আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ছবি এবং ভিডিও ধারণ এখন স্বাভাবিক একটি বিষয়। তবে, এসব মূল্যবান মুহূর্তগুলোকে সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। আর এসব মূল্যবান তথ্যগুলো সংরক্ষণ করে রাখার জন্য আমরা স্বাভাবিকভাবে হার্ডড্রাইভ, মেমোরি কার্ড, বা পেনড্রাইভের উপর নির্ভর করে থাকি। কিন্তু, কোন ভিডিও, ইমেজ অথবা অন্য কোন ডকুমেন্ট এসব ড্রাইভে সংরক্ষণ করে রাখলে সেটির যথেষ্ট নিরাপত্তা থাকে না। কারণ, এগুলো হারানো বা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
এই কারণে, ক্লাউড স্টোরেজ একটি সুরক্ষিত এবং নির্ভরযোগ্য বিকল্প হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে। আজকের এই টিউনে, আমরা আলোচনা করবো ৫ টি ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ প্রোভাইডার নিয়ে, যেখানে আপনি আজীবন নিরাপদে আপনার ছবি এবং ভিডিও সেভ করে রাখতে পারবেন।
Google Drive হল বিশ্বব্যাপী সর্বাধিক ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস। এটি মূলত গুগলের একটি সার্ভিস, যা ১৫ গিগাবাইট পর্যন্ত ফ্রি স্টোরেজ প্রদান করে। এই সার্ভিসটি ব্যবহার করে আপনি আপনার ছবি, ভিডিও, ডকুমেন্ট, এবং অন্যান্য ফাইল নিরাপদে সংরক্ষণ করতে পারবেন। Google Drive-এর ভালো দিক হলো, এর সুরক্ষিত এবং নির্ভরযোগ্য ইকোসিস্টেম। যেখানে আপনার ফাইলগুলো গুগলের সার্ভারে এনক্রিপ্টেডভাবে সংরক্ষিত থাকে, যার ফলে এগুলো অননুমোদিত অ্যাক্সেস থেকে সুরক্ষিত থাকে।
আপনি সহজেই আপনার Google অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে যেকোন ডিভাইস থেকে এই ফাইলগুলোতে অ্যাক্সেস করতে পারবেন। Google Drive-এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হলো Google Photos-এর সাথে এর ইন্টিগ্রেশন। এছাড়াও, আপনি গুগল ড্রাইভ ব্যবহার করার সময় এখানে আপলোড থাকা ফোল্ডার এবং ফাইল শেয়ারিংয়ের সুবিধা পাবেন। এর ফলে আপনি যেকোন টিম এর কাজ বা বন্ধুদের সাথে দ্রুত ফাইল শেয়ার করতে পারবেন।
Google Drive-এর অ্যাপ্লিকেশনটি iOS, Android, এবং ডেস্কটপে Available রয়েছে, যা আপনার ফাইলগুলোকে সকল প্ল্যাটফর্মে সিঙ্ক করে রাখে। এই ফিচারগুলো Google Drive কে একটি শক্তিশালী এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি ক্লাউড স্টোরেজ সমাধান হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ Google Drive
pCloud হলো একটি সুপরিচিত ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস, যা শুরুতেই আপনাকে ১০ গিগাবাইট ফ্রি স্টোরেজ সার্ভিস প্রদান করে থাকে। তবে, আপনি সহজ কিছু কাজ সম্পন্ন করে আরও অতিরিক্ত স্টোরেজ পেতে পারেন, যা সর্বোচ্চ মোট ১২ গিগাবাইট পর্যন্ত হতে পারবে।
এটির অন্যতম প্রধান ফিচার হলো, এর সিকিউরিটি সিস্টেম। এটি ব্যবহারকারীদের ফাইলগুলোকে ট্রান্সমিশনের সময় এবং সার্ভারে থাকার সময় উভয় ক্ষেত্রেই এনক্রিপ্ট করে রাখে। pCloud Crypto নামে একটি অতিরিক্ত সিকিউরিটি সার্ভিস অফার করে, যেখানে আপনার ফাইলগুলো একটি বিশেষ ক্লায়েন্ট-সাইড এনক্রিপশন দিয়ে সুরক্ষিত থাকে, যার Key শুধুমাত্র আপনার কাছে থাকে। এর ফলে, এমনকি pCloud এর কর্মীরাও আপনার ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারে না।
এছাড়াও, pCloud-এর আরো একটি আকর্ষণীয় ফিচার হলো, এর ফাইল ভার্সনিং এবং রিস্টোর অপশন। এটি আপনার ফাইলের পুরোনো ভার্সনগুলো সংরক্ষণ করে, যা প্রয়োজন হলে আপনি ফিরে পেতে পারেন। এছাড়া, pCloud ব্যবহারকারীরা তাদের ফাইল গুলোকে সরাসরি ক্লাউডে স্ট্রিম করতে পারেন, যার ফলে ভিডিও এবং অডিও ফাইল গুলো সহজেই ম্যানেজ করা যায়।
pCloud-এর অ্যাপ্লিকেশনটি ডেস্কটপ, iOS, Android সহ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে Available এবং এটি ফাইল সিঙ্ক করার সুবিধা দিয়ে থাকে। এর ফলে, আপনি একসাথে একাধিক ডিভাইস থেকে স্মুথলি pCloud এর ফাইলগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়াও এটি আপনাকে অন্যান্য ক্লাউড স্টোরেজ এর মত একটি ফ্লেক্সিবল এবং সিকিউর ক্লাউড স্টোরেজ সলিউশন প্রদান করে থাকে। যার ফলে আপনি খুব সহজেই এখানে আপনার প্রয়োজনীয় ফটো, ভিডিও কিংবা অন্যান্য ডকুমেন্টগুলো আপলোড করে রাখতে পারবেন।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ Slack
MediaFire একটি জনপ্রিয় ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস, যা ব্যবহারকারীদের ১০ গিগাবাইট ফ্রি স্টোরেজ প্রদান করে। তবে আপনি এখানে বেশ কিছু সহজ উপায়ে অতিরিক্ত স্টোরেজও অর্জন করে নিতে পারবেন। MediaFire এ সহজেই ফাইল আপলোড, শেয়ার, এবং স্টোরেজের জন্য ব্যবহার করা যায়। আর এটি পার্সোনাল কিংবা প্রফেশনাল উভয় ধরনের কাজের জন্যই ব্যবহার করা যায়।
MediaFire-এর ইন্টারফেস অত্যন্ত ইউজার ফ্রেন্ডলি। ফারসি সাথে এটি অনেক দ্রুত ফাইল আপলোডের জন্য ও বিশেষভাবে পরিচিত। এ কারণেই এটি ব্যবহার করে অনেকেই বড় আকারের কোন ফাইল ও ফোল্ডার শেয়ারিং এর জন্য ব্যবহার করে। যেখানে অনেকেই তাদের ফাইলগুলো আপলোড করে সেটির লিংক অন্য কাউকে শেয়ার করে থাকেন। আর এটি ব্যবহার করে সেই ফাইল গুলোকে জিপ ফাইল হিসেবে একসাথে ডাউনলোড করার ও অপশন থাকে।
MediaFire অ্যাপ্লিকেশনটি iOS এবং Android এর মত প্লাটফর্ম গুলোর জন্য Available রয়েছে। যার ফলে ব্যবহারকারীরা মোবাইল ডিভাইস থেকেই সরাসরি ফাইল আপলোড এবং খুব সহজেই ডাউনলোড করার সুবিধা নিতে পারেন। এই Free Cloud Storage টি মূলত কোন ফাইল শেয়ারিং কোন ফাইলকে দ্রুত অ্যাক্সেসের জন্য বেশি ব্যবহার করা হয়।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ MediaFire
OneDrive হল মাইক্রোসফটের একটি জনপ্রিয় ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস, যা ব্যবহারকারীদের ৫ গিগাবাইট ফ্রি স্টোরেজ প্রদান করে। OneDrive মূলত উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের জন্য ক্লাউড স্টোরেজ বলা যায়। কারণ, এটি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে সরাসরি ইন্টিগ্রেটেড।
এটি ব্যবহার করে আপনি সহজেই আপনার ফাইলগুলোকে ক্লাউডে আপলোড করতে পারেন এবং যেকোনো ডিভাইস থেকে অ্যাক্সেস করতে পারেন। এটি বিশেষ করে Microsoft Office 365-এর সাথে ভালভাবে কাজ করে, যেখানে আপনার ডকুমেন্ট, স্প্রেডশিট, এবং প্রেজেন্টেশনগুলোকে সরাসরি OneDrive-এ সংরক্ষণ করা যায় এবং অনলাইনেই এডিট করা যায়।
ওয়ান ড্রাইভ এর মাধ্যমে ফাইল শেয়ারিংও খুবই সহজ। আপনি যেকোনো ফাইল বা ফোল্ডারের জন্য শেয়ারিং লিঙ্ক তৈরি করতে পারেন এবং পাসওয়ার্ড প্রোটেকশন এবং এক্সপায়ারি ডেটের মতো সিকিউরিটি ফিচার যোগ করতে পারেন।
অন্যান্য ক্লাউড স্টোরেজ এর মত OneDrive-এর অ্যাপ্লিকেশনটি ও iOS, Android, এবং ডেস্কটপে Available রয়েছে। এটি আপনার ফাইল গুলোকে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সিঙ্ক রাখে। এর ফলে আপনি একাধিক ডিভাইস থেকে একই সাথে OneDrive ব্যবহার করার সুযোগ পাবেন। এই ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে OneDrive একটি নির্ভরযোগ্য ক্লাউড স্টোরেজ হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশেষ করে যারা মাইক্রোসফটের সার্ভিস ব্যবহার করে থাকেন, তাদেরকে এই ক্লাউড স্টোরেজ এর সার্ভিসটি বেশি ব্যবহার করতে হয়।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ OneDrive
Dropbox একটি জনপ্রিয় ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস, যা ব্যবহারকারীদের তাদের ফাইল গুলো সহজে সংরক্ষণ ও শেয়ার করার সুযোগ দেয়। এর ফ্রি ভার্সনে, Dropbox 2GB স্টোরেজ স্পেস দিয়ে থাকে, যা ছোট এবং মাঝারি আকারের ফাইল, বিশেষ করে ইমেজ এবং ভিডিও সেভ করার জন্য ভালো হতে পারে। যদিও অনেক ব্যবহারকারীর কাছে এই স্পেসটি অনেক কম মনে হতে পারে, তবে ব্যবহারকারীরা চাইলে বিভিন্ন উপায়ে এই স্পেস বাড়িয়ে নিতে পারেন। যেমন, ব্যবহারকারীরা অন্যদেরকে রেফার করার মাধ্যমে অতিরিক্ত স্ট্রোরেজ অর্জন করে নিতে পারবেন।
Dropbox-এর ইন্টারফেস সহজ এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি, যা নতুন ব্যবহারকারীরা ও খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। যেখানে ফাইলগুলো অটোমেটিক্যালি সিঙ্ক হয়, ফলে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন ডিভাইস থেকে সহজেই তাদের ডেটা অ্যাক্সেস করতে পারেন। তাছাড়া, ফাইল গুলো এক্সেস করতে ইন্টারনেট কানেকশন না থাকলেও, Dropbox-এর অফলাইন ফিচারটি ব্যবহার করে সেগুলো অফলাইনে অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
Dropbox-এর একটি বড় সুবিধা হল এর পাওয়ারফুল শেয়ারিং এবং কোলাবোরেশন টুলস। যেখানে আপনি আপনার ফাইল বা ফোল্ডারগুলি নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে শেয়ার করতে পারেন এবং তাদের সাথে সরাসরি কোলাবোরেশন করতে পারেন। এছাড়াও, Dropbox-এর ফাইল রিকভারি এবং ভার্সন হিস্টরি ফিচার ব্যবহার করে আপনি দুর্ঘটনাবশত ডিলিট করা বা পরিবর্তিত ফাইল গুলো রিকভারি করতে পারেন।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ Dropbox
ফাইল সংরক্ষণের জন্য সঠিক ক্লাউড স্টোরেজ প্রোভাইডার সিলেক্ট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, যখন আপনি আপনার মূল্যবান ইমেজ ও ভিডিও গুলো নিরাপদে কোথাও সংরক্ষণ রাখতে চান। আর আপনার এ ধরনের সমস্যার জন্য রয়েছে Dropbox, Google Drive, Microsoft OneDrive, pCloud, এবং MEGA-এর মতো ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস।
তবে এসব প্রত্যেকটি সার্ভিস প্রোভাইডারের কিছু সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই আপনার পার্সোনাল বা প্রফেশনাল যেকোনো কাজের জন্য আপনার চাহিদা অনুযায়ী এসব ফ্রি ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিসগুলোর মধ্য থেকে যে কোন একটি বেছে নিতে পারেন। আর এসব ক্লাউড স্টোরে যে আপনার ছবি, ভিডিও অথবা অন্য যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলো আপলোড করে রাখার মাধ্যমে সেগুলোকে যেকোনো সময় যে কোন ডিভাইস থেকে একাউন্টে লগইন করে অ্যাক্সেস করতে পারবেন।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)