সবকিছুর বেলাতেই প্রয়োজনীয়তা বুঝে পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। ওয়েবসাইট কিম্বা ব্লগের ক্ষেত্রেও ভিন্ন নীতি হওয়া উচিৎ নয়। অনেক ব্লগার আছেন যারা আপন মনেই ডায়রী লেখার মতো করে নিজের ভাবনাচিন্তার কথা লেখেন, কেউ বা গানের ব্লগ বানিয়েছেন, কেউ কেউ সিনেমা/নাটক/সফটওয়্যার ডাউনলোডের ব্লগ বানিয়েছেন, টেকি ব্লগাররাও আছেন। বিভিন্ন ধরনের ব্লগ এবং সেই অন্যযায়ী নির্ভর করে ব্যাকলিঙ্ক ও পেজর্যাঙ্কের প্রয়োজনীয়তা। ভেবে দেখুন দেখি, যিনি একান্তই তার নিজের ভাবনাচিন্তার প্রকাশ করছেন ডায়রী লেখার মতো, তার কি অনেক ব্যাকলিঙ্ক প্রয়োজন আছে? তাকে হয়তো এইসব ব্যাপারে চিন্তাই করতে হবেনা কারন তার সব লেখাই তার নিজের বলে লেখাগুলি সার্চ ইঞ্জিনের ভাষায় ‘ইউনিক’। তার লেখার মধ্যে বিতর্কিত কোনো বিষয় কিম্বা অত্যন্ত জনপ্রিয় কোনো বিষয় থাকলে অন্যান্য অনেক ওয়েবসাইট/ব্লগ থেকে তিনি ব্যাকলিঙ্ক এমনিতেই পেয়ে যেতে পারেন। তার অজান্তেই তার পেজর্যাঙ্ক বেড়ে চলবে, তিনি হয়তো তা জানতেও পারবেন না, কিম্বা অনেকদিন পরে জানতে পেরে মনে মনে খুশীই হবেন।
কিন্তু, অন্যান্য যেসব ধরনের ব্লগ, যেমন গান/সিনেমা/নাটক/সফটওয়্যার রিভিউ বা ডাউনলোড ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সামান্য আলাদা। বিষয়টি নিয়ে প্রচুর ব্লগার/ওয়েবমাস্টার প্রতিদিন নতুন নতুন সাইট বানাচ্ছেন। প্রতিযোগিতা সেখানে বেশি হয়ে যায়। টেকিদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। দারুন প্রতিযোগিতা। সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেজে (SERP) এক নম্বরে থাকার লড়াই লেগেই থাকে। টেকিরা যদিও বা ইউনিক লেখা লিখতে পারেন, গান/সিনেমা/নাটক/সফটওয়্যারের ব্লগে কিই বা এমন ইউনিক লিখবেন? অত্যন্ত কঠিন হয় এইসব পাতায় ইউনিক লেখা। প্রত্যেকটি গান নিজে শুনতে হবে, প্রত্যেকটি সিনেমা নিজে দেখতে হবে, তবেই রিভিউ লেখা সম্ভব হবে। আর সফটওয়্যার? বিভিন্ন সফটওয়্যারের নাম ধরে ধরে ডাউনলোড লিঙ্ক দিয়ে দেওয়া যতো সহজ, তার রিভিউ লেখা অতো সহজ হয়না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে যেসব ব্লগের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা বেশি, সেখানেই ব্যাকলিঙ্কের প্রয়োজনীয়তাও বেশি হয়ে পড়ছে। অনেক সময়েই দেখা যায়, অন্যদের আগেই একটি পোস্ট প্রকাশ করার তাড়ায় নিজের কিছু ইউনিক লেখারই সময় পাননা অনেকে। ফলে দেখা যায় যে পোস্টের লেখায় পড়ে রয়েছে গান/সিনেমার নাম, অভিনেতা/অভিনেত্রীদের নাম, সঙ্গীতকারের নাম ইত্যাদি, কিন্তু এই একই নামধাম উপস্থিত অন্য হাজার হাজার ব্লগে। তাড়াহুড়োয় ইউনিক কিছু লেখাই হলোনা, ফলে পরে মন খারাপ, প্রথম পাতায় স্থান হলোনা বলে। তখন মন চলে যায় বিভিন্ন ফোরামে, নেটওয়ার্কিং সাইটে গিয়ে লিঙ্ক দেওয়ার দৌড়ের দিকে।
প্রতিযোগিতার এই দৌড়ে প্রথমের দিকে স্থান পেয়ে যায় কারা? যারা বিনোদন বানিজ্যের কিছু ব্যাক্তিদের চেনেন, যারা গানের এলবাম কিম্বা সিনেমা রিলিজের আগেই সেই খবর পাচ্ছেন, যারা ছবির প্রিমিয়ার দেখার সুযোগ পাচ্ছেন, তারা অনেকটাই সময় পাচ্ছেন নিজেরা ঘরে বসে ইউনিক একটা রিভিউ লেখার। অনেক টেকি’রা আছেন যারা সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ রেখে চলেন, তারাও সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার রিলিজের আগেই খবর পান এবং রিভিউ লিখতে পারেন।
এর পরে ব্যাক্তিগত পর্যায়ের ব্লগাররা সেইসব লেখা দেখে তাড়াহুড়ো করে নিজেদের মতো করে ওই একই ভাষা সামান্য বদলে পোস্টে প্রকাশ করে দিচ্ছেন। লেখাটি হয়ে রইলো আধা ইউনিক আধা কপি করা। আর ব্যাকলিঙ্ক পাচ্ছে ওইসব ওয়েবমাস্টাররা যারা অন্যদের আগে সব লেখার সুযোগ পেয়েছিলেন। সুতরাং এই প্রথম সারির ওয়েবমাস্টার যদি না হতে পারেন, তাহলে গান/সিনেমা/সফটওয়্যারের ব্লগ বানানোর আগে দশবার ভেবে ব্লগিং শুরু করাই ভাল। ব্যাকলিঙ্ক পাওয়ার প্রচলিত টিপস অনুযায়ী প্রচুর অন্য ফোরামে আর ব্লগে মন্তব্য রেখে আসলেও আপনি একাই তা করছেন না, তাইনা? সুতরাং প্রতিযোগিতা সেখানেও! এতো পরিশ্রমের পরে বদলে কতোটুকু আপনি পুরষ্কার পান?
তবুও অনেকটাই সাফল্য পেতে পারেন, অন্যদের থেকে বাড়তি কিছুটা! তবে এর জন্য বাড়তি কষ্টও করতে হবে। ইউনিক কিছু করতে পারবেন। পাঠকও পাবেন বাড়তি। সব রিভিউ লিখে লিখেই করতে হবে তার কি কোনো মানে আছে নাকি? আজকাল মোবাইল ফোনে সুন্দর ভিডিও চিত্র করা যায়, উপযুক্ত ব্যবহার করুন সেটার! বাড়িতে বসে নিজেই ইন্টারভিউ দেওয়ার মতো করে রিভিউ রেকর্ড করুন, ইউটিউবে আপলোড করে দিন। এর পরেই দেখুন কেমন সাড়া মেলে। বাংলায় অভূতপূর্ব ব্যাপার এবং ইউনিক ব্যাপার হবে সেটা। কয়জন ব্লগার নিজেই ভিডিও বানিয়ে গান/সিনেমার ব্যাপারে এইভাবে রিভিউ দিতে পারেন? প্রতিযোগিতা এখানে কম। ইউটিউবে কি দেখেননি, অনেকেই ঘরের মধ্যে, টেবিলে বসে কিম্বা বাড়ির ছাদে হাঁটতে হাঁটতে ভিডিও রেকর্ড করে ফেলছে এবং আপলোড করে দিচ্ছে? সেইসব চ্যানেলের গ্রাহকসংখ্যা দেখেছেন?
টেকি ব্লগারদের সুবিধা আছে এই ব্যাপারে। লেখা নিজের হলে তার মান যেমন হয় উন্নত, তেমনি সকলের আগে লেখা প্রকাশের তাড়া থাকেনা, লেখার ধরন অন্যদের থেকে আলাদা হলেই অনেক ভালো হয়। ব্যাকলিঙ্ক আপনা হতেই আসে অনেক। এইসব ব্লগে প্রয়োজন পাঠকের প্রশ্নের উত্তর নিয়ে হাজির থাকা, সর্বদা তাদের সাথে যোগাযোগ রেখে চলা। এতেই অনেক অনেক জনপ্রিয়তার সৃষ্টি হয়। ব্যাঙের ছাতার মতো লাখ লাখ ব্লগ, টেকিদের ভক্তরা তাদের পাতায় লিঙ্ক করেই ফেলে। ব্লগে একটি Digg/Twitter/Facebook সাবমিট বোতাম রাখলে আরোই ভালো হয়। অনেকেই শর্ট লিঙ্ক দিয়ে ট্যুইটারে স্বয়ংক্রিয় ট্যুইট করেন, ফেসবুকেও তা করা যায়! ব্যবহার করুন সেটা। টেকি ব্লগাররাও ভিডিওর মাধ্যমে নিজেদের ইউটিউব দ্বারা ব্লগ/ওয়েবসাইটের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারবেন। এর জন্য আলাদা করে ভিডিও ক্যামেরা কিনতে হচ্ছেনা, মোবাইলের ক্যামেরা দিয়েই শুরু করে দিন। যেন আপনি ক্লাশে পড়াচ্ছেন, এইভাবে রেকর্ড করুন এবং ব্লগেও ওই ভিডিওর কপি এমবেড করে দেবেন। ইউটিউব চ্যানেলেই ভিডিওর বিবরনে ব্লগ পোস্টের লিঙ্ক দেবেন। এর পরে দেখুন ব্যাকলিঙ্ক কোথা কোথা থেকে উপচে পড়ে।
এইভাবে আপনি আপনার কাজ করে যাবেন, অন্যরা তাদের নিজেদের তাগিদেই আপনার দিকে লিঙ্ক পাঠাবে। পরিশ্রম সার্থক হবে, মজাও পাবেন, আপনার মূল্যবান সময়ের সঠিক পারিশ্রমিক পাবেন অনেক দিক দিয়ে। এইভাবে একটু ভিন্ন উপায় অবলম্বন করলেই আপনিও হয়ে উঠতে পারবেন নামীদামী ব্লগার, অন্যত্র গিয়ে আর মন্তব্য ছেড়ে আসার ভাবনা ভাবতেই হবেনা আর।
আমি একেবারেই বলছিনা যে অন্যদের ব্লগে/ফোরামে মন্তব্য করবেন না! অবশ্যই তা করবেন, সকলের সাথেই যোগাযোগ রেখে চলবেন। আমি বলছি যে নিজের কাজের মান উচ্চ থেকে উচ্চতর করুন, তাতে অন্যরাই আগ্রহী হবেন আপনার দিকে লিঙ্ক করতে, যার অর্থ আপনার জন্য মূল্যবান ব্যাকলিঙ্ক। আপনি আপনার কাজের মধ্যেই থেকে নিজের ব্লগের উন্নতি করতে করতেই ব্যাকলিঙ্ক পাবেন, আলাদা ভাবে কষ্ট করতে হবেনা, সময় বের করে রোজ dofollow ফোরামে/ব্লগে গিয়ে মন্তব্য রেখে আসার চিন্তাই করতে হবেনা যদি নিজের ব্লগ’কে নানাভাবে ইউনিক করে তুলতে পারেন।
উপরে ইউটিউবের একটি আইডিয়া আমি দিয়েছি, ভিডিও মার্কেটিং/পাবলিসিটি আজকাল অনেক চলছে, বাঙালী ব্লগাররা খুব একটা এর লাভ তুলতে পারেননি এখনও। শুরু করুন, চেষ্টা করতে করতেই হবে। নিজের হাতে উপস্থিত ইলেক্ট্রনিক গেজেটকেই কাজে লাগিয়ে এই কাজে লেগে পড়তে পারেন। অবসরে বসে এমন আরো উপায় ভেবে বের করুন, কাজে লাগান সেইসবকে।
অসীম সম্ভাবনাময় এই ইন্টারনেটে ‘ইউনিক’ কথার মানে শুধুই এই নয় যে আপনার লেখার ডুপ্লিকেট কপি আর কোথাও নেই। অন্য অনেক উপায়েই ইউনিক হওয়া যায়। শেষ করার আগে আরেকটি জরুরী কথা বলে শেষ করতে চাই। এই ইউনিক কথা রেশ ধরেই এই প্রসঙ্গে আসছি, অনেক বাঙালী ব্লগারদের মধ্যে প্রবণতা আছে যে তারা একই লেখা বিভিন্ন ব্লগে প্রকাশিত করেন। তাদের নিজেদেরই লেখা, তারা নিজেরাই টেকনিক্যালি ডুপ্লিকেট করে ফেলেন। তারা অনেকেই ভাবেন যে মূল লেখার মালিক যেহেতু তারাই, তাই ডুপ্লিকেট কেন হবে!
লেখার মালিক আপনিই, সেই বিষয়ে কথা নয়, কথা হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিনের রোবট এইটা বুঝবেনা যে লেখক একজনই। রোবট মানুষ নয়, তাই সে মানুষ দেখবেনা, দেখবে লেখাটি। রোবট হুবুহু লেখা পেলে সেটিকে ডুপ্লিকেট কন্টেন্ট হিসেবেই ধরে নেবে। অল্প দুই চারটি শব্দ পরিবর্তন করে দিলেও লাভ হবেনা, গুগল রোবটের algorithm সম্বন্ধে যাদের ধারনা নেই, তারা শিউড়ে উঠবেন, ৭০-৭৫% বেশি লেখা হুবুহু পেলেই সেটাকে ডুপ্লিকেট ধরে নেবে রোবট। আমার অনুরোধ, নিজের লেখাকে নিজেই ডুপ্লিকেট বানিয়ে ফেলবেন না। যদি অন্যান্য ব্লগ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনেক পাঠকের কাছে লেখা পৌছে দিতেই হয়, তাহলে বড়জোর প্রথম প্যারাগ্রাফ কপি করে বাকিটা মূল লেখার দিকে লিঙ্ক করে দিন (আবারও ব্যাকলিঙ্ক)।
তাই বেশী ব্যাকলিংক পওয়ার আশায় নিজেই নিজের ক্ষতি করবেন না
মূল পোস্ট সহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ন পোস্ট-http://adf.ly/293195/com
আমি kiron492। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 5 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
খুব জরুরী টিউন প্রশংসাযোগ্য………………..ধন্যবাদ।