আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। বরাবরের মতই আজকে হাজির হলাম নতুন কিছু নিয়ে। আজকে আমরা কথা বলব lloT এবং IoT নিয়ে।
IIoT এবং IoT এর মধ্যে পার্থক্য কোথায় জানতে হলে আগে আপনাকে IoT কি সেটা ভাল করে পরিষ্কার হতে হবে।
IoT অথবা Internet of Things হচ্ছে এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে ইন্টারনেট যুক্ত সকল ডিভাইস এক সাথে কানেক্টেড থাকে এবং একসাথে মিলে কাজ করতে পারে। যেমন একটি স্মার্ট হোমের ক্ষেত্রে দেখুন, আপনি ঘর থেকে বের হলে অটোমেটিক দরজা অফ হয়ে যাচ্ছে, তাপমাত্রা অনুযায়ী আপনার এসি রুমের টেম্পারেচার কমাচ্ছে বাড়াচ্ছে। একই সাথে রুমের সকল ডিভাইস, লাইট, ফ্যান কন্ট্রোল করতে পারছেন স্মার্টফোন দিয়ে, এই হচ্ছে Internet of Things।
এবার আসি IIoT নিয়ে, IIoT এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Industrial Internet of Things। যখন শিল্প প্রতিষ্ঠানের ডিভাইস গুলো ওয়ারলেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কানেক্ট থাকবে, এবং একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে তখন তাকে বলব IIoT অথবা Industrial Internet of Things।
চলুন IoT নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। প্রযুক্তির আধুনিকায়নের ফলে IoT বর্তমানে খুব প্রভাব বিস্তারকারী একটি ধারনা। উদ্ভাবনকারীরা প্রতিদিন ভাবছে ব্যবহার্য জিনিস পত্র গুলোকে কিভাবে আরও কানেক্টেড করা যায় আরও স্মার্ট করে তুলা যায়। কিভাবে আমাদের প্রতিদিনের জীবন আরও সহজ করা যায়।
নিচে কিছু IoT এর উদাহরণ দেয়া হল,
IIoT এবং IoT এর মাধ্যমে ব্যাসিক পার্থক্য হচ্ছে তাদের ব্যবহারের। IoT সাধারণ ব্যবহৃত হয় ভোক্তাদের জন্য এবং IIoT ব্যবহৃত হয় শিল্প প্রতিষ্ঠানে। IIoT এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় সাধারণত, উৎপাদনে, সাপ্লাই চেইন মনিটরিং অথবা ম্যানেজমেন্টে।
IoT থেকে IIoT বিশাল এমাউন্টের ডেটা সংগ্রহ করা হয়। যেমন একটি সিঙ্গেল টারবাইন সংকোচকারী ব্লেড প্রতিদিন 500 গিগাবাইটের বেশি ডেটা উৎপন্ন করে। তাছাড়া IIoT আরও সংবেদনশীল এবং সুনির্দিষ্ট সেন্সর ব্যবহার করতে পারে।
সুতরাং বলা যায় যেখানে IoT কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে সেখানে IIoT কোটি কোটি মানুষের জীবনে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
IIoT এর কিছু উদাহরণ,
অ্যাপটি ব্যবহার করা একজন কৃষক একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, পানির জন্য চার কিলোমিটার দূরে ভ্রমণ করা এক সাথে যেমন বেশ সময় সাপেক্ষ এবং এতে অনেক পেট্রোল খরচ হয়। আমি এই অ্যাপটি ব্যবহারের মাধ্যমে বাড়িতে বসেই সহজেই আমার পাম্পকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
বর্তমান সময়ে সংক্রমণ এড়াতে রেস্টুরেন্ট, হসপিটাল, শিল্প কারখানা গুলোতে রোবটের ব্যবহার দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এই উদাহরণ গুলো ছাড়া ড্রোনের মাধ্যমে তেলের পাইপ লাইন মনিটর করা যাচ্ছে, স্মার্ট ফ্যাক্টরি গুলো মনিটর করছে বিভিন্ন সেন্সর, স্মার্ট পার্কিং এর মাধ্যমে মানুষজন অ্যাপের মাধ্যমেই গাড়ি নিরাপদ জায়গায় পার্ক করতে পারছে। বজ্র অপসারণ স্মার্ট সেন্সরের মাধ্যমে রিয়েল টাইমে ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট করা সম্ভব হচ্ছ।
ধারণা করা হচ্ছে 5G সুবিধা চালু হয়ে IoT এর ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হবে সড়ক পথ, জলপথ এবং বিমান পথে। বড় নেটওয়ার্কিং এবং রোবটের মাধ্যমে মালামাল এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সহজেই স্থানান্তর করা যাবে।
IIoT একটি সমৃদ্ধ শিল্প যা পূর্বাভাস দিয়েছিল যে এটি উৎপাদনশীলতা ১০ থেকে ২৫% বৃদ্ধি করবে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মূল্যতে ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ করবে। McKinsey & Company এর মতে এই প্রযুক্তি গ্রহণের ফলে কোম্পানির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় ২০% কমে যেতে পারে, অপরিকল্পিত ব্যয় হ্রাস পেতে পারে ৫০% এর মত একই সাথে এটি যন্ত্রের আয়ুও বাড়িয়ে তুলতে পারে। McKinsey এর মতে, সংযুক্ত IoT ডিভাইসের সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে ৭৫ বিলিয়নে পৌঁছে যাবে, যার প্রায় ৩০%, ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্প পরিবেশে ইন্সটল করা হবে।
Industrial Internet of Things (IIoT), COVID-19 এর জন্য ভাল হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, স্ব-ড্রাইভিং কার্টের মতো নতুন প্রযুক্তি গুলো গ্রহণ করে হাসপাতাল, মল এবং অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সগুলিতে কোয়ারেন্টাইনে থাকা লোকদের ৯০ পাউন্ড পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করেছে।
রোবোটিক্স সংস্থা এমআই-রোবটস এবং কিরান স্মার্ট এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ মুবিন মল্লিক বলেছেন, "সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুনের কারণে এবং রেস্তোরাগুলির নিয়মিত কর্মীদের ৪০% এর বেশি নিযুক্ত করার নিষেধ রয়েছে, তাই পরিচালকদের স্মার্ট ডিভাইসের প্রয়োজন।
আশা করা হচ্ছে Zhen এর মত ডেলিভারি রোবট গুলো 77.3 বিলিয়ন ডলারের IIoT মার্কেটকে, ২০২৫ সালের মধ্যে ১১০.৬ বিলিয়ন ডলারের মার্কেটে পরিণত করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছে COVID-19, এই মার্কেটের জন্য আশীর্বাদ।
IoT এবং IIoT এর যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি এতে রিস্কও রয়েছে প্রচুর। যেহেতু এই টেকনোলজি গুলোতে প্রচুর ডেটা কালেক্ট করা হয় সুতরাং হ্যাকাররা কোন ভাবে এই বিশাল ডেটার এক্সেস পেলে নির্দিষ্ট কোন কোম্পানিকে দেউলিয়া পর্যন্ত করে দিতে পারে।
রিপোর্ট বলছে মহামারীর পর থেকে এই ধরনের সাইবার হামলা বেড়েছে। প্রতিদিন ছোট বড় কোম্পানি গুলো ৪০০০ এর বেশি বার এটাকের স্বীকার হচ্ছে। জানা গেছে হ্যাকাররা ডেটা গুলোতে এক্সেস পেতে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের টার্গেট করছে তাদের বিভিন্ন ভাবে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে কখনো কখনো কয়েক মিলিয়ন ডলারেরও অফার করছে।
যখন IIoT এর কথা সে তখন বিষয় গুলো আরও জটিল এবং ঝুঁকি পূর্ণ। বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে যেকোনো কোম্পানি। সিঙ্গেল একটি IIoT ডিভাইসের সিকিউরিটি লঙ্ঘিত হলে পুরো, হসপিটাল এয়ার পোর্ট, রেস্টুরেন্ট, শিল্প প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে, সকল তথ্য চলে যেতে পারে হ্যাকারদের কাছে।
মাল্টিপল কম্পোনেন্ট: যখন প্রথম দিকে শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোতে কম্পিউটার ব্যবহার শুরু হয় তখন তারা চাইতো সেগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ রাখতে। কিন্তু বর্তমান সময়ে সেগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকছে না ইন্টারনেট সংযোগে কানেক্ট থাকার জন্য হ্যাকারদের হাতে মুটোতে চলে যাচ্ছে সকল তথ্য।
অনিরাপদ প্রোটোকলঃ ব্যক্তিগত ডিভাইস গুলোর সিকিউরিটি বর্তমানে শক্ত হলেও শিল্প প্রতিষ্ঠানের ডিভাইস গুলো এখনো এতটা নিরাপদ নয়। মানুষের ব্যবহৃত ডিভাইস গুলোতে Two Factor Authentication এর মত সুবিধা গুলো থাকলেও শিল্প প্রতিষ্ঠানের ডিভাইস গুলোতে এই ব্যবস্থা গুলো নেই। শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোতে সাধারণত Modbus, Ethernet/Ip, DNP3, এবং PROFINET এর মত সিস্টেম গুলো ব্যবহৃত হয়।
সিকিউরিটি আপডেটঃ হ্যাকারদের প্রতিহত করতে চান? স্বাভাবিক ভাবে আপনার সিকিউরিটি প্যাচগুলি আপগ্রেড করতে হবে। সাইবার-সিকিউরিটি অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার সিকিউরিটি এজেন্সি (CISA) ব্যবহারকারী এবং প্রশাসকদের তাদের সিস্টেমকে আপডেট করার জন্য অনুরোধ করে। দুর্ভাগ্যক্রমে, এই সময়সাপেক্ষ আপডেটগুলি ইন্সটল করার জন্য সংস্থাগুলিকে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। কিছু পরিবেশে, এটি কেবল অপ্রয়োজনীয় নয়, সম্ভবত বিপজ্জনক। ভাবতে পারেন, জটিল কোন অপারেশনের সময় ২০০০ এর বেশি হসপিটালে সিকিউরিটি আপডেট দিলে, পরিণতি কি হতে পারে?
End Point নিরাপত্তাঃ হ্যাকাররা কর্পোরেট ডেটা অ্যাক্সেস করতে ল্যাপটপ, মোবাইল, ব্যক্তিগত কম্পিউটার এবং আইপ্যাডের মতো এন্ডপয়েন্টগুলিতে আক্রমণ করে। আর রিমোট ওয়ার্কের ফলে এটি আরও সহজ হয়ে যায় তাদের পক্ষে। 2020 সালের জুন পর্যন্ত, বিশ্বব্যাপী 30% এরও বেশি কর্মচারীদের একাউন্ট হ্যাক হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ঝুঁকি নিরসনের অভাবঃ Information Technology (IT) এবং Operational Technology (OT) টিমের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রায়শই IT টিমের লোকেরা OT সম্পর্কে খুব কম জানে এবং OT টিমের লোকেরা IT নিয়ে বেশি ধারণা রাখে না। আর ফলাফল হিসেবে হটাৎ করে সৃষ্ট কোন ঘটনাকে তারা সহজে মোকাবেলা করতে পারে না।
মহামারীর প্রথম নয় মাসে যেভাবে Industrial Internet of Things (IIoT) প্রদর্শিত হয়েছে তা আসলেই অবাক করার মত এটি একই সাথে দক্ষতা, বাড়িয়েছে, ব্যয় এবং শ্রম কমিয়েছে।
ভবিষ্যতে, যখন IoT আমাদের সুবিধার্থে অব্যাহত রাখবে, IIoT নির্বিঘ্নে পুরো সরবরাহ চেইনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করবে। তখন আর ঝুঁকি, নিরাপত্তা, অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।
এটি এই Big Data এর যুগে বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আর এই সকল সিস্টেম গুলো হ্যাকারদের হাত থেকে ১০০% নিরাপদ করতে হবে।
তো আজকে এই পর্যন্তই, পরবর্তী টিউন পর্যন্ত ভাল থাকুন আল্লাহ হাফেজ।
আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।