ডিজিটাল মার্কেটিং এবং কনটেন্ট মার্কেটিং সম্পর্কে যারা ধারণা রাখেন তাদের কাছে কপিরাইটিং কথাটি হয়তো নতুন নয়। ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে কপিরাইটিং এর বহুল ব্যবহার রয়েছে৷ কেউ জেনে অথবা কেউ না জেনে প্রতিনিয়ত মার্কেটিং ট্রিকস হিসেবে কপিরাইটিং এর ব্যবহার করে আসছে৷ কিন্তু কপিরাইটিং শব্দটি আমাদরকে কনফিউজড করে দেয়৷ অনেকেই ভাবেন কপিরাইট আইন সম্বলিত কোনো বিষয় হয়তো কপিরাইটিং। আবার কেউ কেউ হয়তো ভেবে বসে আছেন কোনো লেখা কপি পেস্ট করা বা এই ধরনের কোনো কাজকে হয়তো কপিরাটিং বলে।
আসলে বিষয়টা কিন্তু মোটেই এরকম নয়। কপিরাইটিং এর পুরো কনসেপ্ট টা-ই আলাদা। কপিরাইটিং কী, কপিরাইটিং কেন করা হয়, কপিরাইটিং কীভাবে শিখবেন এই ধরনের সকল বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আজকের টিউনটি সাজানো হয়েছে। কপিরাইটিং সম্পর্কে সকলের ভুল ধারণা কাটিয়ে উঠে এর সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারবেন এখনই।
কোনো লেখার মাধ্যমে একটি পণ্য বা সেবা সম্পর্কে আকর্ষনীয় সব তথ্য প্রদান করে সম্ভাব্য ক্রেতাকে পণ্য বা সেবা ক্রয় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করাকে কপিরাইটিং বলে। অর্থাৎ কপিরাইটিং হলো এক ধরনের লোখা যা পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্যেশ্যে প্রস্তুত করা হয়। যে যতো দক্ষতার সাথে কপিরাইটিং করতে পারবে ততো বেশি ক্রেতা আকৃষ্ট করতে পারবে এবং তার লেখার সার্থকতা ততোই বৃদ্ধি পাবে। তবে কপিরাইটিং এর পূর্বশর্ত হলো অল্প কথায় তুলনামূলক বেশি তথ্য দিয়ে ক্রেতা বা গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
কোনো পণ্যের বিজ্ঞাপণের জন্য স্ক্রিপ্ট লেখা, বিজ্ঞাপণের স্লোগান লেখা, টিউনার কিংবা বিলবোর্ড এর ওপরের লেখা, ব্যবসায়িক বার্তা তৈরি ইত্যাদি কাজগুলো কপিরাইটিং এর আওতাভুক্ত। কপিরাইটিং এর কাজগুলো যাদের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় তাদেরকে বলা হয় কপিরাইটার।
কপিরাইটার দের মূল কাজ হলো বিজ্ঞাপণ মূলক কনটেন্ট লেখা। অর্থাৎ পণ্যের সুবিধা, অসুবিধা ও অন্যান্য তথ্য অল্প কথায় সম্ভাব্য ক্রেতার সামনে তুলে ধরে পণ্যটি ক্রয় করার জন্য আগ্রহী করে তোলা। কোনো প্রতিষ্ঠানের স্লোগান, বিজ্ঞাপণের মূলক স্ক্রিপ্ট, সোস্যাল মিডিয়ায় পাবলিশ করার জন্য স্ক্রিপ্ট লেখা বা যে কোনো ব্যবসায়িক কনটেন্ট লেখার কাজগুলো কপিরাইটার দের মাধ্যমে করিয়ে নেয়া হয়।
আমাদের মোবাইলে যে প্রতিনিয়ত সিম কোম্পানি গুলোর অফার বার্তা আসে তার পেছনে কাজ করছে কপিরাইটাররা। বর্তার শুরুর কথাগুলো কেমন হবে, অফার গুলো কীভাবে সাজানো হবে, কীভাবে গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এই সবকিছু প্লানিং করে বার্তাটি লিখবে একজন কপিরাইটার। আবার যে কোনো ব্রান্ডিং ওয়েবসাইট এর হোমপেইজে ঢুকলে যে সকল স্লোগান ও অন্যান্য লেখা থাকে তার সবকিছুই একজন কপিরাইটার এর মাধ্যমে লেখানো হয়।
ই-কমার্স বিজনেস এর ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে কনটেন্ট পাবলিশ করা, সোস্যাল মিডিয়ায় মার্কেটিং কনটেন্ট তৈরি, ব্যবসায়িক বর্তা তৈরি করা সহ একটি বিজনেস সাইটের মার্কেটিং এর যাবতীয় সকল কনটেন্ট তৈরি করেন একজন কপিরাইটার। সুতরাং কপিরাইটার এর মূল কাজ হলো নিজের লেখার মাধ্যমে সম্ভাব্য ক্রেতাকে কনভেন্স করে পণ্য বিক্রি করা। তাদের লেখার মূল উদ্যেশ্যই হলো পণ্য, সেবা বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা করা।
আপাতদৃষ্টিতে কনটেন্ট রাইটিং এর কপিরাইটিং কে এক মনে হলেও এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে৷ লেখার উদ্যেশ্যগত দিক থেকে এই দুই ধরনের লেখাকে দুটি আলাদা ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। কপিরাইটিং এর মূল উদ্যেশ্য হলো পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপণের মাধ্যমে বিক্রয় বৃদ্ধি করা। কিন্তু কনটেন্ট রাইটিং এর মূল উদ্যেশ্য হলো কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্য সরবরাহ করা। কোনো বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাধারণ বর্ণনা বা তথ্য সরবার করা হলে তা কনটেন্ট রাইটিং এর আওতাভুক্ত হবে।
সুতরাং কপিরাইটিং এর ব্যবসায়িক উদ্যেশ্য থাকলেও কনটেন্ট রাইটিং এর কোনো ব্যবসায়িক উদ্যেশ্য নেই। যদি দুই ধরনের লেখারই মূল উদ্যেশ্য পাঠকের দৃষ্টি আর্কষণ করা এবং তুলনামূলক বেশি পাঠকের কাছে লেখা পৌঁছে দেয়া। আবার কপিরাইটিং এর ক্ষেত্রে লেখা তুলনামূলক অনেক ছোট করতে হয়। কম লেখার মধ্যে যতো সুন্দর ভাবে মূল তথ্য ফুটিয়ে তেলা যায় ততোই লেখায় স্বার্থকতা আসে। কিন্তু কনটেন্ট রাইটিং এর ক্ষেত্রে লেখার দৈর্ঘ্য কতোটুকু হবে তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই।
মূলত কনটেন্ট রাইটিং ও কপিরাইটিং একই ধারার লেখা হলেও এদের মূল উদ্যেশ্য এক নয়৷ কপিরাইটার দের লেখায় কৌশলগত দক্ষতা বেশি থাকতে হয়৷ লোখার মাধ্যমে পাঠককে কনভেন্স করার ক্ষমতা রাখতে হয়।
ব্যবসায়ের প্রমোশন করতে প্রায় সকল মুনাফা ভিত্তিক কোম্পানি কপিরাইটার হায়ার করে। কেননা একজন দক্ষ ও প্রফেশনাল কপিরাইটার ব্যবসায়ের বিক্রয় কয়েকগুণ বাড়াতে পারে। শুধু যে মুনাফা ভিত্তিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান কপিরাইটার হায়ার করে এমনটাও কিন্তু না। বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থা, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাদের ব্রান্ড প্রমোশনের জন্য কপিরাইটার হায়ার করে। তাছাড়া বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানেও কপিরাইটার এর প্রয়োজন পড়ে।
মোটকথা যেখানেই প্রচার ও ব্রান্ডিং এর প্রয়োজন আছে সেখানেই কপিরাইটার এর চাহিদা রয়েছে৷ তাই কপিরাইটিং পেশায় বর্তমানে কাজের ক্ষেত্রের কোনো অভাব নেই বললেই চলে।
কপিরাইটিং একটা শিল্প। এটা কেউ আপনাকে হাতে ধরে শেখাতে পারবে না। হয়তো মূল ধারণা ও টেকনিক্যাল দক্ষতা অর্জনের জন্য আপনি বিভিন্ন ফ্রি বা পেইড কোর্স করতে পারেন৷ কিন্তু মূল কৌশল আয়ত্ত করার জন্য আপনার মধ্যে অসাধারণ সৃজনশীল প্রতিভা থাকতে হবে সেই সাথে প্রচুর প্রাকটিস করার মনমানসিকতা থাকতে হবে।
প্রথমত আপনাকে বিভিন্ন ব্যবসায়িক বিজ্ঞাপণ গুলো নিয়মিত ফলো করতে হবে৷ কীভাবে একজন সফল কপিরাইটার তার লেখার মাধ্যমে একটি ব্রান্ডের প্রমোশন করছে তা গভীর মনোযোগের সাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সেইসাথে প্রচুর পরিমানে মার্কেট রিসার্চ করতে হবে। ভোক্তার চাহিদা সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। এরপর সার্বিক দিক পর্যবেক্ষন করে প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখতে হবে।
পাশাপাশি ইংরেজিতে কপিরাইটিং করতে চাইলে অবশ্যই নিয়মিত ইংরেজি চর্চা অব্যাহত রাখতে হবে। লেখায় ব্যকরণ গত সমস্যা গুলো কমিয়ে আনতে হবে। নিজের কল্পনাশক্তি ও বাস্তব জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নিয়মিত লেখার হাত চালু রাখতে হবে৷ পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ফ্রি তে কাজ করে দিতে পারেন, এতে করে অনেক নতুন নতুন বিষয় শিখতে৷ পারবেন ও প্রাকটিস অব্যাহত থাকবে।
সবথেকে বড় কথা হলো আপনি যতোই কোর্স করুন আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিন না কেন, নিয়মিত অনুশীলন এর বিকল্প নেই। মেন্টর এর কাছ থেকে শিখে সেই অনুযায়ী আপনাকে প্রাকটিস করতে হবে৷ এভাবেই আজীবন আপনার কপিরাইটিং শেখার প্রসেস চালু রাখতে হবে। কাজের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত আপনাকে নতুন নতুন ট্রিকস শিখতে হবে এবং তা প্রাকটিস করতে হবে। মনে রাখবেন কপিরাইটিং সেক্টরে একদিন, একমাস কিংবা এক বছরে কেউ এক্সপার্ট হতে পারে না৷ কপিরাইটিং শেখা একটি চলমান প্রক্রিয়া।
বিভিন্ন ফ্রি টিউটোরিয়াল দেখে কিংবা পেইড কোর্স করে মোটামুটি কপিরাইটিং শিখলেই আপনাকে কাজের সন্ধান করতে হবে। এজন্য বিভিন্ন কমার্শিয়াল কোম্পানি গুলোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে চোখ রাখুন। বিজ্ঞপ্তি পাতায় প্রায়ই কপিরাইটার দের জন্য জব অপরচুনিটি দেখতে পাওয়া যায়। এরকম জব সার্কুলার দেখলেই সাথে সাথে এপ্লাই করে নিবেন। কেননা কপিরাইটিং এর কাজগুলো সাধারণত অনলাইন ভিত্তিক হয়ে থাকে তাই কাজের স্থান নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।
তাছাড়া ফেসবুক সহ বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ার লোকাল মার্কেটপ্লেসে প্রায়ই কপিরাইটার দের জন্য কাজের অফার আসে। লোকাল ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করেও আপনি বেশ ভালো এমাউন্টের টাকা আয় করতে পারবেন। তাছাড়া লিংকড-ইনে একটি চমৎকার পোর্টফোলিও তৈরি করে এখান থেকেও কাজ পেতে পারেন। লিংকড-ইনে কপিরাইটার দের জন্য অনেক ধরনের চাকরির অফার পাওয়া যায়।
আপনি যদি চান কপিরাইটিং স্কিল কে কাজে লাগিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করবেন তা-ও করতে পারেন। আপওয়ার্ক কিংবা ফাইবারে একাউন্ট তৈরি করে এখান থেকে কপিরাইটিং এর কাজ সংগ্রহ করতে পারেন। ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে কপিরাইটারদের উচ্চ চাহিদা রয়েছে।
আশাকরি কপিরাইটিং সম্পর্কে যাদের ভুল ধারণা ছিল তারা ইতোমধ্যে সঠিক তথ্য পেয়ে গেছেন। আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য একজন কপিরাইটার কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা হয়তো আলাদা করে না বললেও চলবে। তাই কপিরাইটিং কে প্রাধান্য দিয়ে নিজের ব্যবসায়কে কয়েক ধাপ আগে নিয়ে চলুন। ডিজিটাল মার্কেটিং সফল হোক কপিরাইটিং এর হাত ধরেই।
অন্যদিকে আপনি যদি মনে করেন কপিরাইটিং পেশায় ক্যারিয়ার গড়বেন তাহলে এখন থেকেই প্রাকটিস শুরু করুন। বিভিন্ন কোম্পানির প্রমোশনাল বার্তা গুলো মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন। নিজের স্কিল নিজেই ডেভেলপ করুন।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।