রোজা কোন সাধারন ইবাদত নয় । এটি ইসলামের স্তম্ভ হওয়ায় এর গুরুত্ব অপরিসীম ।
ইসলামী পন্জিকার মাসগুলো ২৯ ও ৩০ দিনে হয় । কোনভাবেই ২৮,৩১ ও ৩২ দিনে মাস হওয়ার সুযোগ নেই । কিন্তু বিশ্বব্যাপী রোজার সময় আমরা বিভিন্ন দেশ অনুযায়ী ২৮ ও ৩১ দিনের রমজান মাস হতে দেখি এবং ২৮ হতে ৩১ দিনে রমজান মাস শেষ করে বিশ্বব্যাপী ঈদুল ফিতর চার দিন ধরে পালন করার রেওয়াজ গড়ে ওঠেছে ।
এ বিশৃঙ্খল অবস্হা সম্পর্কে ১৬ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে এক প্রেস রিলিজে ৫৭টি দেশ নিয়ে গঠিত ইসলামী সহযোগিতা সংস্হা (ও.আই.সি) –এর মান্যবর মহাসচিব একমেলেদ্দীন ইহসানোগলু বলেন,’’ এবছর (২০০৬) ঈদুল ফিতর ঈদুল ফিতর উদযাপনে সময়ের পার্থক্য ৩ দিন পৌছেছে । আধুনিক বিজ্ঞান বিশেষত: জ্যোতির্বিজ্ঞানের অভাবনীয় অগ্রগতির যুগে এই অবস্হা দু:খজনক । ইসলামী উৎসবগুলোর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে । এসব উৎসব বিশ্বের সব মুসলিমের হৃদয়ে ঐক্যের বার্তা পৌছে দেয় । এই ঐক্য এসব উৎসবের নির্যাস হিসেবে প্রকাশ পায় । কিন্তু এসব উৎসব বর্তমানে মুসলিমদের মধ্যে ঐক্যের বদলে অনৈক্য ও বিভেদের উপলক্ষ্য হিসেবে উপস্হিত হয়েছে । এতে মুসলিমদের ইতিবাচক ভাবমূর্তি প্রকাশ পাচ্ছে না । এটি একটি বড় ধরনের ভুল । কারণ এসব ধর্মীয় উৎসব ধর্মের বস্তুনিষ্ঠতা থেকে দূরে সরে যেয়ে একঘেয়েমি ও কুপমন্ডুকতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে ।
এব্যাপারে ইসলামী সম্বেলন সংস্হা (ও.আই.সি) ১৯৮০ -র দশক হতে লিখিতভাবে এবিষয় নিয়ে সোচ্চার । ও.আই.সি এবিষয়ের উপর প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং বিভিন্ন সম্বেলনে এবিষয়টি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আসছে ।মুসলিম দেশগুলোতে একটি একক ক্যালেন্ডার অবলম্বন করার জন্য হিজরী ক্যালেন্ডারকে ধর্মীয় ও বিজ্ঞানের মুলনীতি প্রয়োগ করে পরিমার্জিত করতে হবে । এব্যাপারে ব্যবস্হা নিতে ইসলামী আইনবিদ্যা কেন্দ্রকে অনুরোদ করছি ।পরিমার্জিত এ হিজরী ক্যালেন্ডার বিশ্বের সব মুসলিমকে রোজা ও অন্যান্য উৎসবগুলোতে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করবে । এবিষয়ে বিভক্তি ও অনৈক্য দুর করতে মুসলিম বিশ্বের ধর্মীয় ও নেতৃস্হানীয় কর্তাব্যক্তিদের এক সাথে কাজ করতে আহবান জানাচ্ছি । জেদ্দা : ২৮ অক্টোবর ২০০৬ “ ( দেখুন: http://www.oic-oci.org/oicold/press/english/2006/october%202006/hilal.htm )
বিশ্বব্যাপী চার দিন ধরে মুসলিম উৎসবগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণসমূহ :
বিশ্বব্যাপী চার দিন ধরে মুসলিম উৎসবগুলো অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণসমূহের একটি প্রধান কারণ হলো – হিজরী সন গণনা কৌশলের ভিন্নতা এবং মুসলিম প্রধান ও সংখ্যালঘু মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সমান্নয়হীনতা ।
দেশ অনুযায়ী হিজরী সন গণণা পদ্ধতির ভিন্নতা রয়েছে । যেমন :
১. দেশের রাজনৈতিক সীমার মধ্যস্হ স্হলভাগে খালি চোখে নতুন চাঁদ দেখার খবর প্রচার করে দেশে হিজরী সনের মাস শুরু করা । যেমন : বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ওমান,মরক্কো এবং ত্রিনিদাদ- টোবাগো ।
২.চাঁদের জন্ম ও মক্কায় সূর্যাস্তের পর চাঁদ অস্ত যাওয়ার জ্যোতির্বিজ্ঞানের তথ্য দিয়ে অগ্রিম ক্যালেন্ডার প্রস্তুত করা । বিশষে কোন কারণে কখনো রোজা ও হজের মাস এক দিন এগিয়ে আনা । যেমন : সৌদি আরব ।
৩.সৌদি আরবের ঘোষনা অনুসরন করা । যেমন : কাতার, কুয়েত, আরব আমিরাত, বাহরাইন, ইয়েমেন, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন ।
৪.মাসের ২৯তম দিনে চাঁদের জন্ম ও সূর্যাস্তের ৫মিনিট পর চাঁদ অস্ত গেলে নতুন মাস শুরু করা । যেমন : মিসর ।
৫.পাশবর্তী দেশ হতে মাস শুরু করার খবর সংগ্রহ করা । যেমন : নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া হতে , মালদ্বীপ শ্রীলন্কা হতে খবর সংগ্রহ করে রোজা ও ঈদ করে ।
৬.বিশ্বে প্রথম মাস শুরুর ঘোষক দেশের অনুসরন করা । যেমন: ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেশগুলো , জ্যামাইকা, বার্বাডোস
৭. চাঁদের বয়স, উচ্চতা, সূর্যাস্ত ও চাঁদ অস্ত যাওয়ার সময়ের ব্যবধান বিবেচনা করে মাস শুরু করা । যেমন: আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া
৮.নিজস্ব ভুখন্ডে ফজরের আগে চাঁদের জন্ম বিবেচনা করে মাস শুরু করা । যেমন: লিবিয়া
৯.চাঁদের বয়স ৮ ঘন্টা, উচ্চতা ২ ডিগ্রী, কৌনিক ব্যবধান ৩ ডিগ্রী এর বেশী হলে মাস শুরু করা । যেমন: মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর
১০. আগেই পাটীগণিতের সুত্র দিয়ে অগ্রীম পন্জিকা বানানো । যেমন : ইসমাইলিয়া ও কাদিয়ানী । মুলত এরা অমুসলিম জাতি ।
১১. আন্তজার্তিক ক্ষেত্রে পরিচিত দুরর্বতী দেশকে অনুসরন । যেমন : মালয়েশিয়াকে জাপান, তাইওয়ান,কোরিয়া, পালাউ অনুসরন করে
১২. বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানদন্দ ব্যবহার করা । যেমন: নাইজেরিয়া সহ আফ্রিকার কিছু দেশ ।
১৩. বিশ্বের কোথাও সর্বপ্রথম নতুন চাঁদ দেখার বা তার সম্ভাবনাকে বিবেচনা করা । যেমন: লেবানন
১৪. ৪৮০ মাইল দূরত্বকে নতুন চাঁদ দেখার ভিন্ন উদয় অঞ্চল বিবেচনা করে খালি চোখে নতুন চাঁদ দেখে একই দেশে দুই দিন মাস শুরু করা । যেমন: ভারতের পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরা, মনিপুর, গুজরাট সহ বিভিন্ন প্রদেশ ।
১৫.বিশ্বের কোথাও সর্বপ্রথম চাঁদের জন্ম এবং মক্কার সূর্যাস্তের পর চাঁদের অস্ত যাওয়ার মাধ্যমে মাস শুরু করার ঘোষনা করা । এ পদ্ধতিতে বিশ্বের কোথাও না কোথাও নতুন চাঁদ দেখার সম্ভাবনাকে বিবেচনা করা হয় তা খালি চোখেই হোক বা শক্তিশালী দুরবীন দিয়েই হোক। যেমন:
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ইসলামী আইনবিদ পরিষদ এবং ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অব ফাতওয়া এন্ড রিচার্সের নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকা ও দেশসমূহ ।
(দেখুন: http://www.moonsighting.com/methods.html )
এধরনের ভিন্ন ভিন্ন মানদন্দের ভিত্তিতে মাস শুরুর করায় মুসলিম বিশ্বে বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্য তৈরী হয়েছে এবং ধর্মীয় উৎসবগুলো সার্বজনীনতা ও ধর্মীয় তাৎপর্য হারাচ্ছে । এঅবস্হা এক সময় অন্যান্য ধর্মানুসারীদের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল ।কিন্তু তারা এঅবস্হা কাটিয়ে ওঠেছে । যেমন : খ্রীষ্টাব্দকে জুলিয়াস সিজার ও পোপ গ্রেগরী সংস্কার সাধন করলেও দেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন তারিখ ব্যবহার হতো । ১৮৮৪ সালে এক আন্তজার্তিক সম্বেলনের মাধ্যমে খ্রীষ্টাব্দকে পরিমার্জিত করা হয় ।
সারা বিশ্বে একই দিনে ঈদ করার বিষয়ে ও.আই.সি এর বিভিন্ন প্রস্তাবএবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে । দেখুন
http://www.oic-oci.org/home.asp
1. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/11/11%20icfm-cultural-en.htm
RESOLUTION No. 14/11-C
2. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/12/12%20icfm-cultural-en.htm
RESOLUTION NO. 8/12-C
3. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/13/13%20icfm-cultural-en.htm
RESOLUTION NO. 11/13-C
4. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/14/14%20icfm-cult-en.htm
RESOLUTION NO. 19/14-C
5. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/15/15%20icfm-cult-en.htm
RESOLUTION NO.17/15-C
6. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/16/16%20icfm-cult-en.htm
RESOLUTION NO.13/16-C
7. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/17/17%20icfm-cult-en.htm
RESOLUTION NO. 16/17-C
8. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/18/18%20icfm-cult-en.htm
RESOLUTION 18/18-C
9. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/19/19%20icfm-cult-en.htm
RESOLUTION NO. 24/19-C
10. ISTANBUL, REPUBLIC OF TURKEY
24-28 MUHARRAM 1412H, 4-8 AUGUST 1991
11. http://www.oic-oci.org/english/conf/fm/21/21-4th%20resolution.htm
বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশ এবং সকল মুসলিমের প্রতিনিধিত্বকারী বিশ্ব মুসলিম সংগঠন ও, আই, সি-এর ফিকহ একাডেমী ১৯৮৬ সনের ১১-১৬ অক্টোবর জর্ডানের রাজধানী আম্মানে অনুষ্ঠিত শীর্ষ সম্মেলনে শতাধিক শরীয়াহ্ বিশেষজ্ঞের সর্ব সম্মতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন যে, “বিশ্বের কোন এক দেশে চাঁদ দেখা গেলে সকল মুসলিমকে ঐ দেখার ভিত্তিতেই আমল করতে হবে।”
( দেখুন : http://www.newmoonbd.com/oic_decision.php
http://sonarbangladesh.com/blog/fakhrul/55104 )
বিশ্বব্যাপী ভিন্ন ভিন্ন দিনে ঈদ হওয়া ও.আই.সি -র সিদ্ধান্ত বিরোধী । আমাদের এবিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে ।এজন্য জনমত গঠন করতে হবে ।
( ভিজিট করুন এবং এসম্পর্কে জানুন :
http://hijri-calendar.blogspot.com/ এবং
http://bangladesh-astronomical-union.blogspot.com )
আমি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 7 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে লিখতে ভালবাসি । তাই টেকটিউনস্-এ লিখতে এসেছি । আমি জ্যোর্তিবিজ্ঞান ও উদ্ভিদ জগৎ নিয়ে লিখতে বেশি পছন্দ করি । ফেইসবুকে আমার পেজ : http://www.facebook.com/fakhrul.net, আমার ওয়েবসাইট : www.bau.ac
বিশ্বব্যাপী একই দিনে ঈদ হওয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সিদ্ধান্ত বিরোধী ।