সিরিজ টিউটোরিয়ালের পিছনের কথা
প্রিয় পাঠক, আপনারা হয়ত সবাই জানেন, ট্যালি.ইআরপি ৯ বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় অ্যাকাউন্টিং, ইনভেন্টরি এবং পেরোল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। ভারতের ট্যালি সল্যুশনস এ সফটওয়্যারটির নির্মাতা। বিশ্বের প্রায় সবকয়টি দেশেই লাখো প্রতিষ্ঠান এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে।
বাংলাদেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে এখন অ্যাকাউন্টসে চাকরির জন্য ট্যালি জানা ক্যান্ডিডেট চাওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশে অফিসিয়াল পার্টনার হওয়ায় ট্যালি.ইআরপি ৯ নিয়ে প্রতিদিন প্রচুর ফোন এবং ইমেইল পাই যারা ট্যালি সফটওয়্যারের বিস্তারিত জানতে চান। যাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী এবং চাকুরি প্রত্যাশী। আমাদের ট্যালি.ইআরপি ৯ নিয়ে সরাসরি একটি প্রশিক্ষণ থাকলেও সময় সল্পতা কিংবা টাকার কারণে অনেকেই যোগ দিতে পারেন না। তাদের কথা মাথায় রেখে আমরা ট্যালি.ইআরপি ৯ সফটওয়্যারটির ফ্রি ট্রেনিং ম্যাটেরিয়াল তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এটি মূলত একটি সিরিজ ব্লগ পোস্ট হবে, যেখানে ট্যালি.ইআরপি ৯ সফটওয়্যারের পরিচয়, এর উন্নয়ন এবং কিভাবে সফটওয়্যারটিতে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টস, ইনভেন্টরি এবং পেরোল ম্যানেজমন্ট করা যায় সেগুলোর স্টেপ বাই স্টেপ আলোচনা করবো। ইচ্ছা আছে প্রতিদিন একটি করে সিরিজ প্রকাশের। আর মাসখানেকের মধ্যেই সম্পূর্ণ টিউটোরিয়ালটি শেষ করার কথা ভাবছি।
আশা করছি পুরো এ সময়টাতে আমাদের সঙ্গে থাকবেন। আপনাদের মূল্যবান মতামতের উপর ভিত্তি করে প্রতিটা লেখাকে সাজানো হবে। ট্যালি.ইআরপি ৯ সম্পর্কে জানতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট। আর হ্যাঁ, আজ রইলো ধারাবাহিক ট্যালি টিউটোরিয়ালের প্রথম পর্ব।
ট্যালি.ইআরপি ৯ এর বিস্তারিত টিউটোরিয়াল এবং ফিচার সমূহ নিয়ে আলোচনার আগে ট্যালির পরিচয় সর্ম্পকে জানানোর প্রয়োজন মনে করছি। ট্যালি.ইআরপি ৯ মূলত ভারতের ট্যালি সলিউশন কর্তৃক তৈরি একটি এন্ট্রারপ্রাইজ রিসোর্স প্লানিং (ইআরপি) সফটওয়্যার। এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে যেকোন প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টিং, ইনভেন্টরি এবং পেরোল ব্যবস্থাপনা করা যায়।
প্রাচীনকালে হিসাব নিকাশের জন্য ট্যালি নামে একটি জিনিস ব্যবহৃত হতো। এটি মূলত সংখ্যা গণনা বা হিসাবরক্ষনের জন্য খাঁজ কাটা লাঠি, এর একার্ধ পাওনাদারের নিকট এবং অপরার্ধ দেনাদারের নিকট থাকত। এই ট্যালি থেকেই সফটওয়্যারটির নামকরণ করা হয়েছে।
১৯৮৬ সালে ভারতীয় শ্রী এস এস গোয়িনকো Peutronics Pvt .Ltd নামে ব্যাবসা শুরু করেন । তিনি তার ছেলে শ্রী ভারতকে তার প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব সংরক্ষন করার জন্য সফটওয়্যার তৈরির দায়িত্ব দেন। দীর্ঘ গবেষনা ও মনোনিবেশ, মেধা ও শ্রম ব্যায় করে শ্রী ভারত তার বাবার ব্যবসার হিসাব ব্যবস্থাপনার জন্য ‘ট্যালি সলিউশন’ নামে একটি সফটওয়্যার তৈরি করেন।
সফটওয়্যারটি ভারতের বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সফলভাবে কাজ করে। নিজ প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের এ গল্প জেনে তাদের অনেক ক্লায়েন্টও এ সফটওয়্যারটি ব্যবহারের আগ্রহ দেখান। ক্রেতাদের আগ্রহ এবং বাজার বিশ্লেষণ করে পিতা-পুত্র বুঝতে পারেন এই সফটওয়্যারটির বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অফূরন্ত! তাঁরা পিউট্রনিক্স প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীটি এবার ট্যালি সলিউশনস নামকরণ করেন। এরপর শুরু হয় ট্যালি অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারের অগ্রযাত্রা। আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি প্রতিষ্ঠানটিকে। উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার হিসাবে এটি তুমুল ব্যবসা সফল।
দীর্ঘ ২২ বছর ধরে ‘ট্যালি সলিউশন’ গ্রাহকের চাহিদা মূল্যায়ন করে ট্যালি সফটওয়্যারটি উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে। নিত্য নতুন আর আধুনিক ব্যবসায়ের প্রয়োজনীয় ফিচার সংযোজন করে সফটওয়্যারটি দ্রুত পৃথিবির বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ট্যালি সল্যুশনসের তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে পৃথিবির ৯০ টির বেশি দেশে ২০ লাখের ও বেশি মানুষ ট্যালি ব্যবহার করছে।
ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষায়ও এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। আর বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সব ধরণের ব্যবসায়িক চাহিদা পূরণ করে এটি আমাদের দেশীয় বাজারেও ধরে রেখেছে শ্রেষ্ঠত্ব। বাংলাদেশের কয়েক হাজার বড় প্রতিষ্ঠানের হিসাব চলছে এই সফটওয়্যারটি দিয়ে।
ট্যালি সফটওয়্যারের সর্বশেষ সংস্করণটি হলো ট্যালি ইআরপি ৯। যাত্রা শুরুর পর থেকেই ট্যালি ব্যবহারকারীদের চাহিদা অনুযায়ী একের পর এক নতুন সংস্করণ বাজারে এনেছে। সে ধারাবাহিকতায় বাজারে সর্বশেষ সংস্করণ ট্যালি.ইআরপি ৯। তিন বছর ধরে প্রায় ২০০ প্রোগ্রামার কাজ করে ট্যালি.ইআরপি ৯ সংস্করনটি তৈরি করেছে!
ব্যবহারকারী ভেদে প্রয়োজন ভিন্ন হয়, আর সবার প্রয়োজন মাথায় রেখেই ট্যালি ইআরপি ৯ সফটওয়্যারটি দুটি সংস্করণে বাজারে রয়েছে।
ছোট এবং মধ্যম সারির প্রতিষ্ঠান, যাদের হিসাব বিভাগ একজন কিংবা দুজন মিলে পরিচালনা করেন সেসব প্রতিষ্ঠানের জন্য সিঙ্গেল ইউজার (একক ব্যবহারকারী) সংস্করণটিই যথেষ্ঠ। এ সংস্করণটি একটি কম্পিউটারে ব্যবহার করা যাবে। আর ট্যালি.নেট ফিচারের মাধ্যমে অনলাইন অ্যাকাউন্ট দিয়ে যেকোন কম্পিউটার থেকেই এতে এন্ট্রি দেয়া ছাড়া যেকোন সম্পাদনা করা কিংবা তথ্য নেয়ার সুযোগ রয়েছে।
এই সংস্করণটি আনা হয়েছে বৃহদাকার প্রতিষ্ঠানের চাহিদা চিন্তা করে। যেসব প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগে একাধিক কর্মী রয়েছে এবং হিসাব বিভাগের তথ্যাদি অন্যান্য বিভাগের তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজন হয় সেসব প্রতিষ্ঠানের জন্য ট্যালি ইআরপি ৯ মাল্টি ইউজার (বহু ব্যবহারকারী) সংস্করণ।
এটি কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কম্পিউটার থেকে সমস্ত তথ্য সিনক্রোনাইজ হয় এবং সবাই একইসঙ্গে এতে কাজ করতে পারে। উচ্চ নিরাপত্তা ফিচার থাকায় তথ্যের নিরাপত্তা যেমন রয়েছে তেমনি কে কখন কি ধরণের এন্ট্রি দিচ্ছে কিংবা সম্পাদনা করছে সেটি সহজেই দেখা যায়।
আজ এ পর্যন্তই!
প্রিয় পাঠক, আজ এ পর্যন্তই! আগামীকাল আমরা আলোচনা করবো ট্যালি.ইআরপি ৯ সফটওয়্যারটির ফিচারসমূহ নিয়ে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন। আপনার কোন জিজ্ঞাসা কিংবা মতামত থাকলে মন্তব্যের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না!
আমি ট্যালি মাস্টার। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 56 টি টিউন ও 10 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আপনার লেখা ভালো হচ্ছে। শুভ কামনা। এগিয়ে চলুন। তবে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম বা পরিচয় এখানে না দিলে আরও সুন্দর হবে।