অ্যাপল এবং M1 চিপ কিভাবে পুরো চিপ ইন্ডাস্ট্রিতে বিপ্লব নিয়ে এসেছে

টিউন বিভাগ আইওএস
প্রকাশিত
জোসস করেছেন
Level 34
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন টেকটিউনস কমিউনিটি? আশা করছি সবাই ভাল আছেন। আজকে আবার হাজির হলাম নতুন টিউন নিয়ে। আজ দীর্ঘদিন আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি আরেকটি বিশ্লেষণাত্মক টিউন। আজকে আলোচনা করব কিভাবে অ্যাপল চিপ ইন্ডাস্ট্রিতে দারুণ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।

শুরুর কথাঃ

বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষ অ্যাপলকে ঘৃণা করে এবং এর পেছনে যথেষ্ট কারণও রয়েছে যেমন, দিন দিন ফোন এবং এক্সারসোরিসের দাম বাড়ানো, রিপেয়ার করার অযোগ্য করে ফোন তৈরি করা, বাজারকে আক্রমণাত্মক ভাবে ধরে রাখা ইত্যাদি। কিন্তু এত কিছুর পরেও অ্যাপল কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অবদান রাখছে। অ্যাপল মোবাইল এবং ডেক্সটপ পিসির কর্মক্ষমতার মধ্যে পার্থক্য কমাতে সফল হয়েছে। অ্যাপল প্রমাণ করে দিয়েছে ARM ভিত্তিক CPU, Intel এর CPU কে বিট করার ক্ষমতা রাখে।

ফোন এবং ডেক্সটপের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হচ্ছে প্রসেসরে। ফোনে যে প্রসেসর গুলো ব্যবহার করা হয়ে সেগুলোকে সাধারণ ভাবে বলা হয় ARM এবং ডেক্সটপে যে প্রসেসর গুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে বলা হয় x86, x86 হতে পারে Intel, AMD ইত্যাদি। ARM কে আরও এফিসিয়েন্ট রাখতে মূলত x86 থেকে কিছু সিম্পল ভাবে ডিজাইন করা হয় এবং x86 কে ডিজাইন করা হয় কিছুটা ভারী কাজের জন্য, যদিও বিষয় গুলো এখন বদলাচ্ছে। আর বিষয় গুলো বদলাচ্ছে এর প্রমাণ হল আজ কাজ আমাদের ফোন গুলো কম্পিউটার থেকেও দ্রুত বিভিন্ন কাজ করে ফেলতে পারে। এবার আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে যদি মোবাইলের প্রসেসর গুলো ল্যাপটপ বা ডেক্সটপের কর্মক্ষমতার কাছাকাছি চলে যায় তবে সেই প্রসেসর গুলো ল্যাপটপে রাখলে কেমন হবে? আমার উত্তর, স্বাভাবিক ভাবেই সেই প্রসেসর গুলো বেশি ক্ষমতার ব্যাটারি পাবে অবশ্যই কাজ করার জন্য যথেষ্ট জায়গা পাবে। কিন্তু অনেকে এটা বিশ্বাস না করলেও এটাই ঘটেছে! আর এটা করে দেখিয়েছে অ্যাপল।

ARM ভিত্তিক M1 চিপ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ম্যাকবুক যার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। M1 চিপ দিয়ে তৈরি ম্যাকবুক গুলোর ইন্টারনেট রিভিউ ছিল দুর্দান্ত। দেখা গেছে দীর্ঘ সময় ব্যবহারের পরেও ম্যাকবুক গুলোর ব্যাটারি ব্যাকআপ অনেক ভাল দিচ্ছিল। ভারী ভারী কাজ যেগুলো উইন্ডোজে করলে মোটামুটি ল্যাগ করে সেখানে ফ্যান ছাড়া M1 ভিত্তিক ম্যাকবুক গুলো কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই করে ফেলতে পারছে। অনেকে এই ম্যাকবুক গুলোকে সাধারণ ভাবলেও এটি ছিল অ্যাপলের অসাধারণ এক উদ্ভাবন।

তো আজকের এই বিশ্লেষণ মূলক টিউনে আমি দেখানোর চেষ্টা করব অ্যাপল কিভাবে ARM ভিত্তিক চিপ দিয়ে ম্যাকবুক তৈরি করতে পেরেছে, এবং অ্যাপলের সাথে Intel কাজ করতে অস্বীকার করে কিভাবে প্রযুক্তি ইতিহাসের সবচেয়ে  ভুলটি করেছে।

Intel এর উৎপত্তি

অ্যাপল কিভাবে এই অসাধ্যকে সাধন করেছে এটা জনতে আপনাকে কিছু ইতিহাস জানতে হবে। Central Processing Units বা CPU কে বলা হয় কম্পিউটারের ব্রেন। আমাদের ডিভাইস গুলো রান করাতে তারা প্রতি সেকেন্ডে কয়েক বিলিয়ন ক্যালকুলেশন করে থাকে। আর এই CPU গুলো মূলত বিভিন্ন ইন্সট্রাকশনকে ফলো করে কাজ গুলো করে। ইন্সট্রাকশন হল ক্ষুদ্রতম bits এর ডেটা যাতে বলা থাকে কম্পিউটার কখন কি করবে। CPU গুলোতে কাজ গুলো করার জন্য কিছু ইন্সট্রাকশন সেট ইনপুট করা হয়।

আর মোবাইল এবং ডেক্সটপ CPU গুলোর মধ্যে যখন লড়াই শুরু হয় তখন থেকেই চেষ্টা করা হচ্ছে কিভাবে এই ইন্সট্রাকশন সেট গুলো আর কার্যকর এবং সহজ করা যায়।

১৯৬৮ সালে Obert Noyce এবং Gordon Moore এর মাধ্যমে Intel মেইনস্ট্রিম কম্পিউটার CPU হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ৭০ এর দশকের শেষের দিকে এবং ৮০ এর দশকের শুরুর দিকে জনপ্রিয় চিপ সিরিজের পর তারা x86 নামটি অর্জন করে। এবং x86 ইন্সট্রাকশন সেট আর্কিস্ট্রাকচার বাজারে আধিপত্য বিস্তার শুরু করল।

১৯৮০ সাল থেকে নির্মাতারা এই x86 গুলোতে জটিল থেকে জটিলতর ইন্সট্রাকশন ইনপুট করা শুরু করে এবং চিপ গুলোর ফিজিক্যাল স্পেস লিমিট করে দেয় তার ফলাফল সরূপ এই চিপ গুলোকে অন্য সিস্টেম গুলোতে ব্যবহার করা একবারেই অসম্ভব হয়ে পড়ে।

ARM এর উৎপত্তি

একই সময় ১৯৮৩ সালে যুক্তরাজ্যের, Acorn Computer নামের একটি কোম্পানি ভিন্ন পথে হাটতে চাইলো। তারা বিষয় গুলো জটিল ভাবে না চিন্তা করে সহজ করে ভাবতে চাইলো। তারা Intel এর বিপরীতে গিয়ে Reduced Instruction Set Computing বা RISC প্রযুক্তি নিয়ে আসলো। সেই সময় কোন কোন বিশেষজ্ঞ নতুন এই প্রযুক্তি নিয়ে বেশ আশাবাদী হয়েছিল এবং কেউ জানিয়েছিল এটি তেমন কাজ করবে না। যাই হোক RISC প্রযুক্তিই ছিল পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত Acorn Risc Machine বা ARM চিপ।

আমরা এই টিউনে RISC বলতে বুঝব সিম্পল সি পি ইউ বা ARM কে এবং CISC বলতে বুঝব কমপ্লেক্স সি পি ইউ বা Intel কে।

Acorn Computer তাদের প্রথম প্রোটোটাইপটি তৈরি করে ১৯৮৫ সালে এবং ১৯৮৭ সালে প্রথম বারের মত ARM বেসড কম্পিউটার তৈরি করে। তখন থেকে অন্য ম্যানুফেকচারদের জন্য চিপ তৈরি করার লাইসেন্স সংগ্রহ করে ARM।

ARM চিপ গুলোর কর্মক্ষমতা কিছুটা কম হওয়ায় তখনো সেগুলো ডেক্সটপ কম্পিউটারের ব্যবহারের উপযোগী ছিল না কিন্তু পোর্টেবল ডিভাইসের ক্ষেত্রে ARM ছিল প্রথম পছন্দ। Nokia থেকে Ericsson সব কোম্পানি এই চিপ ব্যবহার করে ফোন উৎপাদন করা শুরু করে।

ARM চিপগুলো কেন Power Efficient

আমরা যখন কম্পিউটারের CPU গুলোর কথা বলি তখন সেগুলোকে Gigahertz দিয়ে পরিমাপ করি, এর মানে হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে এর ক্লক সাইকেল কত। এই বিষয়টি দুই ধরনের চিপের ক্ষেত্রে ভিন্ন হয়। ARM চিপ গুলোতে প্রতি ক্লক সাইকেলে একটি সিম্পল ইন্সট্রাকশন রান করা হয়, যেখানে Intel চিপ গুলোতে প্রতি ক্লক সাইকেলে একাধিক কমপ্লেক্স ইন্সট্রাকশন রান করানো হয়। ফলাফল হিসেবে Intel সি পি ইউ গুলোতে বেশি পাওয়ার সাপ্লাই দরকার হয়, যার এফিসিয়েন্সি কম এবং প্রচুর তাপ উৎপাদন করে। প্রতিসেকেন্ডে যদি কয়েক বিলিয়ন সাইকেল হয় সেক্ষেত্রে এই পাওয়ার সাপ্লাই এবং তাপের পরিমাণ কেমন হতে পারে, একবার ভেবে দেখুন। অন্যদিকে যেহেতু ARM সিম্পল ইন্সট্রাকশন রান করায় সুতরাং তার পাওয়ার সাপ্লাইও কম লাগে যা বেশ Power Efficient।

তখনকার সময় এই Simple Instruction Set Design বা ARM, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং গ্রাফিক্সের জন্য ছিল এক কথায় দুর্দান্ত! কম্পিউটার গুলো এই প্রযুক্তি ব্যবহার করেই Jurassic Park, Toy Story এবং আরও কিছু গ্রাফিক্স নির্ভর সিনেমা তৈরি করেছিল।  CPU গুলো একই সাথে Nintendo 64 এর মত গেম কনসোল গুলোতেও ব্যবহার করা হতো। কিন্তু তখনো ডেক্সটপ মার্কেট Intel নির্ভরই ছিল।

অ্যাপল চেয়েছিল তাদের ডিভাইসের CPU গুলোকে সিম্পল রাখতে

১৯৯১ সালে Apple, IMB, Motorola এক সাথে PowerPC তৈরি করে যা ছিল Reduced Instruction Set Computer (RISC) নির্ভর। এখানে মজার বিষয় ছিল PowerPC ডেক্সটপ চিপ হলেও এটি Simple Instruction Set দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। ৯০ দশকে অ্যাপল তাদের কম্পিউটার গুলোতে গর্বের সাথে এই চিপ গুলো ব্যবহার করতে থাকে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে iPod এ ব্যবহার করা হয় ARM চিপ, যা পোর্টেবল ডিভাইস হিসেবে দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। ২০০২ সালের দিকে MP3 ডিভাইস থেকে মোবাইল পর্যন্ত ছিল ১ বিলিয়ন ARM চিপ ডিভাইস।

অ্যাপল পোর্টেবল ডিভাইসে ARM ব্যবহার করে এগিয়ে থাকলে ও PowerPC দিয়ে Intel এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছিল না কারণ কার্যকারীতার দিক থেকে কমপ্লেক্স বা CISC সিপিইউ গুলোই এগিয়ে ছিল।

অ্যাপল ডেক্সটপ মার্কেট ধরতে Intel এর সাথে চুক্তিতে আসে এবং ম্যাকবুকে Intel এর প্রসেসর ব্যবহার করা শুরু করে। যখন ২০০৫ সালে Intel এর সাথে Apple এর চুক্তিটি হয় তখন, অ্যাপল বুঝতে পেরেছিল পরবর্তীতে কি আসতে চলেছে এবং ইউজাররা কি চাইবে! তারা তাদের আইফোনের জন্য Intel এর চিপ চেয়েছিল। কিন্তু তখন যা ঘটে তা Intel কোন দিন সেটা ভুলতে পারবে না, Intel এর তৎকালীন CEO Paul Otellini প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেয়, সে ভাবে ফোনের পেছনে এমন চুক্তি কাজে আসবে না হয়তো বা ফোন বিক্রি করে রিসার্চ এবং চিপ তৈরির ব্যয়ই উঠানো যাবে না। সে ভাবতে পারে নি ভবিষ্যতে আইফোন কি হতে যাচ্ছিল এবং সে দারুণ সুযোগটি হারিয়ে ফেলে।

অ্যাপলের মাধ্যমে ARM এর উত্থান

২০০৭ সালে ইতিহাস সৃষ্টিকারী আইফোন প্রথমবারের মত ARM, CPU দিয়ে তৈরি করা হয়। যদি Paul Otellini, অ্যাপলের প্রস্তাবে রাজী থাকতো তাহলে হয়তো অ্যাপল বিজনেসের বিশাল এক অংশের মালিক আজ হতো Intel। যাই হোক Intel কে ছাড়াই Apple তাদের আইফোনের যাত্রা শুরু করেছিল।

২০০৮ সালের অ্যাপল ARM থেকে একটি আর্কিটেকচার লাইসেন্স কিনে নেয় যার মাধ্যমে অ্যাপল নিজে থেকে নিজেদের জন্য চিপ ডিজাইন করার অনুমতি পায়। একই সাথে অ্যাপল কিনে নেয় Low Power চিপ ডিজাইনার PA Semi কে। আর এই Strategic Acquisition টিই অ্যাপলকে Intel এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ করে দেয়।

২০১২ সালে প্রথমবারের মত অ্যাপল সম্পূর্ণ তাদের কাস্টম ডিজাইন সি পি ইউ তৈরি করে যার নাম দেয়া হয় Swift। iPhone 5 এ Swift প্রথমবারের মত ব্যবহার করা হয়। দারুণ ব্যাপার ছিল প্রথম জেনারেশন চিপ হলেও এটি আগের আইফোন থেকে ছিল দ্বিগুণ দ্রুত।

ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি এসেছিল ২০১৩ সালে যখন অ্যাপল 64-bit আর্কিটেকচারের A7 চিপ তৈরি করে। এই চিপটি ব্যবহার করা হয় iPhone 5s এ। অ্যাপল এতটাই দক্ষতা প্রমাণ করে যে তারা ARM এর মুল CPU গুলোকেও ছাড়িয়ে যায়। পরবর্তী ARM ২০১৪ সালে Galaxy s4 এ নিজেদের 64-bit সি পি ইউ এর সূচনা করে। অ্যাপল তখনই বলেছিল যে তারা ডেক্সটপ ক্লাস আর্কিটেকচার তৈরি করছে। তখন মানুষ এটিকে বিশ্বাস না করলেও, আলটিমেটলি কিন্তু সেটাই হয়েছিল।

২০১৪ সালে বিশ্বজুড়ে ছিল ৫০ বিলিয়ন ARM ডিভাইস যেখানে থেকে আইফোন একই সাথে পেয়েছিল আকাশ ছুঁয়া জনপ্রিয়তা এবং পেয়েছিল মিলিয়ন ডলার লভ্যাংশ।

২০১৮ সালে A12 চিপ দেখে মনে হচ্ছিল অ্যাপল হয়তো Intel কে ধরেই ফেলছে। নিচের চার্টটি খেয়াল করুন যেখানে intel পাঁচ বছরে তাদের ফ্ল্যাগ-শিপ পারফরম্যান্স বাড়িয়েছে ২৮% সেখানে অ্যাপল বাড়িয়েছে ৩০০%। আমরা যদি খেয়াল করি তাহলে দেখব Intel এর core i9 10900k চিপটি ছিল ডেক্সটপ চিপ যার 125 watts পাওয়ার দরকার হতো এবং A14 এর দরকার হতো মাত্র 5 watts। একাধিক ইউটিউবাররা এই দুটি চিপের মধ্যে পারফরম্যান্স চেক করে A14 চিপকেই জয়ী করেছে।

Intel কয়েক বছর ধরে উদ্ভাবনের বেশ পিছিয়ে গেছে অন্যদিকে অ্যাপল প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সব উদ্ভাবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

M1 এর মাধ্যমে ডেক্সটপ কম্পিউটারের নতুন রুপ এবং অ্যাপলের বিজয়

এবার আমরা দেখব অ্যাপলের এত বছরের পরিশ্রমের ফল! তাদের যুগান্তকারী উদ্ভাবন এবং Intel কে পরাজিত করার একমাত্র উপায়। ২০২০ সালের নভেম্বরে অ্যাপল নতুন একটি প্রসেসর সবার সামনে উন্মুক্ত করে এবং পিসিতে প্লেস করে। যার নাম দেয়া হয় M1। এতে রয়েছে ১৬ বিলিয়ন Transistors যা M14, যেটি iPhone 12 তে ব্যবহার করা হয়েছে, থেকে ৩৫ গুন বেশি। যেহেতু এটি ARM বেসড CPU সুতরাং নতুন MacBook এ আইফোনে এবং আইপ্যাডের অ্যাপ গুলোও রান করানো যাবে।

নতুন এই ম্যাক বুক রিলিজ থেকে ইন্টানেটে চলছে এটি নিয়ে আলোচনা, রিভিউ। বেশিরভাগ রিভিউ গুলোতেই ইউটিউবাররা এর পারফরম্যান্স নিয়ে বেশ আশ্চর্য হয়েছে।

অ্যাপল যদি তাদের এই উদ্ভাবন চলমান রাখে, আসছে ভবিষ্যতে টেক ইন্ডাস্ট্রি কি পেতে যাচ্ছে আমরা সেটা হয়তো কল্পনাও করতে পারব না। অ্যাপলের যুগান্তকারী উদ্ভাবন নিয়ে Anandtech বলেছে, " অ্যাপল দাবী করেছে M1 বিশ্বের সর্বোচ্চ স্পীডের CPU, যেহেতু তাদের A14 চিপ ইতিমধ্যে Intel এর সকল ডিজাইনকে বিট করেছে এবং AMD এর Zen3 কে পেছনে ফেলেছে, সুতরাং আমরা অ্যাপলের এই দাবীকে মেনে নিতে পারি। AMD ইতিমধ্যে অনেক অগ্রগতি দেখালেও হয়তো অ্যাপলের পাওয়ার এফিসিন্সিকে ধরতে পারবে না। অ্যাপল তাদের উদ্ভাবন ধরে রাখতে পারলে হয়তো x86 তাদের মুকুট হারাবে।

Disruption Technology এবং ARM

Clay Christensen তার The Innovator's Dilemma বইয়ে Disruption innovation নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন নতুন টেকনোলজি গুলো মূলত Disruptive টেকনোলজি গুলোরই অংশ। নতুন প্রযুক্তি মূলত বর্তমান প্রযুক্তি গুলোর মাধ্যমেই তৈরি হয়, দুয়ে মিলে এমন কিছু তৈরি হয় যা আগে কখনো কেউ দেখে নি।

তো খেয়াল করে দেখুন ARM চিপ গুলো ১৯৮০ সাল থেকেই ছিল, সাধারণ ভাবে স্মার্টফোনে ব্যবহৃত হলেও সেটা ডেক্সটপ বা ল্যাপটপে ব্যবহারের উপযোগী হবার সম্ভাবনা কিন্তু ছিল যা অ্যাপল এত যুগ পরে এসে প্রমাণ করল। Steve Jobs সব সময় তার পরবর্তী কম্পিউটার লঞ্চের সময় বলতেন সকল সিস্টেম বা আর্কিটেকচারের লাইফ টাইম দশ বছর।

M1 এর কম্পিটিবিলিটি

সকল রিভিউ থেকে জানা গেছে নতুন চিপের কম্পিটিবিলিটি দুর্দান্ত! এটি বেশ পাওয়ারফুল CPU। বিশেষ করে এটির জন্য ডিজাইন করা নয় এমন অ্যাপ গুলোর পারফরম্যান্সও ছিল চমৎকার।

শেষ কথাঃ

আপগ্রেডেবল র‍্যাম, এক্সটারনাল GPU ব্যবস্থা না থাকলেও নতুন M1 চালিত ম্যাক বুক এক কথায় উদ্ভাবনের দিক থেকে অসাধারণ। এটি ভবিষ্যতে হয়তো আরও উন্নত হবে এতে আরও সুবিধা যুক্ত করা হবে। যেহেতু অ্যাপল এটি করে দেখিয়েছে সুতরাং অন্যরাও এর সাথে প্রতিযোগিতা করতে আরও ভাল কিছু নিয়ে আসার চেষ্টা করবে যা ইউজারদের জন্য অবশ্যই ভাল খবর।

আশা করা যায় ডেক্সটপ প্রযুক্তিতে এত বছর যে গ্যাপটি ছিল সেটা খুব তাড়াতাড়ি দূর হতে চলেছে।

আজকে এই পর্যন্তই, দেখা হবে পরবর্তী টিউনে সে পর্যন্ত ভাল থাকুন। আল্লাহ হাফেজ!

Level 34

আমি সোহানুর রহমান। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 627 টি টিউন ও 200 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 118 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

কখনো কখনো প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত ঘটনা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস