এই খুনের জন্য আপনি শোকপালন করবেন নাকি আনন্দ উৎসব করবেন সেটা আপনিই ঠিক করুন।
এনার পুরো নাম ‘কিক অ্যাস টরেন্টস’ সংক্ষেপে যারা একে চেনেন তাদের অনেকে ডাকেন ক্যাট বলে। এনার কাজ হল, সিনেমা, গান, ভিডিও গেমস ও বিভিন্ন ডিজিটাল কনটেন্ট ডাকাতি(বেআইনি ভাবে কপি) করে গরীব(মানসিকতায়)মানুষদের মধ্যে সবই বিলিয়ে দেওয়া। তাই ইনি গরীবের(মানসিকতায়)মসিহা। আর এনার জাত হল ওয়েবসাইট। আর এই সাইটটি চিরদিনের মত বন্ধ করে দিয়ে খুন করা হল গত বৃহস্পতিবার (21-7-2016)।
এই ডাকাতের জন্ম দেওয়া বাবার নাম হল ‘অ্যারটেম ভাউলিন’। যার বয়স এখন ৩০ বছর। যিনি ‘টিম স্ক্রিন’ নামে এক ছদ্মনাম ব্যবহার করেন। ২০০৮ সালে যিনি তার এই অতি প্রিয় সন্তান ক্যাটের জন্ম দেন। ইনি তার প্রোফাইলে লেখেন, ইনি নাকি ক্রিপটোনিকে কাজ করেন আর সেখানে একমাত্র কর্মচারী ও মালিক নাকি তিনিই। কিন্তু আসল সত্য হল এই ক্রিপটোনিকে ২০ জনের প্রোফাইল আছে যার মধ্যে কেউ ম্যনেজিং ডিরেক্টর তো আবার কেউ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারও আছেন।মানে মিথ্যেবাদী ডাকাত।
গত বুধবার(20-7-2016) পোল্যান্ডের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে ওয়ারশ’র চপিন বিমানবন্দর থেকে ধরা পরার পর এখন মাটিতে বসে বসে জেলের ভাত(?) খাচ্ছেন। ইনি নাকি ১০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি মুল্যের সিনেমা, গান, ভিডিও গেমস ও বিভিন্ন ডিজিটাল কনটেন্ট ডাকাতি(বেআইনি ভাবে কপি) করেছেন। মার্কিন প্রশাসন এনাকে খুঁজছিল। শোনা যাচ্ছে মার্কিন আদালতে এনার বিচার হলে ইনি নাকি ২০ বছর জেলের ভাত(?) খাওয়ার সুযোগ পাবেন।
মানুষের পরিচিত তার প্রিয় সন্তান ক্যাটের মাধ্যমে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার মুল্যের কপিরাইট থাকা কনটেন্ট গরীবদের(মানসিকতায়) বিলিয়েছেন তদন্ত সংস্থাদের চোখে ধুলো দিয়ে মানে বিভিন্ন দেশে থাকা সার্ভারের(ডাকাতির মাল যেখানে জমা থাকে) মাধ্যমে ব্যবসা করে। যখন যেখানেই তার সম্পত্তি বাজেযাপ্ত করা হয়েছে উনি কৌশলে তার ডমেইনটি(সাইটের নাম)অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছেন। শিকাগো ফেডেরাল আদালতের অভিযোগ থেকে জানা যায় উনি ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম এবং মালযেশিয়ায় ক্যাটের ডোমেনগুলি যখনই বন্ধ করা হয়েছিল তখনই উনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা তার কম্পিউটার সার্ভার নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছেন। আর ওনার এই সন্তানের সাজগোজের (ওয়েবসাইটির ডিজাইন) দায়িত্ব উনি নিজের কাধেই নিতেন। আর এই সবই করতেন ওনার সংস্থা বলে পরিচয় দেওয়া ক্রিপটোনিটের মাধ্যমে।
উনি বিফল হলেন কারণ ওনার চালাকি এবার ধরা পড়ে গেছে তাই এবার বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় থাকা ক্যাটের সার্ভারগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আর ডাকাতদের যেমন অনেক ডান হাত ও বা হাত থাকে সেরকম তার মূল সাইটের পাঁচটি প্রক্সি সাইটের ডোমেনের নামও বাজেযাপ্ত করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আর ওনাকে পোল্যান্ডে ঢোকার সময় যে গেপ্তার করা হল কিভাবে? কারণ ওনাকে চিহ্নিত করা তো সহজ কাজ ছিল না। তাহলে কিভাবে জানতে পারা গেল উনিই ভাউলিন? এই ব্যপারে তদন্তকারীদের সাহায্য করেছিল অ্যাপল্। অ্যাপল্, তাদের কাছে ভাউলিনের যে আইক্লাউড অ্যাকাউন্ট আছে তার তথ্য তদন্তকারী অফিসারদের দিয়ে দেয়।
ক্যাটের আচার ব্যবহার খুবই ভাল ছিল যাতে গরীবরা (মানসিকতায়) তাকে একদম আপন করে নিয়েছিল। কারণ ক্যাট খুবই আধুনিক এবং USER FRIENDLY ছিল। যেখানে ব্যবহারকারীরা খুব সহজেই তাদের পছন্দের কনটেন্ট খুজে পেয়ে যেতেন যা কিনা কপিরাইট সুরক্ষিত। কি অবাক হলেন? ভাবছেন কপিরাইট সুরক্ষিত কনটেন্ট কিভাবে এখানে খুজে পাওয়া যেত? আরে এটাই তো তাঁর সব থেকে বড় গুন। ক্যাটের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যে কেউ তার পছন্দ মত সিনেমা, ভিডিও গেমস, মিউজিক ইত্যাদি অনেক কিছুই খুব সহজেই তার পিসি, ল্যাপটপ বা মোবাইলে ডাউনলোড করে নিতে পারতো এক পয়সাও খরচ না করে। ২৮টি ভাষায় এটা চলতো, যে সমস্ত সিনেমা হলে নতুন সিনেমা চলত তার প্রায় সবই এখান থেকে ডাউনলোড করা যেত।
এই ক্যাটের ওয়েবসাইটের বর্তমান মূল্য সাড়ে ৫ কোটি মার্কিন ডলার। এই ওয়েবেসাইটের মূল আয় হত বিজ্ঞাপন মারফত যা ছিল বছরে ১.২৫ কোটি থেকে ২.২৩ কোটি মার্কিন ডলার।
আপনারা যারা ওয়েবসাইট বানানোর কাজ করেন তারা জানেন যদি আপনি কোন ক্লাইন্টকে বললেন আপনার ওয়েবসাইটটা তৈরি করতে ১০ হাজার টাকা লাগবে তাদের মধ্যে অনেকে ভ্রু কুচকে বলবে এত টাকা? এবার আপনার বোঝানোর জন্য মুখ ব্যাথা হয়ে যাবে এই বলে যে, ওয়েবসাইটির নাম দেবার জন্য একটা খরচ, ওয়েবসাইটটি যে সার্ভারে থাকবে তার ভাড়া, এছাড়া ভাল প্লাগিন, থিম কিনতে খরচ, SEO করার খরচ আর এর পেছনে আপনার মুল্যবান সময় ও মজুরী আছে। না না আমার এত কিছু লাগবে না আপনি বরং মোটামুটিভাবে কমের মধ্যে একটা ওয়েবসাইট বানিয়ে দেন। এবার আপনি হয়ত বলবেন, দেখুন একটা ভালভাবে ওয়েবসাইট বানালে ওই ওয়েবসাইটই আপনার আয়ের উৎস হতে পারে। এবার বরং আপনি আমার এই আর্টিকেলটা আপনার নতুন ক্লাইন্টদের শেয়ার করে দেখতে পারেন। আশাকরি উনি বুঝে যাবেন একটা ওয়েবসাইটের পিছনে খরচ করলে তার থেকে খরচের অনেকগুন বেশি টাকা আয় হতে পারে এবং তা সৎভাবে ও নিয়মিতভাবেও হতে পারে শুধু ক্যাটের মত সাইবার আইন না ভাঙ্গলেই হল কারণ এই রকম অনেক হাজার হাজার সাইট এখন আছে যারা সাইবার আইন না ভেঙ্গে ওয়েবসাইট ভিজিটারদের উপকৃত করে নিজেরাও লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করছে।
এতদিন ধরে উপকৃতদের শোক হওয়ারই কথা। তবে আমি বলি এটাকে মেনে নিন তাতে সবারই ভাল হবে। কিভাবে? দেখুন এখন মার্কেটে প্রচুর ওপেন সোর্স সফটওয়্যারও আছে আবার বিক্রি সফটওয়্যারও আছে এবং দুটোই আইন সম্মত। যেমন জাভা সফটওয়্যার বিনামূল্যে পাওয়া যায় তেমন একই কাজের সিশার্প কিনতে টাকা লাগে। মার্কেটে দুটোই চলছে কোনটাই বন্ধ হয়নি। দুটো সফটওয়্যারের কোম্পানিই টাকা রোজগার করছে আইন মেনে। তাই আমি বলি গান, ভিডিও গেমস, সফটওয়্যার ইত্যাদি যা কিছু নেট থেকে পাওয়া যায় তা প্রস্তুতকারীদের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দিন তারা বিনামূল্যে দেবেন নাকি মূল্য নিয়ে দেবেন। কারণ এখানে তাদের স্বাধীনতা না থাকলে তারা নতুন কিছু সৃষ্টিতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। যা আমাদের পরের প্রজন্মকে পিছিয়ে দেবে। আপনি বরং বস হয়ে সিদ্ধান্ত নিন প্রস্তুতকারীদের বিনামুল্যের জিনিষ নেবেন নাকি মুল্যযুক্ত জিনিষ নেবেন। কেন অযথা একজনকে(ক্যাটের মত) চালাকি করে কামানোর সুযোগ দেবেন।
আমাকে ফেসবুকে পেতে এখানে আসুন।
আমি WRITER BUDDHA। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 7 টি টিউন ও 234 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমরা সবাই শোক পালন করবো এবং ক্যাটের মত আরেকটি সাইটের আশায় বসে থাকবো।এত ধনী আমরা হইনি যে ২০,০০০ টাকায় একটি ডেস্কটপ পিসি কিনে তারপর ২,২০,০০০ টাকায় সফটওয়্যার কিনে সেই পিসিকে নতুন বউয়ের মত সাজাবো! একটি ক্যাট যাবে আর আরও হাজারো ক্যাট আসবে।আমাদের মত গরীব কিন্তু মেধাবীদের জন্য উপড়ে আল্লাহ আর নিচে এই ক্যাটেরা ভরসা।ক্যাট বিশ্ববাসীর যে উপকার করে গেলো তা চিরকাল আমরা মনে রাখবো।