জন্ম নিবন্ধন সনদ কিভাবে কোথা থেকে পাবেন? চিত্রসহ বিস্তারিত দেখুন

টিউন বিভাগ ইন্টারনেট
প্রকাশিত
জোসস করেছেন

আশাকরি সকলে ভাল আছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেয়ার করবো। আশা করি আমার আজকের টিউন থেকে সকল শ্রেণী, পেশা ও বয়সের লোকজন উপকৃত হবেন। আর আপনাদের উপকার হলে হলেই আমার লেখাটা স্বার্থক হবে। তার হলে আর দেরি না করে শুরু করি।

আমরা সবাই জানি, জন্ম নিবন্ধন ইদানীং কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটা কোথা থেকে কিভাবে সঠিক সনদ আনতে হয় তা হয়তো অনেকেই জানেন না। দুঃখের বিষয় হল, আজও অনেকের ধারণা, ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সাধারণ নাগরিক সনদের মত একটা ফাঁকা ফর্ম এনে বা বাজার থেকে একটি জন্ম সনদ তৈরী করে তাতে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর করিয়ে নিলেই কাজ হয়ে গেল। আসলে কিন্তু বিষয়টা তা নয়। এই ধারনার কারণে অনেকে নিজের পায়ে নিজেই  কুরাল মারছে। অন্যদিকে বিভিন্ন বাজারে কম্পিউটার বা ফটোকপির দোকানে অবৈধ জন্ম সনদ তৈরী হচ্ছে। যা নিচ্ছেন কিছু অবুঝ মানুষ এবং পরবর্তীতে ভুগছেন নানা সমস্যায়।

মনে রাখবেন জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম এখন পুরাটাই অনলাইনে  হয়। এটা বাজার বা কোন কম্পিউটার দোকানে পাওয়া যায় না। যদি পান তাহলে সেটি অবৈধ। জন্ম সনদ নির্দিষ্ট অফিসের নির্দিষ্ট ব্যক্তির নিকট থেকে করাতে হবে।

কিভাবে জন্ম সনদ পাবেনঃ সাধারণত দুইভাবে জন্ম নিবন্ধন করাতে পারেন।

১। সরাসরি অফিসে গিয়ে;

২। অনলাইনের মাধ্যমে বাসায় বসে;

এবার আমরা জানবো জন্ম নিবন্ধনের সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী কিভাবে সরাসরি অফিস থেকে একটি বৈধ জন্ম সনদ সংগ্রহ করবেন।

১। সরাসরি অফিসে গিয়েঃ

কোথায় জন্ম সনদ পাবেনঃ

স্ব স্ব ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেসন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাস থেকে জন্ম নিবন্ধন করা যায়।

কিভাবে পাবেনঃ

* সর্বপ্রথম আপনি আপনার ইউনিয়ন পরিষদ (বা আপনার পৌরসভা, সিটি কর্পোরেসন ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাস) এ যান। সেখান থেকে জন্ম নিবন্ধন এর নির্দিষ্ট আবেদন ফরম সংগ্রহ করুন।

(নোটঃ এই ফরম টি আপনি যে কোন ফটোকপির দোকানেও পেতে পারেন। অথবা জন্ম নিবন্ধনের ওয়েবসাইট থেকেও ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এটি দুই পৃষ্ঠা। ফরমটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। )

(জন্ম নিবন্ধনের সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী ফরম টির এক পৃষ্ঠার স্ক্রিনসট নিচে দেওয়া হল। )

  • এবার ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করুন। অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র/স্কুল সার্টিফিকেট/পাসপোর্ট/ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি দেখে পূরণ করবেন। মনে রাখবেন, কোন তথ্য ভুল হলে আপনার আবেদনটি মঞ্জুর নাও হতে পারে। বা হলেও তথ্য ভুল হলে পরবর্তীতে মহা বিপদে পড়ে যাবেন। নতুন করে আরেকটি জন্ম সনদ ও করতে পারবেন না। সুতরাং সময় থাকতে সাবধানতা অবলম্বন করুন। নিচের ছবিতে দেখুন কোন ব্যক্তির জন্য কোন কাগজপত্র প্রয়োজন।

  • ফরমটি পূরণ করার পর আপনার ওয়ার্ডের মেম্বার, এবং চেয়ারম্যান ও সচির স্বাক্ষর করিয়ে আপনার জন্ম নিবন্ধক এর কার্যালয়ে জমা দিয়ে প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ বুঝে নিন। উক্ত রশিদে জন্ম সনদ বিতরণের সম্ভাব্য তারিখ উল্লেখ থাকবে।
  • নির্দিষ্ট দিনে রশিদটি নিয়ে অফিসে চলে যান এবং উক্ত রশিদটি জমা দিয়ে আপনার জন্ম সনদটি বুঝে নিন। এভাবে আপনি সরাসরি অফিস থেকে জন্ম সনদ নিতে পারেন।

(বিঃদ্রঃ জন্ম সনদ গ্রহণের পূর্বে নির্দিষ্ট ফিস+সার্ভিস চার্জ পরিশোধ করতে হবে। ফিসের পরিমাণ জানতে এখানে যেতে পারেন। পূর্বে জন্ম নিবন্ধন করা থাকলে আর নতুন করে জন্ম সনদ করার জন্য আবেদন করবেন না; কারন এটা দন্ডনীয় অপরাধ। জন্ম সনদে ভুল থাকলে তা সংশোধনের জন্য দায়িত্বরত সচিব বা উদ্যোক্তার সাথে কথা বলুন। নির্দিষ্ট পদ্ধতি তে সঠিক ও বৈধ প্রমাণ সাপেক্ষ্যে আপনার জন্ম সনদের ভুল সংশোধন করা যেতে পারে। এজন্য ঢাকায় জন্ম নিবন্ধনের প্রধান কর্যালয়ে আপনার ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হবে। এ বিষয় নিয়ে আগামীতে টিউন করবো। )

২। অনলাইনের মাধ্যমে বাসায় বসেঃ

এবার আমরা জানবো কিভাবে আপনি বাসায় বসেই অনলাইনের মাধ্যমে জন্ম সনদ করবেন। এই কাজ টি আপনি একটি অ্যাপস ব্যবহার করেও করতে পারবেন। অ্যাপসটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন। সাইজঃ 04 মেগাবাইট। অ্যাপস এর মাধ্যমে করলে অ্যাপসটি চালু করে Application  লিংকে ক্লিক করুন। (পরবর্তী দুই পদ্ধতি প্রায় একই রকম)

আর কম্পিউটার থেকে করলে এখানে ক্লিক করুন। যে পেজটি আসবে সেখান থেকে ধাপে ধাপে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড বাছাই করুন। তারপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

  • আপনার সামনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন ফরম আসবে। এটি আপনার কাগজপত্র অনুযায়ী পূরণ করুন।
  • তারপর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

এবার যে পাতা টি আসবে সেখানে পূর্বের মত একই তথ্য আপনার কাগজপত্র অনুযায়ী ইংরেজিতে পূরণ করুন। পূরণ করা হয়ে গেলে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করুন।

তাহলে নিচের মত একটিপেজ আসবে।

এই পেজে আপনার দেওয়া সকল তথ্যাদি একত্রিত করে দেখানে হবে। সব কিছু ঠিক থাকলে সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করুন। আর যদি কোন তথ্য ভুল হয়ে থাকে তবে পেছনে বাটনে ক্লিক করে প্রয়োজন অনুযায়ী তথ্য সঠিকভাবে লিখে সংরক্ষণ বাটনে ক্লিক করুন। তাহলে নিচের মত একটি পেজ আসবে।

আপনার আবেদন পত্রের নম্বর : 3009/2016/653

এই নাম্বার টি সংরক্ষণ করে রাখুন। পরবর্তীতে এটি প্রয়োজন হতে পারে। এবার Print বাটনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনার আবেদন ফরম টি চলে আসবে। ঠিক নিচের মত। এটাকে প্রিন্ট করুন। যা আমরা এতোক্ষণ পূরণ করেছি, তাই এখানে এসেছে। এখন আর কোন তথ্য সংশোধন করা যাবে না।

দ্বিতীয় ধাপঃ

ফরমটি প্রিন্ট করার পর তাতে ছবিতে দেখানে জায়গায় স্বাক্ষর করুন। এবার ফরমটি কে স্ক্যান করে আপনার জন্ম নিবন্ধক এর কার্যালয়ে ইমেইলে বা ফেসবুকে পাঠিয়ে দিন। সাথে দিতে হবে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র, স্কুল সার্টিফিকেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা অন্য বৈধ কাগজ পত্র। সব গুলো স্ক্যান একত্রে ইমেইলে পাঠিয়ে দিন। অফিসে গিয়ে জন্ম সনদ করলেও একই কাগজপত্র গুলো জমা দিতে হবে। নিচের ছবিতে দেখুন কার জন্য কোন সনদ দিতে হবে।

ইমেজ

উপরোক্ত নিয়মানুযায়ী নির্দিষ্ট কাগজ পত্র সংশ্লিস্ট দপ্তরে ইমেইল করে, তারপর সেখানার দয়িত্বরত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করুন। তিনি আপনার আবেদন টি মঞ্জুর হলে জন্ম সনদ প্রস্তুত করে আপনাকে ইমেইলে বা কুরিয়ারে/ডাকে পাঠিয়ে দিবেন। আপনি বিকাশ/ডাচবাংলা বা অন্য কোন মাধ্যমে তাঁকে জন্ম নিবন্ধনের নির্দিষ্ট ফিস+সার্ভিস চার্জ পাঠিয়ে দিবেন। এভাবে আপনি ঘরে বসেই সহজেই অনলাইনে আপনার জন্ম সনদ করতে পারেন।

হয়তো ভাবছেন, আপনার এলাকার জন্ম নিবন্ধকের কার্যালয়ের নির্দিষ্ট ব্যক্তির সাথে যোগাযোগের মোবাইল বা ইমেইল নাম্বার কোথায় পাবেন? এটা এখন খুবই সহজ। বাংলাদেশের জাতীয় তথ্য বাতায়নের নাম নিশ্চই শুনেছেন। এখানে বাংলাদেশের সকল ইউনিয়নের ওয়েব সাইট ঠিকানা পেয়ে যাবেন খুব সহজেই। যা সব সময় আপডেট রাখা হয় সরকারীভাবে। ডিজিটাল বাংলাদেশের একটা উজ্জল দৃষ্টান্ত এটা। এটা বর্তমানে বিশ্বের সব থেকে বড় ওয়েব সাইট। নিশ্চই বাঙ্গালীদের জন্য এটি অনেক বড় অর্জন। যা হোক এবার দেখুন আপনার ইউনিয়নের ওয়েব সাইটের ঠিকানা কি।

প্রথমে ইংরেজি বর্ণে আপনার ইউনিয়নের নাম লিখুন+up+জেলার নাম+.gov.bd

উদাঃ http://www.barasatup.khulna.gov.bd  অর্থাৎ আপনার ইউনিয়নের  নামের সাথে ইউপি লিখবেন তারপর সেটি কোন জেলায় অবস্থিত তা লিখবেন তারপর.gov.bd লিখবেন। এভাবে আপনার ইউনিয়নের ওয়েব সাইটের ঠিকানা পেয়ে যাবেন। এবার এই সাইট থেকে আপনি সব কিছু পেয়ে যাবেন। যোগাযোগ এর নাম্বার ছাড়াও আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারবেন এই সাইট থেকে।

বিকল্প পদ্ধতিঃ

http://bangladesh.gov.bd/ ওয়েব সাইট থেকে ধারাবাহিকভাবে আপনার ইউনিয়নে আসতে পারেন। নিচের চিত্র গুলো দেখুন। http://bangladesh.gov.bd/ এই সাইটে যাওয়ার পর নিচের মত একটা পেজ পাবেন।

এখান  বিভাগ বাটনে ক্লিক করুন। তাহলে নিচের মত একটি পেজ আসবে।

এখান থেকে আপনার বিভাগের উপরে ক্লিক করুন। তাহলে আপনার বিভাগীয় কার্যালয় এর ওয়েব সাইটে চলে যাবেন। এখান থেকে ধারাবাহিকভাবে আপনার জেলা; তারপর উপজেলা এবং সব শেষে ইউনিয়ন সিলেক্ট করে চলে যেতে পারবেন কাঙ্খিত ইউনিয়নের ওয়েব সাইটে।

এভাবে এই ইউনিয়ন টির ওয়েব সাইটের ঠিকানা হলঃ http://www.barasatup.khulna.gov.bd

বুঝতে কোন সমস্যা হলে নিচের  ভিডিও টি দেখতে পারেন। ভিডিও টিতে লাইভ একটি জন্ম সনদের জন্য আবেদন  করা দেখানো হয়েছে। তারপরে ও কোন সমস্যা বা প্রশ্ন থাকলে টিউমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো, ইনশা আল্লাহ।

ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন।

https://www.youtube.com/watch?v=J1sQiBITPbEhttps://www.youtube.com/watch?v=h06Jy1Rh2ng 

এতোক্ষন  সাথে থাকার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। সকলের সুস্বাস্থ্য  ও মঙ্গল কামনা করে আজকের মতে ইতি টানছি। আগামী টিউনে জন্ম নিবন্ধন এর উপর আবারো কোন টিউটোরিয়াল নিয়ে হাজির হবো। সে পর্যন্ত ভাল থাকুন। খোদা হাফেজ।

Level 3

আমি মোঃ রবিউল ইসলাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 59 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 14 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

ফ্রিল্যান্সার, গ্রাফিক্স, ওয়েব, এ্যাপস ডিজাইনার ও ডেভলপার, লেখক,অভিনেতা ও পরিচালক।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

একটি সময় উপযোগী টিউন। প্রয়োজন ছিল, তাই ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ।

Level 0

জন্ম স্থানঃ ঘরটি পূরণের ক্ষেত্রে কি স্থায়ী ঠিকানা ব্যাবহার হবে? নাকি যে স্থানে জন্ম হয়েছে সে ঠিকানা ব্যাবহার হবে। যেমনঃ ধরুন কেউ অন্য জেলার হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করলো এক্ষেত্রে কি হাসপাতালের ঠিকানা লিখতে হবে নাকি? স্থায়ী ঠিকানা?

ভাই জন্ম স্থান যেটা সেটা লেখাই ভাল। সেটা যেখানেই হোক না কেন। আর আপনার স্থায়ী ঠিকানা যেটা সেটা স্থায়ী ঠিকানার ঘরে লিখুন। এবং বর্তমান ঠিকানা বর্তমান ঠিকানার ঘরে লিখুন। আর যদি আপনার সব ঠিকানা একটাই হয়, তাহলে ঐ একই ঠিকানা সব জয়াগায় লিখবেন। কখনো ঐ বা DO লিখবেন না।
ধন্যবাদ।