এক কথায় বলতে গেলে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব হল সারা পৃথিবীর সমস্ত কম্পিউটারের মধ্যে টেক্সট ও মাল্টিমিডিয়ার আদান প্রদানের সমন্বয়ে তৈরি কম্পিউটার বেইজড নেটওয়ার্ক। সহজভাবে একে শুধু ‘ওয়েব’ বলা হয়।
আমরা সাধারনত ইন্টারনেট ও ওয়েব এর মধ্যে পার্থক্য করি না। ইন্টারনেট ও ওয়েব সম্পূর্ণ আলাদা দুটি বিষয়। এদের মধ্যকার সম্পর্ক অনেকটা পুলিশ বিভাগ ও স্পেশাল ব্রাঞ্চ (ডিটেকটিভ) এর মত। পুলিশ বাহিনীরই একটি শাখা হল ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ। ইন্টারনেট সিস্টেমেরই একটি উপাদান হল ওয়েব।
১৯৯৩ সালে ওয়েব আবিষ্কার করেন ইংলিশ বিজ্ঞানী টিমোথি বার্নেস-লি। এর পর থেকেই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ওয়েবের সকল যোগাযোগ একসাথে সংযুক্ত কিছু কম্পিউটারের মধ্যে হয়ে থাকে। এই নেটওয়ার্ক ইন্ট্রানেটও হতে পারে। ইন্ট্রানেট হল একটি প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটারদের মধ্যে যোগাযোগ রাখার নেটওয়ার্ক। ওয়েবে দু ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়ঃ সার্ভার ও ক্লায়েন্ট। পাবলিশার একটি শক্তিশালী সার্ভার কম্পিউটার দিয়ে ক্লায়েন্টের জন্য তথ্য তৈরি করে। যখন ক্লায়েন্ট কম্পিউটার সেটির জন্য রিকোয়েস্ট করে, তখন সার্ভার তার একটা কপি ক্লায়েন্টকে পাঠায়। এটিকে অর্থপূর্ণ করার জন্য দুটি কম্পিউটারেরই একটি নির্দিষ্ট প্রটোকল মেনে চলতে হয়। এটি একটি ভাষার মত সেই মেসেজটির বিভিন্ন অংশের ব্যাখ্যা করে।
HTTP, SMTP, FTP ইত্যাদি হল কিছু জনপ্রিয় প্রটোকল। HTTP অর্থ হল Hyper Text Transfer Protocol. ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এটিকেই ব্যবহার করে। ই-মেইল সিস্টেম ব্যবহার করে SMTP । এর অর্থ Simple Mail Transfer Protocol. আর FTP এর মানে হল File Transfer Protocol. ইন্টারনেটে অনেক বড় বড় ফাইল পিসি থেকে পিসিতে ট্রান্সফার করার জন্য FTP খুব জনপ্রিয়। টরেন্ট(Torrent) হল এমনি একটি জনপ্রিয়তম FTP মেথড। প্রতিটি প্রটোকলই আলাদা আলাদা নিয়মে মেসেজের আদান প্রদান করে।
সার্ভার একটি শক্তিশালী কম্পিউটার হয়। ক্লায়েন্ট আমাদের ব্যবহৃত সাধারন পিসিকেই বলা হয়। সার্ভার কতটা শক্তিশালী হয় তার একটা ধারনা পেতে বলা যায় ক্লায়েন্ট পিসি শুধু একটা রিকোয়েস্ট পাঠিয়েই সেটা নিয়েই মাথা ঘামায়, আর সার্ভার চাহিদার উপর নির্ভর করে মিলিয়ন মিলিয়ন রিকোয়েস্টে সাড়া দিতে প্রস্তুত থাকে। তবে ইচ্ছে করলেই যে কোন কম্পিউটারকে সার্ভার করা যায়।
ওয়েবে সংযুক্ত হতে হলে প্রথমেই দরকার হবে একটি কম্পিউটার, ডায়াল আপ কানেকশনের জন্য একটি মডেম অথবা পারমানেন্ট কানেকশনের জন্য ADSL (অথবা DSL) লাইন, কেবল মডেম অথবা ডেডিকেটেড লিসড সার্কিট (Dedicated leased circuit)। পারমানেন্ট কানেকশনের খরচ বেশি কিন্তু এটি অনেক বেশি গতিতে ডেইটা(data) আদান প্রদান করে।
সফটওয়্যার লাগে ২ ধরনেরঃ
অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারকে ইন্টারনেটে যুক্ত হতে সাহায্য করে। এটিও কয়েকটি প্রটোকল মেনে চলে এদের TCP/IP ইত্যাদিও বলে। যেসব এপ্লিকেশন ইন্টারনেট ব্যবহার করে সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে TCP/IP ব্যবহার করে। TCP/IP ইউজারের কাছ থেকে লুকানো অবস্থায় থাকে। ব্রাউজার হল যে সফটওয়্যার দিয়ে ইউজার সরাসরি ওয়েবে ইন্টার্যাক্ট করে। ব্রাউজার ক্লায়েন্ট হিসেবে কাজ করে সার্ভার থেকে নির্দিষ্ট তথ্য ইউজারকে প্রদর্শন করে।
ক্লায়েন্ট URL এর মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট ওয়েব পেইজ রিকোয়েস্ট করে। URL হল Uniform Resource Locator যাতে তিন ধরনের তথ্য যুক্ত থাকে। কোন প্রটোকল ব্যবহৃত হবে, কোন কম্পিউটারে তথ্যটি খুঁজতে হবে ও ডোমেইন নেইম। নিচে কিছু ডোমেইন নামের অর্থ দেয়া হল-
তবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই যে নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্দিষ্ট ডোমেইন নেইম বেছে নিতে হবে। এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার।
ওয়েবে আজ একজন ব্যবহারকারী লেখা পড়তে পারে, গান শুনতে পারে, ছবি, এনিমেসন, চলচ্চিত্র দেখতে পারে, এমনকি বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের ত্রিমাত্রিক বিভিন্ন ভার্চুয়াল রেপ্লিকায় ঘুরে বেড়াতে পারেন, পথ হারালে ম্যাপ দেখে বাড়ি ফিরতে পারেন, ইচ্ছে করলেই পিএইচডি থিসিস করতে তথ্য খুঁজতে পারেন, পারেন মজাদার কোন ডিশের রেসিপি জেনে নিতে। ইউজার ইচ্ছা করলেই মসৃনভাবে এক সার্ভারের একটা ডকুমেন্ট কিংবা অন্য একটি সার্ভারের আরেকটি ওয়েব পেইজে ঘুরে বেড়াতে পারেন।
বর্তমানে ওয়েব সাইট ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠান কল্পনাই করা যায় না। বিভিন্ন কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়, এজেন্সি তাদের পণ্য, তথ্য, বিজ্ঞপ্তি ইত্যাদি প্রকাশের জন্য হার্ড ডকুমেন্ট-এর তুলনায় কম্পিউটারের সফট কপিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। মিউজিয়াম, লাইব্রেরি, স্কুল সহ বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান সবার আগে ওয়েব এ তাদের সর্বশেষ খবর, কর্মপন্থা, প্রণিত অধ্যাদেশ আইন ইত্যাদি প্রকাশ করে জনসম্মুখে। আজ একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ তথ্য মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌছতে সময় লাগে কয়েক সেকেন্ড। অধিকাংশ ওয়েব পেইজই সকল শ্রেণীর ব্যবহারকারীর জন্য উন্মুক্ত। ফলে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই আজকে যে কেউ ওয়েব-এর সাগরে অবগাহন করতে পারে। ই-মেইল যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব নিয়ে এসেছে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ডাক-পরিবহন খরচ বেঁচে যাচ্ছে ই-মেইলের কারনে। আজকে বেড়াতে যাবার আগে হোটেল বুকিং, প্লেনে সিট বুকিং এমনকি যে জায়গায় বেড়ানো হবে তার থ্রিডি ইমেইজ দেখে সবকিছু সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে আনন্দ ভ্রমণে বের হওয়া যায়। এঞ্জিনিয়ার, চিকিৎসকরা নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হতে পারেন। বেকাররা চাকরির আবেদন করতে পারেন। বন্ধুবান্ধবরা একে অন্যের সাথে সোসাল নেটওয়ার্কিংএর মাধ্যমে কাছে থাকতে পারেন।
গবেষনায় দেখা গেছে প্রায় ৮০% ইন্টারনেট ট্রাফিক হয় ওয়েবের জন্য। ওয়েব আজ ইন্টারনেটের সবচেয়ে দ্যুতিময় অবদান।
কৃতজ্ঞতাঃ এনকার্টা
আমি দিহান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 66 টি টিউন ও 2201 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
পড়াশোনা করছি MBBS ৩য় বর্ষ। স্বপ্ন টেকনলজি জগতেই ডুবে থাকব।
সুপার…….