আইফোনের নাম শুনলেই আমাদের মাথায় চলে আসে খুব দামী এবং অনেক ফিচার সমৃদ্ধ একটি মোবাইলের কথা। হয়তোবা আমাদের মধ্যে অনেকেই এ কথাটি স্বীকার করতে নাও পারে, কিন্তু আমরা সবাই জীবনে একবার না একবার অ্যাপেলের তৈরি আইফোন ব্যবহার করতে চাই। কিন্তু সমস্যা হল এর দাম। অ্যাপেলের প্রোডাক্ট এর দাম এত বেশি কেন হয়? তো বন্ধুরা সেসবের সবকিছু নিয়েই আলোচনা করব আজকের এই টিউনে।
আইফোন অ্যাপেলের একটি প্রোডাক্ট। সর্বপ্রথম আইফোন অবমুক্ত করেন ৯ জানুয়ারি ২০০৭ তারিখে। পরবর্তীতে প্রথম আইফোনের বাজারজাতকরণ শুরু হয় ২০০৭ সালের ২৯ শে জুন তারিখে। ২০১৬ তে iPhone 7 ফোনটি ৬৫৯ ডলারে বিক্রি হওয়া শুরু হয়। তিন বছর পর অ্যাপেলের ফ্লাগশিপ iPhone 11 ফোনটি ৯৯৯ ডলারে বিক্রি হয়। যে দামটি প্রায় ৫৫% বেশি। এই বেশি দাম অ্যাপেলকে লাভ এনে দেয়। যার ফলে অ্যাপল আমেরিকার প্রথম ট্রিলিয়ন ডলার কোম্পানিতে পরিণত হয়। কিন্তু কেন অ্যাপেলের প্রোডাক্ট এত বেশি দামি হয়?
শুধুমাত্র অ্যাপেলের ফোনের দাম বেশি হয় না। অ্যাপেলের যত প্রোডাক্টে রয়েছে সবগুলোর দামই আকাশচুম্বী। অ্যাপল এর ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ফোন, স্মার্ট ওয়াচ সহ যাবতীয় প্রোডাক্ট গুলি বাজারের অন্যান্য প্রোডাক্ট এর চাইতে বেশী দামে বিক্রি হয়। অ্যাপেলের সমস্ত প্রোডাক্ট এর দাম বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে এক্সপার্টরা মনে করে যে, বিগত কয়েক বছর ধরে মার্কেটে অ্যাপেল যে খ্যাতি তৈরি করেছে তার জন্য তারা কয়েক মিলিয়ন কাস্টমার অর্জন করেছে। তাদের এই খ্যাতির কারণে যারা অ্যাপেলের প্রোডাক্ট কেনার জন্য যেকোনো দাম দিতে রাজি আছে।
এজন্য তাদের প্রোডাক্ট এর উপরে মানুষ যে বিশ্বাসটা করে সেই বিশ্বাসের দামটি তারা মার্কেট থেকে চুষে নিচ্ছে এবং প্রত্যেকটা প্রোডাক্ট কেনার জন্য তাদের একটা অতিরিক্ত অ্যামাউন্ট দিতে হচ্ছে। আর এই অতিরিক্ত টাকাকে অনেকেই Apple Tax ও বলে থাকে। শুধুমাত্র এটা একটা অ্যাপেলের প্রোডাক্ট এইজন্যই দাম বেশি এটাই হলো Apple Tax। শুধুমাত্র অ্যাপেলের প্রোডাক্ট বিধায় এটির দাম বেশি নয়, অ্যাপেল প্রোডাক্টে রয়েছে বাজারের অন্যান্য প্রোডাক্টের চাইতে অনেক অ্যাডভান্স প্রযুক্তি। যা একটি গ্রাহককে খুব সহজেই আকৃষ্ট করে।
তবে এই কথাটিও ঠিক যে তারা টেকনোলজির ব্যাপারে অনেক এগিয়ে থাকে। অ্যাপেল এর সিইও বলেছে আমরা কম দামে বেশি প্রোডাক্ট বিক্রি করতে চাই না, আমরা চাই মার্কেটের বেস্ট প্রডাক্ট কে বিক্রি করতে। আর তারা চায় মার্কেটে অন্যান্য প্রোডাক্ট থেকে তারা সবসময় যেন প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে থাকতে পারে। দাম যেমন বেড়েছে সেইভাবে ফোনের কোয়ালিটিও তারা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। বাজারে বহু প্রোডাক্টের ভেতরে অ্যাপেলের প্রোডাক্ট টা ভালো হওয়ার কারণেই তো মানুষ কিনে থাকে। ফোনে বেস্ট ক্যামেরা, এলইডি ডিসপ্লে, বেস্ট প্রসেসর আর এই ব্যাপারটা সবাই জানে যে অ্যাপেলের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ব্যবহার সবথেকে ভালো।
অ্যাপলের এত সব ফিচারের ভিড়ে অন্যান্য ফোনের ব্র্যান্ড ও কিন্তু পিছিয়ে নেই। সবাই জানে যে সনি, স্যামসাং-এর মত কোম্পানিগুলো অ্যাপেল এর ফোনের ব্যাপারে প্রতিযোগিতা করে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো সমস্ত আইফোনের ক্যামেরাতে Sony এর সেন্সর লাগানো থাকে। যদি একটি স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানি একাই মোবাইলের সমস্ত যন্ত্রাংশ তৈরি করে না। একেকটি কোম্পানির কাছ থেকে একেকটি পার্টস নিয়ে সেগুলো শুধু উৎপাদন করে থাকে।
এক্সপার্টরা মনে করেন অ্যাপেলের ফোনটা বানাতে যে সমস্ত উপাদান তারা ব্যবহার করে সেগুলোর সমস্ত মূল্য প্রায় 500 ডলার হতে পারে। কিন্তু সেই ফোনটা তারা বাজারে প্রায় এক হাজার ডলারে বিক্রি করে। যেটি হয়ে যায় উৎপাদন খরচের চাইতে প্রায় দ্বিগুণ। যদিও এটা হওয়াই স্বাভাবিক যে তৈরি করার খরচ এর চাইতে বিক্রি অনেক বেশি দামে করতে হবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও অন্যান্য কোম্পানি থেকে অ্যাপলের লাভ অনেক বেশি থাকে শুধু তাদের প্রযুক্তিগতভাবে অ্যাডভান্স হওয়ার জন্য এবং তাদের খ্যাতির জন্য। প্রযুক্তিগত ভাবে এগিয়ে থাকাস এবং তাদের সুনামের কারণে অ্যাপেলের প্রোডাক্ট কে যেকোন দামে কিনতে হয়।
অ্যাপেলের ফোন অনেকেই কিনতে চায় কেননা এই ফোন অনেকটাই স্ট্যাটাস প্রদর্শন করে। আমাদের পার্সোনালিটি এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে। অ্যাপল এর মত কাস্টমারের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তা অর্জন করা একটা কোম্পানির কাছে খুবই বড় কাজ। কিন্তু যদি কোন কোম্পানি কাস্টমারদের মন জয় করতে পারে তাহলে সেই গ্রাহক সারাজীবন অন্ধের মত ওই ব্রান্ড কে ফলো করে। যেমন কি করেছে অ্যাপল ব্রান্ড এর ক্ষেত্রে। কোন একটি গ্রাহক একবার অ্যাপেলের কোন প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে সে পরবর্তীতে অ্যাপেলের প্রোডাক্ট টিই খুজবে।
এবার দেখা যাক যেকোনো একটা অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসকে ব্যবহার করার যে এক্সপেরিয়েন্স টা আছে সেটা কি আইফোন ব্যবহার করার মতোই, নাকি আইফোন ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা এবং অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করার অভিজ্ঞতার মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। কী কী পরিবর্তন রয়েছে অ্যাপল এবং এন্ড্রয়েড ফোনের মধ্যে। অ্যাপল এর ফোন কি সত্যিই এন্ড্রয়েড থেকে ফাস্ট?
আমাদের সবার কাছে প্রথমেই যে ব্যাপারটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল প্রাইভেসি। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা ফোনের সিকিউরিটি কে নিয়ে ভাবে না। নিজের পার্সোনাল ডাটা এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সমূহ কে কোন গুরুত্বই দেয় না। কিন্তু যারা বুঝে তারা জানে যে ডেটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়। অনেকে ভাবে যদি কোন কোম্পানি ফোন হ্যাক করে বা ফোন থেকে কোন ডেটা চুরি করে কিংবা যদি কোন ভাইরাস চলেই আসে তাহলে অতটা সমস্যা হবার তো কোন কথা নয়। কিন্তু আপনি বিশ্বাস করুন বা নাই করুন আজকের দিনের ডেটা একটা বড় কারেন্সির মত।
নিজের ডাটাগুলোকে সুরক্ষার জন্য এজন্য অনেকেই আইফোনকে পছন্দ করে। কারণ এখানে সর্বোচ্চ সিকিউরিটি আর সর্বোচ্চ প্রাইভেসি আপনি পেয়ে যাবেন। অ্যাপল এর প্রত্যেকটি ডিভাইসে সর্বোচ্চ সিকিউরিটি এর ব্যবস্থা রাখা হয়। যেটি কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের উপর হয় না।
অ্যান্ড্রয়েড এর ক্ষেত্রে একটা সবথেকে বড় সমস্যা হলো যে এটা একটা ওপেনসোর্স সফটওয়্যার। এজন্য যে কোন কোম্পানি অ্যান্ড্রয়েডকে নিয়ে মডিফাই করে নিজের ফোনেতে চালাতে পারে। আর আপনি জানতেও পারবেন না যে কি মডিফিকেশন তারা করেছে। যেহেতু অ্যানড্রয়েড ওপেনসোর্স, এজন্য খুব সহজেই হ্যাকাররা বুঝতে পারে যে কিভাবে এটি হ্যাক করতে হয়। যে কারণে অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইস সহজেই হ্যাকারেরা হ্যাক করতে পারে। তবে এন্ড্রয়েড এর মধ্যে স্যামসাং এর সিকিউরিটি অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েড এর থেকে একটু বেশি ভালো।
অ্যান্ড্রয়েড একটি ওপেনসোর্স সফটওয়্যার হাওয়ায় এটিতে হ্যাকাররা বিভিন্ন ম্যালওয়ার এবং স্পাইওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত করতে পারে। অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের এসব ম্যালওয়ার খুব সহজেই প্রবেশ করার কারণে কমদামি বা মিড রেঞ্জের ফোন গুলোতে ভাইরাসের কারণে ফোনটি স্লো এবং হ্যাং হয়ে যাবার ঘটনা বেশি হয়। যে সমস্যাটি আইফোনের সঙ্গে সচরাচর দেখা যায় না। কেননা এখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়।
বর্তমানে আপনি অনেক অ্যান্ড্রয়েডের ফোন দেখতে পাবেন যেগুলো অনেক ফাস্ট। কিন্তু অ্যাপেল আগাগোড়াই এরকমই ছিল। এর কারণ হলো যে অ্যাপল এর হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার এর রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট টা খুবই ভালো। তার মানে প্রসেসর, র্যাম, জিপিইউ কে আইফোনের সফটওয়্যার খুব সুন্দর ভাবে ম্যানেজ করতে পারে। অ্যাপলের ডিভাইসকে তাদের সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার এর সমন্বয় রেখেই তৈরি করা হয়।
আর এইজন্য অ্যাপেলের মধ্যে কম ক্যাপাসিটির ব্যাটারি থাকলেও সেটা অনেক ভালো এবং বেশিক্ষণ পারফরম্যান্স দেয়। একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের 4000mAh এর ব্যাটারি দিয়ে যেখানে সারাদিন চালাতে পারেনা, কিন্তু একটা আইফোনের 3200mAh-3500mAh দিয়েই সারা দিন চলে যায়। অ্যাপেলের সবথেকে বড় সুবিধা হলো এরা হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার নিজেরাই ডিজাইন করে। এজন্য অ্যাপল তাদের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার কে নিজেই অপটিমাইজ করতে পারে এবং পুরোপুরি কাজের জন্য তৈরি করতে পারে।
অ্যাপল এর আরও একটা সুবিধা হলো এর ইকোসিস্টেম। অন্য কোন প্রোডাক্ট নেই যার ইকোসিস্টেম এত সুন্দর। যারা অ্যাপেল ডিভাইসের জন্য অ্যাপ ডিজাইন করে তারা ভালভাবেই জানে যে অ্যাপলের জন্য অ্যাপ ডিজাইন করতে গেলে কত প্যারামিটার কে অ্যাপ্রুভ করাতে হয়। কিন্তু অ্যান্ড্রয়েড এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এতটা কঠিন নয়। এজন্য অ্যাপেলের অ্যাপস্টোর এ আপনি ভুলভাল কোন অ্যাপ পাবেন না। যেমনটি এন্ড্রয়েডের ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। এন্ড্রয়েডের মতো যেরকম ইচ্ছা সে রকম ভাবে এখানে অ্যাপ ডেভলপ করা যায় না।
বন্ধুরা, আজ তবে বিদায় নিচ্ছি এখানেই। দেখা হবে পরবর্তী টিউনে আরো নতুন কিছু নিয়ে ইনশাআল্লাহ।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)
প্রিয় ট্রাসটেড টিউনার,
আপনার টিউনটি ‘টেকটিউনস ক্যাশ’ এর জন্য প্রসেস হতে পারছে না।
কারণ:
টিউন থাম্বনেইলে ইমেইজের সাথে মিলিয়ে, ইমেইজের সাথে দারুন কালার হারমনি বা কালার স্কিম তেরি করে, ইমেইজ থেকে জেনারেটকৃত কালার থেকে First Rectangle Element এ প্রাইমারি কালার ও Second Rectangle Element এ সেকেন্ডারি কালার সেট করা হয়নি।
টিউন থাম্বনেইল টেমপ্লেট গাইডলাইন অনুযায়ী, ইমেইজ থেকে জেনারেটকৃত কালার থেকেই, টিউন থাম্বনেইলে ইমেইজের সাথে মিলিয়ে, ইমেইজের সাথে দারুন কালার হারমনি বা কালার স্কিম তেরি করে, First Rectangle Element এ প্রাইমারি কালার ও Second Rectangle Element এ সেকেন্ডারি কালার সেট করে দিতে হয়।
করণীয়:
টিউন থাম্বনেইল টেমপ্লেট গাইডলাইন অনুযায়ী, First Rectangle Element ও Second Rectangle Element এর কালার এমন নির্বাচন করুন যেন তা ইমেইজের সাথে মানান সই হয়। যেন ইমেইজের সাথে একটি দারুন কালার হারমনি বা কালার স্কিম তেরি হয়। First Rectangle Element ও Second Rectangle Element এর কালার এমন নির্বাচন করবেন না যে তা দেখতে কটকটে দেখায়। First Rectangle Element ও Second Rectangle Element এর কালার যেন ইমেইজের সাথে মিলে একটি কালার স্কিম তৈরি করে যে অনুযায়ী Rectangle Element এর কালার নির্বাচন করুন।
উপরের নির্দেশিত সংশোধন করে এই টিউমেন্টের রিপ্লাই দিন।
খেয়াল করুন, এই টিউমেন্টের রিপ্লাই বাটনে ক্লিক করে রিপ্লাই না করে টিউনে টিউমেন্ট করলে তার নোটিফিশেন ‘টেকটিউনস কন্টেন্ট অপস’ টিম পাবে না। তাই অবশ্যই এই টিউমেন্টের রিপ্লাই বাটনে ক্লিক করে রিপ্লাই করুন।