সাধারণত, কোন নির্দিষ্ট ওয়েব সার্ভারে রাখা বিভিন্ন ধরনের ওয়েব পৃষ্ঠা, আপলোড কৃত ছবি, অডিও, ভিডিও ও অন্যান্য বিষয় যেমনঃ Infographic, GIP, Animation ইত্যাদি ডিজিটাল তথ্যের সমষ্টিকে আমরা ওয়েবসাইট বলে থাকি। যা ইন্টারনেটে অ্যাক্সেস করাতে হলে আপনাকে নিচের ৩ টি কাজের মধ্য দিয়ে এগোতে হবে।
এই ৩ টি কাজের জন্য আপনাকে বেশ কিছু টাকা খরচ করতে হবে। যখন আপনি এগুলো সবকিছু (ডোমেইন নেম রেজিস্ট্রেশন, ওয়েব হোস্টিং, এবং ডিজাইন) ফ্রিতে অ্যাক্সেস পাবেন নির্ধারিত একটি কোম্পানির ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তাহলে সেটা হলো আপনার ফ্রি ওয়েবসাইট।
ইন্টারনেটে সার্চ করলে এরকম অনেক কোম্পানির ওয়েবসাইট পাওয়া যাবে যারা আপনাকে ফ্রি তে ডোমেইন, হোস্টিং ও সাইট বিল্ডাপ সার্ভিস অফার করবে। কিন্তু আপনি যখন ওয়েবসাইট রান শুরু করবেন তখন থেকেই বুঝতে পারবেন এর লিমিটেশন এবং সেই সাথে দেখবেন অনেক সার্ভিসই যেমন- এসএসএল সার্টিফিকেট, আনলিমিটেড ব্যান্ডউইথ ও বিজিনেস ইমেইল সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ফ্রি না।
একবার ভাবুন তো, তারা এগুলো কেনো করছে? নিশ্চয় এর পিছনে তাদের কোন উদ্দেশ্য বা কারন আছে। সে সব কারনের বেশির ভাগই একজন বিগেইনারদের জন্য ক্ষতিকর দিক।
যদি আপনি এ ধরনের ফ্রি সাইট তৈরি করার কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে নিচের টিউন গুলো আপনার জন্য। ঠিক এই জন্য আমরা ফ্রি ওয়েবসাইটের প্রধান ১০ টি ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলোচনা করবো। চলুন জেনে নেওয়া যাক—
ফ্রি হোস্টিং সাইটে ডোমেইন নাম সিলেক্ট করার পর তারা তাদের ওয়েব অ্যাড্রেস আপনার ডোমেইন নামের সাথে যুক্ত করে দিবে। যেমন: eshop.freewebsite.com; eshop.wordpress.com; বা eshop.weebly.com যা দেখতে আনপ্রফেশনাল ওয়েব অ্যাড্রেস এর মতো। যেটা কিনা কখনোই একটি প্রফেশনাল ওয়েব অ্যাড্রেস হতে পারে না। যার ফলে সিরিয়াস ইউজাররা কখনোই আপনার এই ডোমেইন নামকে ভালোভাবে নিবে না এবং পরবরতিতে তারা আপনার সাইটে আর ভিজিট করবে না। অন্যদিকে এতবড় ডোমেন নাম মনে রাখাও ইউজারদের জন্যে কষ্টকর। তাই আপনার উচিত একটি কাস্টম ডোমেন ইউজ করা। যেখানে নরমালি বাইরের কোম্পানিগুলো টপ লেভেল ডোমেইনের জন্য বার্ষিক.১০০০- ২০০০ টাকা চার্জ করে থাকে। সেখানে বাংলাদেশের অনেক ডোমেইন ও হোস্টিং কোম্পানি রয়েছে যাদের কাছ থেকে মাত্র ৭০০-১০০০ টাকার মধ্যে আপনি একটি ডোমেইন কিনতে পারবেন।
মূলত ফ্রি হোস্টিং কোম্পানি গুলো বিজ্ঞাপণের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজ্ঞাপনগুলো এডাল্ট হয় যা আপনার ওয়েবসাইটের মান এবং সৌন্দর্য নষ্ট করে। যার ফলে ইউজাররা সাইট ব্রাউজ করতে বিব্রত করে।
বেশিরভাগ ফ্রি হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডররা একটি সার্ভারে অনেক পরিমাণ ওয়েবসাইট রান করায়। যার ফলে ওই সার্ভারের সকল ওয়েবসাইট খুবই ধীরে বা স্লোলি লোড হয়। স্লো ওয়েবসাইট ভিজিটরদের বাজে এক্সপেরিয়েন্স দেয় যা সাইটের SEO (Search Engine Optimization) এর জন্যে তা মোটেও ভালো নয়!
ব্যান্ডউইথ হলো আপনার সার্ভার থেকে ইউজার ব্রাউজারে ডাটা ট্রান্সফারের পরিমাণ। এটা ব্যয়বহুল তাই ফ্রি ওয়েবসাইটগুলোতে ব্র্যান্ডউইথের পরিমাণ লিমিটেড থাকে। আর এই ফ্রি ওয়েবসাইট গুলো একই সার্ভারেন। অনেক ওয়েবসাইটের রিসোর্ট এবং হার্ডডিক্স শেয়ার করে। ফলে ফ্রি কোম্পানি গুলো আপনাকে খুবই লিমিটেড ডিস্ক দিবে এবং যখন আপনি এই লিমিট ক্রস করবেন তখন তারা আপনাকে অতিরিক্ত পে করতে বলবে!।
হাই সিকিউরিটি না থাকার কারণে ফ্রি ওয়েবসাইটগুলো সবসময় হ্যাকিং এর সম্ভাবনায় থাকে। তাই আপনার ফ্রি ওয়েবসাইট টি একবার হ্যাক হয়ে গেলে আপনার জন্যে তা ফিরিয়ে আনা খুবই কষ্টকরই হবে। কেননা ফ্রি কোম্পানি গুলো খুব লিমিটেড আক্সেস দেয় আপনার ডাটা এবং ফাইল হোস্ট করার ক্ষেত্রে।
নানা ধরনের বিজ্ঞাপণ ও নিম্নমানের সিকিউরিটি থাকার ফলে ফ্রি হোস্টিং কোম্পানিগুলো ম্যালওয়ার ছড়ানোর জন্যে অনেকটা কার্যকরী। এতে করে আপনার ফ্রি সাইট টি ভাইরাস দ্বারা অ্যাটাক হবে এবং আপনার সাইট ডাটা গুলো বিনষ্ট হবে।
ফ্রি ওয়েবসাইট কোম্পানিগুলো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে। যখন তাদের ব্যবসায় আর লাভ হবে না তখন যে কোন সময় তাদের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে পারে। যার ফলে আপনি আপনার সাইটের সকল ডাটা হারাবেন।
ফ্রি ওয়েবসাইট কোম্পানিগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য হলো যেকোন উপায়ে টাকা উপার্জন। তাই আপনি যদি তাদের সার্ভিসের বিনিময়ে নির্ধারিত চার্জ পে না করে থাকেন ফলে তারা অন্য উপায়ে যেমন- আপনার ইমেইল এড্রেস, ওয়েবসাইটের এবং ব্যক্তিগত তথ্য, এমন কি আপানার সাইট অ্যাড্রেসটি ও অন্য কারো কাছে সেল করে টাকা ইনকাম করে। যখন আপনি এটা বুঝতে পেরে তাদের কাছে অবজেকশন দিবেন তখন তারা ঘুরিয়ে পেচিয়ে বিভিন্ন ধরনের কন্ডিশন দিয়ে এগুলোর বৈধ্যতা করে নিবে।
ফ্রি ওয়েবসাইট কোম্পানি গুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডেস্কটপ নির্ভর ড্যাশবোর্ড ডিজাইন করে থাকে। যার ফলে এটা মোবাইল ফ্রেন্ডলি হয় না। যা গুগল খুবই অপছন্দ করে।
ফ্রি ওয়েবসাইটে অন্যান্য বিষয় গুলো যেমন লিমিটেড ঠিক তেমনি আপনি নিজের নাম দিয়ে কোন ব্র্যান্ডেড ইমেইল খুলতে পারবেন না। যার ফলে আপনাকে সবসময়ের জন্য জি-মেইল অথবা হট-মেইল ব্যবহার করতে হবে।
উপরের এই প্রধান ১০ টি ক্ষতিকর দিক ছাড়াও আরও বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। যেমন- ফ্রি ওয়েবসাইট কোম্পানি গুলোতে কোন ব্যাকআপ অপশন নেই, মাঝে মধ্যে ইমেইল অফারের জন্যে টার্গেটেড হবেন। এছাড়া লিমিটেড ফাইল আপলোড অসুবিধা থাকার পাশাপাশি আপনি কোন ধরনের কাস্টমার সাপোর্ট পাবেন না।
ফ্রি হোস্টিং এর চেয়ে প্রিমিয়াম ডোমেইন ও হোস্টিং হাজার গুনে ভালো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এমনকি আমাদের বাংলাদেশেও অসংখ্য ডোমেইন এবং হোস্টিং কোম্পানি রয়েছে যারা কিনা ভালো মানের ডোমেইন এবং হোস্টিং সেবা প্রদান করে থাকে। তবে ডোমেইন ও হোস্টিং সম্পর্কে ভালো করে জেনেশুনে তারপর সঠিক একটি প্রতিষ্ঠান থেকেই নেয়া ভালো। তা নাহলে পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
আশাকরি উপরের আলোচনা গুলো থেকে “ফ্রি ওয়েবসাইট কি?” এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। যদি এ বিষয়ে আপনার মনে আরও প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে নিচে টিউমেন্ট করে জানাতে পারেন। সব গুলো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।
আমি মনির হোসেন। Digital Marketer বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 6 বছর 4 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 8 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 12 টিউনারকে ফলো করি।