প্রযুক্তির বিবর্তন আমাদের বর্তমান সমাজের চালিকাশক্তি হয়ে উঠায় দিনদিন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। ভাষাগত দুর্বলতার কারনে অনেকেই বর্তমানে প্রচলিত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলোর মাধ্যমে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখার চাহিদাপূরণ করতে পারছেন না। এই সমস্যাকে উপলব্ধি করে নর্থসাউথ উনিভারসিটির তানভির সৈয়দ এবং একদল মেধাবী কম্পিউটার সাইন্স বিভাগের ছাত্র এগিয়ে এসেছেন কম্পিউটার প্রোগ্রামিংকে নতুনভাবে রুপ দিতে; “চা স্ক্রিপ্ট” নামে তাদের চালু হওয়া নতুন প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজটি এবার সম্পূর্ণ বাংলায়! ভাষা যেন শেখার পথে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, তাদের উদ্যোগের পিছনে লক্ষ্য এটিই।
সোজা ভাষায় বলতে ইংরেজি কে ভুলে যান, এর পুরোটাই বাংলায়। নবীন ছাত্র যারা কম্পিউটার প্রোগ্রামিংকে ব্যাবহারে আগ্রহী কিন্তু ভাষাগত দুর্বলতায় পিছিয়ে পড়ছেন এই সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র থেকে তাদের জন্য এটি একটি অগ্রগতির মাইলফলক।
ডঃ নোভা আহমেদ, নর্থসাউথ ইউনিভারসিটির এসিস্টেন্ট প্রফেসর এবং চা স্ক্রিপ্টের সুপারভাইজারের ভাষায়, “চা স্ক্রিপ্টের যাত্রা শুরু হয়েছিল ক্লাস প্রজেক্ট হিসাবে। এটি প্রোগ্রামিংকে ভাষাগত বাধা অতিক্রম করে আপনাকে বাংলায় প্রোগ্রামিং করতে দিবে। কেন এটি দরকার? আমাদেরতো এখনই সুন্দর প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ আছে এবং একসময় দরকারই পরবে ইংরেজিকে ব্যাবহার করে প্রোগ্রামিং করার – আসলেই কি বাংলাতে ফেরত যাওয়ার প্রয়োজনীতা আছে? এর জবাব হিসাবে এটাই বলতে হয়, এটি প্রোগ্রামিংকে বাংলা ভাষা ব্যাবহারে অভ্যস্ত ছাত্রদের মাঝে পরিচয়ের সেতুবন্ধন হিসাবে কাজ করবে। পরিচিত হওয়ার পর কেউ চাইলেই নিজের প্রয়োজনে পরবর্তীতে অন্যান্য প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের ব্যাবহার সহজেই আয়ত্ত করতে পারবে। আমাদের লক্ষ্য হল ক্লাস ৮ বা এরকম নবীন ছাত্ররা যারা মাত্র এলজেব্রার সাথে পরিচিত হচ্ছে, চা স্ক্রিপ্ট ব্যাবহার করে তারা যেমন গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে পারবে, তেমনি পরিচিত হতে পারবে নতুন সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্রের সাথে। আমরা চা-স্ক্রিপ্টের ব্যাপারে আশাবাদী এবং সকলের হতে কিভাবে একে আরও ব্যাবহারউপযোগী করে তোলা যায় এব্যাপারে উপদেশ আসা করছি”।
এই স্ক্রিপ্টিং ল্যাংগুয়েজটির নির্মাতারা সকলের সুবিধার্তে একটি কোড এডিটার সংযোজন করে দিয়েছেন এবং একই সাথে ল্যাংগুয়েজটিকে সকলের কাছে সহজ করে তোলার একটি প্রয়াস হিসেবে ডাইনামিক ভ্যারিয়েবল কাস্টিং এর ব্যবহার করেছেন। যার ফলে যে কোন ভ্যারিয়েবল এই ল্যাংগুয়েজে একই সাথে ইন্টিজার, ক্যারেক্টার, স্ট্রিং অথবা অন্য যে কোন টাইপ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। নতুনদের জন্য সম্পূর্ণ গাইডেড ট্রেনিং এর অংশ হিসেবে সম্পূর্ণ বাংলাতে টিউটোরিয়ালের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও যারা ব্যবহারিক কাজ শিখতে আগ্রহী তাদের জন্য রয়েছে অসংখ্য উদাহরণ। চা স্ক্রিপ্টের সব থেকে ভাল দিকটি হল এতে ইন্সটল করার কোন ঝামেলা নেই। অনলাইনে বসেই কোড করা সম্ভব। এছাড়া যারা অফলাইনে কোড করতে আগ্রহী তাদের জন্য ডাউনলোডেবল ভার্সন এর-ও ব্যবস্থা আছে।
Example of a computer program to add two numbers in Cha Script and C
যেসব ফিচার এই চা-স্ক্রিপ্টে যোগ করা হয়েছে তা আসলেই অবাক করার মতো। স্মার্ট কোড এডিটর নিজে থেকেই আপনার কম্যান্ডকে অনুধাবন করে তাকে সম্পূর্ণ করতে চেষ্টা করে। একজন প্রোগ্রামারের সময় অনেকখানি কমে বেঁচে এরফলে। সময়ই যখন সবকিছু, তখন চাইলেই পারবেন কিওয়ার্ড বক্স থেকে দরকারী কিওয়ার্ডটি বেছে নিতে। কিওয়ার্ডে চাপ দিয়েই পেস্ট করে নিতে পারবেন প্রয়োজন মতো। বর্তমানযুগে প্রোগ্রামাররা এভাবেই সময় সচেতন হয়ে কাজ করেন লিখাকে সীমিত রেখে আর স্মার্ট হয়ে কাজ করে। কষ্টের কাজকে সেভ করে রাখতে পারেন ভবিষ্যতের জন্য, যাতে পরবর্তীতে প্রয়োজনের মুহূর্তে ফাইলটি আপলোড করেই শুরু করে দিতে পারেন পূর্বের কাজটুকু।
চা-স্ক্রিপ্ট বিশেষ দৃষ্টিতে তাকানোর দাবী রাখে এই জন্যই, অন্যান্য ভাষায় যেমন চায়নিজ, হিন্দি, ফ্রেঞ্চ পারসিয়ান ভাসাগুলোতে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ আগে থেকে থাকলেও বাংলা ভাষায় এই প্রথম প্রোগ্রামিং হিসাবে যাত্রা শুরু করলো এটি। বাংলাভাষীদের জন্য এটি একটি গর্বের দাবীদার। অন্যান্য ভাষায় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ নিজে জানতে উইকিপিডিয়ার পেজটি ঘুরে দেখতে পারেনঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Non-English-based_programming_languages
তথ্যপ্রজুক্তির অবদান নিয়ে ছুটে চলা এই বিশ্বে কম্পিউটার প্রোগ্রামারের চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছে। চা-স্ক্রিপ্ট বাঙ্গালীদের জন্য খুলে দিতে পারে নতুন সম্ভাবনার দ্বার, এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে আরেকটি ধাপ।
আমি Mursalin। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 8 টি টিউন ও 67 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অনেক ভালো উদ্যোগ। ধন্যবাদ