Ransomware; বিশ্বজুড়ে বিভীষিকা, বেঁচে থাকুন Ransomware থেকে। র‍্যানসমওয়্যার কেন রানসমওয়্যারের বাপও পারবে না আপনার পিসিতে আক্রমণ করতে(মেগা টিউন)

 

১৯/০৫/২০১৭, শুক্রবার

ইন্টারনেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় Ransomware হামলা হল বিশ্বের ৭৪টি দেশে। সোমবারের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে ৯৯টি দেশে। Encrypt করে দেয় ২,৫০,০০০ এরও বেশি কম্পিউটারের তথ্য। এর মধ্যে অনেক বড় বড় হাসপাতাল, রেলওয়ে স্টেশন, বিদ্যুৎ অফিস, গ্যাস স্টেশন, বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারও রয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫০টি দেশের ৩,৫০,০০০ এরও বেশি কম্পিউটার আক্রান্ত হয়েছে এই WannaCry/ WCry/ WannaCrypt/ Wanna Decryptor/ WannaCrypt0r 2.0 নামের এই রানসমওয়্যার দ্বারা। বেশিরভাগ Microsoft Windows Operating System এর ব্যবহারকারীরা এই Ransomware দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন।
Ransomware হচ্ছে এক ধরণের ম্যালওয়্যার। এ ধরণের ম্যালওয়্যারগুলো আক্রমণের পর কোন ক্ষতি না করার জন্য ব্যবহারকারীর কাছ থেকে Ransom বা মুক্তিপন দাবি করে। এই ধরণের ম্যালওয়্যার মূলত কম্পিউটারকে আক্রমণ করে সকল তথ্য সিজ করে ফেলে তথা কম্পিউটারের সকল তথ্য নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং ব্যবহারকারীকে তার তথ্যসমূহ ব্যবহার বা তথ্যসমূহের প্রতি যে কোন রকম প্রবেশ থেকে বাধা দেয়।
WannaCry রানসমওয়্যারটি কম্পিউটারের ডাটা Encrypt করে ফেলে এবং কম্পিউটারের ডাটা এবং তথ্য ফিরে পেতে ইউজারের কাছ থেকে ৩০০ডলার দাবি করে।

এই টাকা দেওয়ার জন্য তারা ৩দিনের(আক্রমণের সময় হতে) সময় বেধে দেয়। এই সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধ না করলে পরবর্তিতে দ্বিগুণ টাকা দাবি করে। এবং সর্বশেষ টাকা পরিশোধের জন্য আক্রমণের সময় হতে সাত দিনের সময় বেঁধে দেয়। এর মধ্যেও টাকা না দেওয়া হলে সকল ডাটা নষ্ট করে দেওয়ার হুমকি দেয়।

নিউইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক এই সাইবার আক্রমণ নিয়ে এখন পর্যন্ত বেশ কিছু তথ্য জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা:

১. এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের হাসপাতাল, স্পেনের কয়েকটি কোম্পানি, অন্য ১১টি দেশের পক্ষ থেকে আক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

২. ক্যাসপারস্কির তথ্য অনুযায়ী, ৭৪টি দেশে ৪৫ হাজার আক্রমণ চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ফেডেক্স, এনএইচএস, রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রয়েছে।

৩. মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ত্রুটি কাজে লাগানো হয়েছে। গত এপ্রিলে শ্যাডো ব্রোকার্স নামের একদল হ্যাকারের বের করা নিরাপত্তা ত্রুটি ও প্রোগ্রাম কাজে লাগিয়ে এই আক্রমণ চালানো হয়েছে।

৪. যুক্তরাজ্যের ১৬টি হাসপাতাল আক্রমণের শিকার হয়েছে। চিকিৎসকেরা রোগীদের ফাইল দেখতে পারছেন না। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেছেন, কোনো রোগীর তথ্য চুরির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

৫. ডক ফাইল থেকে শুরু করে মিডিয়া ফাইল, এক্সএল ফাইলসহ দরকারি সব ধরনের ফাইল আটকে রাখতে সক্ষম এটি।

৬. এ আক্রমণের দায় স্বীকার করেনি কেউ।

৭. Elliptic এর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী $82,644.72(৬৬,৬০,৭৬০ টাকা) ডলার দেওয়া হয়েছে এই আক্রমণকারীদেরকে (Elliptic একটি বিটকয়েন ফার্ম যা এই ঘটনাটি নজরদারি করছে)।

বাংলাদেশে অন্তত কয়েকশ' কম্পিউটার এই ম্যালওয়্যার দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে যদিও মাত্র ৩০টি কমপিউটার আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে!!

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে যেহেতু এই ম্যালওয়্যারে জটিল কোন কোড ব্যবহার করা হয়নি (কোডটাকে আরো জটিল করা যেত) তাই সামনে আরো বড় ধরণের সাইবার হামলা অপেক্ষা করছে, হামলাকারিরা সম্ভবত বড় ধরণের কোন হামলার প্রিক্যুয়েল হিসবে এই হামলা করেছে, খবর নিউয়র্ক টাইমসের।   (সূত্র: প্রথম আলো)

হতে পারে আবার হামলা, আরো বড়সড় কোন সাইবার আক্রমণ!!!!!! 

আর ঠিক তাই কোন রকম ঝুঁকি না নিয়ে আজই আপনার কম্পিউটারকে হতে যাওয়া যে কোন ধরণের সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নিন। 

কিভাবে আপনার কম্পিউটারকে সুরক্ষিত করবেন??

১) প্রথমত হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ অধিকাংশ কম্পিউটারই Windows 7 অপারেটিং সিস্টেমের।
তো? আপনি কি উইন্ডোজ বদলে ফেলবেন?
না। আপনি Windows 7 এর লেটেস্ট সিকিউরিটি আপডেট ইন্সটল করে নিন।
কারণ হামলার স্বীকার সব কম্পিউটারই পুরনো Windows ব্যবহার করছিল। Microsoft ও তাদের বিবৃতিতে ব্যবহারকারীদের Windows আপডেট করে নিতে বলেছে।
২)  কোন ধরণের অপরিচিত ঠিকানা থেকে আসা যে কোন ইমেইল ওপেন না করা। এমনকি পরিচিত কোন ইমেইল থেকেও যদি কোন সন্দেহজনক মেইল আসে তবে তা না খোলা।
কোন ধরনের সন্দেহজনক ফাইল ডাউনলোড না করা। সন্দেহজনক কোন ওয়েবসাইটেও না যাওয়া।
৩) Windows এর সিস্টেমে চেঞ্জ করে। এটার দুটো পদ্ধতি রয়েছে। আমি দুটোই দেখিয়ে দিচ্ছি:

পদ্ধতি (i) Windows Firewall এর সেটিংস চেঞ্জ করে:

১) Control Panel এ যান। Start Menu তে গিয়ে যেতে পারেন।

২) System and Security তে গিয়ে Windows Firewall এ যান।

৩) Turn Windows Firewall On or Off এ যান।

৪) নিচের চিত্রের মত কনফিগার করুন।

৫) এখন Advance Settings এ গিয়ে Inbound Rules এ যান এবং তারপর New Rule এ ক্লিক করুন।

৬) Port সিলেক্ট করে Next ক্লিক করুন।

৭) TCP সিলেক্ট করুন এবং Specific Local Ports এ গিয়ে 445 দিয়ে Next ক্লিক করুন।

৮) Block The Connection এ টিক দিয়ে Next ক্লিক করুন।

৯) Domain, Private এবং Public তিনটিতেই টিক দিয়ে Next এ ক্লিক করুন।

১০) Name এর ঘরে 445 দিয়ে Finis এ ক্লিক করুন।

   445 সেভ হয়েছে দেখতে পাবেন।

১১) আবার একই ভাবে Inbound Rules এ গিয়ে New Rule এ যান এবং তারপর Port এ ক্লিক করে Next ক্লিক করুন। এবার এখান থেকে UDP সিলেক্ট করে Specific local ports এর ঘরে 445 দিন। এরপর Next এ ক্লিক করুন।

১২) Domain, Private এবং Public তিনটিতেই টিক দিয়ে Next এ ক্লিক করুন।

১৩) Name এর ঘরে 445 udp দিয়ে Finis এ ক্লিক করুন।

আপনার সেটিংস কমপ্লিট। এখন আপনার কম্পিউটার Ransomware এর আক্রমণের সম্ভাবনা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত।

পদ্ধতি (ii) Windows এর Feature চেঞ্জ করে:

১) Control Panel এ যান। Start মেনু থেকে যেতে পারেন।

২) Programs এ ক্লিক করুন।

৩) Turn Windows Feature On or Off এ ক্লিক করুন।

৪) ফিচার লিষ্ট থেকে SMB 1.0/CIFS File Sharing support অপশনটির টিক উঠিয়ে সেভ করে পিসি রিষ্টার্ট করুন।

   এখন আপনার পিসি Ransomware থেকে সুরক্ষিত।



যে কোন একটি পদ্ধতি অনুসরন করুন। দুই পদ্ধতি একসাথে মেশাবেন না।

৪) Anti-Ransomware সফটওয়্যারের মাধ্যমে:

সাধারন Anti-Virus গুলো Ransomware এর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিতে পারে না, তাই আমাদের আলাদা Anti-Ransomware সফটওয়্যারের দরকার হয়।

Anti-Ransomware সফটওয়্যার গুলো আপনাকে যে কোন ধরনের Ransomware এর আক্রমণ থেকে বাঁচাবে। এবং কোনভাবে আপনার পিসি আক্রমণের শিকার যদি হয়েই যায় তবে এই সফটওয়্যারগুলো ফাইল Encrypt হতে দেবে না এবং Ransomware রিমোভ করে দিবে।

আর Anti-Ransomware সফটওয়্যার ব্যবহার করলে Windows এর কোন ধরনের সেটিংস পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না, মানে কোন ঝামেলা নেই।

অনেক অনেক Anti-Ransomware সফটওয়্যার পাবেন নেটে। কিন্তু সবগুলো ভালো নয় আবার অনেক এই ধরণের সফটওয়্যার মুখোশের আড়ালে নিজেই Ransomware. তাই আপনাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে।

আমার মতে আপনি IOBit এর Malware Fighter 5 এর Pro ভার্সন ব্যবহার করতে পারেন। এটি একটি Malware Fighter কিন্তু সেই সাথে এটি একটি দুর্দান্ত Anti-Ransomware। এর ফ্রি ভার্সনও আছে কিন্তু সেটাতে পুরোপুরি সুরক্ষা পাবেন না। আমি নিজে Malware Fighter 5 এর Pro ভার্সন ইউস করি, এবং বিশ্বাস করুন এটাই সেরা।

পিসিতে Ransomware আক্রমণ করতে আসলে এটি আপনাকে ওয়ার্নিং দিবে এবং আপনি অনুমতি দিলে ডিলেট করে দিবে, অনুমতি না দিলে Ransomware টিকে Block করে রাখবে এবং যে কোন ধরণের Access থেকে বিরত রাখবে।

Malware Fighter 5 এর প্রো ভার্সন এক্টিভেশন কী দিয়েছি টিউনের শেষে, কী দিয়ে আপনি ফ্রীতে প্রো ভার্সন এক্টিভ করে নিতে পারবেন। সো নো চিন্তা।

IOBit Malware Fighter 5 ডাউনলোড করে নিন IOBit এর অফিসিয়াল সাইট থেকে ফ্রীতে।

IOBit Malware Fighter 5 এর এক্টিভেশন কী: 38691-1AA05-4AE43-A0074

 

প্রথম প্রকাশিত আমার নিজের ব্লগে। প্রযুক্তি সম্পর্কে অবাক করা সব তথ্য জানতে ঘুরে আসতে পারেন।

                  সতর্ক থাকুন, আপনার সচেতনতাই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধের ব্যবস্থা।

Level 2

আমি হাসিবুর ইসলাম নাসিফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 43 টি টিউন ও 76 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

বিষাদময় পৃথিবীতে আমি আনন্দ খুঁজে নিই সবকিছু থেকে। আর স্বপ্ন দেখি মহাকাশ ভেদ করে ভালোবাসা ছড়িয়ে দেবার। স্বপ্নচারী আমার স্বপ্নগুলোই বাঁচিয়ে রেখেছে আমাকে। হাত ধরে চলো স্বপ্ন দেখি একসাথে।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস