কে জানতো বলুন, অনলাইনে অ্যাননিমাস থাকার সবচাইতে বেটার পদ্ধতি হচ্ছে পেঁয়াজের পেছনে লুকিয়ে পড়া! —জী না, এখানে কোন শাকসবজির কথা বলা হচ্ছে না, কথা বলা হচ্ছে আজব এক ইন্টারনেট ব্রাউজার দ্যা অনিয়ন রাউটার (The Onion Router) সম্পর্কে; যেটাকে হয়তো আপনি টর ব্রাউজার (TOR Browser) নামে চেনেন।
আপনারা সবাই পেঁয়াজের গঠন তো নিশ্চয় জানেন, একটি পেঁয়াজের অনেক গুলো কভার থাকে এবং একটি কভার খুললে আরেকটি কভার, আরেকটি খুললে আরেকটি, এভাবে আসতেই থাকে। টর অনেকটা এই ধারণা অনুসরন করেই অনলাইনে আপনার পরিচয় গোপন রাখতে সাহায্য করে। বিশ্ব জুড়ে বহু সাইবার ক্রিমিন্যাল, কম্পিউটার গুরু, এমনকি অনেক সাধারন ইউজার গভর্নমেন্ট, অনলাইন বিজ্ঞাপণ, পার্সোনাল ডাটা গুলোর দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে টর ব্যবহার করে।
এই টিউনে আমি আলোচনা করবো, কিভাবে টর ব্রাউজার ব্যবহার করে আপনি অনলাইনে অ্যাননিমাস থাকতে পারবেন এবং টর ব্রাউজার সত্যিই কতোটা সিকিউর সেই ব্যাপারেও বিস্তারিত আলোচনা করবো। কি? সবকিছু জানার জন্য অনেক উত্তেজনা ফিল করছেন, তাই না? তো দেরি কিসের? সম্পূর্ণ টিউনটি এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলুন!
যারা ডীপ ওয়েব, ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে হালকা একটুও জানেন, তাদেরই টর নেটওয়ার্ক সম্পর্কে শোনার কথা। প্রাথমিকভাবে টর নেটওয়ার্ক একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক সার্ভার; যা ইউএস নেভি দ্বারা উন্নয়নকৃত এবং বিশ্বব্যাপি ইউজারদের অনলাইনে তাদের পরিচয় লুকিয়ে রাখার জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিলো। টর প্রোজেক্ট মূলত একটি অলাভজনক সংগঠন; যারা অনলাইন গোপনীয়তা টুল তৈরি করাকে গবেষণার মূল লক্ষ্য হিসেবে দেখে।
টর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার জন্য মূলত একটি ব্রাউজারের দরকার হয়, যার নাম টর ব্রাউজার। টর ব্রাউজার ফায়ারফক্স ব্রাউজারের উপর মডিফাই করা একটি ব্রাউজার, যেটা টর প্রজেক্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ডাউনলোড করা সম্ভব। ব্রাউজারটি জাস্ট আপনার সিস্টেমে ইন্সটল করার মাধ্যমেই আপনি এই নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড হয়ে পড়তে পারবেন, কোন আলাদা সেটিংস ঠিক করার প্রয়োজনীয়তা পড়বে না।
টর নেটওয়ার্কে আপনার অনলাইন পরিচয়কে ছদ্মবেশে বিভিন্ন টর সার্ভার দিয়ে এনক্রিপশন করিয়ে তারপরে সেই ট্র্যাফিককে নির্দিষ্ট স্থানে পাঠানো হয়; ফলে আপনার পরিচয় ট্র্যাক করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আজকের যেকোনো সাধারন ব্রাউজারে ইনকগনিটো মুড বলে একটি ফিচার থাকে, আমরা মনে করি এটি ওপেন করে নেট সার্ফ করলে আমাদের পরিচয় গোপন থাকবে, আসলে এটি ঠিক না। এতে শুধু ব্রাউজারে আপনার ব্রাউজিং হিস্টরি সেভ হবে না, কিন্তু আপনার আইএসপি সবকিছু জানতে পারবে আপনি কোথায়, কখন এবং কি ভিজিট করছেন অনলাইনে।
সাধারনত আমরা ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য কি করি; যেকোনো পছন্দের ব্রাউজার ওপেন করে অ্যাড্রেস লিখে ঢুকে পড়ি। এরপরে আপনার রিকোয়েস্টটি আপনার কম্পিউটার থেকে আপনার আইএসপির কম্পিউটারে গিয়ে পৌঁছায় এবং আপনার আইএসপি আপনার রিকোয়েস্ট করা ওয়েব সার্ভারের কাছে পেজ চেয়ে অনুরোধ করে; একবার পেজটি পাওয়া গেলে সেটাকে আপনার কম্পিউটার পর্যন্ত পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এখানে কিছু ফ্যাক্ট লক্ষ্য করুন; আপনি কোন সাইট ভিজিট করতে চাচ্ছেন সেটা সর্বদা আপনার আইএসপি জানছে আবার আপনি যে সাইট ভিজিট করছেন সেই সাইটও আপনার কম্পিউটার এবং আপনার আইএসপি সম্পর্কে জেনে যাচ্ছে। কেনোনা আপনার ভিজিট করা সাইটের কাছে আপনার আইপি অ্যাড্রেস চলে যাচ্ছে। তো এভাবেই অনলাইনে আমাদের পরিচয় খোলাসা হয়ে যায়, এবং আমরা কি একটিভিটি দেখাচ্চি সেটাও লুকিয়ে থাকে না।
শুধু এটুকুতেই কিন্তু শেষ নয়, আপনি যে ওয়েবসাইটটি ভিজিট করছেন হতে পারে সে ওয়েবসাইটটি আপনার প্রত্যেকটি ইন্টারনেট কর্মকাণ্ড ট্র্যাক করার জন্য আপনার ব্রাউজারে কোন কুকিজ ছেঁড়ে দেয়। কোন কোন সাইট আপনার সেবার মান উন্নয়ন করতে আমার কোন সাইট আপনাকে উপযুক্ত বিজ্ঞাপণ দেখানোর জন্যও কুকিজ প্ল্যান্ট করে থাকে; যেমন- গুগল বা ফেসবুক সবাই বিজ্ঞাপণ দেখানোর জন্য কুকিজ ব্যবহার করে। কিন্তু কিছু সাইট আবার আপনার সকল ডাটা চুরি করার জন্য আপনার ব্রাউজারে কুকিজ বসিয়ে দিতে পারে। তো বুঝতেই পারছেন ইন্টারনেটে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য গুলো কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকে।
এই অসুবিধা গুলো থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য এবং বিশেষ করে আপনাকে অনলাইন প্রাইভেসি প্রদান করার জন্য টর ব্রাউজার টর নেটওয়ার্ক এর সাহায্যে কাজ করে থাকে। যখন আপনি টর ব্রাউজারে কোন অ্যাড্রেস লিখেন সেখানে প্রবেশ করার জন্য; ব্রাউজার আপনার ট্র্যাফিককে তৎক্ষণাৎ এনক্রিপটেড করে দেয় এবং সেই ট্র্যাফিককে সরাসরি ওয়েব সার্ভারের কাছে না পৌছিয়ে বিভিন্ন টর সার্ভারের মধ্যদিয়ে নিয়ে যায়।
ধরুন আপনি বাংলাদেশ থেকে টর ব্যবহার করে টেকহাবস ভিজিট করতে চাচ্ছেন, প্রথমে আপনার ট্র্যাফিককে এনক্রিপটেড করা হবে যাতে কেউ আপনার রিকোয়েস্ট পড়তে না পারে, তারপরে প্রথমে ধরুন অ্যামেরিকার সার্ভারে চলে যাবে সেখান থেকে ব্রাজিলের সার্ভারে যাবে, আবার ইন্ডিয়ান সার্ভার থেকে রাশিয়ান সার্ভার হয়ে তবেই নির্দিষ্ট ওয়েব সার্ভারের কাছে রিকোয়েস্টটি পৌঁছাবে। তো পদ্ধতিতে ঠিক কোন স্থান থেকে রিকোয়েস্টটি এসেছিলো সেটা ডিটেক্ট করা একেবারে অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
তবে এখানেও কিছু ফ্যাক্ট রয়েছে যেগুলো আপনার জানা প্রয়োজনীয়; সাধারন ইন্টারনেট ট্র্যাফিক এসএসএল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে ওয়েবসাইট এবং আপনার কম্পিউটারের মধ্যের ইন্টারনেট ট্র্যাফিককে এনক্রিপটেড করে রাখে। টর ব্রাউজারে প্রথমে আপনার ইন্টারনেট ট্র্যাফিককে এনক্রিপটেড করা হয় এবং সকল সার্ভারে এই ডাটাকে এনক্রিপ্ট করেই ট্র্যান্সমিট করানো হয়, কিন্তু ফাইনাল সার্ভার থেকে মানে যে সার্ভার থেকে ডাটাকে ফাইনালি টার্গেট ওয়েব সার্ভারের কাছে পাঠানো হয় সেখানে ডাটাকে ডিক্রিপ্ট করা হয় যদি ওয়েবসাইটটি এসএসএল ব্যবহার না করে (https)। আর ডিক্রিপ্টেড হওয়া নর্মাল ডাটা আপনার প্রাইভেসির জন্য ঝুঁকি পূর্ণ হতে পারে। তাই টর ব্যবহার করলেও আপনি যদি https সাইট ভিজিট করেন শুধু তবেই আপনার ডাটা এন্ড টু এন্ড এনক্রিপটেড থাকবে।
আবার আরেকটি বিষয়, টর কিন্তু আপনার সম্পূর্ণ কম্পিউটারের ইন্টারনেট ট্র্যাফিককে টর নেটওয়ার্ক এর আওতায় নিয়ে আসে না। কেবল সে ট্র্যাফিক গুলো লুকায়িত থাকতে পারে যেগুলো শুধু টর ব্রাউজার দিয়ে ভিজিট করা হয়। এখন ধরুন আপনার উইন্ডোজ ব্যাকগ্রাউন্ড আপডেট নিচ্ছে কিংবা আপনার ইন্সটল থাকা যেকোনো সফটওয়্যার তার সার্ভারের সাথে যোগাযোগ করছে, এক্ষেত্রে টর কোন কাজে আসবে না আর এই ট্র্যাফিক গুলো আপনার আইএসপি রীড করতে পারবে। তবে আপনি ভিপিএন ব্যবহার করে আপনার সম্পূর্ণ কম্পিউটার ট্র্যাফিককে প্রাইভেট সার্ভারের মাধ্যম দিয়ে পরিচালনা করতে পারেন এমনকি আপনার আইএসপির চোখে ধুলো দিয়ে।
উপরের প্যারাগ্রাফ দুইটি পড়ে নিশ্চয় বুঝে গেছেন, টর তখনোই সম্পূর্ণ সিকিউর হবে যখন এতে আপনি আরো বিষয়কে মাথায় রাখবেন। টরের যে ফাইনাল সার্ভার থেকে ওপেন ইন্টারনেটের কাছে রিকোয়েস্ট পাঠানো হয়, সেটাকে ট্র্যাক করা যেতে পারে বা মনিটর করা যেতে পারে। ফাইনাল সার্ভারটিকে এক্সিট নোড বলা হয়। সুতরাং যেমনটা আগেই বলেছি, অবশ্যই যে সাইটে আপনি ভিজিট করছেন, সেটা এসএসএল ব্যবহৃত সাইট হতে হবে, না হলে আপনার ব্রাউজিং ডাটা লিক হয়ে যেতে পারে আপনাকে আপনাকে মনিটর করা যেতে পারে।
সাথে আপনার ব্রাউজারে যদি আলাদা কোন প্লাগিন ইন্সটল করেন, বা কোন ওয়েবসাইটে ব্যবহার করা ম্যালিসিয়াস কোড বা জাভা স্ক্রিপ্ট আপনার তথ্য লিক করতে পারে। যদিও জাভা স্ক্রিপ্ট কোন সিকিউরিটি রিস্ক নয়, কিন্তু তারপরেও যেখানে কথা আসছে অ্যাননিমাস থাকার বা আইপি হাইড করে রাখার, সেখানে অবশ্যই জাভা স্ক্রিপ্ট বন্ধ থাকায় ভালো। আপবার ব্রাউজারের সাথে থাকা ফ্ল্যাশ প্লেয়ার, অ্যাডোব রিডার, বা অনলাইন ভিডিও প্লেয়ার আপনার আসল আইপি অ্যাড্রেস লিক করতে পারে ঐ ওয়েবসাইটটির কাছে।
এই সমস্যা গুলো থেকে বাঁচতে বা আপনার প্রাইভেসি রক্ষার্থে অবশ্যই টরের ডিফল্ট সেটিং গুলোকে ব্যবহার করুন, নিজে থেকে কিছু মাতব্বরি করা আপনার প্রাইভেসি বা অ্যাননিমাস থাকাকে নষ্ট করে দিতে পারে।
অনলাইনের সিকিউরিটির অবস্থা দিন দিন যতো খারাপ হয়ে যাচ্ছে, অ্যাননিমাস ওয়েব ব্রাউজিং এর প্রয়োজনীয়তা প্রতিনিয়ত ততোই বেড়ে চলেছে। আমার মতো অনেক ইউজারের অনলাইন অ্যাননিমাস থাকার প্রথম পছন্দ হচ্ছে এই টর ব্রাউজার। তাই নিচে আপনার সুবিধার্থে টর ব্রাউজার ব্যবহার করার টিউটোরিয়ালটি প্রকাশ করলাম.
আপনি অনেক সাইট থেকে এই টর ব্রাউজারকে ডাউনলোড করে ইন্সটল করতে পারেন, তবে আমি রিকোমেন্ড করবো অফিশিয়াল torproject.org —থেকে সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করতে। অফিশিয়াল সাইটটি থেকে টর ব্রাউজারের অনেক ভাষা নির্বাচন করতে পারেন, আপনার ইচ্ছা মতো ভাষার একটি প্যাকেজ ডাউনলোড করে নিন।
আপনার সুবিধার্থে, https://www.torproject.org/download/download-easy.html.en —এই লিঙ্ক ক্লিক করলেই সরাসরি ডাউনলোড পেজে চলে যাবেন। সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করার পরে অবশ্যই সেটিকে ইন্সটল করতে হবে। ইন্সটল করার সময় আপনার ইন্সটলেশন লোকেশনে একটি ফোল্ডার তৈরি হবে, যেখানে টরের প্রয়োজনীয় ফাইল গুলো স্টোর হবে সফটওয়্যারটি রান হওয়ার জন্য।
আবারো বলছি, অবশ্যই টর প্রোজেক্টের অফিশিয়াল সাইট থেকে ব্রাউজারটি ডাউনলোড করুন। আলাদা সোর্স থেকে সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করলে হতে পারে, হ্যাকার সেই ইন্সটল ফাইল মোডিফাই করে সেখানে কোন ম্যালিসিয়াস কোড ইঞ্জেক্ট করে রেখেছে, যেটা আপনার প্রাইভেসি বা সিকিউরিটি নষ্ট করতে পারে।
টর ডাউনলোড এবং ইন্সটল প্রসেস শেষ করার পরে, এবার সময় এসেছে সফটওয়্যারটিকে রান করবার জন্য। সাধারণ যেকোনো সফটওয়্যারের মতো জাস্ট টর আইকনে ডাবল ক্লিক করার মাধ্যমেই সফটওয়্যারটি রান হয়ে যাবে। সফটওয়্যারটি ইন্সটল করার সময় কোন সেটিং পরিবর্তন করার দরকার নেই, জাস্ট সফটওয়্যারটির রেকমেন্ডেড সেটিং এ একে ইন্সটল করে ফেলুন। এবার সফটওয়্যারটি প্রথমে রান হয়ে টর নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্ট হওয়ার চেষ্টা করবে, আর আপনার সেটিং অনুসারে এটি নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড হয়ে যাবে। আপনার ইন্টারনেট স্পীড অনুসারে কানেক্ট হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে, একটু অপেক্ষা করায় ভালো। টর নেটওয়ার্কের সাথে কানেক্টেড হয়ে যাওয়ার পরে, ব্রাউজারটি রান হয়ে যাবে।
ব্যাস আপনি এখন নিরাপদে লুকায়িতভাবে ব্রাউজ করার জন্য প্রস্তুত, আপনার সকল ব্রাউজিং ইঙ্কামিং এবং আউট গোয়িং ট্র্যাফিক গুলো এখন টর নেটওয়ার্কের মধ্য দিয়ে আদান প্রদান হবে। আর আপনি নিরাপদ এবং অ্যাননিমাস ব্রাউজিং উপভোগ করতে পারবেন। কোন সাইটই আপনার আসল তথ্য গুলোকে কখনো ট্র্যাক করতে পারবে না, তবে আপনি ইচ্ছা করে কোন সাইটে আপনার তথ্য টাইপ করে প্রবেশ করালে সেক্ষেত্রে টর আপনার প্রাইভেসি বাঁচাতে পারবে না। আর আমি উপরে তো আলোচনা করেই নিয়েছি, আপনার কি কি বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখতে হবে!
যদি আপনি অনলাইনে লুকিয়ে থাকতে চান, মানে আপনার অনলাইন পরিচয়কে লুকিয়ে রাখতে চান তবে, হ্যাঁ, এটি করার জন্য টর নেটওয়ার্ক সবচাইতে সহজ এবং ভরসা যোগ্য ব্যবস্থা। ভিপিএন ব্যবহার করে এই কাজ করা গেলেও, ভিপিএন সাধারনত এই সার্ভিস দেওয়ার জন্য চার্জ করে থাকে কিন্তু টর ব্রাউজার সকলের জন্য ফ্রী। যদি আপনার প্রাইভেসি নিয়ে আপনি খুব সচেতন হোন কিংবা আপনার অনলাইন একটিভিটি সকলের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতে চান তবে অবশ্যই টর আপনাকে অনেক সাহায্য করতে পারে। অনেক হ্যাকার রা গভর্নমেন্ট থেকে বাঁচার জন্য টর ব্রাউজার ব্যবহার করে।
এক কথায় বলতে এই ব্রাউজার সকলের জন্য; যারা অনলাইন অ্যাড, আইএসপি, ওয়েবসাইট থেকে নিজেকে ট্র্যাক করা থেকে বিরত রাখতে চান। হতে পারে আপনি একজন পুলিশ অফিসার এবং আপনি কিছু গবেষণা করছেন, সেক্ষেত্রে আপনার গবেষণাকে গোপন রাখার জন্য টর ব্যবহার করা যেতে পারে। আবার আপনার দেশে কোন ওয়েবসাইট ব্লক করা থাকলে সেটাকে আনব্লক করার জন্য টর ব্রাউজার ব্যবহার করা যেতে পারে। পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময় টর ব্যবহার করে আপনার ডাটা গুলোকে নিরাপদ করতে পারেন।
টর নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শুধু যে অনলাইনে নিজের পরিচয় লুকানো যায় সেটা কিন্তু নয়। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সম্পূর্ণ লুকায়িতভাবে কোন ওয়েবসাইট হোস্ট করাও সম্ভব; আর এই সাইট গুলো শুধু টর ইউজাররাই ভিজিট করতে পারে, সাধারন ইন্টারনেট বা ইন্টারনেট ব্রাউজার থেকে এই সাইট গুলো অ্যাক্সেস করা সম্ভব নয়। আর এই সাইট গুলোতে সকল প্রকারের ক্রাইম সংঘটিত হয়ে থাকে, অবৈধ ড্র্যাগ কেনা বেচা, বিভিন্ন হাতিয়ার কেনা বেচা থেকে শুরু করে বিভিন্ন আতঙ্কবাদীর ওয়েবসাইট এই লুকায়িত ওয়েব সার্ফেসে পাওয়া যায়। আর আমি আপনাকে টর ব্যবহার করে কখনোই এই সকল সাইট অ্যাক্সেস করার রেকমেন্ড করি না, এতে আপনি বিপদে পড়তে পারেন। শুধু বিষয় গুলো জানানোর খ্যাতিরে এখানে শেয়ার করলাম।
টর নেটওয়ার্ক এবং টর ব্রাউজার ব্যবহার করা অনেক সহজ এবং সাধারন কাজের জন্য এটি অনেক উপকারী কিন্তু এটা মনে করবেন না আপনি টর ব্যবহার করছেন তো আপনি সম্পূর্ণ নিরাপদ। লুকিয়ে থাকা আর নিরাপদ থাকা এই দুইটি সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। টর ব্যবহার করে আপনি যদি কোন ক্রাইম করার চিন্তা করেন অথবা আপনার পেছনে যদি গভর্নমেন্ট লেগে থাকে, তারা কিছু প্রপার ওয়ার্কের মাধ্যমে সহজেই আপনাকে খুঁজে বেড় করতে পারবে।
টর নেটওয়ার্ক কে হ্যাক করার চাইতে আপনার ব্রাউজারকে হ্যাক করা বেশি সহজ কাজ। আপনি টার্গেটেড ইউজার হলে, গভর্নমেন্ট বা এনএসএ আপনার ব্রাউজারকে হ্যাক করে নেবে, আর এর ফলে আপনার সমস্ত কিছুর উপর তারা অ্যাক্সেস নিতে পারবে। তাই অবৈধ কাজ করার আগে ১০০ বার ভাবুন। আবার ধরুন আপনি টর ব্যবহার করে কোন ওয়েবসাইট ফর্মে আপনার নাম ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য প্রবেশ করালেন, এক্ষেত্রে আপনার নিজের প্রাইভেসি আপনি নিজেই নষ্ট করলেন। কোন সাইটে আপনি নিজে কোন তথ্য প্রবেশ করালে আপনি নিরাপদ থাকতে পারবেন না, সে সাইট তো জেনেই গেলো আপনি কে, তাই না?
আবার আপনি যদি টর ব্যবহার করে কোন বড় ফাইল ডাউনলোড করার কথা চিন্তা করেন, ভুলে যান, টর আপনার ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ স্পীড অনেক স্ল্যো করে ফেলবে। এক্ষেত্রে ভিপিএন আপনার জন্য বেস্ট হবে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা আপনার মাথায় রাখা উচিৎ; কোন সিস্টেমই আপনাকে ১০০% গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না, সেখানে আপনি টর নেটওয়ার্ক, ভিপিএন, প্রক্সি আর যাই ব্যবহার করুন না কেন। আপনি বেসিক কাজের জন্য যেকোনো একটি সিস্টেম ব্যবহার করুন এবং নিজের বুদ্ধি লাগিয়ে ভাবুন আপনার কি করা উচিৎ এবং কি নয়, এতে আপনার ৫০% নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়ে যাবে। আর বাকিটা সিস্টেম করে দেবে। ইন্টারনেটে কখনোই ক্রাইম করার চেষ্টা করবেন না।
আশা করছি, টিউনটি আপনার জন্য অনেক উপকারি ছিল, সাথে আপনি জানলেন টর নেটওয়ার্ক সম্পর্কে, এটি কিভাবে কাজ করে, কিভাবে আপনি টর ব্যবহার করে সিকিউর থাকবেন এবং নিজের অ্যাননিমাস থাকাকে বজায় রাখতে পারবেন। আপনার যেকোনো প্রশ্ন বা মতামতে আমাকে টিউমেন্ট করে জানাতে পারেন।
আমি তাহমিদ বোরহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 177 টি টিউন ও 680 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 43 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।
আমি তাহমিদ বোরহান। টেক নিয়ে সারাদিন পড়ে থাকতে ভালোবাসি। টেকটিউন্স সহ নিজের কিছু টেক ব্লগ লিখি। TecHubs ব্লগ এবং TecHubs TV ইউটিউব চ্যানেল হলো আমার প্যাশন, তাই এখানে কিছু অসাধারণ করারই চেষ্টা করি!
অনেক অজানা তথ্য জানলাম। অনেক অনেক ধন্যবাদ তাহমিদ বোরহান ভাইকে, দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানিয়ে আমাদের মাঝে এই রকম তথ্যবহুল টিউন উপহার দেবার জন্যে।