iPhone X এর কথা ভুলে যান, ভবিষ্যত পৃথিবী মাতাবে Apple Watch Series 3

যখন সবাই iPhone X এর Edge-to-Edge ডিসপ্লে এবং Facial Recognition ফিচার নিয়ে আলোচনা করতে ব্যস্ত তখন আমি উদ্বিগ্ন আমার হাতের কব্জির গেজেট সম্পর্কে। Aplle Watch বা এপল ঘড়ি হয়ত এপল আইফোনের মত সর্বশেষ প্রযুক্তির স্মার্টফোনের মত মানুষের কাছে এতটা প্রতীক্ষিত নয় কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না স্মার্ট ওয়াচের দুনিয়ায় পৃথিবীর সেরা এবং সবচেয়ে সফল প্রযুক্তি পন্য হল এই এপল ওয়াচ।

আমি বিশ্বাস করি নতুন Series 3 স্মার্টওয়াচগুলোর ভবিষ্যত বাজার এপল এর যে কোন স্মার্টফনের চেয়ে অনেক বেশি সম্ভাবনাময়। ভবিষ্যতের চিন্তা করে তাই এপলকে এর পেছনে টাকা এবং সময় দিতেই হবে।

মাথায় ঢুকছে না? কনফিউশনে পড়ে গেছেন? রিলাক্স, ধৈর্য্য ধরে টিউনটি পড়ে যান। আজকের টিউনের বিষয়ই হল এপলের Watch 3 Series, তো চলুন শুরু করা যাক।

iPhone X শুধুমাত্র এখনের

এপলের নেক্সট জেনারেশন ফোন আইফোন এক্স যে পরিমাণ আকর্ষন এবং ক্রেজ পেয়েছে তাতে ভবিষ্যতের স্মার্টফোন টেকনোলজি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে এসেছে।

ফেসিয়াল রিকগনিশন ফিচার সম্পন্ন এটাই প্রথম ফোন নয়। এর আগেও আমরা ফেসিয়াল রিকগনিশন ফোন দেখেছি কিন্তু তর্কাতীত ভাবে এটাই প্রথম সবচেয়ে সাহসী ফেসিয়াল রিকগনশন প্রযুক্তির বাস্তবায়ন। কোন কোম্পানিই অব্যর্থ নয়, বিশেষত যতক্ষণ না পর্যন্ত একটি প্রযুক্তি সম্পূর্ণভাবে ডেভেলাপ করতে না পারছে ততক্ষণ পর্যন্ত সেটা বাজারে না আনার ব্যাপারে এপলের সুনাম আছে যদিও তারা Apple Map এবং iCloud এ প্রত্যাশানুযায়ী সাফল্য পায় নি।

টাচ আইডি স্ক্যানার সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে দিয়ে ফেস আইডি স্ক্যানারের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করে ফোন তৈরী করাটা অবশ্যই একটা বড় ঝুঁকি ছিল। সেই সাথে ফোন থেকে হোম বাটন সরিয়ে নেয়াটাও একটা বড় পরিবর্তন, ব্যবহারকারীদের এটার সাথে মানিয়ে নিতে অবশ্যই কিছু সময় লাগবে। এপল মূলত এই ফোনটিতে তাদের কোম্পানির দৃষ্টিভঙ্গির ছাপ রেখেছে কোন ফিজিক্যাল ইনপুট এর ব্যবস্থা না রেখে। আইফোন এক্স, বলতে গেলে আসলে একটা বড়সড় পর্দা বা স্ক্রীন ছাড়া আর কিছুই নয় অন্তত যখন শুধু দেখা হচ্ছে তখন।

এখন পর্যন্ত রিলিজ হওয়া যে কোন আইফোন বা আইফোন প্লাসের থেকে অনেক বড় যদিও ডিভাইসটি অন্যান্য আইফোন থেকে সামান্যই বড়। মনে হচ্ছে এপল প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে গতানুগতিক মোবাইল ফোনের ধারণার বাইরে গিয়ে কাজ করছে। এবং ইনোভেটিভ কিছু করার জন্য এটা অবশ্যই জরুরি।

পরিধানযোগ্য গেজেটগুলিই ভবিষ্যতের প্রযুক্তি

এপলের সিরিজ ৩(Apple Watch Series 3) এর স্মার্ট ওয়াচ পৃথিবীর প্রথম স্মার্ট পরিধানযোগ্য গেজেট নয় কিন্তু অন্য কোন ডিভাইস(স্মার্টফোন) এর সহযোগিতা ছাড়া সতন্ত্রভাবে কাজ করতে সক্ষম পরিধানযোগ্য গেজেটের ক্ষেত্রে এটাই সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এবং একই সাথে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে সফল পরিধানযোগ্য স্মার্টগেজেট(সব রকম পরিধানযোগ্য গেজেটের তুলনায়)।

LG, Samgsung, Sony সহ আরো অনেক কোম্পানি LTE ঘড়ি মার্কেটে নিয়ে এসেছে কিন্তু Apple এর Watch Series 3 এরই প্রযুক্তি দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা এবং আকর্ষন রয়েছে। বিশুদ্ধ ফিটনেস ট্র্যাকারের চাহিদা বাজারে কমে গেলেও এপল একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরী করেছে এবং স্বাস্থ্য এবং ফিটনেস ফিচারের উপর জোর দিচ্ছে।

 

Series 3 এর সাহায্যে আপনি পারবেন কল করতে, মেসেজ করতে এবং কোন ধরনের মাদার ডিভাইসের(আইফোন) এর সাথে সংযুক্ত না থেকেও LTE নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণভাবে ফুল স্পিডে ব্যবহার করতে পারবেন। এক কথায়, এটি বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ পরিধেয় বা ওয়ারেবল স্মার্টফোন।

Apple Watch Series 3 থেকে আমরা ভবিষ্যতের কমিউনিকেশন ডিভাইসগুলি সম্পর্কে একটা ধারণা পাই। দুর্ভাগ্যবশত এটা আইফোনগুলোর সাম্প্রতিক সীমাবদ্ধতা সমূহ কাটাতে সক্ষম নয় আর তাই কবে নাগাদ এপল ওয়াচ যে iWatch হবে সেটা বলা সম্ভব নয়। খুবই সূক্ষ্ম কিছু প্রযুক্তি উন্নয়ন এবং প্রযুক্তির বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করেই কেবলমাত্র এপল ওয়াচ এর পক্ষে আইফন ওয়াচ হয়ে উঠা সম্ভব। ব্যটারি লাইফ, ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা, ফিচার, ডিজাইন, মূল্য, স্ক্রীন এর মত বিষয়গুলির উপর এপলকে অবশ্যই কাজ করতে হবে।

 

সম্ভবত সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিগত বাধা যেটাকে টপকাতে হবে সেটা হল অনেক্সপেকটেড বা অপ্রত্যাশিত একটি স্মার্ট ওয়াচ তৈরী করা। এবং আইফোনকে একদম ফেলে না দিয়ে একই সাথে কাজ করার মত স্বনির্ভর করে ডিভাইস দুটি তৈরী করা। যেমন, ওয়ারেবল এবং পকেটেবল ডিভাইগুলি স্বতন্ত্র ভাবে কাজ করতে পারবে আবার একত্রে মিলে কাজও করতে পারবে। একত্রে আরো ভালো ব্যবহারকারী অভিজ্ঞতা দিতে সক্ষম করে আলাদা ভাবে ডিভাইস ডেভেলাপ করতে পারে এপল।

স্মার্ট ওয়ারেবলস বাঁচাতে পারে আপনার জীবন

সেপ্টেম্বর ২০১৭ এর iPhone ইভেন্টে সিরিজ ৩ টেকনোলজির উপর স্ট্যান্ডফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি রিসার্স উপস্থাপন করা হয়। যেখানে দেখা যায়, সিরিজ ৩ এর স্মার্ট্ ওয়াচ এবনরমাল হার্ট রিদম পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারে। যেখানে ইতিমধ্যেই সিরিজ ৩ এর ঘড়ি resting heart rates, recovery times এবং elevated heart rate patterns নির্ণয় করতে পারে। যার একত্রিত ফলাফল আপনার স্বাস্থ্যের উপর সম্পূর্ণ নজরদারি করতে সক্ষম এবং যে কোন রকম শারিরীক অস্বাভাবিকতা নির্ণয় করতে সক্ষম।

৪০০ডলারের একটি স্মার্ট ওয়ারেবল ফোনের কথা চিন্তা করুন যেটা কল, মেসেজ, ব্রাউজিং, ক্যাপচারিং এর বাইরেও আপনার শরীরের সুস্থ্যতা সম্পর্কিত সকল কিছু নজরে রাখে। একই সাথে সেটা খুবই হালকা, দেখতে আকর্ষনীয় এবং হাতে বহনযোগ্য। অবশ্যই দাম খুব বেশি নয় এমনকি আরেকটু বেশি হলেও সমস্যা ছিল না।

Apple Watch Series 3 জন্য এর সামনে কি আসছে?

এপলের জন্য সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে কাস্টমারদের প্রত্যাশা পূরণ করা। ভবিষ্যতে কি আমরা ট্র্যাডিশনাল স্মার্টফোনগুলি থেকে দূরে থাকব? আপনার অ্যাপল ওয়াচ আপনার আইফোনের সাথে তুলনীয় হলে, ব্যাটারি লাইফ বেশি হলে, আপনি কি আপনার আইফোন ছাড়া ঘর থেকে বের হবেন?

এখনো ব্যবহারের অনেকগুলি সমস্যা সমাধান করতে হবে। স্মার্ট ওয়াচগুলিতে টাইপ করা যায় না, এমনকি Siri দিয়ে টাইপ করাও ঝামেলার হবে এপল স্মার্ট ওয়াচে। ব্রাউজিং সহ অনেক কাজের জন্য বড় মাপের পর্দা প্রয়োজন। আছে আরো অনেক সমস্যা।

তবে যেদিন স্মার্টওয়াচগুলি ট্র্যাডিশনাল স্মার্টফোনের জায়গা দখল করে নিবে সেদিনটা হবে দেখার মত। কিন্তু কবে আমরা স্মার্টফোন পরিধান করতে চলেছি? কবে ক্যাপসুলের আকারের খাবার খাচ্ছি? ভবিষ্যত পৃথিবী কেমন হবে? কি নিয়ে অপেক্ষা করছে সামনের সময়টা?

টিউনটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সবাই বালো থাকবেন। সুস্থ থাকবেন, আর হ্যাঁ টেকটিউনসের সাথেই থাকবেন। মেতে উঠুন প্রযুক্তির সুরে।

ফেসবুকে আমি

Level 2

আমি হাসিবুর ইসলাম নাসিফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 43 টি টিউন ও 76 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

বিষাদময় পৃথিবীতে আমি আনন্দ খুঁজে নিই সবকিছু থেকে। আর স্বপ্ন দেখি মহাকাশ ভেদ করে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেবার। স্বপ্নচারী আমার স্বপ্নগুলোই বাঁচিয়ে রেখেছে আমাকে। হাত ধরে চলো স্বপ্ন দেখি একসাথে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস