ইন্টারনেট সংযুক্ত ডিভাইস ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে আপনি স্বাভাবিকভাবেই আইপি এড্রেস নিয়ে অনেক কথা শুনে থাকবেন। অনেক কারণেই বিভিন্ন জন এমনটি পরামর্শ দিয়ে থাকেন যে, নিজের আইপি এড্রেস যতটা সম্ভব ইন্টারনেট থেকে লুকিয়ে রাখতে হবে।
যদিও আপনার কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সাথে যোগাযোগের জন্য অবশ্যই একটি আইপি অ্যাড্রেসের প্রয়োজন। কারণ, ওয়েবসাইট গুলো তাদের ডেটা কোথায় পাঠাবে, সেটি জানার জন্য আপনার কম্পিউটারের আইপি এড্রেস ব্যবহার করে। কিন্তু, কোনভাবে কি আপনার আইপি এড্রেস দিয়ে আপনার লাইভ লোকেশন খুঁজে পাওয়া সম্ভব?
আপনি এই মুহূর্তে যেখানে অবস্থান করছেন, আপনার ডিভাইসের আইপি অ্যাড্রেস দিয়ে কি সেই অবস্থান দেখা যাবে? আসুন তাহলে আলোচনা করা যাক যে, একটি আইপি এড্রেস কী এবং এটি আপনার সম্পর্কে কী ধরনের তথ্য প্রকাশ করে?
IP Address এর পুরো নাম হল Internet Protocol Address। যদিও এই সম্পূর্ণ নামটির মাধ্যমেই এমনটি প্রকাশ পায় যে, এটি আসলে কীভাবে কাজ করে। এটি হলো এমন একটি এড্রেস, যা আপনার কম্পিউটারে ডেটা পাঠানো এবং গ্রহণ করার ক্ষেত্রে একটি পরিচয় নির্দেশকারী হিসেবে কাজ করে।
ইন্টারনেটে এ বিষয়টিকে আপনি বাস্তবের একটি বাড়ির এড্রেস কিংবা মোবাইল নাম্বারের সাথে তুলনা করতে পারেন। একইভাবে ইন্টারনেটে প্রতিটি ওয়েবসাইট, কম্পিউটার এবং সার্ভার এর একটি ইউনিক আইপি অ্যাড্রেস রয়েছে। IP Address সম্পর্কে সহজভাবে বলতে গেলে, আপনি যখন ইন্টারনেটের কোন একটি ওয়েবসাইট লোড করতে চান, তখন আপনার কম্পিউটার সেই কনটেন্ট এর জন্য ওয়েবসাইটের আইপি অ্যাড্রেস একটি রিকোয়েস্ট পাঠায়। এরপর, ওয়েবসাইটটি আপনার কম্পিউটারের আইপি অ্যাড্রেসে সেই রিকোয়েস্ট এর বিপরীতে প্রাপ্ত ডেটা গুলো ফেরত পাঠায়।
যদিও ক্ষেত্রবিশেষে একটি আইপি অ্যাড্রেস একজন ব্যবহারকারী সম্পর্কে অনেক তথ্য প্রদান করতে পারে। তবে, আপনার জন্য অন্য কোন ব্যক্তির আইপি এড্রেস দেখে, তা থেকে তথ্য বের করা কষ্ট-সাধ্য হবে।
ধরা যাক, আপনার কাছে অন্য কারো একটি আইপি অ্যাড্রেস রয়েছে। এখন, আপনি কি কোন টুলস ব্যবহার না করেই এই আইপি এড্রেস থেকে তাদের অবস্থান বের করতে পারবেন?
আইপি এড্রেসের এই নাম্বারের সেট, আপনাকে কাজ করার জন্য আসলে কিছুই দিবে না। এটি কোন ফোন নাম্বারের মত নয় যে, যেখানে আপনি একটি দেশের কোড দ্বারা চিহ্নিত করতে পারবেন, এটি কোন দেশ থেকে এসেছে।
আইপি এড্রেস গুলো সাধারণত দেশের পরিবর্তে বিভিন্ন কোম্পানি গুলোকে বরাদ্দ করা হয়। তাই, আপনি আইপি এড্রেসটি কোন দেশের তা বলতে পারবেন না, যদি না আপনি কোম্পানির সাথে পরিচিত না হন। কারণ, এখানে শুধুমাত্র সংখ্যার স্ট্রিং দেখে একটি অবস্থান ট্রেস করা কঠিন।
আপনি যখন একটি IP Lookup Tool এর সাহায্য নিবেন, তখন আপনি এটি সাহায্যে কিছু তথ্য বের করতে পারবেন। যদিও এর মাধ্যমে সেই ব্যবহারকারী কোথায় আছে তা সঠিকভাবে বের করা না গেলেও, ব্যবহারকারী কোথায় আছে তার একটি অনুমান দেয়। আইপি লুকাপ টুলের মাধ্যমে আপনি একটি আইপি এড্রেস ব্যবহার করে সর্বোচ্চ যে স্তরের লোকেশন পেতে পারেন তা হল, তার দেশ বা শহর। আপনি এটি ব্যবহার করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট রাস্তা কিংবা বাড়ির ঠিকানা পেতে পারেন না।
আপনার আইপি অ্যাড্রেস আপনার সম্পর্কে কী তথ্য প্রকাশ করে, এটি সম্পর্কে আপনি যদি খুঁজে বের করতে আগ্রহী হন, তাহলে আপনি অনলাইনে প্রচুর টুলগুলো থেকে একটি বেছে নিতে পারেন। এগুলো আপনাকে জানায় যে, সেগুলো আপনার আইপি এড্রেস থেকে কী তথ্য প্রকাশ করতে পারে।
এই কাজের জন্য আপনি “What is My IP Address” ওয়েবসাইট টি ব্যবহার করতে পারেন। যেখানে আইপি এড্রেস দিয়ে সার্চ দিলেই, আপনার ডিভাইস এবং আপনার সম্ভাব্য লোকেশন সম্পর্কে কিছু তথ্য দেখা যেতে পারে।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ What is My IP Address
যদিও আপনার আইপি এড্রেস থেকে সরাসরি আপনার লাইভ লোকেশন বের করা যায় না, তবে কিছু কৌশল ব্যবহার করে চাইলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আপনার লোকেশন খুঁজে পেতে পারে। তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক, আপনার ডিভাইসের আইপি এড্রেস ইন্টারনেটে আপনার সম্পর্কে কেমন তথ্য প্রকাশ করে থাকে।
অনেক ব্যবহারকারী ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় তাদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে থাকেন। আর এ কারণেই, ওয়েবসাইটগুলো সেই ব্যবহারকারী সম্পর্কে ভুল তথ্য পেতে পারে। তাহলে কোন কোন উপায়ে একটি ওয়েবসাইটকে আপনার আইপি অ্যাড্রেস সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া যেতে পারে?
আপনি যখন একটি ভিপিএন ব্যবহার করেন, তখন আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিক গুলো একটি মধ্যস্থতাকারী সার্ভারের মাধ্যমে রুট করা হয়। অর্থাৎ, কোন ওয়েবসাইটে পাঠানো আপনার রিকোয়েস্টটি প্রথমে সেই ভিপিএন সার্ভারে যায় এবং তারপর সেই সার্ভার থেকে মূল সার্ভারে রিকোয়েস্টটি চলে যায়।
যাইহোক, এই সার্ভারটি আপনার Real IP Address হাইড করে রাখে এবং আপনাকে একটি নতুন এবং Fake IP Address প্রদান করে। এক্ষেত্রে ওয়েবসাইটগুলো যখন আপনার আইপি অ্যাড্রেসটি দেখে, তখন তারা মূলত একটি ভুয়া এড্রেস দেখতে পায়, যা আপনার আসল লোকেশন প্রকাশ করেনা কিংবা আপনার ডিভাইস সম্পর্কে তারা জানতে পারে না। যেখানে সেই রিকোয়েস্টের বিপরীতে ভিপিএন সার্ভারটি পরিচিতি পায়।
প্রক্সি সার্ভারগুলো ও ভিপিএন সার্ভারের মতো কাজ করে। এক্ষেত্রে এটিও আপনার ইন্টারনেট ট্র্যাফিক গুলোকে একটি সার্ভারের মাধ্যমে রুট করে থাকে। এটিও আপনার আইপি এড্রেস লুকিয়ে রাখতে এবং ওয়েবসাইট গুলোকে আপনার সম্পর্কে ভুল তথ্য সরবরাহ করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
টর হল এমন একটি অ্যাপ্লিকেশন, যা আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিককে এনক্রিপ্ট করে এবং এটিকে একাধিক সার্ভারের মাধ্যমে রুট করে মূল সার্ভারে প্রেরণ করে। আপনার IP Address লুকিয়ে রাখতে এবং ওয়েবসাইট গুলোকে ভুল IP Address প্রদান করতে টর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।
যদি উপরে আলোচনা করা কথা সত্য হয় এবং সত্যিই আইপি অ্যাড্রেস হাইড করে ইন্টারনেট ব্রাউজ করা যায়, তাহলে পুলিশ কীভাবে জানতে পারে যে, কোন অপরাধী সেই নির্দিষ্ট বাড়িতে আছেন। যাইহোক, হ্যাকার এবং অবৈধ কাজের সাথে জড়িত অনেক ব্যক্তির সম্পর্কে প্রচুর গল্প রয়েছে, যেখানে পরবর্তীতে তারা পুলিশ দ্বারা ধরা পড়ে এবং তাদের গ্রেফতার করা হয়।
এই বিষয়টি সংক্ষেপে বলতে গেলে, এর কারণ হলো, আপনি যে ISP ব্যবহার করেন, তাতে আপনার কার্যকলাপ ট্র্যাক করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য থাকে। রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আপনি তাদেরকে আপনার নাম, এড্রেস এবং প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো দিতেন। এক্ষেত্রে, কোন একটি অপরাধ সংঘটিত হলে আইএসপি কোন একটি অপরাধের এক্টিভিটি খুঁজে বের করার জন্য এই তথ্য ব্যবহার করতে পারে।
আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন যখন কোন একটি বেআইনি কাজের লোক গুলোকে ধরতে চায়, তখন প্রথমে তারা সেটির সাথে সম্পর্কিত একটি IP Address সংগ্রহ করবে। তারপরে, তারা সেই IP Address এর মালিকের ISP এর সাথে যোগাযোগ করবে এবং তার বাড়ির এড্রেস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। এক্ষেত্রে প্রমাণ যথেষ্ট শক্তিশালী হলে, আইএসপি গুলো আইনগতভাবে সেই ব্যবহারকারীর সম্পর্কে তথ্য প্রদান করতে বাধ্য হবে।
এছাড়াও, হ্যাকিং এর ঘটনায় কিংবা ভিপিএন ব্যবহার করলে যেহেতু সেই ব্যবহারকারী মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ভিপিএন সার্ভারের আইপি এড্রেস ব্যবহার করে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সাথে যুক্ত হয়েছিল, তাই এমন ঘটনায় সেই ভিপিএন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করা হতে পারে। তারপর, তাদের কাছে জমা থাকা তথ্য ব্যবহার করে আসল ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছানো সম্ভব।
আর হ্যাকিং এর ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তারা হ্যাকিংয়ের প্রমাণ খুঁজে পেতে হ্যাক করা ডিভাইস এবং সিস্টেমগুলো বিশ্লেষণ করে। যদিও ভিপিএন গুলো হ্যাকারদের খুঁজে বের করার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, তবে তারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তাদের কৌশলকে সম্পন্ন বাইপাস করতে পারে না। তাদের কাছে বিভিন্ন কৌশল ও প্রযুক্তি রয়েছে, যা তারা হ্যাকারদের ট্র্যাক করতে এবং ধরতে ব্যবহার করতে পারে, এমনকি তারা ভিপিএন ব্যবহার করলেও।
হ্যাঁ, একটি ডায়নামিক আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহারকারীদের খুঁজে বের করা কঠিন করে তোলে। কিন্তু, এটি একেবারে অসম্ভব নয়।
একটি ডায়নামিক আইপি এড্রেস হলো, একটি ডিভাইস কে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া একটি আইপি অ্যাড্রেস। আর এই সময়ের পরে, আইপি এড্রেসটি অন্য ডিভাইসে পুনরায় দেওয়া হয় এবং সেই ডিভাইসে আবার নতুন একটি IP Address প্রদান করা হয়।
যদিও অনেকেই সিকিউরিটির জন্য Dynamic IP Address ব্যবহার করতে পারে, তবে ডায়নামিক আইপি অ্যাড্রেস নিয়মিত পরিবর্তিত হয়, যা কিছু অ্যাপ্লিকেশন বা সার্ভিস গুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে; যেগুলো মূলত নির্দিষ্ট আইপি এড্রেসের উপর নির্ভর করে।
একটি IP Address ইন্টারনেটে আপনার ডিভাইসের পরিচয় প্রদানকারী হিসেবে কাজ করলেও, এটি ইন্টারনেটে আপনার ফিজিক্যাল লোকেশন সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য দেয় না। আপনি যদি কোন শহর এলাকায় থাকেন, তাহলে আপনার আইপি এড্রেস দিয়ে একজনের পক্ষে আপনার ঠিকানা বের করা কিংবা আপনাকে ট্র্যাক করা প্রায় অসম্ভব।
একটি আইপি অ্যাড্রেস আপনার আইএসপি, আপনার শহর বা দেশ এবং আপনার ডিভাইসের ধরন এর মত তথ্যগুলো ইন্টারনেটে প্রকাশ করতে পারে। এর বাহিরে, এটি আপনার লাইভ ফিজিক্যাল লোকেশন দিতে পারে না। অন্যদিকে আপনি যদি একটি ভিপিএন ব্যবহার করেন, তাহলে ওয়েবসাইটগুলো তো আপনার এই আইপি ব্যবহার করে কোন তথ্যই জানতে পারেনা।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 12 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)