বর্তমান যুগে ডেক্সটপ কম্পিউটারের তুলনায় ল্যাপটপের দিকে আমরা বেশি ঝুঁকে থাকি। কারণ ডেক্সটপের তুলনায় ল্যাপটপগুলো সহজে বহনযোগ্য এবং প্রয়োজনে যেকোনো স্থানে আমরা বহন করে নিয়ে যেতে পারি। আর বর্তমানে ডেক্সটপের পাশাপাশি ল্যাপটপগুলোকেও বেশ শক্তিশালি করে তোলায় এখন ল্যাপটপেই আপনি ডেক্সটপের কাজগুলো সহজেই সেরে ফেলতে পারবেন। আর ল্যাপটপের বাজারে তাইওয়ানিজ ইলেক্ট্রনিকস জায়ান্ট ASUS তাদের পাওয়ারফুল পারফরমেন্স এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের জন্য পরিচিত। আপনি গেমিংয়ের জন্য ল্যাপটপ, বাজেট ল্যাপটপ অথবা অফিসের কাজে ল্যাপটপ সকল ধাঁচের ল্যাপটপিই আসুসের ল্যাপটপগুলোর মধ্যে থেকে বেছে নিতে পারবেন। আর আমি আজ নিয়ে এলাম এ বছর আপনি যে সকল আসুসের ল্যাপটপ নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন সেগুলো। উল্লেখ্য যে আমি ল্যাপটপগুলোর মূল্য তালিকা ইন্টারন্যাশনাল বাজার অনুযায়ী লিখেছি। আমাদের দেশে ল্যাপটপগুলো প্রাইস আরো বেশি হতে পারে, কারণ এখানে শিপিং কস্ট, ট্যাক্স এবং অনান্য চার্জ যুক্ত হয়। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি টিউনে চলে যাই।
এ বছরের সেরা আসুস ল্যাপটপ হিসেবে আপনি কিনে নিতে পারেন ASUS F556। ল্যাপটপটি একই সাথে বিউটিফুল ডিজাইন এবং পাওয়ারফুল পারফরমেন্স আপনাকে উপহার দিতে পারবে। প্রথমেই ল্যাপটপটির আকর্ষণীয় গোল্ড-ম্যাটালিক ডিজাইন এবং চিকন বডি সাইজ আপনার মন জয় করে নেবে। ল্যাপটপটির মেজারমেন্ট হচ্ছে 15 x 10.1 x 1 ইঞ্চি। আর অন্যদিকে শক্তিশালি পারফরমেন্স আপনার দৈনিক সকল কাজগুলোকে সহজেই করে নিয়ে গেমস এবং অনান্য বিনোদনমূলক সকল টাস্কই আপনি এই আসুস এফ৫৫৬ ল্যাপটপটি দিয়ে করতে পারবেন। ল্যাপটপে রয়েছে ৭তম প্রজন্মের কোর আই৫ প্রসেসর, রয়েছে ২৫৬ গিগাবাইটের সলিড স্টেট ড্রাইভ (SSD), আর রয়েছে ৮ গিগাবাইট ডিডিআর ৪ র্যাম। যার মাধ্যমে আপনি ডেক্সটপের মতোই মাল্টিটাস্কিং এবার ল্যাপটপেই সেরে নিতে পারবেন।
ল্যাপটপটিতে রয়েছে সাড়ে ১৫ ইঞ্চির ফুল এইচডি ডিসপ্লে যেখানে পাবেন Blue Light Filter ফিচার। যার মাধ্যমে ল্যাপটপে blue light level ৩৩ শতাংশ পর্যন্ত diminish করতে পারবে। আর আপনাকে দেবে সহজে দেখার যোগ্য একটি সুন্দর ডিসপ্লে। এছাড়াও ল্যাপটপটিতে রয়েছে Li-Polymer ব্যাটারি যেটা ৭০০ চার্জ সার্কেল পর্যন্ত আপনাকে ব্যাকআপ দিতে পারবে। ল্যাপটপটি আমাজন ওয়েবসাইটে ৯০০ মার্কিন ডলারে বা বাংলাদেশি ৭৪, ৪২৬ টাকা।
মাত্র কয়েক বছর আগ পর্যন্ত গেমিংয়ের জন্য গেমাররা ডেক্সটপের উপর নির্ভরশীল ছিলো। কিন্তু বর্তমানে ল্যাপটপেই ডেক্সটপের মতো পারফরমেন্স পাওয়া যাচ্ছে বিধায় অনেকেই ল্যাপটপ গেমিংয়ের দিকে ঝুঁকছেন। আর আসুসের ল্যাপটপ পরিবার থেকে ২০১৮ সালে গেমিংয়ের জন্য আপনি নিশ্চিন্তে কিনে নিতে পারেন ASUS ROG Strix GL702VS ল্যাপটপটি। ল্যাপটপে পাবেন ওভারক্লক ফিচারযুক্ত ইন্টেল কোর আই৭-৭৭৭৭এইচকিউ ২.৮ গিগাহার্জ প্রসেসর (ওভারক্লকে ৩.৮ গিগাহার্জ), ১২ গিগাবাইট ডিডিআর ৪ র্যাম এবং পাওয়ারফুল এনভিডিয়া জিটিএক্স ১০৭০ ৮ গিগাবাইট গ্রাফিক্স কার্ড যেগুলোর মাধ্যমে বর্তমান কালের ৯৯% ভিডিও গেমসের রিকোয়ারমেন্টকে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন। এছাড়া ডিভাইসটিতে রয়েছে ১৭.৩ ইঞ্চির ফুল হাই ডেফিনেশন ১৯২০ x ১০৮০ G-SYNC ডিসপ্লে।
ডিভাইসটিতে রয়েছে ১২৮ গিগাবাইটের SSD যেটা আপনার হার্ডডিক্সের ট্রান্সফার কার্যক্রমে স্পিড এনে দেবে এবং আরো রয়েছে ১ টেরাবাইটের এক্সট্রা 7200RPM গতির HDD যা আপনার স্টোর করার ক্ষমতা অনেকাংশে ধরে রাখতে পারবে। আর হাই পারফরমেন্স গেমিংয়ের সময় ল্যাপটপটিকে ঠান্ডার রাখার কাজ করবে ডুয়ো-কপার থার্মাল মডিউল এবং দুটি কুলিং ফ্যান। আর্ন্তজাতিক বাজারে ডিভাইসটির মূল্য রাখা হয়েছে ১৩৯৯ মার্কিন ডলার বা ১, ১৭, ২৪৬ টাকা।
ল্যাপটপের মার্কেটে যখন আপনি 2-in-1 ফিচারের ডিভাইস খুঁজতে যান তখন আপনাকে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হয়। যেগুলো হচ্ছে portability, versatility এবং ডিজাইন। আর আসুসের ২০১৮ সালের ল্যাপটপগুলোর মধ্যে 2-in-1 ফিচারের ASUS Chromebook C302 টি আপনি কিনে নিতে পারেন। এতে পাচ্ছেন ৩৬০ ডিগ্রির hinge সহ ১২.৫ ইঞ্চির কর্নিং গরিলা গ্লাস, ফুল এইচডি টাচস্ক্রিণ। আর এই কারণে ডিভাইসটিকে আপনি চার ভাবে ব্যবহার করতে পারবেন: ল্যাপটপ আকারে, ট্যাবলেট আকারে, স্ট্যান্ড আকারে এবং টেন্ট আকারে। এতে আরো পাবেন ফুল সাইজ কির্বোড, পাবেন ৪ গিগবাইট র্যাম, ৬৪ গিগাবাইট স্টোরেজ সহ আরো অনেক কিছু। ডিভাইসটির আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য রাখা হয়েছে ৪৬৯ মার্কিন ডলার বা ৩৯, ৩০৬ টাকা।
আপনি যদি বাজেট নিয়ে কোনো ল্যাপটপ কিনে চান তাহলেও আসুসের রয়েছে ২০১৮ সালের বেস্ট বাজেট ল্যাপটপ। এক্ষেত্রে আপনি কিনে নিতে পারেন ASUS VivoBook Max। আন্তর্জাতিক বাজারে এই ডিভাইসটির মূল্য রাখা হয়েছে ২৫৬ মার্কিন ডলার বা ২১, ৪৫৫ টাকা। যা আপনি বাংলাদেশে ২৫ হাজারেই পেয়ে যাবেন। ডিভাইসে পাবেন ১৫.৬ ইঞ্চির এইচডি এলইডি ১৩৬৬x৭৬৯ ডিসপ্লে, ইন্টেল পেন্টিয়াম কোয়াড কোর প্রসেসর এবং ৪ গিগাবাইট ডিডিআর৪ র্যাম। ডিভাইসটি আমাদের দৈনিক যাবতীয় কাজের জন্য পারফেক্ট করে বানানো হয়েছে। আপনি যদি স্টুডেন্ট হন কিংবা চাকুরি জীবি হন তাহলে আপনার ব্যক্তিগত ল্যাপটপ হিসেবে কিনে নিতে পারেন এই ASUS VivoBook Max ল্যাপটপটি। ৫০০ গিগবাইট স্টোরেজযুক্ত ২.২ পাউন্ড ওজনের এই ল্যাপটপটিতে পাবেন ৬৪ বিট উইন্ডোজ ১০ হোম অপারেটিং সফটওয়্যার।
অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং স্টুডেন্টদের জন্যেও বেস্ট বাজেটের ল্যাপটপ আপনি পাবেন আসুসে। আর ২০১৮ সালের জন্য আপনি অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং স্টুডেন্টদের জন্যে নিয়ে নিতে পারেন ASUS Chromebook C202SA-YS02 ল্যাপটপটি। ল্যাপটপটিতে রয়েছে কঠিন ডিউরেবিলিটি যাতে রয়েছে স্পিল রেজিস্টেন্ট কির্বোড এবং রয়েছে ড্রপ টেস্টে উল্লেখযোগ্য রেজাল্ট। ল্যাপটপটি ৩.৯ ফিট উপর থেকে পড়ে গেলেও কোনো ড্যামেজ বহন করবে না। ১৮০ ইঞ্চির Hinge সহ এতে রয়েছে ১১.৬ ইঞ্চির ডিসপ্লে, আরো রয়েছে ইন্টেল সেলেরন N3060 প্রসেসর এবং ৪ গিগবাইট ডিডিআর৩ র্যাম ও ১৬ গিগাবাইট ফ্ল্যাশ স্টোরেজ। আন্তজার্তিক বাজারে এর মূল্য রাখা হয়েছে ২২৩ মার্কিন ডলার বা ১৮, ৬৮৯ টাকা।
যারা পোর্টেবল উপযোগী ল্যাপটপ খুঁজচ্ছেন তারা আসুসের জেনবুক ল্যাপটপটি নিয়ে নিতে পারেন। ডিভাইসটির মেজারমেন্ট হচ্ছে 12.7 x 8.7 x 0.5 ইঞ্চি এবং এর ওজন হচ্ছে ২.৬ পাউন্ডস। আকারে ছোট বলে পারফরমেন্সে কম সেটা কিন্তু ভাবলে চলবে না। ডিভাইসে রয়েছে ইন্টেল কোর আই৫ প্রসেসর এবং ৮ গিগাবাইট ডিডিআর ৩ র্যাম এবং ২৫৬ গিগাবাইট SSD স্টোরেজ। এছাড়াও ডিভাইসে পাবেন ১৩.৩ ইঞ্চির এন্টি-গ্লেয়ার ফিচারযুক্ত চমৎকার ১০৮০পি ডিসপ্লে যেখানে আপনি পাবেন ১৭৮ ডিগ্রি পর্যন্ত ওয়াইড ভিউ এঙ্গেল। এতে আরো পাবেন একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর। আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য রাখা হয়েছে ৯৫০ মার্কিন ডলার বা ৭৯, ৬১৭ টাকা।
আমাদের আজকের লিস্টের প্রায় সকল কম্পিউটারই ট্রাভেল এবং মিডিয়া স্ট্রিমিংয়ের জন্য বেশ উপযুক্ত। কিন্তু আপনি যদি ল্যাপটপে সিরিয়াস কাজ করতে চান বা অফিসের কাজে ল্যাপটপ কিনে চান তাহলে আসুসের P-Series P2540UA-AB51 ল্যাপটপটি নিয়ে নিতে পারেন। এতে রয়েছে প্রফেশনাল লুক, ব্রাশড ব্ল্যাক বডি এবং ১৫.৬ ইঞ্চির এন্টি গ্লেয়ার FHD ডিসপ্লে। ৭তম প্রজন্মের ইন্টেল কোর আই৫ প্রসেসর, ৮ গিগাবাইট র্যাম এবং ১ টেরাবাইট 5400RPM গতির হার্ডডিক্স আপনার বিজনেস এবং অফিসের সকল কাজকে দ্রুত সম্পন্ন করতে যথেষ্ট। এছাড়াও ডিভাইসে রয়েছে বিল্ট ইন TPM Security Chip যেটা আপনার ডাটাগুলোকে ডিপ হার্ডওয়্যার লেভেল থেকেই সুরক্ষিত করে রাখবে। এছাড়াও এতে রয়েছে বায়োমেট্রিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর যা আপনার লগিংকে সুরক্ষিত রাখবে। আর ব্যাটারি ব্যাকআপ নিয়েও আপনার চিন্তে করার কোনো অবকাশ নেই কারণ এতে পাবেন ৯ ঘন্টার ব্যাটারি ব্যাকআপ যুক্ত ২টি ব্যাটারি। আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য রাখা হয়েছে ৭৬৯ মার্কিন ডলার বা ৬৪, ৪৪৮ টাকা।
আপনি যদি স্মার্ট এবং স্টাইলিশ ল্যাপটপ কেনার জন্য এই টিউনে এসে থাকেন তাহলে বলবো আপনি সঠিক জায়গাতেই এসেছে। কারণ আসুস VivoBook S ডিভাইসটি দেখতে এতটাই সুন্দর যে এটা যে কারোই নজর কাড়বে সহজেই। এতে রয়েছে ১৫.৬ ইঞ্চির ফুল এইচডি ডিসপ্লে যাতে পাবেন মাত্র ০.৩ ইঞ্চির NanoEdge Bezel যার ফলে ল্যাপটপে থাকছে ৮০ % screen-to-body রেশিও। এছাড়াও এতে রয়েছে ১৭৮ ডিগ্রি পর্যন্ত ভিউ এঙ্গেল। আর অন্যদিকে মাত্র ৩.৭ পাউন্ড ওজনের এই ল্যাপটপে পাবেন ইন্টেল কোর আই৭ প্রসেসর, ৮ গিগাবাইট ডিডিআর৪ র্যাম এবং স্টোরেজ এর জন্য পাবেন ১২৮ গিগাবাইটের M.2 SSD এবং ১ টেরাবাইটের HDD। এছাড়াও এতে রয়েছে ব্যাকলাইটযুক্ত কিবোর্ড যেটায় আপনি রাতের বেলাতেও সহজেই টাইপ করতে পারবেন। এই মডেলটির আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য রাখা হয়েছে ৭৯৯ মার্কিন ডলার বা ৬৬, ৯৬২ টাকা।
তো এই ছিলো আসুস ব্রান্ডের এই বছরের সেরা কয়েকটি ল্যাপটপ। আশা করবো আজকের এই টিউনটি থেকে আপনি আসুসের ল্যাপটপ কেনার আগে চয়েস করে নিতে পারবেন। আমি আগেও বলেছি আবারো বলছি টিউনে উল্লেখিত মূল্যগুলো আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য অনুযায়ী দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে এর মুল্যের সাথে বিভিন্ন চার্জ এবং ট্যাক্স যুক্ত হবে। টিউনটি ভালো লাগলে জোস বাটনে ক্লিক করতে ভুলবেন না যেন। আজ এ পর্যন্তই আগামীতে অন্য কোনো টপিক নিয়ে আমি চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি সোশাল প্লাটফর্ম টেকটিউনসে। টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!