ওয়াইম্যাক্স (Wimax-Worldwide Interoparability for Microwave Access) হচ্ছে বৃহত্তর ভৌগলিক এলাকা জুড়ে তারবিহীন উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানকারী একটি প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি মূলত IEEE 802.16 ষ্ট্যান্ডার্ডের ভিত্তিতে কাজ করে থাকে। ওয়াইম্যাক্স বর্তমানে বিশ্বের সর্বাধুনিক এবং সর্বোচ্চ গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট প্রটোকল সার্ভিস। এই প্রযুক্তিতে সর্বোচ্চ ১ গিগাবাইট/সেকেন্ড গতিতে ডাটা ট্রান্সফার করা সম্ভব।
ওয়াইম্যাক্সের বৈশিষ্ট্যসমূহ:
* গতানুগতিক কেবল মডেম এবং ডি এস এল পদ্ধতির চেয়ে এর ডাটা ট্রান্সফারের গতি এবং এলাকা অনেক বেশী। সাধারন ওয়াইফাই (wifi) বা ল্যান (LAN) যেখানে ৩০ মিটার থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত ইন্টারনেট কানেকটিভিটি প্রদান করে সেখানে ওয়াইম্যাক্স ৫০ কি:মি: বা ৩০ মাইল জুড়ে মেট্রোপলিটান ওয়্যারলেস এরিয়া নেটওয়ার্কের সুবিধা দেয়।
* ওয়াইম্যাক্সের সাহায্যে ইন্টারনেট প্রটোকল ভিত্তিক টেলিফোন এবং টেলিভিশন সুবিধা ভোগ করা যায়। (যদিও ইন্টারনেট প্রটোকলের সাহায্যে টেলিফোন সুবিধা ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কিছু বিধি নিষেধ বিদ্যমান থাকায় এই সুবিধা পুরোপুরি ভোগ করা সম্ভব হচ্ছে না।)
* ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে কোন ধরনের মোবাইল ডিভাইসের সাহায্যে আন্তনগর এবং আন্তরাষ্ট্রীয় যোগাযোগ সম্ভব। ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ার আচেহ্ প্রদেশে ভয়াবহ সুনামীর পর দূর্গত এলাকায় সবধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে শুধুমাত্র ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেখান থেকে বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয় এবং দূর্গত এলাকায় ত্রান সরবরাহ সম্ভব হয়।
ওয়াইম্যাক্সের জন্য বরাদ্দকৃত স্পেকট্রাম:
ওয়াইম্যাক্সের জন্য সার্বজনীন কোন একক স্পেকট্রাম নেই। তবে “ওয়াইম্যাক্স ফোরাম (Wimax Forum)” ৩টি লাইসেন্সড স্পেকট্রাম প্রোফাইল প্রকাশ করেছে। এগুলো হচ্ছে ২.৩ গিগাহার্জ, ২.৫ গিগাহার্জ এবং ৩.৫ গিগাহার্জ। মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রে Sprint Nextel এবং Clearwire ২.৫ গিগাহার্জের স্পেকট্রাম ব্যবহার করে। এশিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে সাধারণত ২.৩ গিগাহার্জ থেকে শুরু করে ক্ষেত্রবিশেষ ৩.৩ গিগাহার্জ পর্যন্ত স্পেকট্রাম ব্যবহার করা হয়। পাকিস্তানের Wateen Telecom ৩.৫ গিগাহার্জের স্পেকট্রাম ব্যবহার করে থাকে।
ওয়াইম্যাক্স প্রবেশদ্বার (Wimax Gateways):
ওয়াইম্যাক্স প্রবেশদ্বার বা Gateway ইনডোর এবং আউটডোর দুই ধরনের হতে পারে। ইনডোর ডিভাইসগুলো সাধারনত ক্ষুদ্রাকৃতির হয়ে থাকে এবং ব্যবহারকারীর বসার স্থানের কাছাকাছি জানালার পাশে স্থাপন করা হয়। অন্যদিকে আউটডোর ডিভাইসগুলো ল্যাপটপ আকৃতির হয়ে থাকে এবং স্যাটেলাইট ডিস এন্টেনার মতো করে এদের স্থাপন করা হয়। যেসব কোম্পানী ওয়াইম্যাক্স Gateway ডিভাইসগুলো তৈরী করে থাকে সেগুলোর মধ্যে Alvarion, Airspan, ZyXEL, Huawei, Motorola এবং Green Packet উল্লেখযোগ্য। এক্সটারনাল মডেমের মাধ্যমেও ওয়াইম্যাক্স কানেক্টিভিটি পাওয়া যায়। এই মডেমকে সাধারণত Dongle বলা হয়। মূলত নোটবুক বা ট্যাবলেট পিসিতে এই মডেম ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশে ওয়াইম্যাক্স:
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম Banglalion Communication Ltd, Brac BD Mail Network এবং Augure Wireless Broadband Bangladesh Ltd ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর তারিখে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরী কমিশন (BTRC) কর্তৃক Broadband Wireless Access (BWA) সেবা দেয়ার জন্য Wimax technology ব্যবহারের লাইসেন্স লাভ করে। ওপেন বিড প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে ৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বাংলালায়ন ২.৫ গিগাহার্জ ব্যান্ড কিনে নেয়। পরবর্তীতে Augure Wireless, ‘Qubee’ ব্র্যান্ড নামে Wimax সার্ভিস চালু করে। বর্তমানে দেশে বাংলালায়নের গ্রাহক সংখ্যা ২০০০০০ এবং এবং কিউবির গ্রাহক সংখ্যা ১২৫০০০। এছাড়া Ollo নামে একটি কোম্পানী অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে তাদের অপারেশন শুরু করেছে যা এখনও গ্রাহক পর্যায়ে পৌছুতে পারে নি।
ওয়াইম্যাক্স বনাম থ্রি-জি
বর্তমানে একটি বহুল আলোচিত ইস্যু হচ্ছে ওয়াইম্যাক্স এবং থ্রি-জি প্রযু্ক্তির মধ্যে কোনটি অধিকতর উন্নত।
এক্ষেত্রে প্রদত্ত যুক্তিগুলো নিম্নরুপ:
* ওয়াইম্যাক্স যেখানে ন্যূনতম ৭০ এমবিপিএস গতির ডাটা ট্রান্সফার সুবিধা দেয়। সেখানে থ্রি-জি এর ক্ষেত্রে এই গতি ১৪.৪ এমবিপিএস।
* ওয়াইম্যাক্সের সাহায্যে টেলিফোন সুবিধা এখনও প্রচলিত নয়, যা থ্রিজি মোবাইলের মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে।
* ওয়াইম্যাক্স ব্যবহারের জন্য থ্রি-জি মোবাইলের ন্যায় এতো বেশী টাওয়ার স্থাপন করতে হয় না।
* থ্রি-জি মোবাইল প্রযুক্তির চেয়ে ওয়াইম্যাক্স বিশ্বব্যাপী অনেক বেশী প্রচলিত। বাংলাদেশের সবেমাত্র থ্রি-জি চালু হলেও বিশ্বের অনেকগুলো দেশে এখনও থ্রি-জি প্রযুক্তির প্রচলন হয় নি, কিন্তু ওয়াইম্যাক্স ব্যবহৃত হচ্ছে।
আমি শাহীন শিমুল। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 30 টি টিউন ও 3 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
হমমমমমমমম……ভাল পোষ্ট