সমস্যার ভেতরে আছি। পরীক্ষা এবং পরকীয়া দুইটাই সমস্যার বিষয়। আমি প্রথম টাতে। এর মাঝে কারেন্টের ঝামেলা তো আছেই। গত বুধবারের কথা নিয়ে স্ট্যাটাস পড়লেই কঠিন অবস্থা কিছু বুঝা যেতে পারে-
স্ট্যাটাসঃ
সন্ধ্যায় ঠিক করলাম পড়তে হপে, দশ তারিখ পরীক্ষা, পাশ করা দরকার, তার চেয়ে বেশী দরকার গ্রেডটারে সম্মানজনক স্কোরে নেয়া।আট বছর আগের বাংলাদেশ টিমের স্কোরের মত আমার গ্রেড স্কোরের অবস্থা।
ঠিক সন্ধ্যার পর পরই কারেন্ট গেল। আর আসার নাম নাই। আমি বুঝে গেলাম এই দেশ , জাতি আমাকে পড়তে দিতে চায় না। বুঝে মন কে স্বান্তনা দিলাম। আল্লা যা করেন ভালর জন্যই করেন।
কারেন্ট আসল দশটায়। কম্পিউটার খুইলা ভাবলাম একটু অডেস্কে ঢুকি। ঢুকার কয় মিনিটের মধ্যেই আবার কারেন্ট গেল। আমি আবারো বুঝে গেলাম, এই দেশ , জাতি ফ্রিলান্সিং ও করতে দিবে না।
বারোটার দিকে আবার কারেন্ট আসল। আবার পিসি খুললাম। ইচ্ছা হল ব্লগে একটা গল্প পোস্ট দেই। অনেকদিন গল্প পোস্ট দেয়া হয় না। অনেক আগে লেখা একটা গল্প অপ্রকাশিত ভাবে স্টকে আছে। এরে খুঁজে বের করলাম। গল্পের থিমের সাথে মিল রেখে ছবিও একটা বের করলাম। কিন্তু পোস্ট দেয়ার আগ মুহুর্তে চোখে পড়ল "দাঁড়ানো, চাঁদর" এই টাইপের কিছু সহজ বানান ভুল। বানান ভুল গুলো ঠিক করতে করতেই আবার গেল কারেন্ট!
আর আমি বুঝে গেলাম এই দেশ, জাতি আমারে সাহিত্যিক ও হইতে দিবে না।
তারপরের দফায় কারেন্ট আসলে এই স্ট্যাটাস লেখতে বসেছি। এখনো নিশ্চিত নই শেষপর্যন্ত থাকবে কি না।
যদি, এই স্ট্যাটাস পোস্ট করা যায় তাইলে বুঝা যাবে ফেসবুক স্ট্যাটাসের সাথে দেশ ও জাতির কোন বিরোধ নেই।"
এই স্ট্যাটাস দেখে ভাবেন যদি কারেন্ট ই প্রধান সমস্যা তাহলে ভুল। আরেক মহাসমস্যা পানি। আর সেই পানিতে আয়রন।
বাড়িওয়ালারে গিয়া বললাম, আংকেল যেই হারে পানিতে আয়রন দেখতেছি এক বছরে তো আয়রনম্যান হয়ে যাবো?
তিনি উত্তরে বলেন, আয়রন ম্যান থ্রি দেখছো? জটিল ছবি!
এই সব সমস্যার মাঝেও জেগে থাকতে হয়। অনেক বিরাট কাজ পৃথিবীতে হয়েছে সমস্যার ভেতর দিয়ে।
যেমন গ্যারেজের কথাই ধরি। গ্যারেজের মধ্যে কত কি হয়ে গেল।
বেলভ্যু, ওয়াশিংটনের এক গ্যারেজে জেফ বেজস প্রথম শুরু করেছিলেন তার অনলাইন বইয়ের দোকান। ১৯৯৪ সালের কথা। তারপর কেটেছে অনেক বছর। সেই গ্যারেজে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানী এখন এমাজন।
গ্যারেজের ঠিকানা - 10704 NE 28th, Bellevue, Washington
এমাজন সম্পর্কে আরো জানতে - উইকিপিডিয়া।
ঠিক তেমনি ২১ বছরের স্টিভ জবস ক্যালিফোর্নিয়ার এক গ্যারেজেই খুলেন এপল! সঙ্গে স্টিভ ওজনিয়াক। গ্যারেজে বসেই তারা বানাতে থাকেন মাসে ৫০ টি করে কম্পিউটার যেগুলো বিক্রি হত পাঁচ শ ডলার করে।
Address: 2066 Crist Dr, Los Altos, California
এপলের লাভ ক্ষতি সহ সব তথ্য জানতে উইকিপিডিয়ার পেজের লিঙ্ক - এপল
১৯২৩ সালে ওয়াল্ট ডিজনী তার চাচা রবার্ট ডিজনীর গ্যারেজে করে বসে প্রথম ডিজনী স্টুডিও। সেই থেকে যাত্রা শুরু ডিজনীর। তারপর তো ইতিহাস।
Address: 4651 Kingswell Ave, Los Angeles, California
ডিজনীর উইকি পেজ - ওয়াল্ট ডিজনী কোম্পানি
১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বরে আমার অতি প্রিয় ব্যাক্তিত্ব ল্যারি পেজ এবং সার্গে ব্রিন গুগল শুরু করেন এক গ্যারেজে। ল্যারি পেজ তার পড়ালেখায় সমস্যা সৃষ্টি করছিল বলে এই প্রজেক্ট একবার বিক্রি করে দিতেও চেয়েছিল। ওয়ান মিলিয়ন ডলারে। কিন্তু সেই দাম দিতে রাজি হয় নি এক্সাইট। তাই এখন গুগল, দি জায়ান্ট গুগল নিয়ে আছে পেজ।
Address: 232 Santa Margarita Ave, Menlo Park, California
ল্যারি পেজের একটি ইন্সপিরেশনাল বক্তব্য আছে। এই লিংকে গিয়ে শুনতে পারেন। সেখানে একটি কথা খুব ভাল লেগেছিল –
হার্লি-ডেবিডসন, বিখ্যাত মটর সাইকেল ব্র্যান্ডের যাত্রাও শুরু হয়েছিল গ্যারেজে। ১৯০১ সালে একুশ বছরে হার্লি বাই সাইকেলের জন্য ছোট এঞ্জিন বানিয়ে ফেলার প্ল্যান করে বসেন।
এর দু বছর পর তার ছোটকালের বন্ধু ডেবিডসনকে নিয়ে ১০ ফুট বাই পনেরো ফুটের এক গ্যারেজ মত ঘরে শুরু করেন তার মিশন।
Address: Somewhere in northern Milwaukee, Wisconsin
উইকিতে - হার্লি ডেবিডসন
এইচ পি – বিল হাওলেট এবং ডেভ প্যাকার্ড- বিশ্বের অন্যতম বড় কোম্পানি এখন। ১৯৩৯ সালে ৫৩৮ ডলার মুলধন নিয়ে তারা এক গ্যারেজেই শুরু করেন এইচ পি। উল্লেখ্য তাদের প্রথম কাস্টমার ছিলেন ওয়াল্ট ডিজনী। তিনি মুভি ফ্যান্টাসিয়ার জন্য অস্কিলেটরস কিনেছিলেন এইচপির কাছ থেকে। পালো আল্টোর এই এইচপি গ্যারেজ বার্থ প্লেস ওফ সিলিকন ভ্যালী নামেও পরিচিত।
Address: 367 Addison Ave, Palo Alto, California
উইকিতে - এইচপি
১৯৪৮ সাল। এন্থনি কলিন ব্রুস চ্যাপম্যানের বয়স মাত্র বিশ। তখনি তিনি প্রথম লোটাস কার নির্মান শুরু করেন। তাও ছিল নর্থ লন্ডনের এক গ্যারেজে।
Address: 472 Hornsey Rd, London N19 4EF, United Kingdom
উইকি তে- লোটাস কার।
১৯৫০ সালে টনি ম্যাগলিকা তার যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ ক্রোয়েশিয়া থেকে আমেরিকায় পাড়ি জমান। ইংলিশ ও তেমন জানেন না। টুকটাক কাজ যা পান তাই করেন। এভাবেই জমিয়ে ফেললেন ১২৮ ডলার। তা দিয়ে অসীম সাহস জড়ো করে লস এঞ্জেলসের এক গ্যারেজে শুরু করলেন বর্তমানে বিখ্যাত ম্যাগলাইট কোম্পানি। ১৯৭৯ এ তারা তাদের প্রথম ফ্ল্যাশ লাইট রিলিজ করেন। বর্তমানে আমেরিকান পুলিশেরা এই লাইট ব্যবহার করে থাকে।
Address: Somewhere in Los Angeles, California
উইকিপিডিয়া- ম্যাগলাইট
হ্যারল্ড ম্যাট ম্যাটসন এবং এলিয়ট হ্যান্ডলার তাদের ম্যাটেল ও খোলেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার এক গ্যারেজে। বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত খেলনার ব্র্যান্ডদের মধ্যে একটি।
Address: Somewhere in Southern California
উইকিপিডিয়াঃ ম্যাটেল
১৯৬৯ সালে ১৬ বছরের মাইকেল কিট্রেজ ইয়াংকি ক্যান্ডেল কোম্পানির প্রথম ক্যান্ডেল বানান তার গ্যারেজেই। প্রতিবেশীরা তার এই ক্যান্ডেলের প্রতি আকৃষ্ট হয়। কেনার ইচ্ছা প্রকাশ। সেই থেকে শুরু। বাকী টুকু ইতিহাস।
বর্তমানে আমেরিকার সবচেয়ে বড় সেন্টেড ক্যান্ডেল কোম্পানি এই ইয়াংকি।
Address: Somewhere in South Hadley, Massachusetts.
উইকিপিডিয়া লিংক - ইয়াংকি
গ্যারেজ থেকে গড়ে উঠা এই দশ বিশ্ব বিখ্যাত কোম্পানির সাথেই শেষ না আসলে গ্যারেজের মহিমা। একটা বই আছে, নাম-
এতে আরো অনেক গল্প আছে এমন। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের। বই আমার কাছে পিডিএফ আছে। কপিরাইট সংক্রান্ত ঝামেলা মাথায় রেখে এখানে আর শেয়ার করলাম না।
অতএব পোস্টের শেষ পর্যায়ের কথা, যত সমস্যাই সামনে থাকুক, যতই কারেন্ট যাক, যতই পানিতে আয়রন থাকুক, পাত্তা দিবেন না। আইডিয়া মাথায় আনুন, গ্যারেজ খোজে বের করুন, আর কাজে লেগে যান।
লেখা শেষ। শ্যাষে ফেসবুক টা এড করে যাই- আমার - ফেসবুক।
আমি মুরাদ ইচ্ছামানুষ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 18 টি টিউন ও 85 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ব্লগার।
হা হা হা… সুন্দর হইছে। ভাল লাগলো 🙂