আপনি যদি কখনো ভাবেন ইন্টারনেটে কেউ আপনাকে দেখছে না। তাহলে আপনি ভুল। কারণ আপনি যেই ওয়েবসাইটেই ভিজিট করুন না কেন বা আপনার কম্পিউটার যেসব আইপির সাথে কানেক্টেড তা আপনার আই.এস.পি বা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার চাইলেই বের করতে পারবে। তাই অনেকেই ভি.পি.এন ব্যবহার করে এই সমস্যা থেকে বেচে সিকিউর থাকতে চান।
কারণ যখন কেউ ভি.পি.এন ব্যবহার করে ইন্টারনেটে কানেক্টেড হয় তখন তার সব ডাটা ভি.পি.এন এর প্রাইভেট নেটওয়ার্ক দিয়ে আদান প্রদান হয়। তাই বলাই যায় যদি কেউ যদি ভাল মানের ভি.পি.এন সার্ভিস ব্যবহার করে তাহলে সে ইন্টারনেটে অনেকটাই সুরক্ষিত। কিন্তু তারপরেও কিছু সমস্যা থেকেই যায়।
মনে করুন আপনি ভিপিএন ব্যবহার করে টরেন্ট এর মাধ্যমে একটি ফাইল ডাউনলোড করছেন। এবং এমন সময় আপনার ভি.পি.এন ডিসকানেক্ট হয়ে গেলে আপনি যেই টরেন্ট ক্লায়েন্টই ব্যবহার করেন না কেন সব টরেন্ট সফটওয়্যার ফাইল এর ডিরেক্ট লিঙ্ক থেকে ফাইল আবার ডাউনলোড শুরু করে দিবে। কিন্তু এতে আপনার আসল আইপি সার্ভার এর কাছে ফাঁস হয়ে যাবে। ফলে আপনার আর নিরাপত্তা থাকলো না। তাই ভি.পি.এন ব্যবহার করে আসলে কোন কাজ হল না।
এমন কিছু সফটওয়্যার আছে যেগুলো ব্যবহার করে এই সমস্যা থেকে বাচা যায়। অর্থাৎ যখনই আপনার ভি.পি.এন কানেকশন বন্ধ হয়ে যাবে তখনই আপনার কম্পিউটারের সাথে ইন্টারনেটের সব ডাটা আদান-প্রদান বন্ধ হয়ে যাবে। কিছু কিছু ভি.পি.এন এ এই সুবিধা দেয়া থাকে।
কিন্তু অনেক ভি.পি.এন ভাল সার্ভিস দিলেও এইই ধরনের সমস্যা কারণে ইউজারের নিরাপত্তা নষ্ট হয়ে যায়। তাই আজকে আমি আপনাদের এমন ৫টি সফটওয়্যারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব যারা এই এই সমস্যা থেকে আপনাকে বাচাতে পারে। অর্থাৎ এই সফটওয়্যারগুলো অটোমেটিক ভাবে যখনই ভি.পি.এন ডিসকানেক্ট হবে তখনি সব ডাটা কানেকশন বন্ধ করে দিবে।
ভিপিএন ওয়াচার আপনার ভিপিএন কানেকশন মনিটর করবে এবং যখনই দেখবে আপনার ভিপিএন কানেকশনে কোন সমস্যা হয়েছে বা ভিপিএন কানেকশন ডিসকানেক্ট হয়ে গেছে তখন সফটওয়্যারটি সাথে সাথে আপনার সব আপলোড-ডাউনলোড বন্ধ করে দিবে। অর্থাৎ আপনার পরিচয় আর সার্ভারের কাছে ফাঁস হয়ে যাবে না। ভিপিএন ওয়াচার সফটওয়্যারটি নিজে নিজে কাজ করে।
ভিপিএন ওয়াচার সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা খুব সহজ। প্রথমে আপনাকে যেকোনো ভিপিএন প্রভাইডার থেকে ভিপিএন সার্ভিস নিতে হবে। অনেক ভাল ফ্রী ভিপিএন আছে। তবে আপনি যদি সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে চান তবে কিনে ব্যবহার করাই ভাল। তারপরে আপনি ভিপিএন সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে ইনস্টল করুন।
তারপরে সফটওয়্যার ওপেন করে আপনি যেই সফটওয়্যারের উপর কাজ করতে চান সেই সফটওয়্যারটি অ্যাড করুন। অ্যাড করা সহজ। শুধু মাত্র সফটওয়্যারটির লোকেশন দেখিয়ে দিলেই হবে। এবং তাহলেই হবে। এর পরে যখনই আপনি ভিপিএন এ কানেক্টড হবে তখন সফটওয়্যারটি আপনার অ্যাড করা সফটওয়্যারটি চালু করে দিবে। এবং ভিপিএন ডিস্কানেক্ট হয়ে গেলে সফটওয়্যারের সাথে ইন্টারনেটের সব কানেকশন বন্ধ করে দিবে।
সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
ভিপিএন লাইফগার্ড একটি ফ্রী এবং ওপেন সোর্স পোর্টেবল সফটওয়্যার। যেটি সফটওয়্যারকে আনসিকিউরড কানেকশনে কানেক্ট হতে বাধা দিবে। অর্থাৎ যদি কোন কারণে ভিপিএন ডিসকানেক্ট হয়ে যায় তাহলে এই সফটওয়্যারটি সাথে সাথে সব সফটওয়্যারের সাথে ইন্টারনেটের কানেকশন বন্ধ করে দিতে পারবে।
সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে হলে প্রথমে আপনাকে যেকোনো ভিপিএন নেটওয়ার্কে কানেক্ট হতে হবে। এবং তারপরে সফটওয়্যারটি “Run as administrator” দিয়ে রান করতে হবে। এবং তারপর সফটওয়্যার ওপেন হলে “Config” বাটনে ক্লিক করতে হবে। এতে সফটওয়্যারটি অটোমেটিক আইপি অ্যাড্রেস এবং লোকাল গেটওয়ে সেট করে নিবে।
এবং উপরের দিকে “Browser” নামে একটি অপশন পাবেন সেখান থেকে আপনি আপনার সফটওয়্যারটি দেখিয়ে দিন। তাহলেই কাজ শেষ। তারপরে নিচের “Close” বাটনে ক্লিক করুন। এবার সফটওয়্যারটি নিজের থেকেই আপনার ভিপিএন কানেকশন মনিটর করবে। সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
আগের সফটওয়্যারের সব ফিচারগুলো এই সফটওয়্যার পাবেন। তবে এর সাথে আর কিছু ফিচার পাবেন। সফটওয়্যারটির দুইটি ভার্সন আছে। একটি ফ্রী আরেকটি কিনতে হবে। ফ্রী ভার্সনটি অনেক ভাল কাজ করে। তবে আপনি যদি আরো ফিচার পেতে চান তবে প্রো ভার্সন ব্যবহার করে দেখতে পারেন। ভিপিএন চেক সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে আপনি আপনার ভিপিএন কানেকশন এর উপর নজর রাখতে পারেন।
সফটওয়্যারটি ওপেন করলে নিচের মত একটি উইন্ডো দেখতে পাবেন। সেখান থেকে আপনি সফটওয়্যারের অপশন পরিবর্তন করতে পারবেন। “Config” বাটনে ক্লিক করে আপনি নিজের মত করে সফটওয়্যার অ্যাড করে ঠিক করে নিন। এবার দেখুন নিচে দুইটি অপশন আছে। “Cycle Ip:Task, Cycle IP:Network”। আপনি যদি যদি আপনার কম্পিউটারের সব কানেকশন ডিজেবল করতে চান তবে দ্বিতীয় অপশনটি তে ক্লিক করবেন। সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
এতক্ষণ আমি দেখিয়েছি কিভাবে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে যেকোনো সফটওয়্যারের ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করা যায়। আপনার ইন্টারনেটের ডিফল্ট গেটওয়ে বন্ধ কর এই কাজটি করা সম্ভব। পুরো ব্যাপারটি কিছুটা জটিল হলেও ব্যাচ ফাইল এর মাধ্যমে খুব সহজেই এই কাজ করা যায়।
তবে আপনাকে এই কাজটি করার জন্য ব্যাচ ফাইল সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিতে হবে। কারণ অনেক সময় এই ব্যাচ ফাইলের ভুল ব্যবহারের ফলে আপনার কম্পিউটারের ক্ষতি হতে পারে। তবে এরকম কয়েকটি ভাল ব্যাচ স্ক্রিপ্ট আপনি বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেখেছি। আপনারা একটু খুঁজলেই সেগুলো পেয়ে যাবেন। তবে আমার মনে হয় আপনাদের জন্য সফটওয়্যার ব্যবহার করাই সহজ হবে।
উইন্ডোজ টাস্ক শিডিউলার ব্যবহার করে আমরা ইচ্ছে করলে উপরের কাজগুলো করতে পারি। এবং এর জন্য আপনাকে কোন সফটওয়্যার ইনস্টল করতে হবে না। এর জন্য প্রথমেই উইন্ডোজ সার্চ বার থেকে সার্চ দিয়ে “Task Scheduler” নামের সফটওয়্যারটি ওপেন করুন।
এবার মেনুবার থেকে “Action” নামের অপশনটি তে ক্লিক করে সেখান থেকে “Create Task” এ ক্লিক করুন। তারপরে সেখান থেকে “Trigger” ট্যাবে গিয়ে “New” বাটনে ক্লিক করুন। এবার নিচের মত সেটি সেটিং করে নিন। এবার “Ok” বাটনে ক্লিক করুন।
এবার “Actions” ট্যাবে ক্লিক করুন। সেখান থেকে “New” বাটনে ক্লিক করুন। নিচের মত করে সেটিং করে নিন। এবং “Add arguments” বক্সে আপনি যেই সফটওয়্যারে কাজ করতে চান তার নাম দিবেন। তাহলেই কাজ শেষ।
আজ এ পর্যন্তই। আশা করি আপনারা আমার টিউন থেকে কিছু হলেও শিখতে পেরেছেন। তবে যদি টিউনটি ফলো করার সময় কোন সমস্যা হয় তবে টিউমেন্ট করতে ভুলবেন না। সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন।
আমি আশরাফুল ফিরোজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 77 টি টিউন ও 35 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।