। ল্যাপটপটি যদি গেম খেলার জন্য আলাদা ভাবে প্রস্তুত করেন তাহলে অবশ্যই ল্যাপটপেও ভাল মত যেকোনো ধরনের গেম খেলতে পারবেন। ডেস্কটপ কম্পিউটারের সব থেকে বড় সুবিধা হচ্ছে যেকোনো সময় যেকোনো যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করা যায়। তবে ল্যাপটপের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে মেমোরি ও মাঝে মধ্যে হার্ড ড্রাইভ ছাড়া অন্য যন্ত্রাংশ আপডেট করা যায় না। তবে এই সকল সীমাবদ্ধতার মধ্যেও কিছু জিনিস খেয়াল রাখলে গেমিং ল্যাপটপের কার্যক্ষমতা বাড়ানো যাবে ও ল্যাপটপ এর গতি ধীর হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন। আমরা এখানে সেই রকম ৫ টি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
ল্যাপটপ টি পরিষ্কার ও ধুলা বালি মুক্ত রাখুন
এটি সব থেকে সহজ কিন্তু কার্যকরী একটি উপায়। শুধুমাত্র নিয়মিত ভাবে ল্যাপটপ টি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখেই আপনি ল্যাপটপের কার্যক্ষমতা বাড়াতে পারবেন। কারন ধুলা বালি ল্যাপটপের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়ার পিছনে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। ধুলা বালি জমার ফলে ল্যাপটপে বাতাসের প্রবাহ অনেক খানি কমে যায় যার ফলে ল্যাপটপ খুব দ্রুত গরম হয়ে যায়। আর ল্যাপটপ গরম হয়ে গেলে প্রসেসর, জি পি ইউ সহ অন্যান্য যন্ত্রাংশের কাজ করার গতি অনেকখানি কমে যায়। যেটা গেম খেলার জন্য মোটেও সুখকর নয়। তাই ল্যাপটপ গরম হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচার জন্য ধুলা বালি মুক্ত রাখাই সব থেকে বুদ্ধিমানের কাজ। তবে ডেস্কটপ কম্পিউটারের মত ল্যাপটপ সহজেই পরিষ্কার করা যায় না। এটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার কারন ল্যাপটপের সকল যন্ত্রাংশ একসাথে আটকানো থাকে। তাই খুব সাবধানে এই কাজ টি করতে হয়। ল্যাপটপের জন্য সব থেকে ভাল হচ্ছে কমপ্রেসড এয়ার এর বোতল ব্যবহার করা। এছাড়া ল্যাপটপের সাথে যদি আলাদা কিবোর্ড ব্যবহার করেন তবে সেটাও নিয়মিত পরিষ্কার রাখা দরকার। সাথে কিছু সাবধানতা যেমন কিবোর্ডের ভিতরে যেন খাবার বা পানীয় না পরে সেদিকে নজর রাখতে হবে।
ড্রাইভার আপডেট রাখুন
আপনার ল্যাপটপের অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ, ম্যাক অথবা লিনাক্স যেটাই হোক না কেন। সব একই রকম হার্ডওয়্যার ও আর্কিটেকচার ব্যবহার করে থাকে। সুতরাং অপারেটিং সিস্টেম যেটাই হোক না কেন কম্পিউটারের ড্রাইভার আপডেট রাখা জরুরী। সৌভাগ্য ক্রমে ড্রাইভার আপডেট করা খুব সহজ একটা কাজ শুধুমাত্র স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম আপডেটের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হতে পারে। তবে যখন গ্রাফিক্স ড্রাইভার আপডেট করার সময় আসবে তখন আপনাকে একটু ভাল ভাবে কাজটা করতে হবে। তবে ইন্টেল গ্রাফিক্স কার্ড উইন্ডোজ আপডেটের সাথে নিজেও আপডেট নিয়ে নেয়। যেটা অন্য থার্ড পার্টি গ্রাফিক্স কার্ডের ক্ষেত্রে হয়না। তবে ইন্টেল গ্রাফিক্স কার্ড খুব উচু মানের গেম খেলার জন্য সুবিধাজনক নয়। তাই এর পরিবর্তে খেয়াল রাখুন যেন জিপিইউ ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার যেমন Nvidia GeForce অথবা AMD Gaming Evolved স্বয়ংক্রিয় ভাবে আপডেট নেয়। কন্ট্রোলার ও অডিও ড্রাইভার ও নিয়মিত আপডেট রাখুন।
গ্রাফিক্স কার্ড এর ওভার ক্লকিং ঠিক রাখা
প্রতিটা যন্ত্রাংশ একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলার জন্য তৈরি করা হয়ে থাকে, এই নির্দিষ্ট গতির থেকে বেশি গতিতে চলাকেই ওভার ক্লকিং বলে। যদিও এটি সাধারণত GPU ও CPU এর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে তবে অন্য যন্ত্রের ক্ষেত্রেও এই রকম হতে পারে। ওভার ক্লকিং ঠিক করা নতুনদের জন্য একটু সমস্যার হতে পারে কারন এর প্রভাব অন্য যন্ত্রেও পড়তে পারে। তবে AMD এবং Nvidia দুই কোম্পানির GPU এর ওভার ক্লকিং নিয়ন্ত্রণ করার জন্যেই টুল পাওয়া যায়। ওভারক্লকিং এর ফলে ল্যাপটপে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয় সেজন্য ল্যাপটপের পাওয়ার সেটিং ঠিক করতে হয়। এছাড়া ওভার ক্লকিং এর ফলে GPU এর তাপমাত্রাও বেড়ে যায়। যদিও তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার এই সমস্যা ল্যাপটপের ভিতরের কুলিং সিস্টেম নিজেই ঠিক করতে পারে সেজন্য ল্যাপটপ টি পরিষ্কার রাখা জরুরী।
ল্যাপটপের পাওয়ার সেটিংস ঠিক করা
কিছু ডিভাইস আছে যেগুলো আলাদা কোন পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট সেটিংস ছাড়াই ভালভাবে চলতে পারে। তবে ল্যাপটপের মত যন্ত্রাংশ যেগুলোকে একটি নির্দিষ্ট উৎস থেকে বিদ্যুৎ নিতে হয় সেগুলোর জন্য আলাদা পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম দরকার হয়। উইন্ডোজে পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট এর কিছু অপশন দেয়া থাকে তবে ভাল গেমিং অভিজ্ঞতার জন্য ল্যাপটপ টি একটি পাওয়ার আউটলেট এর সাথে যুক্ত থাকা দরকার। উইন্ডোজ ১০ এ পাওয়ার ম্যানেজমেন্ট এর জন্য নিচের অপশন গুলো ক্লিক করুন। Settings > System > Power and sleep > Additional power settings এরপর High performance নির্বাচন করুন। এছাড়া Change plan settings > Change advanced power settings ক্লিক করে আগে থেকে কোন সেটিংস ঠিক করা ছিল কিনা দেখে নিতে পারেন।
ব্যাকগ্রাউন্ড সফটওয়্যার বন্ধ রাখুন
গেম খেলা শুরু করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে ব্যাকগ্রাউন্ড এ চলমান সফটওয়্যার গুলো বন্ধ আছে কিনা। বন্ধ করার পরে সিস্টেম ট্রে তে খেয়াল করে নিশ্চিত হয়ে নিন আসলেই কোন সফটওয়্যার চালু আছে কিনা। সিস্টেম ট্রে হচ্ছে উইন্ডোজ টাস্ক বার এর একটি অংশ যেখানে চলমান সকল সফটওয়্যার এর একটি লিস্ট থাকে। যেগুলো বন্ধ করতে চান সেগুলোর আইকন এ ক্লিক করে বন্ধ করে দিতে হবে। তবে অবশ্যই গ্রাফিক্স কার্ড ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কিত সফটওয়্যার গুলো চালু রাখতে হবে।
ডেস্কটপ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে খুব সহজেই যেকোনো যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করে কার্যক্ষমতা বাড়ানো যায় তবে ল্যাপটপ এর ক্ষেত্রে এই সুবিধা টি খুবই সীমাবদ্ধ। বেশির ভাগ ল্যাপটপেই প্রসেসর ও গ্রাফিক্স কার্ড পরিবর্তন করা যায় না। তবে আশা করি উপরে উল্লেখিত ৫ টি উপায় অনুসরণ করলে ল্যাপটপের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে আপনাকে সাহায্য করবে।
গেমিং ল্যাপটপের দাম যাচাই করতে এখানে ভিজিট করতে পারেনঃ https://www.startech.com.bd/laptop-notebook/Gaming-Laptop
আমি রবিউল ইসলাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 12 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 3 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।