সামাজিক যোগাযোগ বা আরও পরিষ্কার করে যদি বলা হয়, অনলাইন সামাজিক যোগাযোগব্যবস্থা আমাদের অঞ্চলে চালু হয়েছিল অনেকটা আকস্মিকভাবে। পাঁচ বছর আগেও অনেককে হাইফাই ওয়েবসাইটের কথা জিজ্ঞাসা করলে উত্তর পাওয়া যেত, ‘এটা কী জিনিস, এটা দিয়ে কী করে?’ প্রশ্নকর্তাও উত্তর দিত, ‘এটি একটি ওয়েবসাইট, যার মাধ্যমে একজন মানুষ ইন্টারনেটে তার ছবি, পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি প্রকাশ করতে পারে।’ খুব দ্রুতই ওয়েবসাইটের একঘেয়ে চেহারা (ইন্টারফেস) ও নিরাপত্তার ত্রুটির কারণে এর ব্যবহার কমে যায় এবং এর স্থলে আসে গুগলের অরকুট। গুগলের একটি ই-মেইল থাকলেই অরকুটে আলাদাভাবে অ্যাকাউন্ট করতে হয় না। দেখা গেল, প্রায় সব গুগল ব্যবহারকারীরই অরকুটে একটি অ্যাকাউন্ট আছে। আর বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগের (সোশ্যাল নেটওয়ার্ক) অন্যসব সাইটকে ফেলে ফেসবুক ও টুইটার এগিয়ে আছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ৫০ কোটির বেশি, আর টুইটারে দৈনিক খুদে বার্তা (মাইক্রোব্লগ) প্রকাশ হয় সাড়ে ছয় কোটির কাছাকাছি। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য এসব সামাজিক যোগাযোগ সাইট থেকে দূরে থাকা প্রায় অসম্ভব। এখন কথা হলো, এসব সাইট আমরা কেন ব্যবহার করব? সামাজিক যোগাযোগ কি আমরা শুধুই বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার জন্য বা বন্ধুদের ছবিতে মন্তব্য লেখার জন্য বা নিজের ব্যক্তিগত তথ্য হালনাগাদ করার কাজেই ব্যবহার করব? নাকি সামাজিক যোগাযোগকে বিভিন্ন কাজের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করব? সাধারণত দেখা যায়, মানুষ কোনো নির্দিষ্ট অনুষ্ঠান, সেমিনার বা সম্মেলনে তার সমসাময়িক ব্যক্তিদের দেখা পায়। সেখান থেকেই তাদের মধ্যে যোগাযোগ বা নেটওয়ার্কিং শুরু হয়। নির্দিষ্ট বিষয়ের হালনাগাদ তথ্য একজন মানুষ আরেকজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়। কিন্তু অনলাইন সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমমনা কাউকে খুঁজতে সেমিনার বা সম্মেলনের প্রয়োজন নেই। এখানে নিজের পছন্দের সঙ্গে মিলে যায়, এমন মানুষকে আরও সহজেই খুঁজে সে পায়। এ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন ধরনের সাইট রয়েছে। এসব সাইটের একটির উদ্দেশ্য অপরটি থেকে আলাদা। কোনোটি হয়তো গানপাগলদের জন্য; আবার কোনোটি গম্ভীর পেশাজীবীদের জন্য। ফেসবুক (www.facebook.com) এর আগে বা পরে যেসব সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট এসেছে, সেগুলোর মধ্যে ফেসবুককে একেবারেই আলাদা করা যায় এর নিরাপত্তাব্যবস্থার কারণে। ফেসবুকের ব্যবহার এখন শুধু বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ, ছবি প্রকাশ, ভিডিও বা নোট লেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক বা পারিবারিক অনুষ্ঠানের ঘোষণাও ফেসবুকে দেওয়া হয় এবং আমন্ত্রিত ব্যক্তিরাও ফেসবুকেই সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে কি না, তা জানিয়ে দেয়। এ ছাড়া কাউকে সাহায্য করার জন্য ফেসবুক একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এ মাধ্যমে সহজেই যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া যায় বন্ধুদের মাধ্যমে। সিডর বা আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত মানুষের সাহায্য চাওয়া হয়েছিল এই সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে। ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করে সমমনা মানুষ তাদের আলাপচারিতা চালাতে পারে। আর ফেসবুকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নেটওয়ার্ক রয়েছে। এসব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ আরও সহজ করা যায়। টুইটার (http://twitter.com): টুইটারকে ফেসবুকের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। টুইটারের ব্যবহার মূলত ব্যবহারকারীর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। টুইটারে একজন ব্যবহারকারী তার পছন্দের বিভিন্ন বিষয়-সম্পর্কিত বার্তাগুলো (টুইট) অনুসরণ করতে পারে। যেমন ধরা যাক, কেউ একজন পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী। সে যদি পদার্থবিজ্ঞান বিষয়-সম্পর্কিত টুইটগুলো অনুসরণ করে, তাহলে সে এ-সম্পর্কিত হালনাগাদ তথ্য জানতে পারবে। আবার টুইটারকে ব্যবসার হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের একটি পণ্যের ওপর যাদের আগ্রহ আছে, তারা সে পণ্যের হালনাগাদ সংস্করণের তথ্য সহজেই পেতে পারে টুইটার থেকে। লিংকডইন (www.linkedin.com): এবার আসা যাক পুরোপুরি পেশাদার সামাজিক যোগাযোগের দুনিয়ায়। এখানে মূলত মানুষ ভিড় করে করপোরেট যোগাযোগ ও চাকরির খোঁজে। লিংকডইনকে অন্যভাবে ‘অনলাইন রেজুমে’ বলা যেতে পারে। এখানে রাখা বিভিন্ন প্রোফাইল থেকে চাকরিদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের জন্য প্রয়োজনীয় লোক খুঁজে বের করে। এ ছাড়া এখানে পেশাদার মানুষ তার নিজের ক্ষেত্রের মানুষের সঙ্গে ‘কানেক্ট’ বা সংযুক্ত হয় সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য। কুয়োড়া (www.quora.com): ইন্টারনেটে বিভিন্ন মানুষের লিখিত সমাধান থেকে সমস্যার সমাধান করা যায়। তবে এসব সমস্যা ও সমাধান সব সময় এক জায়গায় থাকে না। এগুলোকে এক জায়গায় এনেছে কুয়োড়া। কুয়োড়াকে জ্ঞানের তথ্যভান্ডারও বলা যায়। এখানে সব ধরনের অজানা উত্তর দেওয়া হচ্ছে দিন দিন। এ ডেটাবেইস তৈরি করছে মানুষ এবং সংযুক্ত হচ্ছে সমমনাদের সঙ্গে। ওয়াকোপা (http://social.wakoopa.com) : এই ওয়েবসাইট কম্পিউটার গিকদের নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য। এখানে যারা সদস্য হয়, তাদের বিভিন্ন পর্যালোচনা, ডেস্কটপ সফটওয়্যার ও ইন্টারনেট প্রোগ্রাম ব্যবহারের তথ্য থেকে একটি রেটিং তৈরি করা হয়—কোন সফটওয়্যার সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত হচ্ছে, কোন সফটওয়্যারে সমস্যা রয়েছে ইত্যাদি। এ ছাড়াও এর সদস্যরা বিভিন্ন নতুন সফটওয়্যার-সম্পর্কিত রিভিউ লিখতে পারে এখানে। লাস্ট.এফএম (www.last.fm/community): এই সামাজিক যোগাযোগের সাইট গানপাগল মানুষের জন্য। যারা গান শুনতে পছন্দ করে, তাদের জন্য এ সাইট এককথায় অসাধারণ। যেকোনো মিউজিক প্লেয়ার থেকে এর সদস্যদের গান শোনার ধরনের সমীক্ষা নেয় এই সাইট। এরপর গান শোনার ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন গান সুপারিশ করাই এ ওয়েবসাইটের কাজ। ৪৩ থিংস.কম (www.43things.com) ‘জীবনে পরিবর্তন আনা একটি কঠিন ব্যাপার এবং নিজে এটা করা আরও কঠিন’ ৪৩ থিংস.কম ওয়েবসাইটে গেলেই দেখা যাবে এই কথাটি। এ সাইটে মানুষ তার জীবনের লক্ষ্যগুলোর একটি তালিকা তৈরি করে সে সম্পর্কে বিভিন্ন হালনাগাদ তথ্য দেয়, যা দেখে সাইটের একই লক্ষ্যে কাজ করছে, এমন সদস্যরা উৎসাহ পায় বা একজন আরেকজনের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারে।
আমি Rocky Ahmed। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 21 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।