উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়াতেও কোভিড-১৯ ছড়ায় নাঃ
নতুন করোনাভাইরাস উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় সংক্রমিত হয় না বলে একটি তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে উচ্চারিত হতে শোনা যায়। তথ্যটি ভুল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এখন পর্যন্ত উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়াসহ সব ধরনের পরিবেশ এবং এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমিত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। জলবায়ু ও আবহাওয়া যেমনই হোক, সতর্ক থাকুন। কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছে এমন এলাকা ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকুন। মনে রাখবেন, কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত থাকার সবচেয়ে ভালো পথ হচ্ছে একটু পরপরই সাবান-পানি বা অ্যালকোহলভিত্তিক হ্যান্ড রাব বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা। একই সঙ্গে হাত দিয়ে নাক, মুখ, চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। আরও পড়ুন কোয়ারেন্টিন, আইসোলেশন, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং, লকডাউন: কোনটা আসলে কী?
তুষার ও ঠান্ডা আবহাওয়া করোনাভাইরাসকে মারতে পারে নাঃ
করোনাভাইরাস বা অন্য কোনো রোগ প্রতিরোধে ঠান্ডা আবহাওয়া কার্যকর—এমনটি ভাবার কোনো কারণই নেই। কারণ, বাইরের তাপমাত্রা যা-ই হোক না কেন, মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৯৭-৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) মধ্যেই থাকে।
গরম পানিতে গোসল করোনাভাইরাস রোধে কার্যকরঃ
নতুন করোনাভাইরাস থেকে প্রতিরোধের উপায় হিসেবে অনেকে গরম পানিতে গোসলের কথা বলছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গরম পানিতে গোসলের মাধ্যমে করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকা যাবে না। কারণ, বাইরের তাপমাত্রা যা-ই হোক না কেন, মানুষের শরীরের তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৯৭-৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট) থাকে। মনে রাখবেন, কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত থাকার সবচেয়ে ভালো পথ হচ্ছে একটু পরপরই সাবান-পানি বা অ্যালকোহলভিত্তিক হ্যান্ড রাব বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা। এর মাধ্যমেই আপনার হাতে থাকা জীবাণু অপসারিত হবে। একই সঙ্গে হাত দিয়ে নাক, মুখ, চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
নতুন করোনাভাইরাস মারতে হ্যান্ড ড্রায়ার কার্যকরঃ
হ্যান্ড ড্রায়ার দিয়ে হাত শুষ্ক করার মাধ্যমে নতুন করোনাভাইরাসকে মারা যায় না। কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত থাকার সবচেয়ে ভালো পথ হচ্ছে একটু পরপরই সাবান-পানি বা অ্যালকোহলভিত্তিক হ্যান্ড রাব বা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার করা। হাত ধোয়ার পরপরই টিস্যু পেপার বা উষ্ণ বাতাস বা হ্যান্ড ড্রায়ার দিয়ে হাত শুকিয়ে নিন। একই সঙ্গে হাত দিয়ে নাক-চোখ-মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
অতিবেগুনি রশ্মিতে করোনাভাইরাস মরেঃ
অতিবেগুনি রশ্মিতে করোনাভাইরাস মরে কি না, তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, এ রশ্মি থেকে ত্বকের বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। আরও পড়ুন করোনাভাইরাস নিয়ে গুগলের ওয়েব সাইট
থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যায়ঃ
কারও শরীরে জ্বর থাকলে, তা থার্মাল স্ক্যানারে ধরা পড়বে। নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায়, তার একটি হলো জ্বর। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্বর হয় না। এমন লক্ষণ প্রকাশ পেতে ২ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। তাই জ্বর নেই, কিন্তু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত—এমন ব্যক্তিকে থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে শনাক্ত করা যায় না।
সারা শরীরে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন ছিটিয়ে কি করোনামুক্ত থাকা যায়ঃ
এককথায় উত্তর, ‘না’। পশ্চিমা দেশে এ ধরনের কিছু বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যে ভাইরাস এরই মধ্যে শরীরে প্রবেশ করেছে, তাকে মারতে সারা শরীরে অ্যালকোহল বা ক্লোরিন বা ব্লিচিং ছড়িয়ে কোনো লাভ নেই। এ ধরনের রাসায়নিকের সংস্পর্শ চোখ ও মুখের ত্বক ও ঝিল্লি (মিউকাস মেমব্রেন) ক্ষতি করে। এ দুটি রাসায়নিকই ঘরদোর পরিষ্কারের কাজে লাগে। তবে ব্যবহারের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ পরামর্শ মেনে ব্যবহার করতে হবে। আরও পড়ুন করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে নিজ দায়িত্বে ঘরে থাকাই বাঞ্ছনীয়।
মশার মাধ্যমে নতুন করোনাভাইরাস ছড়ায়ঃ
সামনে বর্ষা মৌসুম আসছে। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় মশার মাধ্যমে নতুন করোনাভাইরাস ছড়ায় কি না, তা নিয়ে নানা জল্পনা আছে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, মশার মাধ্যমে নতুন করোনাভাইরাস ছড়ানোর বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি। নতুন এই ভাইরাস শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ভাইরাস। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির সময় তাদের শ্বাসতন্ত্র থেকে নির্গত ড্রপলেট বা লালার বিন্দু বা নাক ঝাড়ার সময় নির্গত জলকণার মাধ্যমে ছড়ায়। নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে একটু পরপর হাত পরিষ্কার করুন এবং হাত দিয়ে নাক-চোখ-মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। একই সঙ্গে হাঁচি-কাশি রয়েছে—এমন ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন করোনা থেকে সুরক্ষা দেবেঃ
না। নিউমোকক্কাল ভ্যাকসিন বা হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি ভ্যাকসিনসহ নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন শুধু নিউমোনিয়ার বিরুদ্ধেই কার্যকর। এগুলো নতুন করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেবে না। এই ভাইরাস একেবারেই নতুন এবং আগেরগুলোর চেয়ে আলাদা যে এর প্রতিরোধে একেবারে নতুন ভ্যাকসিনেরই প্রয়োজন। বিভিন্ন দেশের গবেষকেরা করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছেন, যেখানে সহায়তা দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বিদ্যমান ভ্যাকসিনগুলো কোভিড-১৯–এর বিরুদ্ধে কার্যকর না হলেও শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা রোধে বিদ্যমান ভ্যাকসিন যেকোনো মানুষেরই গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
লবণ-পানি বা স্যালাইন দিয়ে নিয়মিত নাক ধুলে কি সুরক্ষিত থাকা সম্ভবঃ
না। লবণ-পানি বা স্যালাইন দিয়ে নিয়মিত নাক পরিষ্কার করে নতুন করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়—এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাধারণ ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় এ কৌশল কাজে লাগে। শ্বাসপ্রশ্বাসের কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে এটি কার্যকর নয়।
রসুন বা এমন কিছু করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে পারেঃ
রসুন স্বাস্থ্যকর খাবার এবং এর রয়েছে অণুজীবনাশক ক্ষমতা। একইভাবে থানকুনি বা তুলসীপাতাও স্বাস্থ্যকর এবং এগুলোর নানা ঔষধি গুণ রয়েছে। কিন্তু এর কোনোটিরই করোনাপ্রতিরোধী কোনো ক্ষমতা নেই। এমন কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
নতুন করোনাভাইরাসে শুধু বয়স্ক ব্যক্তিরা আক্রান্ত হনঃ
নতুন করোনাভাইরাস সব বয়সী মানুষকে আক্রান্ত করতে পারে। বয়স্ক মানুষ বিশেষত যাদের অ্যাজমা, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগসহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা আগে থেকেই রয়েছে, তাদের ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সব বয়সী ব্যক্তিদের সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ ক্ষেত্রে নিয়মিত হাত ধোয়া ও শ্বাসপ্রশ্বাস সম্পর্কিত সু-অভ্যাসের ওপর জোর দিচ্ছে সংস্থাটি।
নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধ এবং এর চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকরঃ
অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না। এটি শুধু ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে। নতুন করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ একটি ভাইরাস। তাই এর প্রতিরোধ বা চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অনেক রোগীকে হয়তো অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হচ্ছে। মনে রাখতে হবে, সেগুলো করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য নয়, বরং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ যেন না ঘটে, সেজন্য দেওয়া হচ্ছে। আরও পড়ুন কোয়ারেন্টিন না মানা, দোষ কি শুধুই বাঙালির?
নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বা এর চিকিৎসায় কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ আছেঃ
নতুন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বা এর চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রকাশিত বিভিন্ন উপসর্গ অনুযায়ী তাকে চিকিৎসাসেবা দিতে হবে। যাদের অবস্থা গুরুতর হবে, তাদের বিশেষ পরিচর্যার আওতায় নিতে হবে। এর ভ্যাকসিন ও চিকিৎসার জন্য সুনির্দিষ্ট ওষুধ তৈরিতে গবেষণা চলছে। এ–সম্পর্কিত গবেষণার গতি বাড়াতে বিভিন্ন দেশে কাজ করে চলা গবেষক ও সংস্থাগুলোকে সহায়তা দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ আবিষ্কৃত হলে তার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে আগে।
কখন ও কেন মাস্ক ব্যবহার করবেনঃ
নিজে সুস্থ থাকলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বা সন্দেহ করা হচ্ছে—এমন ব্যক্তির শুশ্রূষা করার সময়ই শুধু আপনার মাস্ক পরার প্রয়োজন রয়েছে।
হাঁচি বা কাশি থাকলে মাস্ক ব্যবহার করুন, যেন আপনার শরীরে করোনাভাইরাস থাকলে তা অন্যদের মধ্যে না ছড়ায়।
মাস্ক ব্যবহার তখনই কার্যকর, যখন আপনি অ্যালকোহলভিত্তিক হ্যান্ড রাব (বাজারে থাকা সাধারণ হেক্সিসল বা অনুরূপ পণ্য) বা সাবান-পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত পরিষ্কার করেন।
মাস্ক ব্যবহার করতে হলে এর ব্যবহারবিধি জেনেই করা উচিত।
মাস্ক পরার আগে হাত (সাবান-পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড বা হ্যান্ড রাব দিয়ে) পরিষ্কার করে নিন।
মাস্ক পরার সময় এর সামনের অংশ ধরবেন না।
নাক ও মুখ মাস্ক দিয়ে ঢেকে ফেলুন এবং মনে রাখবেন, মুখ ও মাস্কের মধ্যে যেন কোনো ফাঁকা স্থান না থাকে।
ব্যবহারের সময় মাস্ক স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। আর যদি স্পর্শ করেন, তবে হাত (সাবান-পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড বা হ্যান্ড রাব দিয়ে) পরিষ্কার করে নিন।
ব্যবহৃত মাস্কটি আর্দ্র বা ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে মনে হওয়ামাত্রই তা বদলে ফেলুন। ডিসপোজিবল বা একবার ব্যবহারের জন্য তৈরি মাস্ক বারবার ব্যবহার করবেন না।
মাস্ক অপসারণের সময় এর সামনের অংশ স্পর্শ করবেন না। মাস্ক খুলে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে তা ঢাকনা দেওয়া ময়লার বাক্সে ফেলুন।
মাস্ক অপসারণের পর হাত পরিষ্কার করে নিন।
ঘন ঘন পানি পানে করোনা যাবে নাঃ
করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে একটি টিউন ছড়িয়ে দিয়ে বলা হয়, প্রতি ১৫ মিনিট পরপর পানি পান করুন। এতে গলার মধ্যে থাকা ভাইরাস পাকস্থলীতে চলে যাবে। পাকস্থলীতে থাকা অ্যাসিড ভাইরাস মেরে ফেলবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি এত সহজ নয়। এটি অতি সরলীকরণ। লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক কল্পনা সবাপাত্রী বলেন, বিষয়টি অতি সরলীকরণ। সে কারণে এসব নিয়ে মাথাও ঘামাতে চাই না। তিনি বলেন, যদি কারও মুখ ব্যবহার করে ভাইরাস কাউকে আক্রান্ত করে, তাহলে তা দু–একটি নয়, লাখ লাখ ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে। পানি পান করার সময় সামান্য পরিমাণ ভাইরাসই পাকস্থলীতে যাবে। তা ছাড়া শুধু মুখের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে না। চোখ ও নাকের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে ঘন ঘন পানি পান করে করোনা আটকানো যাবে ন। এ ছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের ৫০ শতাংশই মুখ, নাক, চোখ থেকে সংক্রমিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, চীনা গবেষকেরা বলেছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাকস্থলীতে করোনাভাইরাস আক্রমণ করছে। পাকস্থলীতেই করোনাভাইরাস বেঁচে থাকে, তাহলে পানি পান করে করোনাভাইরাস পাকস্থলীতে নিলে তা ধ্বংস হবে না।
তবে যাঁরা হালকা গরম পানি দিয়ে দিনে তিনবার গার্গল করেন, এমন ব্যক্তি শ্বাসরোগে কম আক্রান্ত হন বলে দেখা গেছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়া করোনাভাইরাস বা ‘কোভিড–১৯’ কোনো কাজ দেবে না।
কল্পনা সবাপাত্রী বলেন, ১৫ মিনিট পরপর পানি পান করা খারাপ কিছু না। কিন্তু যদি ১৫ মিনিট পরপর পানি পান করে কেউ ভাবেন তিনি নিরাপদ আছেন, তাহলেই বিপদ।
আইসক্রিমে সমস্যা নেইঃ
অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টিউন দিয়ে আইসক্রিম না খেতে পরামর্শ দিচ্ছেন। আইসক্রিম খাওয়ার কারণে গলার মধ্যে করোনাভাইরাস বেশি সময় সক্রিয় বা বেঁচে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি ঠিক নয়। এ রকম একটি টিউন কম্বোডিয়াতে জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) নামে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৮ মার্চ ইউনিসেফের উপনির্বাহী পরিচালক শার্লোট পেট্রি গর্নিৎজকাকে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জনসাধারণের কাছে আমাদের অনুরোধ, আপনারা কীভাবে নিজেকে এবং পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন, সে সম্পর্কে যাচাইকৃত উৎস থেকে সঠিক তথ্য সন্ধান করুন। ’
বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন সামাজিক এবং কিছু মূলধারার মিডিয়ায় প্রচারিত এ ভুল বার্তায় বলা হয়েছে, আইসক্রিম এবং অন্যান্য ঠান্ডা খাবার এড়ানো এ ভাইরাস সংক্রমণের সূত্রপাত রোধে সহায়ক হতে পারে, যা অবশ্যই ‘সম্পূর্ণ অসত্য’।
বিবৃতিতে এ ধরনের মিথ্যাচারের হোতাদের উদ্দেশে একটি সাধারণ বার্তা দিয়ে বলা হয়, এটি বন্ধ করুন। ভুল তথ্য প্রচার করা এর সঙ্গে আস্থার অবস্থানে থাকা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে চালিয়ে দিয়ে তাতে নির্ভরযোগ্যতার রং দেওয়ার অপচেষ্টা বিপজ্জনক এবং ভুল।
রসুন খেলে কাজ হবে নাঃ
রসুন খেলে করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করা যাবে—এমন পরামর্শ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, রসুন খেলে করোনাভাইরাস বা ‘কোভিড–১৯’ থেকে বাঁচা যায়, এটি পরীক্ষায় প্রমাণিত না। রসুন স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো একটি খাবার। করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে চীনের এক নারী দেড় কেজি রসুনের গরম রস পান করে অসুস্থ হন। এরপর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।
‘অলৌকিক’ পানি খেয়ে লাভ নেইঃ
যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, ক্লোরিন মেশানো পানি পান করলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় না। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) বলছে, এটি খুবই বিপজ্জনক প্রচারণা। এর সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনো সম্পর্ক নেই। এটি পান করলে ভয়াবহ ডায়রিয়া ও বমি হতে পারে।
ব্লিচিং মিশ্রিত পানি পান করলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করা যায়, এমন একটি ভিত্তিহীন তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়া রাজ্যে প্রথমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে রাজ্যটির ব্লু রিজ পয়জন সেন্টার বিবৃতিতে জানায়, ব্লিচিং মিশ্রিত পানি পান করলে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ তো করাই যাবে না, উল্টো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
থানকুনি পাতায় প্রতিরোধ হয় না
দেশের বিভিন্ন জেলায় হঠাৎ করে গুজব ছড়িয়ে পড়ে, তিনটি থানকুনি পাতা খেলে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। ১৭ মার্চ রাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে থানকুনি পাতা খাওয়ার হিড়িক চলে। কোথাও কোথাও থানকুনি পাতা খেতে মাইকযোগে আহ্বান জানানো হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বহু বছর ধরে থানকুনি পাতা বাংলাদেশের মানুষ সবজি হিসেবে খেয়ে আসছেন। সবজি হিসেবে এর পুষ্টিগুণ অনেক ভালো। কিন্তু এতে ‘কোভিড–১৯’ প্রতিরোধ করতে পারে এমন কোনো গবেষণা নেই। বিষয়টি স্রেফ গুজব।
(সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, প্রথম আলো, বিবিসি, এনপিআর, টিভিও অনলাইন)
আমি চয়ন মোল্লা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 28 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 16 টিউনারকে ফলো করি।