সুপ্রিয় টেকটিউনস কম্পিউনিটি, সবাইকে আমার আন্তরিক সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি ওয়াই-ফাই Dead Zone সম্পর্কিত অর্থাৎ এটি কী, সৃষ্টির কারন এবং ইন্টারনেট কানেকশনকে শক্তিশালী করতে Dead জোনকে অপসারনের উপায় সম্বলিত আমার আজকের টিউন।
➡ তারবিহীন প্রযুক্তির কারনে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক আমাদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। বিরক্তিকর তারের কানেকশনের চাইতে তারবিহীন অনেকগুলো ডিভাইস এক সাথে ব্যবহার করার জন্য ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের বিকল্প নেই। কিন্তু ওয়াই-ফাই এর এই তারবিহীন প্রযুক্তি কোন ম্যাজিক নয় বরং এটি একটি বেতার তরঙ্গ (রেডিও ওয়েভ)। আর আমরা জানি কোন রেডিও ওয়েভ যেকোন কিছুর দ্বারা বাধাগ্রস্থ হতে পারে। আমাদের বাসায়, অফিসে এবং পরিচিত এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে সহজে রেডিও ওয়েভগুলো প্রবেশ করতে পারে না। শুধু ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কই না সেখানে অনেক সময় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কগুলোও কাজ করে না। এই সমস্ত অঞ্চল সনাক্ত করা খুব কঠিন কোন কাজ নয়। আজকের টিউনে আমরা জানবো- কীভাবে ওয়াই-ফাই ডেড জোনকে সনাক্ত করে এটা অপসারণের মাধ্যমে ইন্টারনেট সিগনালকে শক্তিশালী করা যায়। দ্রুত ইন্টারনেট সার্ফিং এর জগতে পদার্পনে তাহলে আর দেরি কেন?
ওয়্যারলেস Dead জোন হলো ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কভুক্ত এমন একটি অঞ্চল যেখানে ওয়্যারলেস নেটওয়্যার্ক পৌছাতে পারে না। আমাদের বাসা, অফিস, এপার্টমেন্টের যে জায়গাগুলোতে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের কোন সিগনাল পাওয়া যায় না কিংবা যে জায়গাগুলোতে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা যায় না তাদেরকে ওয়াই-ফাই Dead জোন বলে। যদি কোন মোবাইল ডিভাইসে (স্মার্টফোন, ট্যাবলেট) ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে ইন্টারনেট সংযোগ থাকা অবস্থায় কোন ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কভুক্ত জায়গায় গেলে নেটওয়ার্ক এর কোন সিগনাল পাওয়া না যায় কিংবা ওয়াই-ফাই সিগনাল বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে ওই জায়াগাটা Dead জোনের আওতা ভুক্ত।
যেসব বস্তু বেতার তরঙ্গে বাধা সৃষ্টি করতে পারে সেগুলোর উপস্থিতিই মূলত ওয়াই-ফাই ডেড জোন তৈরী করে। কোন বিশাল আকৃতির বাড়ির একপ্রান্তে যদি একটি ওয়াই-ফাই রাউটার থাকে তাহলে তার অপরপ্রান্তে স্বাভাবিক ভাবেই Dead জোন তৈরী হবে যেখানে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক পৌছাতেই পারবে না। ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক খুব বেশি পুরাতন কোন প্রযুক্তি নয়। শহর কিংবা গ্রামের অনেক বাড়ি ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক প্রসারের আগেই তৈরী করা হয়েছে। তাই হয়তো সেগুলোকে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক উপযোগি করে তৈরী করা হয়নি। ফলে সেগুলো ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক সিগনালে বাধা সৃষ্টি করে। এছাড়া বাড়ির দেওয়ালে অনেক বেশি পুরু প্লাস্টার, মেটাল ওয়্যারিং, মেটাল ওয়াল ইত্যাদি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে পুরাতন আমলের বাড়ি কিংবা এই সমস্ত জিনিসের সমন্বয়ে তৈরী নতুন বাড়িতেও ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক এর সিগনাল পাওয়া যায় না।
বাসার গাঠনিক উপাদান ছাড়াও আরও অনেক কিছুর কারনে ওয়াই-ফাই সিগনাল বাধাগ্রস্থ হতে পারে। যেমন আপনার বাসায় যদি কোন কর্ডলেস ফোন থাকে তাহলে সেটি ওয়াই-ফাই সিগনালে বাধা সৃষ্টি করবে। এছাড়াও মাইক্রোওয়েভ ওভেন, বেবি মনিটরিং ডিভাইস, ওয়্যারলেস সিকিউরিটি সিস্টেম, ওয়্যারলেস সাউন্ড সিস্টেম ইত্যাদি ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে বাধা সৃষ্টি করে। আপনার বাসা যদি এমন কোন এপার্টমেন্টে থাকে যেখানে প্রত্যেক ব্লকে নিজস্ব ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক রয়েছে তাহলে সেখানে নেটওয়ার্কের উচ্চ ঘনত্বের কারণে সিগনাল বাধাগ্রস্থ হবে। এছাড়াও যদি আপনার প্রতিবেশির ওয়্যারলেস চ্যানেলের কনফিগারেশন আপনারটার মতোই হয় তাহলে সেখানে সিগনালের কনফ্লিক্ট হবে, সিগনালের শক্তি কমে যাবে এবং এর ফলে Dead জোন সৃস্টি হবে।
ওয়াই-ফাই ডেডজোন সনাক্ত করা খুব কঠিন কোন কাজ না। শুধু ওয়্যারলেস নেটওয়্যার্কযুক্ত অঞ্চলে যেকোন ওয়্যারলেস ডিভাইস যেমন স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ ইত্যাদির যেকোন একটি সঙ্গে রাখুন। এরপর ওয়াই-ফাই নেটওয়্যার্ক ইনডিকেটরের দিকে চোখ রাখুন এবং ধীরে ধীরে ওই অঞ্চলে হাটতে থাকুন। আপনার বাসা, এপার্টমেন্ট বা অফিসে এই পরীক্ষাটা করলে বুঝবেন সব জায়গাতে ওয়াই-ফাই সিগনাল একই রকম থাকছে না। কিছু জায়গায় সিগনাল পুরোপুরি ভাবে ড্রপ করবে কিংবা এমনভাবে কমে যাবে যে তখন আর ওয়াই-ফাই কানেক্ট করা যাবে না। এরকম হলেই বুঝবেন আপনি Dead জোনে চলে এসেছেন।
ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ইনডিকেটরটি আপডেট হতে একটু সময় লাগে। তাই খুব দ্রুত চলাফেরা করলে পরিবর্তনটা হঠাৎ করেই আপনার দৃষ্টিগোচর হবে না। তাই Dead জোন সনাক্ত করতে ধীরে ধীরে ওয়্যারলেস ডিভাইসটি নিয়ে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কভুক্ত অঞ্চলে চলাফেলা করুন। আপনার যদি একটি অ্যান্ড্রোয়েড ফোন থাকে তাহলে অ্যান্ড্রোয়েড ওয়াই-ফাই এনালাইজার নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন আছে। গুগল প্লেস্টোরে একটু ঢু মারলেই পেয়ে যাবেন। সেই অ্যাপ্লিকেশন দিয়ে একটু ডিটেইলে ওয়্যাই-ফাই সিগনাল পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
এতোক্ষণে ওয়্যারলেস (ওয়াই-ফাই) Dead জোন সম্পর্কে মোটামুটি ভালো একটি ধারনা নিশ্চয় পেয়েছেন। সেই সাথে জানতে পেরেছেন কীভাবে ওয়্যারলেস Dead জোন সনাক্ত করতে হয়। আপনার বাসার ওয়াই-ফাই Dead জোনের সংখ্যা দেখে নিশ্চয় আঁতকে উঠেছেন? ভাবছেন এবার এগুলো দুর করবো কীভাবে? টিউনের এই অংশে সফল ভাবে ওয়াই-ভাই Dead জোন অপসারণের উপায় দেখানো হবে। মনযোগ সহকারে প্রত্যেকটি ধাপ পড়বেন আশা করি। তাহলেই সারা জীবনের জন্য আপনার বাসা থাকবে Dead জোন মুক্ত।
তবে ওয়াই-ফাই Dead জোন সনাক্ত করার আগে এবং এ বিষয়ে পরিপূর্ণ পরীক্ষা করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে আপনি ওয়াই-ফাই রাউটারের কার্যক্ষমতার মধ্যে পরীক্ষা করছেন। এছাড়াও নিশ্চিত হবেন যে আপনার ওয়্যারলেস ডিভাইসটি ওই রেঞ্জের মধ্যে কাজ করতে সক্ষম। আপনাদের প্রত্যেকের বাসা ওয়াই ফাই Dead জোন মুক্ত থাকুক এটাই আমার সব সময়ের প্রত্যাশা।
টিউনটি মনযোগ দিয়ে পড়ে থাকলে এবং উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর টিউনটি থেকে পেয়ে থাকলে ঝটপট টিউমেন্ট সেকশনে উত্তরগুলো লিখে ফেলুন। সঠিক উত্তরদাতাদের নাম প্রকাশ করা হবে আমার আগামী টিউনে। আমার গত টিউন অর্থাৎ কম্পিউটার অত্যধিক গরম হয়ে যাওয়ার কারন ও ফলাফল। উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো সত্যিই কি কিছু আছে? শীর্ষক টিউনে আপনাদের জন্য কিছু প্রশ্ন রেখেছিলাম। সেই প্রশ্নগুলোর যারা সঠিক উত্তর দিয়েছেন তারা হলেন- টিউনার কাফি হাসান, টিউনার লতিফুর_রহমান, টিউনার মোঃ জিসান এবং টিউনার অভিষেক হাজরা। সঠিক উত্তরদাতাদের অভিনন্দন। টেকটিউনস প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে থেকে জানতে থাকুন, শিখতে থাকুন এবং ভাসতে থাকুন প্রযুক্তির সাগরে। আগামী দিনে আপনাদের কাছ থেকেই আমরা একটি প্রযুক্তিময় প্রজন্ম উপহার পেতে চাই। আপনার আরও একটু সময় হলে দেখে নিতে পারেন একই বিষয়ে নিচের টিউনটিও-
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। আর টিউনটিকে মৌলিক মনে হলে এবং নির্বাচিত টিউন হওয়ার উপযুক্ত মনে হলে নির্বাচিত টিউন মনোনয়ন দিতে ভুলে যাবে না যেন।
সর্বশেষ যে কথাটি বলবো, আশাকরি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের জন্য » সানিম মাহবীর ফাহাদ
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
ভাই, ওয়াইয়াই নাই তবে শিগ্রই সরকার আমাদের কে ফাইবার অপটিক এর আওতায় আনবে তখন কাজে লাগবে।
ধন্যবাদ।