ব্লগিং এর A TO Z বলতে গেলে এখানে আমি ব্লগ সম্পর্কে যা যা আলোচনা করা দরকারি প্রায় সবকিছুই আলোচনা করে ফেলেছি। আমার মনে নতুন এবং পুরাতন যারা ব্লগিং সম্পর্কে আগ্রহ আছে, এই বিষয়টা আরও গভীরভাবে জানতে এবং উপলব্ধি করতে চান তাদের কাজে লাগবে। আর্টিকেলটা অনেক বড়। একবারে যদি পরতে ইচ্ছা না করে তাহলে বুকমার্ক করে রাখতে পারেন অথবা প্রিন্টও করে নিতে পারেন। এটাকে ব্লগিং এর একটা ডকুমেন্ট বলা চলে! তাহলে চলুন শুরু করি...।
ব্লগিং কি:
নিজের প্রত্যহিক জীবনের কিছু ঘটনা বা কোন নির্দিষ্ট ঘটনা নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লিখা বা কোন একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ধারাবাহিক ভাবে লিখার মাধ্যমে ইন্টারনেটে সবার সাথে শেয়ার করাকে ব্লগিং বলে। যে সব ওয়েব সাইটে ব্লগিং করা হয় তাদের ব্লগ বলে। এ ব্লগিং বিভিন্ন বিষয়ের উপর হতে পারে। যেমন আপনার জীবন নিয়ে, সাহিত্য নিয়ে রাজনীতি নিয়ে, অর্থনীতি নিয়ে, ইন্টারনেট নিয়ে ইত্যাদি।
ব্লগিং এর প্রকারভেদ:
সাধারনত ব্লগিংকে আমরা ২ ভাগে ভাগ করতে পারি।
১) ব্যাক্তিগত ব্লগ বা অলাভজনক ব্লগ
২) নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ব্লগ / লাভজনক ব্লগ
যেহেতু আমরা ফ্রিলান্সিং নিয়ে আলোচনা করতেছি সুতরাং আমরা এখানে ২ নং ব্লগ নিয়ে আলোচনা করব।
ব্লগিং অনলাইনে আয় করার জন্য খুব একটি বড় মাধ্যম। ব্লগিং এর মাধ্যমে অনেকেউ অর্থ আয় করছে। বাংলাদেশের অনেকেঐ চাকুরির পাশাপাশি ব্লগিং করে অনেক টাকা আয় করছে।
ব্লগিং এ এডসেন্স এর মাধ্যমে, রিভিও পোষ্টের মাধ্যমে, এ্যাড বিক্রির মাধ্যমে আয় করা যায় ।
ব্লগিং-এর মাধ্যমে আয়ের ক্ষেত্রে করনীয়:
১) ব্লগিং এর মাধ্যমে আয় করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই একটি নিদিষ্ট বিষয়ের উপর ব্লগিং করতে হবে। কারন একটি নিদিষ্ট বিষয় এর উপর ব্লগিং করলে আপনি আপনার মনযোগ শুধুমাত্র একটি বিষয়ের উপর দিতে পারবেন। এতে করে আপনার ব্লগিং করতে সুবিধা হবে।
আপনাকে এমন একটি বিষয় বেছে নিতে হবে যে বিষয়টি আপনি জানেন, বুঝেন এবং সে বিষয়ে আপনি নিয়মিত লিখতে পারবেন। কারন ব্লগিং এর মূল মন্ত্র হল ভিজিটররা এসে যাতে আপনার ব্লগ থেকে কিছু শিখতে পারে এবং জানতে পারে। আপনি যদি নিজেই কিছু না জানেন তাহলে আপনি আপনার ভিজিটরকে কি জানাবেন। তাই বুঝে শুনে ব্লগিং এর বিষয় নির্ধারন করবেন। নির্বাচনের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কম প্রতিযোগিতাপূর্ন বিষয় নির্বাচন করা উচিত। যেমন আপনি সফ্টওয়ার এর উপর ব্লগ বানাতে চান কিন্তু অনলাইন মার্কেটে সফ্টওয়ার নিয়ে প্রতিযোগিতা বেশী। এতো বিশাল প্রতিযোগিতার মধ্য আপনি সাফল্য নাও পেতে পারেন।তাই এ বিষয়টি ভেবে অপেক্ষাকৃত কম প্রতিযোগিতাপূর্ন বিষয় নিয়ে ব্লগিং করতে হবে তাতে আপনার সাফলতা হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
২) বিষয় নির্বচনের পর আপনাকে একটি Domain name & Hosting Space কিনতে হবে।
৩) এখন আ্পনাকে ব্লগ তৈরির জন্য একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। ব্লগ তৈরির জন্য WordPress and Joomal নামে দুটি CMS আছে যে গুলোর মাধ্যমে আইটি নলেজ না থাকলেও আপনি সহজেই ওয়েবসাইট তৈরৈ করতে পারবেন। যেমন বাংলাদেশের অধিকাংশ পত্রিকা Joomalদিয়ে করা। যেমন প্রথমআলো. দি ডেইলিস্টার. যুগান্তর ইত্যাদি। Edit করা সহজ বলে Joomal দিয়ে ব্লগিং সাইট করা ভাল। তবে, বর্তমানে ওয়ার্ডপ্রেস অনেক বেশি জনপ্রিয়। তাই আপনি চাইলে ওয়ার্ডপ্রেস দিয়েও আপনার ব্লগ তৈরি করতে পারেন।
৪) এবার যে বিষয়টি পছন্দ করেছেন সে বিষয়ের উপর ধারাবা্হিক ভাবে পোষ্ট তৈরৈ করতে থাকেন।
৫) এভাবে আপনার পোষ্ট ১০-১২ টা হলে Adsense এর কোড বসান।
৬) ব্লগিং এর মাধ্যমে আয় করতে চাইলে আপনাকে আপনার ওয়েবসাইটে নিয়মিত SEO(Search EngineOptimization) করতে হবে। এজন্য আপনাকে SEO সম্পর্কে জানতে হবে। মনে রাখবেন ব্লগে যত বেশী ভিজিটর আপনার লাভ বা আয় তত বেশী। তাই বিভিন্ন উপায়ে আপনার ব্লগের ভিজিটর বাড়াতে হবে। এ জন্য SEO(Search Engine Optimization) একটা বড় ব্যাপার। Search Engine থেকে সাফল্য পাবার একমাত্র মাধ্যম হলো ব্লগের SEO করা।
ব্লগ থেকে আয়ের অন্যান্য মাধ্যম:
ব্লগ থেকে Adsense ছাড়াও আরো অনেক উপায় আছে। আর এ আয় করার জন্য আপনার ব্লগ সাইটটি খুব জনপ্রিয় করতে হবে। জনপ্রিয় বলতে আমি বুঝিয়েছি প্রতিদিন আপনার সাইটে প্রচুর ভিজিটর থাকবে এবং তারা নিয়মিত কমেন্ট লিখবে। নিচে ব্লগ হতে আয়ের উপায় গুলো বর্ননা করা হল
রিভিও পোষ্টের মাধ্যমে:
আপনার ব্লগ পপুলার হলে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পন্য বা ওয়েবসাইটের জন্য আপনার ব্লগে রিভিও দিতে চাইবে। এই রিভিও লিখার জন্য এবং আপনার ব্লগে তা প্রকাশ করার বিনিময়ে ঐ কোম্পানি আপনাকে নিদিষ্ট পরিমান অর্থ দিবে।
ব্যানার অ্যাডের মাধ্যমে:
ব্যানার অ্যাডের ব্যাপারটা অনেকটা রিভিও পোষ্টের মতঐ। তবে এখানে আপনাকে কোন আর্টিকেল লিখতে হবে না। কোন প্রতিষ্ঠান তাদের পন্য বা সেবার প্রচার এর জন্য বিভিন্ন ব্লগে তাদের পন্য বা সেবার ব্যানার অ্যাড দেয়।আপনার ব্লগ যদি জনপ্রিয় হয় তাহলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আপনার ব্লগে ব্যানার অ্যাডের মাধ্যমে এড দিবে। যা থেকে আপনি নিদিষ্ট পরিমান অর্থ পাবেন।
ব্যাক লিংক বিক্রি করে:
আপনার ব্লগ সাইটের Google Page Rank যদি ৩ বা তার বেশী হয় এবং Alexa Ranking এ যদি ভালো অবস্থানে থাকে তাহলে আপনি ব্যাকলিংক বিক্রি করে প্রচুর আয় করতে পারেন। seo এর ক্ষেক্রে ব্যাক লিংক খুব গুরত্বপূর্ন ব্যাপার। সাধারনত একটি ওয়েবসাইটে অন্য একটি ওয়েবসাইটের লিংক দিলে সেই লিংকটি দ্বিতীয় ওয়েবসাইটের ব্যাকলিংক হবে।ব্যাক লিংকের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ আয় করা যায়। সাধারনত আপনার পেজ রেন্ক ৬ অথবা ৭ হলে আপনি একটি ব্যাকলিংক ১০০ থেকে ১৫০ ডলার পর্যন্ত বিক্রি করতে পারবেন। ব্লগের পেজ রেন্ক বের করতে ক্লিক করুন এখানে ।তবে ব্লগিং করার প্রথমে কেউ আপনার কাছ থেকে ব্যাক লিংক ক্রয় করবে না । এজন্য আপনার ব্লগকে পপুলার করতে হবে। I mean ভিজিটর বাড়াতে হবে।
ভাল ব্লগার হবার জন্য করনীয়:
আপনি যদি আশা করেন আপনি যে কোন বিষয়ের উপর ব্লগ করলেন আর সে ব্লগে হুরমুর করে ভিজিটর আসা শুরু করবে এবং বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবে। তাহলে সে আশা একবারে বৃথা যাবে। কারন একজন ভিজিটর কেন আপনার সাইটে আসবে কেনঐ বা বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবে? যদি একজন ভিজিটর মনে করে আপনার সাইট হতে সে অনেক কিছু শিখতে পারছে এবং ভবিষ্যতে আরো অনেক কিছু শিখতে পারবে তাহলে ঐ সে নিয়মিত আপনার সাইটে আসবে। তাহলে আপনার করনীয় কি?
ভিজিটর উপযোগী করে ব্লগটি তৈরি করা। আর সেজন্য আপনাকে ভালো ব্লগার হতে হবে। একজন ভালো ব্লগার হতে যা যা করনীয় তা নিচে দিওয়া হল।
১) ব্লগিং এর বিষয় নির্বাচনের সময় লক্ষ রাখবেন যে বিষয়টি আপনি পছন্দ করলেন সেটি সর্ম্পকে আপনি প্রচুর লিখতে পারেন এবং সে বিষয়ে ইন্টারনেটে প্রচুর চাহিদা আছে।
২) নিয়মিত ব্লগিং এর বিষয়ে ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করেন।
৩) কখনো অন্য কারো লিখা নকল করবেন না।যদি নকল করতেই হয় তাহলে যার লেখা নকল করছেন তার অনুমতে নিন।
৪) আপনার নির্বাচিত বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য যারা ব্লগ বানিয়েছে তাদের সাথে সর্ম্পক বজায় রাখুন এবং গুরত্বপূর্ন বিষয়গুলি শেয়ার করুন।
৫) পাঠকের মন্তব্যের গঠনমূলক উত্তর দিবেন। কোনভাবেঐ গাল মন্দ বা খারাপ কথা বলবেন না। এতে ভিজিটর হারানোর সম্ভাবনা থাকে।
৬)পোষ্ট লিখার সময় মনোযোগ দিয়ে লিখেন এবং লক্ষ রাখবেন যা লিখতে চাচ্ছেন তা যেন লিখার মাঝে ভালো ভাবে প্রকাশ পায়।
৭) পাঠক আপনার কাছে কি কি নতুন বিষয়ের উপর লিখা চায় তা জানতে চেষ্টা করেন এবং সে বিষয়ে লিখেন।
ব্লগ তৈরি করার পর করনীয়:
আপনার ব্লগ তৈরির সময় এবং এর পরে আপনার বেশ কিছু করনীয় আছে তা নিচে দেওয়া হল।
১) ব্লগ তৈরির সময় লক্ষ রাখবেন এটি যেন SEO বান্ধব হয়।
২) সাইটের ব্যাকগ্রাউন্ডে কোন অহেতুক কোন ছবি বা সাউন্ড ব্যাবহার করবেন না। এতে সাইট লোড হতে অনেক সময় লাগে এবং পাঠক বিরক্ত হয়।
৩)সাইটের ব্যাকগ্রাউন্ড কালার এবং টেক্সট কালার এমন ভাবে সমন্ব্য় করুন যাতে ভিজিটরদের লেখা পড়তে কোন সমস্যা না হয়।
৪)ব্লগ তৈরির পর তা বিভিন্ন সার্চ ইন্জনে সাবমিট করুন।
৫) প্রতিনিয়ত সাইটের ভিজিটর বাড়ানোর চেষ্টা করুন।
৬) আপনার সাইটের জন্য বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইট যেমন ফেইসবুক, টুইটার, ডিগ, এ অ্যাকাউন্ট এবং লাইক পেজ তৈরি করুন।ফিডবার্নার রাখুন এবং ইমেইল নিউজলেটার এর ব্যাবস্থা করুন। এগুলোর মাধ্যমে প্রচুর ভিজিটর পাওয়া যায়।
৭) সাইটে একটি যোগাযোগ FORM রাখুন যাতে পাঠকরা এবং বিজ্ঞাপনদাতারা আপনার সাথে সহজেঐ যোগাযোগ করতে পারে।
৮) সাইটের ডিজাইন সুন্দর রাখার চেষ্টা করুন। তবে খুব বেশী ডিজাইন করার চেষ্টা করবেন না।
৯) একদিনে ৩ টার বেশী পোষ্ট লিখবেন না। তবে আপনার ভিজিটরের উপর নির্ভর করে সপ্তাহে দুই বা তিনটি পোষ্ট লিখার চেষ্টা করুন। দুইটি পোষ্টের মধ্যবর্তী সময় যেন খুব বেশি না হয়।
মোটামুটি সবকিছুই আলোচনা করে ফেললাম। আশা করি আপনাদের ভালো লেগেছে। যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই করবেন। ব্লগিং বিষয়ে আরও ভালোভাবে জানার জন্য এবং নিত্যনতুন ব্লগ আর্টিকেল পেতে ভিজিট করুন ZubyTech ব্লগটি। সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। 🙂
আমি প্রীতম চক্রবর্তী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 82 টি টিউন ও 155 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য ফ্রি লার্নিং প্ল্যাটফর্মঃ https://www.eduquarks.com
৯) একদিনে ৩ টার বেশী পোষ্ট লিখবেন না। তবে আপনার ভিজিটরের উপর নির্ভর করে সপ্তাহে দুই বা তিনটি পোষ্ট লিখার চেষ্টা করুন। দুইটি পোষ্টের মধ্যবর্তী সময় যেন খুব বেশি না হয়।
ভাই এই বেপারটা বুঝলাম না। দৈনিক ৩ টার বেশি post লিখলে কি সমস্যা। একটু বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি টিউন করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আপনি/আপনারা এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক টেকটিউনস এর সহযোগিতায় আমি ব্লগিং শুরু করেছিলাম, ২০১৮ সালে এখন ২০২০ সালে এসে নিজেকে একজন সফল ব্লগার হিসাবে পরিচয় দিতে পারি।
Fine ………