আজকাল সবার হাতেই স্মার্টফোন। স্মার্টফোন অবশ্যই টেকনোলজির এক অনন্য আবিষ্কার। এবং এই স্মার্টফোন ব্যবহার করেই আমরা যে কারো সাথে পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় বসে ভিডিও চ্যাট করতে পারি। এমনকি ইন্টারনেটে কানেক্ট হয়ে যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। স্মার্টফোন এর অনেক সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও আছে। এবং এই অসুবিধার মধ্যে সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি বেশ বড় আকার ধারণ করেছে সেটি হল “স্মার্টফোন আসক্তি”।
স্মার্টফোন এর নানা ফিচারের কারণে স্মার্টফোন আমাদের সারাক্ষণ ইন্টারনেটে আমাদের বন্ধুদের সাথে কানেক্টেড রাখে। এবং দেখা যায় ফেসবুক এর মত সোশ্যাল সাইটগুলো থেকে একটু পর পর এ নানা ধরনের নোটিফিকেশন আসে। এবং সেগুলো চেক করতেই আমরা ফেসবুক এ ঢুকি। এরকম ভার বার বার হতে হতে আমাদের একরকম অভ্যাস হয়ে যায় ফেসবুক চেক করার। আবার কেউ মেসেজ দিলে সেই ম্যাসেজ এর রিপ্লাই দিতে গিয়ে অনেক টাইম চলে যায়।
এই যুগে সবচেয়ে বেশি দামি জিনিস হল সময়। কারণ সময় একবার চলে গেলে আর কখন ফেরত পাওয়া যাবে না। আর যেহেতু আমরা স্মার্টফোনেই সবচেয়ে বেশি সময় দেই তাই আমাদের এই স্মার্টফোন আশাকরি আপনার স্মার্টফোন ব্যবহার আগের থেকে অনেক কমে যাবে।
এছাড়াও স্মার্টফোনের এমন অনেক অ্যাপ আছে যেগুলো আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করতে পারে। এবং এই অ্যাপগুলো ডিজাইন করা হয় এভাবে যে আপনি একবার অ্যাপে ঢুকলে সহজে আর বার হতে পারবেন না। যেমন ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখা শুরু করলে তখন নিচের আরো একটি ভিডিও ভাল লেগে যায়। সেই ভিডিও দেখতে গিয়ে আরেকটি ভিডিও দেখতে ইচ্ছে করে। এভাবে ভিডিও দেখা চলতেই থাকে। এবং আমরা আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে ফেলি।
গাড়িতে থাকাকালীন ফোন চেক করবেন না। যারা গাড়ি চালান তারা প্রায় সবাই গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ব্যবহার করতে থাকেন। এতে যেমন নিরাপত্তা ঝুকি থাকে তেমনি আমাদের সময় নষ্ট হয়। তাই গাড়ি চালানোর আগে স্মার্টফোনটিকে কিছুটা দূরে রাখতে হবে। এছাড়াও কিছু অ্যাপের মাধ্যমে স্মার্টফোন ড্রাইভ মুড সেট করে নেয়া যায়। এতে আপনার স্মার্টফোনের নোটিফিকেশন আসা নিয়ন্ত্রন হবে এবং আপনি ভালভাবে গাড়ি চালাতে পারবেন।
এরকম একটি অ্যাপ ড্রাইভমুড ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
বাইরে থাকার সময় আমারা ফোন পকেটে নিয়ে ঘুরলেও বাসায় সবসময় ফোন হাতে থাকে। তাই দেখা যায় আমরা বাসার কাজগুলোতে মনোযোগ দিতে পারি না। এতে বাসার কাজগুলো ঠিকভাবে হয় না। তাই অবসর সময়গুলতে স্মার্টফোন না ধরার চেষ্টা করবেন। যেমন টিভি দেখার সময় স্মার্টফোনকে নিজের থেকে দূরে রাখুন। এতে স্মার্টফোন এর দিকে আপনার নজর যাবে না। এবং স্মার্টফোন এর কথা কম মনে পরবে। কারণ দেখা যায় আমরা যখনই মাত্র একটা জিনিস দেখার জন্য স্মার্টফোন ধরি তখন দেখা যায় ফেসবুক বা টুইটারে আমাদের আমাদের ঘণ্টাখানেক টাইম এমনিতেই চলে যায়। তাই কোন কাজ করার সময় ফোন একটু দুরে রাখুন।
বই নিয়ে পরতে বসলেই আমাদের বার বার স্মার্টফোন এর কথা মনে পরে। তাই আমরা যখন পরতে বসি তখন ঠিকভাবে পরা হয় না। এছাড়াও অন্য যেকোনো জিনিস পরতে বসলেও বার বার মনে হয় ফোনটা চেক করা দরকার। তাই আপনি যখন কোন কিছু করতে বসবেন তখন ফোন ব্যবহার করবেন না। এবং ফোনকে আপনার নাগালের বাইরে রাখুন। যেন আপনার স্মার্টফোনটি আপনার চোখে না পরে।
আমরা বেশিরভাগ সময় ফোন চেক করি কারণ আমারা নোটিফিকেশন এর শব্দ পাই। তাই এই সমস্যা থেকে বাচতে অনেকেই মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখেন। কিন্তু এতে দেখা যায় জরুরি ফোন আসলে আমরা রিসিভ করতে পারি না। তাই ফোন সাইলেন্ট না করে নির্দিষ্ট অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখবেন।
এছাড়াও ইমেইল নোটিফিকেশন বন্ধ রাখলেও কিছুটা সময় বাঁচবে। আপনি আন্ড্রয়েড এর অ্যাপ ম্যানেজার থেকে যেকোনো অ্যাপের নোটিফিকেশন বন্ধ করতে পারবেন। এবং নতুন অ্যাপ ডাউনলোড করে ইনস্টল করার পর সাথে সাথে অ্যাপটির নোটিফিকেশন বন্ধ করে ফেলুন।
আপনি যখনই ফোন হাতে নিবেন তখনই একটি নির্দিষ্ট টাইম সেট করে নিন। এবং সেই টাইম পর্যন্তই ফোন চালান। এতে আপনার বাড়তি সময় নষ্ট হবে না। এবং এভাবে টাইম সেট করে ফোন চালালে একসময় অভ্যাস হয়ে যাবে এবং আপনি আর বেশি টাইম একসাথে ফোন চালাবেন না। এই কাজ করার জন্য আন্ড্রয়েড এর একটি অ্যাপ আছে যার নাম কোয়ালিটি টাইম। অ্যাপটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। এই অ্যাপ দিতে আপনি যেকোনো অ্যাপে কতক্ষণ থাকবেন তা ঠিক করে দিতে পারবেন।
এই সমস্যাটি অনেকেরই আছে। যখন কেউ একটু সময় এর জন্য একটু বিরতি পায় কাজ থেকে তখন সে আর কিছু না করে মোবাইলটা একটু চেক করে। যেমন ১ মিনিট এর জন্য চেয়ার ছেরে উঠলেন বা কোন কারণে আপনার দুইটি কাজের মাঝখানে কিছু সময় ব্রেক আছে। তখন আপনি যদি ফোন চালান তাহলে আপনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ টাইম নষ্ট হবে। কারণ স্মার্টফোন শুধু ১ মিনিট চালানো কার পক্ষেই সম্ভব না। তাই এই ফ্রী টাইমগুলোতে রেস্ট নিন। তাহলে আপনি পরবর্তী কাজ ভালভাবে করতে পারবেন।
বিছানায় যখন আপনি ঘুমাতে যান তখন ফোন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ এই অভ্যাস একবার হয়ে গেলে আপনার রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হবে। এছাড়াও কিছু অ্যাপের মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট সময় এর জন্য যেকোনো অ্যাপ কে ব্লক করে দিতে পারবেন। ফলে ঐ সময় ঐ অ্যাপে আপনি ঢুকতে পারবেন না। তাই ফেসবুক এ যেই টাইম দিতেন সেটা আপনি অন্য কোন কাজে ব্যায় করতে পারবেন। আন্ড্রয়েড এর জন্য এমন একটি অ্যাপ হল অফ-টাইম। অ্যাপটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
আমারা যখন ফোন ওপেন করে ফেসবুক, টুইটার বা হোয়াটসঅ্যাপ এর নোটিফিকেশন একবার দেখি তখন শেষে আবার সবগুলো দেখতে ইচ্ছে করে। এতে দেখা যায় নতুন আবার আমাদের অনেক সময় চলে যায়। তাই কোন অ্যাপ চালানোর পর সাথে সাথে অ্যাপ থেকে বের হয়ে যেতে হবে। এবং মাঝে মাঝে এই ধরনের অ্যাপগুলো আনইন্সটল করে দেখতে পারেন আপনি সেগুলো ছাড়া থাকতে পারেন কিনা।
উপরের কাজগুলো করার পরও যদি আপনার স্মার্টফোন এ আসক্তি না কমে তাহলে আপনার জন্য এটি বিরাট এক সমস্যা। তাই আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে আপনি সর্বনিম্ন কতক্ষণ ফোন চালন। তারপরে আসতে আসতে সেই টাইমটাকে কমিয়ে ফেলতে হবে। এবং ফোন এর বাইরে বেশি সময় দিতে হবে। খেলাধুলা করতে হবে। বই পরতে হবে। এবং যত পারেন আপনার স্মার্টফোন এর কথা ভুলে থাকবেন। এবং যখন প্রয়োজন হবে না তখন ওয়াইফাই বা নেট কানেকশন বন্ধ করে রাখবেন। এতেও অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশন আপনার টাইম নষ্ট করতে পারবে না।
আশাকরি উপরের পদ্ধতি-গুলো প্রয়োগ করে আপনি স্মার্টফোন এর প্রতি আসক্তি দূর করতে পারবেন। এটি একদিনে করা সম্ভব নয়। তাই চেষ্টা করতে থাকুন। এবং টিউনটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এই টিউন কেমন লাগলো তা অবশ্যই টিউমেন্ট করে জানাবেন। সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।
আমি আশরাফুল ফিরোজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 77 টি টিউন ও 35 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।