ফ্রি প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ব্লগিং এর প্রবণতা রয়েছে প্রায় সবার মধ্যেই। জনপ্রিয় ব্লগিং প্লাটফর্ম এর মধ্যে Blogger এবং WordPress সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। এখন ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েব হোস্টিং এর বিভিন্ন লোভনীয় অফার লক্ষ্য করা যাচ্ছে সোস্যাল মিডিয়াতে। যে বিষয়ে আপনার দক্ষতা রয়েছে (ব্লগিং, কম্পিউটার ট্রেনিং, সফটওয়্যার, গ্রাফিক্স, ক্যারিয়ার গাইড) তার উপর আপনি ধারাবাহিকভাবে ব্লগিং শুরু করতে পারবেন। ধরুন টেকটিউনস এ কোন বিষয় নিয়ে লিখতে গেলে ডোমেইন-হোস্টিং, ওয়েব ল্যাংগুয়েজ, সিএসএস, জাভাস্ক্রিপ্ট এর কোন জ্ঞান না থাকলেও আপনি ব্লগিং করতে পারবেন। কিভাবে ব্লগ টিউন লিখতে হয় সেই নিয়মটা শুধু টেকটিউনস ইউটিউব থেকে জেনে নিন। তারপর আপনার প্রোফাইল থেকে “নতুন টিউন” বিভাগে ক্লিক করুন (ছবি)। ব্লগিং কি, কিভাবে ইউনিকোডে লিখালিখি করতে হয়, বিজয়/ অভ্র নিয়ে প্রচুর টিউন রয়েছে ইউটিউবে/ টিকটিউনসে। যারা ব্লগিং করছেন বা নতুন শুরু করতে চান তাদের জন্য কিছু তথ্য শেয়ার করছিঃ-
প্রথমেই বলে নিই ডোমেইন-হোস্টিং এর বিষয়টা নিয়ে। বিভিন্ন হোস্টিং কোম্পানি স্ট্যান্ডার্ড, ইন্টারমিডিয়েট, প্রো নামে বিভিন্ন প্যাকেজ সেবার অফার দিচ্ছে। লুফে নেবার মতো এসব অফারগুলোর মধ্যে একটি আজীবন ডোমেইন + SSL সার্টিফিকেট ফ্রি। অথচ একটু গুগল করলেই পাওয়া যায় যে SSL সিকিউরিটি বিলুপ্তির পথে উন্নত দেশগুলোতে আর আজীবন ডোমেইন তো পুরাটাই চোখপাল্টি। এছাড়াও একটি ওয়েবসাইটের তথ্য এবং তার রক্ষণাবেক্ষণ খরচও দিন দিন বাড়বে এবং সেই হিসেবে ধরলে একজন স্টুডেন্টের পক্ষে বছরে বছরে সেই অনুপাতে খরচ বাড়ানোও সম্ভব নয়। আর যদি স্ট্যান্ডার্ড ডোমেইন-হোস্টিং কিনতে চান তবে তার জন্য কমপক্ষে ২ থেকে ২.৫ হাজার টাকা (১০ জিবি) গুণতে হবে। তো ব্লগিংয়ে আগ্রহী মানুষ যাদের আয় কম কি করবে তারা? তাহলে কি এই ডোমেইন-হোস্টিং, ল্যাংগুয়েজ, সাইট মেইনটিন্যান্স একটা বাঁধা? এবার টিউনের মূল বিষয়ে আসা যাক। Blogger নাকি WP.
- ব্লগার আপনাকে একটি ফ্রি ডোমেইন (blogspot.com) দিচ্ছে যা আজীবন ব্যবহার করতে পারবেন।
- colorlib, soratemplates, gooyaabitemplates, templatesyard, cssauthor, সাইটগুলোতে হাই কোয়ালিটি টেমপ্লেট পাবেন যা দিয়ে কিছু সেটিংস পরিবর্তন করলেই আপনি ব্লগিং শুরু করতে পারবেন। মনোরম আর দৃষ্টিনন্দন এই টেমপ্লেটগুলো দিয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে এসইও র্যাংকিং, ভিউয়ার্স।
- আপনি চাইলে ব্লগার টেমপ্লেট দিয়ে বাংলাতেও ব্লগিং করতে পারবেন। বাংলা ফন্ট ইন্সটল কিভাবে করতে হয় তার জন্য এই ভিডিওটি দেখে নিন। অনেক শিক্ষার্থী, পিসি ট্রেইনার, ইন্সটিটিউট তাদের প্রথম ব্লগিং শুরু করে ব্লগার টেমপ্লেট দিয়েই।
- ছয়/সাত মাস পর কমপক্ষে ৫০টি টিউন করতে পারলে ব্লগার থেকে আপনি আর্নিং অপশন অ্যাড করতে পারবেন। এজন্য আপনার ড্যাশবোর্ডে Earnings নামে একটি ট্যাব যুক্ত হয়ে যাবে। তবে আপনার পোস্টগুলো অবশ্যই প্লাগারিজম মুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ আপনার নিজের কনটেন্ট হতে হবে। এটা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে গুগল কোন কপিরাইট ইস্যুর জন্য আপনার অ্যাকাউন্ট বাতিলও করে দিতে পারে।
- নতুন যারা ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করছেন তাদের জন্য ব্লগার থেকে শিখতে পারবেন বেসিক Search Engine Optimization। কাজ করতে করতে নিজেই শিখতে পারবেন কীওয়ার্ড, মেটা ট্যাগ, ব্যাকলিংক, এসইও কনটেন্ট ইত্যাদি সম্পর্কে।
- কোডিং না শিখেও ওয়ার্ডপ্রেসের মতো আপনি ব্লগার থিম কাস্টমাইজ করতে পারবেন। শুধুমাত্র এড উইজগেট বাটনে ক্লিক করেই যেকোন প্লাগইন যুক্ত করে দিতে পারবেন আপনার সাইটে।
- গুগলের সেবা নিয়ে সাধারণের কোন মাথা ব্যাথা নেই। এটা প্রতিষ্ঠার পর থেকে যা দিয়ে যাচ্ছে তা এক কথায় বিশাল কিছু। আজীবন ফ্রি বলে যে এটা স্লো হবে এমনও নয়, বরং অনেক ব্লগস্পট সাইট খুব দ্রুত লোড নেয় একটি পেইড ওয়ার্ডপ্রেস সাইট থেকে। Google তো আমাদের দেশে ‘গুগল মামাই’ তাই না।
- কাস্টম ডোমেইন এড করে আপনি ব্লগস্পটকে পেইড হোস্টিং সার্ভারে নিতে পারবেন। তবে ফ্রিতে কিছু সেটিংস যা আপনি করেছিলেন যেমন ব্যাকলিংক, মেটা ট্যাগ এগুলো মুছে যাবে। এজন্য আগেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনাকে যে ফ্রিতে শুরু করবেন নাকি ডোমেইন-হোস্টিং রেজিস্ট্রেশন করে তারপর ব্লগার ব্যবহার করবেন।
- ব্লগার থেকে সহজেই ওয়ার্ডপ্রেসে মাইগ্রেট করতে পারবেন। কারণ ফ্রি তে শুরু হলেও অনেকেই ওয়ার্ডপ্রেসে তাদের এতদিনের তৈরিকৃত টেমপ্লেটটি হুবহু দেখতে চায়। পিসি এক্সপার্ট ‘অনু এসকরাব’ তার সাইটে এই আর্টিকেলটি লিখেছেন। এছাড়াও ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগইন ব্যবহার করেও ব্লগার থিম ওয়ার্ডপ্রেসে ইন্সটল দিতে পারবেন পুরাতন সব পোস্ট, টিউনের টিউমেন্ট, মিডিয়া, ক্যাটাগরি, ফিড, ট্রাফিক সহ।
এবার আসি ওয়ার্ডপ্রেস নিয়ে ঃ-
- আপনি কি পেইড হোস্টিং নিয়ে এগোতে চাচ্ছেন? এফিলিয়েট কোর্স করেছেন? মার্কেটপ্লেসে নিয়মিত কাজ করছেন? বায়ারকে নিজের পোর্টফোলিও দেখাতে চান? তাহলে আপনার জন্য সর্বোত্তম মাধ্যম হলো ওয়ার্ডপ্রেস।
- ওয়ার্ডপ্রেসের জনপ্রিয়তার আরও একটি কারণ হলো- এর প্লাগইন এর ভান্ডার দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। যা আপনার টেমপ্লেটে নেই তা অতি সহজেই প্লাগইন এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে ইন্সটল করাতে পারবেন। বাংলাদেশী অনেক ডেভেলপার ভাই নতুন অবস্থায় কাজ শিখেই এখন ওয়ার্ডপ্রেস প্লাগইন ডেভেলপমেন্টে সুনাম কুড়িয়েছেন।
- বর্তমানে জরিপে দেখা গেছে প্রায় ৩৪ শতাংশ ওয়েবসাইটই এখন ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে মেইনটেইন করা হচ্ছে। নতুনদের মধ্যেও ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ব্লগিং করার প্রবণতা বাড়ছে দিনে দিনে। থিমফরেস্টে এভাডা, ডিভি, সহিফা-র বিক্রি দেখলেই বোঝা যায় এর চাহিদা কতটুকু। থিমফরেস্টে বিভিন্ন টেমপ্লেট ও ওয়েবসাইটের মধ্যে ওয়ার্ডপ্রেসের প্লাগইন ও থিমের সংখ্যা ২৮ ভাগ।
- যারা ব্লগার সম্পর্কে জানেন তাদের আর বিস্তারিত জানানোর কিছু নেই। ওয়ার্ডপ্রেস সহজেই কাস্টমাইজেবল হওয়ার কারণে অন্যান্য cms সাইটগুলোর থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য। এই লিংকটিতে দেখুনঃ- Top CMS platfoms 2019
- ফাইবার, আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার সহ বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসগুলোতে ‘ওয়ার্ডপ্রেস কাস্টমাইজেশন’ একটি প্রতিদ্বন্দিতায় চলে এসেছে এবং নতুনদের চাহিদাও বাড়ছে। ইউটিউব ঘাটলেই প্রচুর টিউটোরিয়াল পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশের তরুণদের। কোনরকম কোডিং ছাড়াই এই কাজটি করে নিজের প্রথম অনলাইন আর্নিং শুরু করতে পারবেন।
আশা করি এই সংক্রান্ত আরও টিউন পাব অভিজ্ঞ ভাইদের কাছ থেকে। এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় টাকা দিয়ে শুরু করতে চাইলে ওয়ার্ডপ্রেস আর বিনা টাকায় গুগুল মামা তো আছেই। তবে এটাও ঠিক মামা বাড়ির মজা চিরদিন থাকবে না। facebook: Moinuddin Mondal