অবশেষে এসেই গেলেও অ্যাপেল এর নতুন ফ্লাগশিপ আইফোন এক্স। যদিও কেউ কেউ একে আইফোন এক্স বলতেই বেশি ভালবাসেন। কিন্তু এটি আসলে আইফোন ১০। অ্যাপেল কিছু মার্কেটিং টার্ম এর কারণে আইফোন ১০ কে সরাসুরি আইফোন ১০ না বলে আইফোন এক্স হিসেবেই মার্কেটে এনেছে। হয়ত অ্যাপেল নতুন একটু সিরিজ শুরু করতে যাচ্ছে। হয়ত না। কিন্তু আমার মতে আইফোন এক্স নামটিই শুনতে বেশি ভাল লাগে। কিছুদিন আগে অ্যাপেল স্টিভ জবস থিয়েটার একটি প্রেস কনফারেন্স এর মাধ্যমে তাদের নতুন এই ফোনটি সম্পর্কে আমাদের জানিয়েছে।
আইফোন এক্স এর দিকে তাকালেই প্রথমে আপনার নজরে পরবে এর বিশাল বড় একটি স্ক্রীন। অ্যাপেল এর মতে আইফোন এক্স তাদের তৈরি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী এবং অ্যাডভান্সড ফোন। আপাদত আইফোন এক্স দুইটি কালারে বাজারে পাওয়া যাবে। এগুলো হল সিলভার এবং গ্রে। তবে নতুন এই আইফোন এক্স পানি এবং ধুলা রেসিসটেন্ট। অ্যাপেল ফ্যানরা অনেকদিন ধরে এই ফিচারটি এর জন্য অপেক্ষা করেছে।
আইফোন এক্স এর ডিসপ্লেটি একটি ওলেড ডিসপ্লে। অ্যাপেল এই ডিসপ্লে এর নাম দিয়েছে সুপার রেটিনা ডিসপ্লে। এটির সাইজ ৫.৮ ইঞ্চি। এবং আইফোন এক্স এর ডিসপ্লে এর রেসুলুশন ২৪৩৬*১১২৫ পিক্সেল। যেহেতু এটি রেটিনা ডিসপ্লে তাই ডিসপ্লে এর ব্রাইটনেস এবং কালার হবে খুবই অসাধারণ। অ্যাপেল বরাবরি তাদের আইফোনে দেয় সবচেয়ে সেরা ডিসপ্লে এবং ক্যামেরা। আর যেহেতু আইফোন এক্স ডলবি ভিশন অ্যান্ড এইচ.ডি.আর সাপোর্ট করে তাই এর ডিসপ্লে তে যেকোনো ভিডিও প্লেব্যাক হবে অনেক সুন্দর।
তবে নতুন এই ফোন এর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল এর ভার্চুয়াল হোম বাটন। অর্থাৎ আইফোন এক্সএ কোন হার্ডওয়্যার হোম বাটন নেই। আমরা অন্যান্য আন্ড্রয়েড ফোন এ ডিসপ্লে তে বাটন দেখলেই অ্যাপেল এই প্রথম এটি করল। কিন্তু যেহেতু অ্যাপেল এর জন্য এটি প্রথম তাই এটা নিয়ে একটু সমস্যা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তবে আইফোন এক্সএ করা যাবে মাল্টি-টাস্কিং। এবং অ্যাপেল এর বিখ্যাত সিরি কে আইফোন এক্স এর সাইড বাটন দিয়ে একটিভেট করা যাবে।
আইফোন এক্স এর দাম নিয়ে অনেক বেশি জল্পনা-কল্পনা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছিল যে এর দাম হবে ১০০০ ইউ.এস ডলার বা ৮২০০০ টাকা। আইফোন এক্স বাজারে দুইটি ভার্সনে পাওয়া যাবে। একটি হল ৬৪জিবি ভার্সন অন্যটি হল ২৫৬জিবি ভার্সন। এবং এই দুইটি ভার্সনই অক্টোবর ২৭ থেকে প্রি-অর্ডার করা যাবে। এবং ৩ নভেম্বর থেকে এটি বাজারে বিক্রি শুরু হবে। অ্যাপেল আইফোন এক্স মত ৫৫টি দেশে অফিশিয়ালি পাওয়া যাবে।
কিন্তু এই ডেট চেঞ্জ হতে পারে। কারণ আইফোন এক্স এর ফ্লাগশিপ ফিচার ফেস রিকগনিশনে এখনো কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এর মতে আইফোন এক্স এর ফেস রিকগনিশন কিছুটা স্লো কাজ করছে। অর্থাৎ এটি যত তারাতারি কাজ করবে বলে ভাবা হয়েছিল। এটি তত তারাতারি কাজ করছে না। তাই অ্যাপেল আইফোন এক্স একটু দেরি করে বাজারে ছাড়তে পারে।
আইফোন এক্স এর ক্যামেরা একটি ডুয়াল লেন্স বিশিষ্ট ১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা। যেটির দুইটি লেন্সই অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইযেশন সাপোর্ট করে। এছাড়াও এটির অ্যাপারচার f/1.8, এছাড়াও আইফোন এক্স এর ফ্রন্ট ক্যামেরাটি ৭ মেগাপিক্সেল এবং এটি অটোমেটিকভাবে ইমেজ স্ট্যাবিলাইজ এবং এক্সপোজার কন্ট্রোল করে। আপনি আইফোন এক্স দিয়ে 4k তে ৬০ এফ.পি.এস এ ভিডিও করতে পারবেন। এছাড়াও যারা স্লো মোশন ভিডিও পছন্দ করেন তারা আইফোন এক্স দিয়ে ২৪০ এফ.পি.এস এ ভিডিও শুট করতে পারবেন। তবে স্লো মোশন এ ভিডিও করলে এর রেশুলুশন হবে ৭২০ পিক্সেল।
নতুন আইফোন এক্স এ আছে অ্যাপেল এর A11 Bionic chip, এটি তাদের নতুন প্রসেসর। যেটি আইফোন ৮ এই দেয়া হয়েছে। অ্যাপেল এর মতে এই প্রসেসর A10 Fusion থেকে ৩০% বেশি গতিতে কাজ করে। যদিও অ্যাপেল তাদের ফোন এর র্যাম এর ব্যাপারে খুব বেশি তথ্য দেয় নি। তবে আইফোন এক্সএ রয়েছে ৩ জিবি র্যাম। নতুন স্মার্টফোনগুলোতে যেখানে ৬ জিবি র্যাম পর্যন্ত থাকে। সেখানে অ্যাপেল কেন ৩ জিবি র্যাম দিল সেটাও একটি প্রশ্ন। তবে আইফোন এর অ্যাপগুলো অনেক বেশি অপ্টিমাইজড থাকে। আইফোন এক্স এর প্রসেসরটি ৬ কোর বিশিষ্ট।
আইফোন এক্স এর ব্যাটারি সম্পর্কে অফিশিয়াল কোন তথ্য জানা যায়নি। তবে এটি আইফোন ৭ প্লাস থেকে ২ ঘণ্টা বেশি ব্যাকআপ দিবে। তবে কারো কারো মতে নতুন এই ফোনে দেয়া হয়েছে ২৭১৬ এম.এ.এইচ/ঘণ্টা এর ব্যাটারি। তবে অ্যাপেল তাদের নতুন এই ফোন ওয়ারলেস চার্জিং সুবিধাটি যোগ করেছে।
অ্যাপেল আইফোন এক্স এর মার্কেটিং করার সময় সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছি এই ফেস আইডি এর উপর। কারণ এই ফেস রিকগনিশন সিস্টেম অন্য সব ফোন এর মত কাজ করবে না। এটি আসলেই ফেস রিকগনাইজ করতে পারে। এটি ট্রু-ডেপথ নামের একটি ক্যামেরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফেস ডিটেক্ট করতে পারে। এই সেন্সর আপনার চেহারাকে ইনফ্রারেড ডট অ্যারে দিয়ে স্ক্যান করে। এবং পরে ফোন এর প্রসেসর এবং র্যাম নতুন ধরনের এলগোরিদম ব্যবহার করে ফোন এ সেভ করা চেহারার সাথে স্ক্যান করা চেহারা মিলায়। যদি মিলে যায় তবেই ফোন খুলবে।
এবং সবচেয়ে বড় সুবিধা এই ফিচার রাতেও কাজ করবে। অ্যাপেল বলেছে যে তাদের এই ফেস রিকগনিশন সিস্টেম চুল, টুপি বা এই রকম কিছু দ্বারা প্রভাবিত হবে না। অর্থাৎ আপনি যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন। আপনার ফোন আপনার চেহারাকে চিনে ফেলবে। তবে আপনি মনে করতে পারেন যে এই ফেস আইডি সিকিউর না। আসলে আপনি যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সিস্টেম ব্যবহার করেন সেটিও আপনি বাদে ৫০ হাজারে ১ জন তাদের আঙুল ব্যবহার করে খুলে ফেলতে পারে। তবে ফেস আইডি আপনি ছাড়া যদি কেউ খুলতে পারে তার সম্ভাবনা মিলিয়নে ১ জন।
এছাড়াও অ্যাপেল তাদের এই ফোনে কিছু সফটওয়্যার বেসড সিকিউরিটি সিস্টেম ব্যবহার করেছে। যেমন আপনি যদি ফোন এর দিকে সরাসুরি না তাকান তবে এটি আপনাকে চিনলেও ফোন আনলক করবে না। অ্যাপেল যখন প্রথম টাচ আইডি তাদের ফোনে দিয়েছিল তখন তাতে অনেক বাগ ছিল। তবে ফেস আইডিতে সেরকম কিছু নেই বলে জানিয়েছে অ্যাপেল। এছাড়াও যেসব অ্যাপ টাচ আইডি ব্যবহার করে তারা ফেস আইডিও ব্যবহার করবে।
আশা করা যায় আইফোন এক্স অ্যাপেল এর অন্যতম সফল স্মার্টফোন হবে। তবে যেহেতু দাম অনেক বেশি তাই এটি সাধারণ জনগণের ধরাছোঁয়ার বাইরে ই থেকে যাবে। টিউনটি সময় নিতে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। টিউনটি কেমন লাগলো তা অবশ্যই জানাবেন।
আমি আশরাফুল ফিরোজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 77 টি টিউন ও 35 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।