বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের উদ্ধৃতি দিয়ে টিউনটি শুরু করছি। সম্প্রতি দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের প্রথম প্যারাগ্রাফটি নিম্নরূপঃ
The value of unlicensed softwares installed on personal computers in Bangladesh reached a record $137 million in 2010, a study revealed. The Global Software Piracy Study 2010 by Business Software Alliance (BSA), which evaluates the global state of software piracy, found that 90 percent of the softwares installed on PCs in Bangladesh are pirated.
অর্থাৎ, বাংলাদেশের কম্পিউটারসমূহের ৯০ শতাংশই পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়। এ সংক্রান্ত এই সংবাদের পুরোটা পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
বাংলাদেশে পাইরেটেড সফটওয়্যারের জনপ্রিয়তা আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। কিন্তু বহিঃর্বিশ্বের মানুষের কাছে কিন্তু মনে হতেই পারে বাঙালি জাতি চুরি করে অভ্যাস তাই সবাই পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করে। কিন্তু বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহারের পেছনে দু'রকমের কারণ থাকতে পারে। এক, সফটওয়্যার প্রয়োজন কিন্তু কিনে ব্যবহারের সাধ্য নেই। দুই, অন্য কারণে বাধ্য হয়ে পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করা। প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের ক্ষেত্রে মূল কারণ কোনটি?
বাংলাদেশের মানুষ জেনুইন সফটওয়্যার কিনে ব্যবহারের ক্ষমতা রাখে না এ কথা সত্য। মেনে নিতেই হবে বাংলাদেশে যদি সব জেনুইন সফটওয়্যার চালাতে হতো তাহলে আজ দেশে এতো এতো কম্পিউটার ব্যবহারকারী থাকতো না। কিন্তু আমরা কেন পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করি? এটা কি আমাদের ইচ্ছের উপর নির্ভর করে? নাকি আমরা বাধ্য হয়ে পাইরেটেড সফটওয়্যার চালাচ্ছি? আসুন প্রথমে কম্পিউটারের ভিত্তি বা অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার নিয়ে আলোচনা করা যাক।
বেশিরভাগ মানুষই পাইরেটেড উইন্ডোজ ব্যবহার করে থাকেন কারণ হয় তারা উইন্ডোজে অতি অভ্যস্ত অথবা বাধ্য হয়ে উইন্ডোজ ব্যবহার করেন। অন্যদিকে বিনামূল্যের লিনাক্সে যেসব কাজ করা যায় তা প্রায় সব শ্রেণীর সাধারণ মানুষের জন্যই যথেষ্ট বলা যায়। একজন সাধারণ পিসি ব্যবহারকারী কম্পিউটারে যেসব কাজ করে থাকেন তার প্রায় সবই লিনাক্সে করা যায়। কিন্তু তবু মানুষ লিনাক্সে আসতে না চাওয়ার অল্প কয়েকটি কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উইন্ডোজ ছাড়া কাজ না চলা। নিজের উদাহরণগুলো লক্ষ্য করুনঃ
যারা ল্যাপটপ দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে সম্প্রতি ওয়াইম্যাক্সের জনপ্রিয়তা বেশ বেড়েছে। না বাড়ার কোনো কারণ নেই। মাত্র কিছু টাকার পার্থক্যের জন্য কেউ ২.৫ জেনারেশনের ইন্টারনেট ব্যবহার করবে না। তাছাড়া কিছু সমস্যার কথা বাদ দিলে ওয়াইম্যাক্স কোম্পানিগুলো মোটামুটি ভালোই সেবা দিচ্ছে। কিন্তু ল্যাপটপে ব্যবহারকারীরা পোর্টেবিলিটির কথা ভেবে সাধারণতই ছোট ডঙ্গল বা ইউএসবি মডেমের প্রতি ঝুঁকেন। আর সমস্যাটা এখানেই। এসব ইউএসবি মডেম লিনাক্স সাপোর্ট করে না। তাই এখানে একজন ব্যবহারকারী যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে তিনি পাইরেটেড উইন্ডোজ ব্যবহার করবেন না, জেনুইন উইন্ডোজ কেনার সাধ্য নেই তাই বলে পাইরেটেড ব্যবহার করতেন কিন্তু লিনাক্সে তার কাজ চলে যায় তাই তিনি লিনাক্স ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু তিনি আটকে যাচ্ছেন ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে। তিনি ওয়াইম্যাক্স ব্যবহার করতে পারছেন না লিনাক্সে। সুতরাং, রীতিমতো বাধ্য হয়েই তাকে পাইরেটেড উইন্ডোজ ব্যবহার করতে হচ্ছে।
যেকোনো কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে ঢুকলেই দেখবেন তারা মাইক্রোসফট অফিস স্যুট শেখাচ্ছে। কোনো সন্দেহ নেই তাদের অফিস কপিটিও জেনুইন নয়, পাইরেটেড ভার্সন। আমার কথা হচ্ছে, কেন? বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ অরিজিনাল সফটওয়্যার কিনে ব্যবহারের সাধ্য রাখেন না তাই বলে চুরি করে ব্যবহার কেন করতে হবে? যদি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অফিস আদালতেও বিনামূল্যের ওপেন-অফিস ব্যবহার শুরু করে, কেউ কি না করবে? অন্তত ওপেন-অফিস বা লোটাস সিম্ফোনি দিয়ে ওয়ার্ড প্রসেসিং, স্প্রেডশিট, প্রেজেন্টেশন ইত্যাদির কাজ বেশ ভালোভাবেই করা যায়।
তবে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড দিয়ে তৈরি করা অনেক ফরম্যাটিংসহ কোনো ডকুমেন্ট ওপেন-অফিসে প্রায়ই ঝামেলা করে। একই ঘটনা উল্টোভাবেই ঘটে। তাই যারা অফিস কিনতে পারেন না, তারা যে স্বেচ্ছায় বিনামূল্যের লিগ্যাল সফটওয়্যার ব্যবহার করবেন সেই উপায়ও আমরাই রাখছি না। আমাদের দেশের ৯০ শতাংশ কম্পিউটার পাইরেটেড সফটওয়্যারে বোঝাই হবে না তো কী হবে?
এই পোস্ট লেখার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে আমি নিজে পাইরেটেড উইন্ডোজ ব্যবহার করে শান্তি পাচ্ছি না তাই লিনাক্সে যাবার চিন্তা করছি। আমি বহুদিন ধরেই উবুন্টু ব্যবহার করে আসছি। কিন্তু ল্যাপটপে কিছুতেই উবুন্টু চালাতে পারছি না কেবল মাত্র এই কিউবি ইউএসবি মডেম সাপোর্ট করছে না বলে। খুঁজলে এমন আরো অনেক আগ্রহী লিনাক্স ব্যবহারকারী পাবেন যারা তাদের ডঙ্গল সাপোর্ট করে না বলে লিনাক্স চালাতে পারছেন না।
তাই তাদের মতো আমাকেও রীতিমতো বাধ্য হয়েই পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হচ্ছে। তো বলুন কীভাবে আমার দেশের মানুষ পাইরেটেড সফটওয়্যার ব্যবহার না করে থাকবে?
কেবল বাংলালায়ন ও কিউবি যদি কোনো ভাবে লিনাক্সের জন্য ড্রাইভার বা এমন কোনো পদ্ধতি তৈরি করে যাতে করে লিনাক্সে মডেমগুলো চলে, তাহলেই তারা লিনাক্সের হাজার হাজার ব্যবহারকারীকেই কেবল সাহায্য করবে না বরং দেশকে সফটওয়্যার পাইরেসির দুর্নাম থেকে বাঁচাতেও বেশ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারবে। তাই এই দুই কোম্পানির প্রতি অনুরোধ করছি, লিনাক্সে তাদের মডেম কাজ করানোর কোনো উপায় বা ড্রাইভার তৈরি করার জন্য। পাশাপাশি যারা অ্যাডভান্সড ব্যবহারকারী আছেন তাদের প্রতিও অনুরোধ রইলো এই ডঙ্গলগুলো লিনাক্সে চালানোর কোনো উপায় বের করার জন্য চেষ্টা করতে।
সবশেষে যারা বাংলালায়ন বা কিউবির ইউএসবি মডেম ব্যবহার করতে না পেরে লিনাক্স থেকে দূরে সরে আছেন এবং বাধ্য হয়ে পাইরেটেড উইন্ডোজ ব্যবহার করছেন তারা এই পেজে লাইক করুন। এতে করে আমরা অন্তত কিউবি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবো। কেননা, কিউবি ফেসবুকে বেশ সক্রিয় ভুমিকা রাখে।
আমি মো. আমিনুল ইসলাম সজীব। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 83 টি টিউন ও 201 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 7 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমিও এই ওয়াইম্যাক্স এর কারণে লিনাক্সে পুরোপুরি আসতে পারছিনা।পাইরেটেড সফটওয়ার ব্যবহার করতে আমারো আর ভাল লাগে না। 😡 ক্রাক ক্রো,সিরিয়াল খুজো না পেলে নোটিফিকেশান এটা-সেটা দুনিয়ার ভেজাল।ব্রডব্যান্ড দিয়ে কিছুদিন লিনাক্স ব্যবহার করছিলাম।খুবেই ভাল কেটেছিল সময়। 🙄 ওয়াইম্যাক্স কোম্পানীগুলোর প্রতি আহ্বান যেন অতিদ্রুত তারা লিনাক্স উপযোগী মডেম বাজারে ছাড়ে।ধন্যবাদ পোস্টের জন্য। 🙂