এখন প্রতি জিবি ৩জি ইন্টারনেট ডাটা পাচ্ছেন মাত্র ২০ টাকায় ! সাথে মেয়াদ ১ বছর ! এমন অবিশ্বাস্য শিরোনামে অনেকের চোখটি কপালে ওঠে যাওয়ারই কথা। আবার কেউ কেউ শিরোনাম
দেখে ভাবছেন এটা একটা গাঁজা খুরি গল্প। হ্যাঁ যাহাই বলুন, গ্রাহকরা সচেতন হলেই বাংলাদেশে ইন্টারনেট প্যাকেজ বিক্রির জন্য আমার শিরোনামটিই হবে ভবিষ্যতে প্রোভাইডারদের ইন্টারনেট বিক্রির একমাত্র বিজ্ঞাপন জিঞ্জেল ।
এই মুহুর্তে দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের সবচেয়ে কম রেটের ১ জিবির প্যাকেজের সবনিম্ন দাম ২৭৫+ ১৫%ভ্যাট। আর ছোট প্যাকেজ গুলোর মধ্যে গ্রামীণের প্রতি ১০ কিলোবাইট ১ পয়সা হারে ১জিবির দাম ১০ হাজার ২শ ৪০ টাকা। না হিসাব করে নিয়মিত এই দামেই আমরা সবাই নেট ব্যবহার করছি।
আমাদের দেশের ইন্টারনেটের দাম বিশ্বের শীর্ষে থাকলে ও গতিতে আমরা সবার নিচে। কারণ ২০১৫ সালেও বাংলাদেশের জনগণ এখনও ১০ কেবিপিএস গতির ইন্টারনেট ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে ।
অথচ এখন আমাদের দেশে প্রতি জিবি নেটের উপযুক্ত দাম মাত্র ২০ টাকাই হওয়ার কথা ছিল।
কারণ ইন্টারনেট প্রোভাইডার কোম্পানী গুলো সরকারের কাছে থেকে মেগাবিট স্পীডের প্রতি জিবি ডাটা ক্রয় করছে গড়ে মাত্র ১৩.৫৮ টাকায়। আর তা কিলোবাইট স্পীডে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করছে গড়ে ৩৪৫ টাকার ও বেশি মূল্যে !
😆 সত্যিই অবিশ্বাস্য এক ডিজিটাল ব্যবসা! 😆
এই উচ্চহারে দাম দিয়েও আমার অত্যন্ত ধীর গতির (জিপিআরএস এবং ইডিজিই) ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রতিদিন আমাদের কোটি কোটি ঘন্টা মূল্যবান সময় নষ্ট করছি।
বর্তমানে ইন্টারনেট প্রোভাইডার কোম্পানী গুলো বাংলাদেশ সরকার থেকে প্রতি সেকেন্ডে মেগাবাইট স্পীডের ব্যান্ডউইডথ কিনছে ৪ হাজার ৮০০ টাকায়(২০১৩)।
১৯৯৬ সালে যার দাম ছিল ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। সেটা ২০০৪ সালে ছিল ৭২ হাজার টাকায়। ওই সময়ে ইন্টারনেটের গ্রাহক পর্যায়ে মূল্য যা ছিল বর্তমানে ৪ হাজার ৮০০ টাকায় ও তাই আছে।
সরকার নেটের খরচকে গ্রাহকের হাতের নাগালে রাখতে ১৯৯৬, ২০০৪, ২০০৮, ২০০৯, ২০১১ (দুবার), ২০১৩ সালে দফায় দফায় মোট ৭ বার ব্যান্ডউইডথের দাম কমানো হলেও গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম ১ বার ও কমেনি।
বরং উল্টো নানা ধরনের প্যাকেজ সাজিয়ে গ্রাহকের পকেট কাটছে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গুলো। খরচ না কমিয়ে তারা কৌশলে নানা ধরনের প্যাকেজ কিংবা গতি বাড়ানোর মধ্যেই কার্যত সীমাবদ্ধ থেকেছে।
আবার মাঝে মধ্যে গ্রাহকদের দাবিতে সুকৌশলে যেসব প্যাকেজ সাধারণত ব্যবহার করা হয় না সেগুলোর দাম কমিয়েছে অপারেটরগুলো।
প্রযুক্তি বিষয়ক ম্যাগাজিন কম্পিউটার জগতের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ইন্টারনেট প্রোভাইডার কোম্পানী গুলো মাত্র ৪ হাজার ৮শ টাকায় ব্যান্ডউইডথ ক্রয় করলেও তা যে দামে বিক্রি করছে সে সংখ্যাটি আমরা পড়তে গিয়ে সঠিক উচ্চারণ ও করতে পারিনা।
যেমন গ্রামীণফোন তাদের টুজি নেট ৪ হাজার ৮শ টাকায় কিনে তা বিক্রি করছে ৪৩,৩৫০X৬০,০০০ টাকায়।
অন্যদিকে টেলিটক ৪ হাজার ৮শ টাকায় থ্রিজি কিনে তা বিক্রি করছে ২৪,০০০X২৮,০০০ টাকায়। এভাবে সবগুলো কোম্পানীই ৪ হাজার ৮শ টাকায় কিনে তা একই হারে সিন্ডিকেট আকারে বিক্রি করছে। মোবাইল অপারেটররা বিভিন্ন সময়ে স্বীকারও করেছে যে, বর্তমানে ব্যান্ডউইডথের দাম হিসাবে ইন্টারনেটের খরচ ৯৬শতাংশ কমানো সম্ভব। কিন্তু মেইনটেন্যান্স এবং অবকাঠামোর ব্যয় দেখিয়েই তারা মূলত এ বড় রকমের দাম নিচ্ছে।
এ দিকে দেশে ইন্টারনেটের স্পিড নিয়ে আছে দেশব্যাপী ভয়াবহ অভিযোগ। কারণ সারা দেশের ৯০% গ্রাহক টুজি ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তা সত্তেও গ্রামীণফোন গত ৩০ মাচথেকে সকল টুজি ডাটা প্যাকেজ বন্ধ করে দিয়ে গ্রাহকদের কে বেশি দামের ৩জি ডাটা কিনতে বাধ্য করছে। এ ক্ষেত্রে তারা দেশের কোন আইনের তোয়াক্কা না করে এবং ৩জি কভারেজ না দিয়েই গ্রাহকদের থেকে ৩জির টাকা নিচ্ছে।
😯 সত্যিই আমার স্বাধীন দেশে আছি! 👿
গ্রাহকদের অভিযোগ গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমানো বা স্পীড বাড়ানোর জন্য সরকারি আন্তরিক উদ্যোগ লক্ষ করা যায় না।
পরিসংখ্যান এবং অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় আমাদের দেশের টাকা অনেকটা যেন লুটপাট করেই নিয়ে যাচ্ছে বিদেশী কোম্পানী গুলো। আর তাদের কে সহযোগিতা করছে দেশে যারা প্রযুক্তির এ বিভাগটি দেখছে তারা। আমার মতো গ্রাহকদের অভিযোগ আমাদের দেশের কিছু লোকই মূলত আমাদের কে শোষণ করতে বিদেশী এ কোম্পানীগুলো কে সাহায্য করছে।
আমাদের দেশে ইন্টারনেটের ইতিহাস:
বাংলাদেশে প্রথম অফ-লাইন ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু হয় ১৯৯৩ সালে। ১৯৯৬ সালের ৬ জুন বাংলাদেশে সবার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সে বছরই বাংলাদেশ প্রথম ভিস্যাটের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হয়। তখন প্রতি এমবিপিএস ইন্টারনেটের জন্য খরচ হতো ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু তখন সরকারিভাবে বিটিসিএল কোনো ব্যান্ডউইডথ বিক্রি করত না।
জিপিআরএস টেকনোলজি দিয়ে ২০০৪ সালে মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয়। ২০০৫-এর শেষের দিকে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়। ২০০৬ সালে জিপিআরএসের তুলনায় কিছুটা গতি সম্পন্ন EDGE সার্ভিস চালু করে গ্রামীনফোন।২০০৮ সালে ওয়াইম্যাক্স সেবা পরিচালনার জন্য লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অজের প্রথম ওয়াইম্যাক্স সেবা কিউবি প্যাকেজ চালু করে ২২ নভেম্বর ২০০৯ সালে।
মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারী:
গত ২৬ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে দৈনিক প্রথমআলো মোবাইল কম্পানি এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)র তথ্যের ভিত্তিতে জানায়, চলতি বছরের মার্চ শেষে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লাখ ২৫ হাজার, যা ফেব্রুয়ারি মাসে ছিল ৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার। অর্থাৎ আগের মাসের তুলনায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১২ লাখ ৬ হাজার। এর মধ্যে প্রায় সবাই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। তবে ওয়াইম্যাক্স ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা ২ লাখ ১৫ হাজার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ আট হাজারে। আর আইএসপি ও পিএসটিএনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ হাজার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ৫০ হাজারে। সাধারণত তিন মাসের সক্রিয় গ্রাহক বিবেচনায় ইন্টারনেট গ্রাহক হিসাব করা হয়।
আমাদের কথা:
দেশে এখন ইন্টারনেটভিত্তিক কনটেন্টের (অডিও, ভিডিও, লাইভ খবর-মিডিয়া) ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। ফলে ইন্টারনেট চাহিদাও বেড়েছে বহুগুণ। দুঃখের বিষয়, মোবাইল অপারেটরগুলো নিজেদের ইচ্ছে মতো প্যাকেজ তৈরি করে গ্রাহকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। অথচ এসব ব্যাপারে বিটিআরসি নীরব ভূমিকা পালন করছে। সরকার ব্যান্ডউইডথের দাম কমিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। দেশের আইসিটি শিল্পের দ্রত বিকাশ এবং দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতে ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবার খরচ সাশ্রয়ী, সেবাবান্ধব এবং সহজলভ্য করতে হবে। বিপরীতে ইন্টারনেটের গতি বাড়াতে হবে।
আমাদের দাবী:
দফায় দফায় ইন্টারনেট ব্যান্ডইউথের দাম কমলেও গ্রাহক পর্যায়ে কোন প্রভাব নেই। তাই দাবী আদায়ের জন্য সরকার কে এগিয়ে আসতে হবে এবং ব্যবহারকারী কে জাগতে হবে। এখন প্রতি জিবি নেটের দাম মাত্র ২০ টাকা করাসহ নিম্নোক্ত দাবী পূরণ করতে হবে।
দাবীসমূহঃ
১. অতি শীঘ্রই ১ জিবি ডাটার দাম ২০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
২.৩জি কভারেজ না দিয়ে ২জি এলাকায় ৩জির বিল নেওয়া যাবে না।
৩. ডাটার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও অব্যবহিত ডাটা পরের ডাটা প্যাকেজ চালু করার
সাথে সাথে যোগ করে দিতে হবে ।
৪. ১ জিবির মেয়াদ ১ বছর করতে হবে।
৫. ফেয়ার ইউস পলিসি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে।
৬.নুন্যতম গতি নির্ধারণ করে করে পূর্ণ গতির ডাটা দিতে হবে ।
৭. আনলিমিটেড নামে কোন বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে না।৮. ফ্রি নামের কোন ডাটা অপার করা যাবে না। ( কারণ প্রতিটি ফ্রি অপার মানে নতুন প্রতারণা )
এ প্রতিবেদনটি তৈরির সময় নিম্নোক্ত ওয়েব সাইটসহ বেশ কয়েকটি ওয়েব সাইটের সাহায্য নেওয়া হয়েছে।
http://grameenphone.com/…/produc…/internet/internet-packages
http://www.banglalinkgsm.com/…/data_based…/banglalink_intern
et
http://www.robi.com.bd/bangla/index.php/page/view/412
http://www.bd.airtel.com/services.php…
http://www.citycell.com/index.php/zoom_ultra/plan
http://www.banglalionwimax.com/index.php/ products-a-services/prepaid-plans
http://www.qubee.com.bd/prepay
আমি সানা উল্লাহ সানু। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 10 টি টিউন ও 71 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
দেশ কে আর দেশীয় পণ্য কে ভালোবাসি। নিজে কে ভালোবাসি দেশের মতো।
সবাই মিলে এগিয়ে আসলে আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবেই হবে। পোস্টটি সবাই শেয়ার করুন ! জাতীকে জাগ্রত করুন!