বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আশাকরি সকলেই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। বর্তমান সময়ে এক মুহূর্ত ও চলে না ইন্টারনেট ছাড়া। বর্তমানে ইন্টারনেট মানুষের জীবনে একটি নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মতো হয়ে গিয়েছে। এবার আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে, ইন্টারনেট আমাদের জীবনকে কতটা সহজ করে দিয়েছে?
আজ আমরা এই টিউনে আলোচনা করব ইন্টারনেট আমাদের জীবনকে এবং জীবনধারাকে কতটা পরিবর্তন করে দিয়েছে। ইন্টারনেট সম্পর্কে জানতে হলে আমাদেরকে প্রথমে জানতে হবে ইন্টারনেট কাকে বলে? ইন্টারনেট হলো পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত অসংখ্য নেটওয়ার্ক এর সমন্বয়ে গঠিত নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা। অন্যভাবে বলতে গেলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত ব্যবস্থার নামই ইন্টারনেট।
বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবস্থায় পৃথিবী একটি গ্রামের মতো হয়ে গিয়েছে। কোন গ্রামে যেমন কোন তথ্য প্রকাশিত হলে তা মুহূর্তে সবার মুখে জানাজানি হয়ে যায় তেমনি ইন্টারনেট ব্যবস্থা বিশ্বের যেকোন প্রান্তে খবর যে কেউ রাখতে পারে। যেটিকে আমরা বিশ্বগ্রাম বা গ্লোবাল ভিলেজ বলে থাকি। পুরো পৃথিবী যেন একটি গ্রামের মতোই মনে হয় ইন্টারনেট ব্যবস্থায়। বিশ্বগ্রাম বলতে এমন একটি ধারণা বা বিষয়কে বুঝায় যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন পরস্পরের সাথে সহজে গণমাধ্যম ও ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগের মাধ্যমে যুক্ত থাকে। তথ্যের এই আদান-প্রদান বিশ্বকে এতটাই কাছে নিয়ে এসেছে যে পুরো পৃথিবী এখন একটি গ্রামের মতো হয়ে গিয়েছে। বর্তমান সময়ে আমরা কিন্তু একটি গ্লোবাল ভিলেজ এ বাস করছি।
গ্লোবাল ভিলেজ হচ্ছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর এমন একটি পরিবেশ যেখানে দূরবর্তী স্থানে অবস্থান করেও পৃথিবীর সকল মানুষ এক সমাজে বসবাস করার সুবিধা পায়। অন্যভাবে বলতে গেলে গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্ব গ্রাম হচ্ছে এমন একটি ধারণা যা ইলেকট্রনিক যোগাযোগের মাধ্যমে গোটা পৃথিবীকে একটি গ্রামে পরিণত করে।
বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবস্থার সুবিধার কথা বলতে গেলে শেষই করা যাবে না। শিক্ষা, বিনোদন, গবেষণা, অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে প্রায় সকল কাজই করা সম্ভব হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। মোট কথা বলতে গেলে ইন্টারনেট ব্যবস্থার ফলে পুরো পৃথিবীর প্রায় সকল কার্যদি সম্পাদনের জন্য এটি ব্যবহার হচ্ছে। যার মধ্যে কয়েকটি বিষয়ে আপনাদেরকে জানানো দরকার।
১. মুহুর্তের মধ্যে বিশ্বের যেকোন স্থানের যে কোন ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করা।
২. ইন্টারনেট ব্যবস্থায় যাবতীয় ব্যবস্থাপনা খরচ কমে যাওয়া।
৩. ঘরে বসেই ব্যবসা-বাণিজ্য অর্থাৎ পণ্য কেনাবেচা করা যায়।
৪. বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
৫. ঘরে বসেই অনলাইনে বিশ্বের নামকরা সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা গ্রহণ করা যায়।
৬. ঘরে বসেই আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা অনুযায়ী অর্থ উপার্জন করা যায়।
৭. টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে বসে বিশ্বের নামকরা চিকিৎসকের চিকিৎসা সেবা নেওয়া যায়।
এগুলো ছিল ইন্টারনেট ব্যবস্থার ফলে কিছু উল্লেখযোগ্য সুবিধা সমূহ। ইন্টারনেট যে মানুষের জীবনে কতটা পরিবর্তন এনেছে তা বলে বোঝানো সম্ভব না। এরকম কয়েকটি বিষয় সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত বলা হলো।
ইন্টারনেটের ক্রমবিকাশের ফলে বর্তমানে একে অপরের সঙ্গে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে। মূলত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। আধুনিক টেলিযোগাযোগ যন্ত্র মধ্যে বহুল ব্যবহৃত কিছু যন্ত্র হচ্ছে মোবাইল, টেলিভিশন, ল্যান্ডফোন ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এসব যন্ত্র যোগাযোগ প্রক্রিয়া কে সম্ভব করে তোলে। এছাড়া বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য রয়েছে ইমেইল, অডিও কিংবা ভিডিও চ্যাটিং, এসএমএস, এমএমএস অথবা ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করার সুবিধা।
উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি আপনার নিত্যদিনকার প্রয়োজনের কথা চিন্তা করেন তবে আপনি লক্ষ্য করেছেন যে আপনি আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার দিয়ে স্কাইপি বা অন্যান্য ভিডিও চ্যাটিং ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক দূরে অবস্থানরত আরেকজনের সাথে সরাসরি কথা বলা ও ছবি দেখার সুযোগ পান। যেটি সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেট ব্যবস্থার মাধ্যমে।
বর্তমান ইন্টারনেট ব্যবস্থার ফলে আরো একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল গাড়ি চালনায় জিপিএস অন্তর্ভুক্তি। যেটি যাতায়াত ব্যবস্থা এনেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। রাস্তা না চিনলেও ড্রাইভার চলে যেতে পারছে তার গন্তব্যে অথবা আপনি যদি আপনার রাস্তা হারিয়ে যান তবে খুব সহজেই জেনে নিতে পারছেন স্যাটেলাইট ম্যাপ থেকে। মোট কথা, বলতে গেলে আপনার কাছে যদি একটি ইন্টারনেট সংযুক্ত স্মার্টফোন থাকে তবে আপনার রাস্তা হারিয়ে যাবার কোনো আশঙ্কাই নেই।
একটা সময় ছিল যখন কাজের জন্য অনেক ঘোরাঘুরি করতে হতো। এ প্রতিষ্ঠান থেকে আরেক প্রতিষ্ঠান অথবা কোন প্রতিষ্ঠানের চাকরির নিয়োগ না জানার কারণে হয়তোবা সেখানে যাওয়াই হতো না। তবে বর্তমানের ইন্টারনেট ব্যবস্থার ফলে এ ব্যবস্থা একেবারেই পাল্টে গেছে। বর্তমানে স্মার্টফোন কিংবা কম্পিউটারে অনুসন্ধান করলেই চলে আসে সর্বশেষ প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি গুলো। যেখানে আপনি চাইলেই পছন্দ করে নিতে পারেন আপনার মনের মত পেশা।
তবে ইন্টারনেট ব্যবস্থার ফলে প্রথাগত চাকরির ধারণা একেবারেই পাল্টে গেছে। মানুষ এখন কাজ শিখে ঘরে বসে থাকে না। সে চাইলেই আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে পছন্দ করে নিতে পারে তার মনের মত পেশাকে। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে অসংখ্য কাজ পাওয়া যায়। যে যার দক্ষতা অনুযায়ী এখানে কাজ করে থাকে। যার মাধ্যমে বৈদেশিক রেমিটেন্স এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে।
অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে যে কাজ করে তাকে একজন ফ্রিল্যান্সার হলে। ফ্রিল্যান্সার অর্থ হল মুক্ত পেশা। প্রথাগত চাকরি থেকে এটি সম্পূর্ণ আলাদা। যে কেউ চাইলে পার্টটাইম কিংবা ফুলটাইম হিসেবে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ করতে পারে। যেখানে প্রথাগত চাকরির মত কাজের জন্য কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয় না। একজন ফ্রিল্যান্সার ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় করে থাকে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে এ ক্ষেত্রটিতে এক আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। ঘরে বসেই একজন শিক্ষার্থী বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। এছাড়া একজন শিক্ষার্থীকে বাস্তবমুখী ভাবে বোঝানোর জন্য ইন্টারনেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ধরুন একজন শিক্ষক জীববিজ্ঞান ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ব্যাকটেরিয়া সম্বন্ধে বোঝানোর চেষ্টা করছে। তবে তাদের মধ্যে কিছু শিক্ষার্থী সেটি ভালোভাবে বুঝতে পারছে না। এইবার শিক্ষক তাদেরকে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমে নিয়ে গেলেন। সেখানে গিয়ে ইন্টারনেটে ব্যাকটেরিয়ার সম্বন্ধে অনুসন্ধান করে একটি প্রামাণ্য ভিডিও চিত্র তাদের দেখালেন। এতে করে খুব সহজেই সে শিক্ষার্থী গুলো ব্যাকটেরিয়া সম্বন্ধে পূর্ণাঙ্গ ধারণা লাভ করলো। উপরের এই সমস্যাটির তাৎক্ষণিক সমাধান কিন্তু একমাত্র ইন্টারনেট এর মাধ্যমে বোঝানো সম্ভব।
এছাড়া একটা সময় ছিল যখন কোন পরীক্ষার ফলাফল জানার জন্য কয়েক মাইল হেঁটে গিয়ে ফলাফল জানতে হতো। যা বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবস্থায় কয়েক মিনিটেই ওয়েবসাইট থেকে খুঁজে বের করা সম্ভব।
তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে কোন প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার কাজে কেউ তো ঘর থেকে বেরই হতে চায় না। কেননা স্মার্টফোনে সেই পণ্যটি অর্ডার করলেই সেটি বাড়িতে পৌঁছে যাবে। তাহলে আর কষ্ট করে বাজারে আর শপিংমলে যাওয়ার দরকার কি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই যখন কোন ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে অর্ডার করা যায়, সে জন্য কষ্ট করে বাইরে যেতে হয়না।
এছাড়া বর্তমানে দেশে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ই-কমার্স ওয়েবসাইট রয়েছে যারা তাদের নিজের পণ্য সারা দেশের মানুষের কাছে বিক্রি করে। আর এটি সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেট ব্যবস্থার ফলে।
ইন্টারনেটের এই ব্যাপক প্রসারের ফলে ব্যবসা হয়ে উঠেছে বিশ্বব্যাপী। ইন্টারনেট নেই এমন একটি সময়ের কথা কল্পনা করুন। যখন একটি এলাকায় কোন সবজির বেশি উৎপাদন হলো। এক্ষেত্রে দেখা গেল সে শহরে বা এলাকায় পণ্যটির দাম অনেক কম। তবে সেখান থেকে কয়েক জেলায বা শহর বাদে সে পণ্যটির দাম অনেক বেশী। এক্ষেত্রে দেখা গেল সেই কৃষকটি অনেক কম মুনাফা পেত। তবে বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নতি হওয়ায় সহজেই কৃষক পুরো দেশের বাজার সম্বন্ধে ধারণা রাখছে। ফলে একজন কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য পেতে পারছে।
একটা সময় ছিল যখন দেশের কোন এক প্রান্তে কোনো দুর্ঘটনা বা অপরাধ সংঘটিত হলে তা দেশের অপর প্রান্তের মানুষ জানতে পারত না। কোন একটি সংবাদ পৌঁছাতে মাসের পর মাস লেগে যেত। তবে বর্তমানে এসেছে ধারণা একেবারেই আলাদা। দেশের কোন প্রান্তে কোনো অসঙ্গতি ঘটলেই তা নিমিষেই পৌঁছে যাচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর দোরগোড়ায়।
ইন্টারনেট যে আমাদের বাস্তব জীবনে কতটা পরিবর্তন এনেছে তা বলে বোঝানো সম্ভব না। তো বন্ধুরা এই ছিল ইন্টারনেট সম্পর্কে আজকের টিউন। আজ তবে এ পর্যন্তই, দেখা হবে পরবর্তী টিউনে আরো নতুন কিছু নিয়ে ইনশাআল্লাহ।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)