আজ আমরা আইফোনের কিছু বিশেষ ফিচার/সার্ভিস সমন্ধে জানবো। আমি বাজী ধরে বলতে পারি, বাংলাদেশের বেশীভাগ আইফোন ব্যবহারকারীই এগুলো সমন্ধে জানেন না। অথবা জানলেও কখনো ব্যবহার করেননি। মজার ব্যাপার হলো, এর সবগুলোই একদম ফ্রি। এ্যাপেল কোম্পানি আপনার কাছ থেকে একটা পয়সাও খাবে না এই ফিচার/সার্ভিসগুলোর জন্য।
১) iMessage: এক বা একাধিক iOS 7 চালিত ডিভাইসের ভেতর আনলিমিটেড টেক্সট/এমএমএস, ছবি, ভিডিও এবং ভয়েস মেইল পাঠানোর পদ্ধতির নাম আইম্যাসেজ। শর্ত হচ্ছে, প্রতিটা ডিভাইসে আইম্যাসেজ অন করা থাকতে হবে, এবং প্রতিটা ডিভাইস যে কোন একটা ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের অধীনে থাকতে হবে। (যদি ওয়াই ফাই নেটওয়ার্ক সুলভ না থাকে তো আইম্যাসেজ আপনার ফোনের সেলুলার নেটওয়ার্ক (মোবাইল অপারেটর) ব্যবহার করবে। সেক্ষত্রে আপনাকে সুযোগ দেয়া হবে সেলুলার নেট ইউজ করবেন কি করবেন না সেটা নির্ধারন করার, কারন সেলুলারে প্রতি ম্যাসেজে টাকা কাটবে। কিন্তু ওয়াই-ফাইতে একদমই ফ্রি।
ব্যবহারঃ ধরেন আপনার এবং আপনার স্ত্রী দুজনেরই আইফোন আছে। দুজনের অফিসেই ওয়াই ফাই আছে। এবং দুজনেই দুজনকে প্রচুর টেক্সট করেন। (বাইরের দেশে আমি প্রচুর ফ্রি এসএমএস পেতাম প্রতি মাসে, কিন্তু বাংলাদেশে এসে দেখি এখানে কোন ফ্রি এসএমএম নাই। সবই টাকা দিয়ে কিনতে হয়। ৫ টাকা দিয়ে রবির ১০০ sms কিনি তাও আবার মাত্র দুই দিন পর এক্সপায়ার হয়ে যায়! এই দেশের মোবাইল কোম্পানিগুলো যেভাবে টাকা আদায় করে পাবলিকের কাছ থেকে অন্য কোন উন্নত দেশের মোবাইল কোম্পানি সেগুলা চিন্তাও করতে পারবেনা) যাই হোক, এমবস্থায় আপনি যতক্ষন আপনার অফিসের ওয়াই ফাইয়ের আন্ডারে থাকবেন ততক্ষন বাংলাদেশের কোন মোবাইল অপারেটরকে একটা পয়সাও দিতে হবে না আপনার স্ত্রীকে sms পাঠানোর জন্য। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আপনার স্ত্রী সেটা পাবে সাধারন এসএমএসের মতই। মানে sms যেভাবে পাবেন, হুবহু একই ভাবে আইম্যাসেজও পাবেন।
যেভাবে আইম্যাসেজ সেটাপ করবেনঃ - এখানে ছবিসহ স্টেপ বাই স্টেপ গাইড দেয়া আছে।
আর ভয়েস ম্যাসেজ পাঠানোর পদ্ধতি এখানে বর্ণনা করা হয়েছে।
২) Facetime: এটা হুবহু আইম্যাসেজের মতই শুধু পার্থক্য হচ্ছে এটাতে ভিডিও কল করা যাবে। ভিডিও কোয়ালিটি নির্ভর করবে আপনার ওয়াই-ফাই নেট কতটা শক্তিশালি তার উপর। আমার ১ এমবিপিএস নেটে ফেসটাইমের ভিডিও কোয়ালিট মাথা নষ্ট করার মতো। বিস্তারিত জানতেঃ https://www.apple.com/ios/facetime/
৩) AirDrop: দুটি iDevice এ কনটাক্টস, ফাইল, MP3 বা ভিডিও বা যে কোন ধরনের কনটেন্ট ব্লু টুথ দিয়ে শেয়ার করার জন্য এই ফিচারটি ব্যবহার করা হয়। তবে সীমাবদ্ধতা হলো, iPhone 5 থেকে শুরু করে এর পরের মডেল গুলোর জন্য এটা কার্যকর। বিস্তারিত জানতেঃ http://support.apple.com/kb/ht5887
৪) AirBlue: আপনার আইফোন থেকে যে কোন ফোনে ব্লু টুথ দিয়ে ফাইল ট্রান্সফারের জন্য এটি একটা থার্ডপার্টি এ্যাপ। তবে এটা ব্যবহারের জন্য আপনার আইফোনটি জেলব্রেক করতে হবে।
৫) AirPort: আপেল কোম্পানির বানানো একটা অত্যাধুনিক ওয়াই ফাই মডেম। এটি দিয়ে আপনার ল্যাপটপ, টেবলেট, আইফোন বা আইপ্যাডে ইন্টারনেট চালানো ছাড়াও বাড়তি কিছু কাজ করতে পারবেন যেগুলো বাজারের আর দশটা সাধারন মডেম করতে পারবে না। যেমনঃ আপনি বাসাজুড়ে ওয়্যারলেসলি মিউজিক স্ট্রিমিং করতে পারবেন, ওয়াই-ফাই প্রিন্টার দিয়ে প্রিন্ট করতে পারবেন, আপনার ওএসের ব্যাকাপ রাখতে পারবেন, শক্তিশালি ওয়াই-ফাই হাব হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন এমনকি আপনার এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভ এটার সাথে কানেক্ট করে টিভিতে মুভি স্ট্রিমিংও করতে পারবেন।
এয়ারপোর্টের দামও খুব বেশী না, সবচেয়ে ছোটটার দাম বাংলাদেশী টাকায় মাত্র ৮ হাজার টাকা। বিস্তারিতঃ https://www.apple.com/compare-wifi-models/
৬) AirPlay: এয়ারপ্লে হচ্ছে iOS এর খুবই ইন্টারেস্টিং একটা ফিচার। এটা দিয়ে আপনি টিভি বা পিসির মনিটরে আপনার আইফোন বা আইপ্যাডের স্ক্রিন লাইভ মিররিং করতে পারবেন। মানে পিসিতে আমরা যেমন মাঝে মাঝে ডুয়েল ডিসপ্লে ব্যবহার করি, এটা ঠিক সেরকমই। এর সুবিধা হলো, আপনার আইফোনের স্ত্রিন রেকর্ড করতে পারবেন এমনকি আপনি আইফোনে যা যা করছেন সেটা সরাসরি প্রজেক্টরে দেখাতেও পারবেন। বিস্তারিত জানতেঃ https://www.apple.com/airplay/
চিত্রঃ আমি AirPlay ব্যবহার করছি।
উল্লেখ্য, আমার দেখা সেরা iOS game ইনফিটিনি ব্লেড ২ এর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কমব্যাট আমি এয়ারপ্লে দিয়ে রেকর্ড করে ইউটিউবে প্রচার করেছি। সেই ভিডিওগুলো এখানে থেকে দেখা যাবেঃ
৭) iTunes Home Sharing: এর মাধ্যমে আপনি যে কোন গান বা মুভি আপনার আইফোনে না নিয়েও আইফোন দিয়ে শুনতে/দেখতে পাবেন। কি, অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? বেশ, বিশ্বাস না হলে নিজেই চেষ্টা করেন দেখুন।
যা যা লাগবেঃ চারটা জিনিস লাগবে। একটা আইফোন, পিসিতে আইটিউনস, একটা আপেল আইডি আর একটা ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক।
এবার আইটিউনস থেকে File > Home Sharing > আপেল আইডি দিয়ে লগিন করে Done এ ক্লিক করুন। এবার আপনার আইফোনের Settings > Music এবং Settings > Video তে গিয়ে ঐ একই আপেল আইডি দিয়ে লগ ইন করেন। এবার আইটিউনস খোলা রেখেই আইফোনের মিউজিক এবং ভিডিও এ্যাপসে যান। Music > More > Shared > আপনার লাইব্রেরি সিলেক্ট করুন। আমার আইফোনে আসে Proloy's Library. তেমনি ভিডিওতে গিয়ে Video > Shared. ব্যস। এবার দেখুন, যে গান বা মুভিগুলো আপনার আইফোনে নেই কিন্তু আইটিউনসে আছে, সেগুলো দিব্যি আপনি আইফোন থেকেই চালাতে পারছেন। আপনি যতক্ষন ঐ ওয়াই ফাই নেটওয়াকের অধীনে থাকবেন, ততক্ষন আর ওসব আইফোনে নিতে হবে না। এর সুবিধা হলো, আপনার আইফোনের মেমরি একদম ফুল হয়ে গেলেও আপনি নতুন নতুন ভিডিও বা গান আইফোন থেকে শুনতে পারবেন। যেমনঃ আমি প্রায়ই আমার আইপ্যাড দিয়ে মুভি দেখতে দেখতে অথবা গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি। গান এবং মুভির সম্মিলিত সাইজ প্রায় দুই গিগা অথচ আমার আইপ্যাডে দুই গিগা জায়গা খালিও নাই।
৮) ধরুন আপনি বাসার ওয়াই ফাই দিয়ে প্রথমালোতে একটা আর্জেন্ট সংবাদ পড়ছেন। অথচ তাড়ার ভেতর আছেন। এখুনি বেরুতে হবে। আর্টিকেলটা বিশাল। শেষ করতে না হলেও ১৫-২০ মিনিট লাগবে। এত সময় আপনার হাতে নেই কিন্তু বাসে বসে অফিসে যেতে যেতে পড়তে পারবেন। কিন্তু আবার সেলুলার নেটও ব্যবহার করতে চাচ্ছেন না কারন ওতে বেশী টাকা কাটে। বা আপনার মোবাইলে ব্যালেন্সই নেই। তখন কি করবেন?
এই সমস্যার সমাধান খুবই সহজ। শুধু দুটি ফ্রি এ্যাপ আপনার আইফোনে ইনসটলড থাকতে হবে। ১. Chrome ব্রাউজার আর ২. Offline Reader নামের একটা ফ্রি এ্যাপ। ক্রোম এ্যাপটি আপনার পিসিতে থাকা ক্রোম ব্রাউজারের সাথে সিংক করে সেখানে খুলে থাকা সবগুলো ট্যাব আপনার আইফোনে নিয়ে আসবে এবং তারপর Offline Reader দিয়ে সেগুলোকে অফলাইনে পড়ার জন্য সেইভ করবেন। ব্যস হয়ে গেলো। এ্যাপ দুটো ইনসটল করা থাকলে সব মিলিয়ে বড় জোর মিনিট খানেকের মামলা! তারপর বাসে বসে পড়তে থাকুন আপনার আর্টিকেল যতক্ষন খুশী। দেশের জোচ্চর আর ডাকাত মোবাইল অপারেটরকে একটা পয়সাও দিতে হবে না নেটের জন্য।
বিঃদ্রঃ অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন এসব করতে জেলব্রেক করা লাগবে কিনা তাদের বলছি, আমি যে সব টিপস দেই, তার কোনটার জন্যই আপনার আইফোনকে জেলব্রেক করতে হবে না। যদি করতে হয়, তবে আমি অবশ্যই সেটা উল্লেখ করবো। যেমন ৪ নম্বরে করেছি। আর যদি উল্লেখ না করি, তবে ভাববেন জেলব্রেক লাগবে না।
[এই লেখার স্বত্ত্ব একক ও সর্বোতভাবে প্রলয় হাসান - এর কাছে সংরক্ষিত। সুতরাং, বিনা অনুমতিতে বা আমার নামোল্লেখ ব্যতীত অনলাইন বা অফলাইনের কোথায় শেয়ার করা যাবে না।]
আমি প্রলয় হাসান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অনলাইনে লেখালেখির শুরুটা ২০০৬ এর নভেম্বর থেকে। নিয়মিত লেখার শুরু আরো ১ বছর পরে। তারপর আর থেমে থাকিনি। একের পর এক লিখে গিয়েছি বাংলাদেশের স্বনামধম্য সব কয়টা বাংলা ব্লগ সাইটে, মিউজিক ফোরামে, ফ্লিকরে, ফেসবুক আর টুইটারে। এখনো লিখে চলেছি, আজীবনই লিখে চলার ইচ্ছে আছে। কারন লেখালেখি করে হয়তো পেট চালাতে...
ভালা পাইলাম পইড়া !