আমরা তো সকলেই স্যামসাংয়ের নানা পণ্য ব্যবহার করে থাকি। এমনকি বর্তমানে আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোনটিও হয়তোবা স্যামসাংয়ের তৈরি। যেখানে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ার কোম্পানি স্যামসাং।
আমরা দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় শুধুমাত্র স্যামসাং এর টিভি, ফ্রিজ এবং স্মার্টফোন দেখে থাকলেও স্যামসাং আরো অনেক সেবা দিয়ে থাকে। স্যামসাংয়ের তৈরি এসবের মধ্যে রয়েছে কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স, আর্থিক সেবা, জাহাজ নির্মাণ এবং চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম পরিচালনা। এছাড়াও এসবের পাশাপাশি তাদের অধীনে প্রায় ৮০ টি বহুমুখী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন সরবরাহে স্যামসাং কিভাবে শীর্ষ অবস্থান করে আসছে, তা জানবো এই টিউনটির মাধ্যমে। তবে টিউনটি শুরু করার আগে আপনাকে বলে নিচ্ছি যে, আপনি যদি আমাকে এখনো ফলো না করে থাকেন, তবে অবশ্যই ফলো করে নিবেন এবং টিউনটি ভাল লাগলে একটি জোসস করবেন।
বহুজাতিক ইলেকট্রনিক ও তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স ২০১২ সালে একক বিক্রয় দ্বারা বিশ্বের বৃহত্তম মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক হিসেবে উঠে আসে। যেখানে বর্তমানে ও স্যামসাং বিশ্বের প্রথম স্মার্ট ফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানি হিসেবে তালিকাবদ্ধ রয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান স্যামসাং গ্রুপের স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক সামগ্রী নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। স্যামসাং একাই দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জিডিপির ১৭ শতাংশ অর্জনকারী। স্যামসাং বিশ্বব্যাপী শুধু মোবাইলের ই ব্যবসা করে না। বরং, মোবাইল ফোন প্রস্তুত এর সঙ্গে সঙ্গে তাদের রয়েছে আরও অনেক ধরনের ব্যবসা। তারা মোবাইল ফোন প্রস্তুত করে বিশ্বের প্রথম মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হলেও তাদের রয়েছে আরও অনেক ধরনের সফল ব্যবসা।
স্যামসাং মোবাইল ফোন প্রস্তুত করার পাশাপাশি কনস্ট্রাকশন ব্যবসা ও করে থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু দালান বুর্জ আল খলিফা, মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার, তাইপে ১০১ সহ বহু আকাশচুম্বী অট্টালিকা নির্মাণ করেছে স্যামসাং। যেখানে স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স পণ্যের মতোই বিশ্ববাজারে কনস্ট্রাকশন খাতেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। স্যামসাং এর রয়েছে ২০৪ টি ফুটবল মাঠের সমান জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র, যেখানে স্যামসাং বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় পণ্যবাহী জাহাজ তৈরি করে।
স্যামসাং ইলেকট্রনিক্স পণ্য তৈরি করার পাশাপাশি তারা বিভিন্ন দেশের জন্য নানা ধরনের যুদ্ধাস্ত্র, ট্যাংক, জেট ইঞ্জিন, তৈরি পোশাক সহ হাজারো সব পণ্য তৈরি করে। স্যামসাংয়ের বিভিন্ন খাতে কাজের জন্য রয়েছে প্রায় ৫ লাখ কর্মী, যা অ্যাপল ও গুগল এর সম্মিলিত কর্মীসংখ্যার চাইতেও অনেক বেশি।
স্যামসাং যাত্রা শুরু করে ১৯৩৮ সালে একটি নুডুলস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে। ১৯৬০ সালে স্যামসাং ইলেক্ট্রনিক্স শিল্পে প্রবেশ করে। সেই ইলেকট্রনিক্স পণ্য তৈরির পর থেকেই তারা আজকের এই পর্যায়ে। স্যামসাং এর তৈরি প্রথম ইলেকট্রনিক পণ্য একটি ২১ ইঞ্চি সাদাকালো টেলিভিশন। ১৯৮৩ সালে তারখ প্রথম কম্পিউটার নির্মাণ করে, পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে স্যামসাং একটি আন্তর্জাতিক কর্পোরেশন হয়ে উঠতে শুরু করে।
১৯৯২ সালে বিশ্বের বৃহত্তম মেমোরি চিপ প্রস্তুতকারক হয়ে উঠে স্যামসাং। বর্তমানে বিশ্বের সিংহভাগ মোবাইল, এমনকি অরিজিনাল আইফোন ও স্যামসাংয়ের মেমোরি চিপ ব্যবহার করে উৎপন্ন হয়। এছাড়া স্যামসাং বর্তমানে মাইক্রোচিপ অর্থাৎ প্রসেসর ও তৈরি করে। যেখানে স্যামসাংয়ের তৈরি প্রসেসর বিভিন্ন স্মার্ট ফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানি কিনে নিয়ে নিজেদের ফোনে ব্যবহার করে। ১৯৯৫ সালে স্যামসাং সর্বপ্রথম এলসিডি পর্দা তৈরি করে এবং তার মাত্র ১০ বছরের মধ্যে ২০০৬ সালে স্যামসাং বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিভিশন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পরিণত হয়।
বিশ্বব্যাপী স্যামসাংয়ের নানা ধরনের ব্যবসা ও প্রযুক্তি পণ্যের বাজারে শীর্ষস্থান দখলের পূর্ব অভিজ্ঞতাই মূলত স্যামসাং কে স্মার্টফোনের বাজারে শীর্ষস্থান দখলের প্রথমে নিয়ে এসেছে। এছাড়া সারা বিশ্বের স্যামসাংয়ের রয়েছে নিজস্ব পরিবহন ও সরবরাহ ব্যবস্থা। আর যেকারণে তাদের পণ্য তারা খুব সহজেই আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করতে পারে।
বিশ্বের সর্ব মোট স্মার্টফোনের ৭৬% দখল করে রেখেছে মাত্র দশটি স্মার্টফোন কোম্পানি। আর অবশিষ্ট ২৪% বাজার দখলের প্রতিযোগিতা করছে প্রায় ছয় শতাধিক প্রতিষ্ঠান। শীর্ষ ১০ কোম্পানি ৭৬% বাজারের সিংহভাগ সরবরাহ করে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে স্যামসাং। ২০১৮ সালের প্রথম তিন মাসেই স্যামসাং ৭ কোটি ৮০ লাখ ইউনিট স্মার্টফোন সরবরাহ করেছে, যা বৈশ্বিক স্মার্ট ফোন বাজারের ২১.৭ শতাংশ।
২০২১ সালে বিশ্বের প্রথম স্মার্টফোন প্রস্তুতকারক কোম্পানি স্যামসাং এবং তারপরেই রয়েছে শাওমি, অ্যাপল, অপো, ভিভো এবং রিয়েলমি। যেখানে এবছর স্যামসাং এর Growth হচ্ছে ৬.৩%।
ক্রমবর্ধমান বাজার গুলোয় মাঝারি দামের স্মার্টফোনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, আর সেখানেও রয়েছে স্যামসাংয়ের আধিপত্য। এছাড়াও স্যামসাং পণ্যের মানের কারণেও, এটি গ্রাহকের মন খুব সহজেই জয় করে নিয়েছে। আর বাজারে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে স্যামসাং প্রতিবছর প্রায় দেড় হাজার কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের বিজ্ঞাপণ প্রচার করে থাকে।
স্যামসাং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা ও পরিবর্তন করেছে। যেখানে তারা প্রথমে খাদ্য পণ্য তৈরি করলেও পরবর্তীতে তারা যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের প্রস্তুত করার দিকে এগিয়ে গিয়েছে। স্যামসাং এর পূর্ব অবস্থা থেকে বোঝা যায় যে, প্রথমে ব্যবসা যত ছোটই হোক বা যেটি দ্বারাই শুরু করা হোক না কেন, সময়ের সাথে সাথে তা পরিবর্তন করা যুক্তিযুক্ত কাজ।
তো বন্ধুরা, আজ আমি যাচ্ছি, খুব শীঘ্রই আপনাদের জন্য নতুন কোন টিউন নিয়ে হাজির হবো ইনশাআল্লাহ। আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো আতিকুর ইসলাম। কন্টেন্ট রাইটার, টেল টেক আইটি, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 421 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 62 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 3 টিউনারকে ফলো করি।
“আল্লাহর ভয়ে তুমি যা কিছু ছেড়ে দিবে, আল্লাহ্ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু অবশ্যই দান করবেন।” —হযরত মোহাম্মদ (সঃ)
এক্সিনোস প্রসেসর দেয় এশিয়ায় আর স্ন্যাপড্রাগন চিপসেট ফোন দেয় আমেরিকায়, পাকা ওরা। আবার বিভিন্ন নোংরা কারিগরি ফলায় যেনো নতুন মডেল আসলেই পুরাতন মডেলগুলোর কার্যকারিতা কমতে শুরু করে।